রমজান মাসের শেষ দশকের বিশেষ ফযীলত রয়েছে এবং আছে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য। এগুলো হল :

(১) এ দশ দিনের মাঝে রয়েছে লাইলাতুল কদর নামের একটি রাত। যা হাজার মাস থেকেও শ্রেষ্ঠ। যে এ রাতে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে ইবাদত-বন্দেগী করবে তার অতীতের পাপগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে।

(২) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ রাতে ইবাদত-বন্দেগীতে বেশি সময় ও শ্রম দিতেন, যা অন্য কোন রাতে দেখা যেত না। যেমন সহীহ মুসলিমে আয়েশা রা. বর্ণিত হাদীসে এসেছে যে, তিনি এ রাতে কুরআন তিলাওয়াত, যিকির, সালাত ও দোয়ার মাধ্যমে জাগ্রত থাকতেন এরপর সাহরী গ্রহণ করতেন।

(৩) রমজানের শেষ দশক আসলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরনের লুঙ্গি শক্ত করে বেঁধে নিতেন। রাত্রি জাগরণ করতেন এবং পরিবারের সকলকে জাগিয়ে দিতেন। যেমন বুখারী ও মুসলিমে আয়েশা রা. বর্ণিত হাদীসে এসেছে। তিনি এ দশদিনের রাতে মোটেই নিদ্রা যেতেন না। পরিবারের সকলকে তিনি এ রাতে ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য জাগিয়ে দিতেন। ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লুঙ্গি শক্ত করে নিতেন’ কথাটির অর্থ হল তিনি এ দিনগুলোতে স্ত্রীদের থেকে আলাদা হয়ে যেতেন।

(৪) এ দশদিনের একটি বৈশিষ্ট্য হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ শেষ দশদিনে মসজিদে এতেকাফ করতেন। প্রয়োজন ব্যতীত তিনি মসজিদ থেকে বের হতেন না।

লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ রাতকে সকল রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়েছেন। তিনি তার কালামে এ রাতকে প্রশংসার সাথে উল্লেখ করেছেন। তিনি তাঁর কালাম সম্পর্কে বলতে যেয়ে এরশাদ করেন :—
‘আমি তো ইহা অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রজনীতে। আমি তো সতর্ককারী। এ রজনীতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়।’

বরকতময় রজনী হল লাইলাতুল কদর। আল্লাহ তাআলা একে বরকতময় বলে অভিহিত করেছেন। কারণ এ রাতে রয়েছে যেমন বরকত তেমনি কল্যাণ ও তাৎপর্য। বরকতের প্রধান কারণ হল এ রাতে আল-কুরআন নাযিল হয়েছে। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়-সিদ্ধান্ত লওহে মাহফুজ থেকে ফেরেশতাদের হাতে অর্পণ করা হয় বাস্তবায়নের জন্য। এ রাতের অপর একটি বৈশিষ্ট্য হল আল্লাহ তাআলা এ রাত সম্পর্কে একটি পূর্ণ সূরা অবতীর্ণ করেছেন। যা কিয়ামত পর্যন্ত পঠিত হতে থাকবে।
‘নিশ্চয় আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি এক মহিমান্বিত রজনীতে। আর মহিমান্বিত রজনী সম্পর্কে তুমি কী জান? মহিমান্বিত রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতেই ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সে রজনী উষার আবির্ভাব পর্যন্ত।’

এ সূরাতে যে সকল বিষয় জানা গেল তা হল:—

(১) এ রাত এমন এক রজনী যাতে মানবজাতির হিদায়াতের আলোকবর্তিকা মহা গ্রন্থ আল-কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে।

(২) এ রজনী হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। অর্থাৎ তিরাশি বছরের চেয়েও এর মূল্য বেশি।

(৩) এ রাতে ফেরেশতাগণ রহমত, বরকত ও কল্যাণ নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করে থাকে।

(৪) এ রজনী শান্তির রজনী। আল্লাহর বান্দারা এ রাতে জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি পেয়ে শান্তি অর্জন করে থাকে।

(৫) সময়ের প্রতি গুরুত্ব দেয়া। এ আয়াতগুলোতে অল্প সময়ে বেশি কাজ করার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হল। যত সময় তত বেশি কাজ করতে হবে। সময় নষ্ট করা চলবে না।

(৬) গুনাহ ও পাপ থেকে ক্ষমা লাভ। এ রাতের এই ফযীলত সম্পর্কে বুখারী ও মুসলিম বর্ণিত হাদীসে এসেছে—

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘যে লাইলাতুল কদরে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে সালাত আদায় ও ইবাদত-বন্দেগী করবে তার অতীতের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’
লাইলাতুল কদর কখন ?

আল-কোরআনে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি লাইলাতুল কদর কোন রাত। তবে কুরআনের ভাষ্য হল লাইলাতুল কদর রমজান মাসে। কিয়ামত পর্যন্ত রমজান মাসে লাইলাতুল কদর অব্যাহত থাকবে। এবং এ রজনী রমজানের শেষ দশকে হবে বলে সহীহ হাদীসে এসেছে। এবং তা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে হাদীসে এসেছে।
‘তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ কর।’

এবং রমজানের শেষ সাত দিনে লাইলাতুল কদর থাকার সম্ভাবনা অধিকতর। যেমন হাদীসে এসেছে
‘যে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করতে চায় সে যেন শেষ সাত দিনে অন্বেষণ করে।’

অধিকতর সম্ভাবনার দিক দিয়ে প্রথম হল রমজান মাসের সাতাশ তারিখ। দ্বিতীয় হল পঁচিশ তারিখ। তৃতীয় হল উনত্রিশ তারিখ। চতুর্থ হল একুশ তারিখ। পঞ্চম হল তেইশ তারিখ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ রাতকে গোপন রেখেছেন আমাদের উপর রহম করে। তিনি দেখতে চান এর বরকত ও ফযীলত লাভের জন্য কে কত প্রচেষ্টা চালাতে পারে।

লাইলাতুল কদরে আমাদের করণীয় হল বেশি করে দোয়া করা। আয়েশা রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে জিজ্ঞেস করলেন, লাইলাতুল কদরে আমি কি দোয়া করতে পারি? তিনি বললেন, বলবে—
‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল। ক্ষমাকে ভালোবাসেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।’

পুর্বে এখানে প্রকাশিত

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ,
ইসলামিক বই ২ পর্বে আপনাদের খেদমতে নিয়ে আসলাম তিনটি বই যার প্রথমটি পবিত্র কোরআনের প্রাথম “সুরা ফাতিহা”র তাফসির । তাফসির করেছেন শায়খুল ইসলাম মোহাম্মদ বিন আঃ ওহ্হাব (রাহঃ) ভাষান্তর করেছেন মোহাম্মদ রকিবুদ্দিন ।

http://a.imagehost.org/0373/fatiha.jpg

ডাউনলোড করুন

২য়টি ইসলামের সচিত্র গাইড এটি সম্পর্কে আমি কিছু লিখলাম না। অনুবাদকের ভুমিকাটিই যথেষ্ট বলে মনি করি।

http://a.imagehost.org/0766/sochitro_giude.jpg

অনুবাদকের কথা

الحمد لله رب العالمين والصلاة و السلام على المبعوث رحمة للعالمين سيدنا محمد عليه أفضل الصلاة و أتم التسليم- و على آله و أصحابه و من تبعهم بإحسان إلى يوم الدين-أما بعد-

ইসলাম একটি পুর্ণাংগ জীবন ব্যবস্থার নাম। এটি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য ধর্ম।ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্মকে আল্লাহ তায়ালা গ্রহণ করবেন না।তিনি বলেন:
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ (85)

অর্থাৎ, আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন কিছুকে ধর্ম তথা জীবন ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করবে তা কস্মিনকালেও গ্রহণযোগ্য হবে না। আর পরকালে সে হবে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত। (সুরা আলে ইমরান:৮৫)

আমরা মুসলমানরা অনেকেই ইসলামকে না জেনে না বুঝে সেটাকে অন্যান্য ধর্মের মতই একটি গতানুগতিক ধর্ম বলে মনে করি।যখন কেউ ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলে যে,ইসলাম ১৪০০ বছর আগের জন্য যুগোপযোগী ছিল।এখন তা যুগোপযোগী নয়।আমরা তখন তার কথার কোন জবাব দিতে সক্ষম হই না বরং,আমাদের কাছে ইসলাম ধর্মের ব্যাপারে মনের মধ্যে বিভিন্ন খটকার সৃষ্টি হয়।এটা মুসলমানদের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যপজনক।
আল্লাহ তায়ালা ইসলামকে সহজ করে দিয়েছেন।যে কেউ তার সমস্যার সমাধান একটু কষ্ট করেই ইসলামের কাছ থেকে খুজে নিতে পারে।এতে তেমন বেগ পেতে হয় না।

অনেকে মনে করেন, আজকের বিজ্ঞান কুরআনের সাথে সামঞ্জস্যশীল নয়। কিন্তু, আসলে কি তাই? না ।বরং,আল-কুরআন থেকেই বিজ্ঞানীরা অনেক সময় তাদের গবেষনার কাজে সহয়তা নিচ্ছে।তাদের নতুন নতুন আবিস্কার ও বিজ্ঞানের গবেষনালব্ধ ফলাফল কুরআন শরীফের সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে।

আমি একদিন আমার এক বন্ধুর সাথে “কুরআন ও বিজ্ঞান”বিষয়ে কথা বলছিলাম। তিনি বললেন:কুরআন ও বিজ্ঞানের মধ্যে তো মিল নেই।আমি জিজ্ঞাসা করলাম কোন জায়গায় মিল নেই? তিনি বললেন:বিজ্ঞান বলছে পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে বিগ ব্যাং নামক মহা বিস্ফোরনের মাধ্যমে কিন্তু,কুরআন তো তা বলে না।আমি তাকে বললাম: ভাই! আসলে কুরআন নিয়ে পড়াশুনা না করার কারণে আমরা অনেকেই এ রকম কথা বলে ফেলি।অথচ,কুরআন শরীফেই আল্লাহ তায়ালা পৃথিবী সৃষ্টির আলোচনা করেছেন।আল্লাহ তায়ালা সুরা আম্বিয়ায় বলেছেন:
أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا
অর্থাৎ, অবিশ্বাসীরা (কাফিররা) কি চিন্তা করে না যে, আকাশ ও পৃথিবী একিভুত ছিল (মুখ বন্ধ ছিল) অতঃপর আমি তাদেরকে আলাদা করেছি? (সুরা আম্বিয়া:৩০)

এই আয়াতের সাথে তো বিগ ব্যাং এর কোন বৈপরিত্য থাকল না। তবে, যখন দেখা যাবে যে,বিজ্ঞানের সাথে কুরআন শরীফের কোন বিষয় মিলছে না তখন বুঝতে হবে যে, কুরআন শরীফ যেটা বলেছে সেটাই সত্য;বিজ্ঞানীদের গবেষনা সঠিকভাবে হয়নি। বিজ্ঞানীদের গবেষনার আরও প্রয়োজন রয়েছে।কেননা,বিগত দিনে এমনই প্রমাণিত হয়েছে।

ইসলাম শুধুমাত্র কুরআন বা হাদীসে উল্লিখিত বিষয়ের ভিতরেই তার পরিধি ব্যাপ্ত করে রাখেনি।বরং,সেটা যেন নিত্য নতুন ভাবে মানুষের সামনে আসতে পারে সে জন্য নতুন নতুন বিষয়ের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত দেয়ার জন্য ইসলামের রয়েছে কিছু কিছু সুত্র।নতুন নতুন বিষয় সামনে আসলে সে সুত্রগুলোর আলোকে তাকে যাচাই বাছাই করেই সিদ্ধান্ত দেবে স্কলাররা।এ ছাড়া আল্লাহ তায়ালা চান- তার বান্দারা নিজেদের বিবেক বুদ্ধি খাটিয়ে চিন্তা ভাবনা করুক।তাই,ছোট খাট বিষয়কে তাদের চিন্তা-ভাবনার উপরই ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

অনেকে প্রশ্ন করেন- ইসলামে চারটা মাজহাব হল কেন?

এর উত্তর হচ্ছে- ইসলামের মৌলিক বিষয় সমুহের ক্ষেত্রে উক্ত চার মাজহাবসহ অন্যান্য গ্রহণযোগ্য মাজহাবের প্রবক্তা ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে কোন মতবিরোধ নেই। তাদের মতবিরোধ শুধু ছোটখাট বিষয়ের উপরে।আর এটা ইসলাম কর্তৃক স্বীকৃত চিন্তা-ভাবনার বিকাশের কারণেই হয়ে থাকে।উল্লেখ্য যে,উক্ত ইসলামী স্কলারদের চিন্তা-ভাবনার ও মতামতের মাঝে মতবিরোধ থাকলেও তারা একে অপরকে অত্যন্ত সম্মান করতেন।
ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) কথায় আসা যাক-
তিনি বলেছেন:যে ফিকহের (ইসলামি হুকুম আহকাম) ক্ষেত্রে গভীর জ্ঞান অর্জন করতে চায় সে যেন ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর গ্রন্থাদি পড়াশুনা করে।(আশবাহু ওয়ান নাযায়ের-ইবনে নুজাইম)এ ছাড়া তিনি বলেছেনsadভাবার্থে) ফিকহের ক্ষেত্রে মানুষেরা ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)এর মুখাপেক্ষী।

এ বইটি অধ্যয়নের মাধ্যমে আমরা ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো সম্বন্ধে সংক্ষেপে জানতে পারব।এ বইয়ের মধ্যে কুরআনের কিছু মিরাকেল ছবির মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে।যা মহাগ্রন্থ আল কুরআন তথা ইসলামের সত্যতারই প্রমাণ বহণ করে। সবশেষে,আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেন আমাকে কুরআন ও হাদীস অনুসারে জাতিকে কিছু উপহার দেয়ার তাওফিক দান করেন এই দোয়া কামনা করে এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ।দোয়া কামনায়-

তাং-২৪শে জুলাই,২০১০

মুহাম্মদ ইসমাইল জাবীহুল্লাহ
আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়
কায়রো, মিশর

ডাউনলোড করুন

তৃতীয় বইটি ইসলামে নারী বনামপুস্তক ও বাস্তবতায় ইহুদী ও খৃষ্টান ধর্মে নারী মুহাম্মদ ইসমাইল জাবীহুল্লাহ, আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়, মিশর

http://j.imagehost.org/0176/women_islam.jpg

অনুবাদকের কথা


الحمد لله رب العلمين- و الصلاة و السلام على من لا نبى بعده- و على آله و أصحابه و بارك و سلم- أما بعد

আমাদের সমাজের লোকেরা ইসলাম সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারনে ইসলামের নামে অনেক অপবাদ আরোপ করে বসে যার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। ইসলামের সঠিক জ্ঞান থাকলে তারা এটা বলত না। এ ধরণের বিষয়গুলোর মধ্যে নারীর অধিকার একটি। তারা বলে থাকে ইসলাম নারীকে ঠকিয়েছে তার প্রমাণ নিকটাত্মীয়ের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীর অংশ পুরুষের অর্ধেক। এছাড়াও তারা বলে ইসলাম পুরুষকে চারটি বিবাহের অনুমতি দিয়েছে অথচ, নারীকে একটির বেশী বিবাহের অনুমতি দেয় নি। এখানেও নাকি নারীকে ঠকানো হয়েছে ইত্যাদি হাজারো অভিযোগ তাদের ইসলামের বিরুদ্ধে। তারা কি কখনো এগুলোর পিছনের কারণগুলো নিয়ে চিন্তা ভাবনা করেছে? কেন নারীকে পুরুষের অর্ধেক অংশ দেয়া হল? সব সময়ই কি নারীর অংশ পুরুষের অর্ধেক? তারা যদি এগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে তাহলে তারা তার ভিতর দেখতে পাবে ন্যায় ও ইনসাফের অনন্য দৃষ্টান্ত। উত্তরাধীকার সম্পদেই আসি। নারীকে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পরিবারের কোন খরচের দায়িত্ব দেয়া হয় নি। শশুর বাড়ীতে তার আত্মীয়-স্বজন আসলেও তাদের আপ্যায়নের জন্য তার চার আনা পয়সাও খরচ করতে হয় না। সন্তান সন্ততি লালন-পালনের খরচ তার করা লাগে না ইত্যাদি। এসব কিছুর দায়িত্ব তার স্বামীর। সে যেটুকু পায় তার সবই থেকে যায়। সবই আয় কোন ব্যয় নেই। পক্ষান্তরে, পরিবারের সর্বক্ষেত্রের ব্যয় স্বামীকে বহন করতে হয়। স্ত্রী যদি কোটিপতিও হয় তার উপর তার নিজের খরচ চালানোর দায়িত্ব দেয়া হয় নি। বরং, তার খরচ চালানোর দায়িত্বও তার স্বামীর উপর ন্যস্ত। অপরদিকে, পুরুষেরা সাধারনত চারটি জায়গা থেকে উত্তরাধিকার সম্পদ পায়। পক্ষান্তরে নারীরা পায় ৮/৯ জায়গা থেকে। আর সব সময় তারা পুরুষের অর্ধেক সম্পদ পায় না; বরং কোন কোন জায়গায় তারা পুরুষের সমান পায় কোন কোন জায়গায় পুরুষ পায় না বরং তার স্থলে একই পর্যায়ের নারী থাকলে সে সম্পদ পায়। গড় হিসাব করতে গেলে তারা পুরুষের সমান; বরং পুরুষের চেয়ে বেশী পায়।
আরেকটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয় পর্দা। এটা ইসলামের বানানো জিনিস নয়;বরং ইহুদী ও খৃষ্টান ধর্মেও পর্দার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ বইয়ের ভিতর ইসলাম ধর্ম এবং ইহুদী ও খৃষ্টান ধর্মে নারীদের অবস্থান ও মর্যাদার চিত্র ও বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি পাঠকবৃন্দ এ বই থেকে উক্ত তিনটি ধর্মে বর্ণিত নারীদের অধিকার ও মর্যাদার যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা জানতে পারবেন। পরিশেষে, সকল মুসলিম ভাইবোনের কাছে দোয়া চাচ্ছি আল্লাহ যেন আমাকে ভালো ভালো গ্রন্থ রচনা ও অনুবাদ করে মুসলিম জনগোষ্ঠির দুয়ারে সহজভাবে পৌছে দেয়ার তাওফিক দান করেন। আমীন।
বিনীত
তাং: ১৬ মার্চ ২০১০ ইং মুহাম্মদ ইসমাইল জাবীহুল্লাহ
আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়, মিশর

ডাউনলোড করুন

প্রিয় ভইয়েরা! কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন :
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ
‘তাদের এ মর্মে আদেশ করা হয়েছে যে, তারা নিবিষ্ট মনে একান্তভাবে শুধুমাত্র আল্লাহর এবাদত করবে, যথাযথভাবে সালাত আদায় করবে, জাকাত প্রদান করবে, আর এটাই হলো সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন।’

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন :
وَأَقِيمُوا الصَّلاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَأَقْرِضُوا اللَّهَ قَرْضاً حَسَناً وَمَا تُقَدِّمُوا لِأَنْفُسِكُمْ مِنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِنْدَ اللَّهِ هُوَ خَيْراً وَأَعْظَمَ أَجْراً
‘তোমরা যথানিয়মে সালাত আদায় কর, জাকাত প্রদান কর, আল্লাহ তাআলাকে উত্তম ঋণ দাও, আর তোমরা নিজেদের কল্যাণে যা অগ্রে প্রেরণ করবে, তা আল্লাহর কাছ থেকে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ প্রতিদান হিসাবে প্রাপ্ত হবে।’

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন :
وَمَا آتَيْتُمْ مِنْ رِباً لِيَرْبُوَ فِي أَمْوَالِ النَّاسِ فَلا يَرْبُو عِنْدَ اللَّهِ وَمَا آتَيْتُمْ مِنْ زَكَاةٍ تُرِيدُونَ وَجْهَ اللَّهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُونَ

‘তোমরা মানুষের সম্পদ বৃদ্ধির নিমিত্তে যে সুদ ভিত্তিক লেনদেন করে থাক, প্রকৃত পক্ষে তা আল্লাহর নিকট কোন লাভজনক নয়। পক্ষান্তরে তোমরা যে জাকাত প্রদান কর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়, (তা বৃদ্ধি পায়) ফলত জাকাত প্রদানকারীগণ মুনাফাকে দ্বিগুণ করে নেয়।’
এ ছাড়াও জাকাতের বিধান সংক্রান্ত অসংখ্য আয়াত রয়েছে।

হাদিসের আলোকে জাকাতের বিধান :

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘পাঁচটি জিনিসের ওপর ইসলামের ভিত্তি রাখা হয়েছে। যথা : এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, সালাত আদায় করা, জাকাত প্রদান করা, সিয়াম পালন করা ও হজ সম্পাদন করা।’
এ কথা শুনে একলোক বলল, হজ অতঃপর রমজানের সিয়াম? তিনি বললেন, না, বরং প্রথমে রমজানের সিয়াম, তারপর হজ। এ তারতিবেই আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি।
অন্য এক বর্ণনায় আছে : এ সাক্ষ্য প্রদান করা যে, ‘এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল।’
সুতরাং বুঝা গেল, জাকাত ইসলামের মৌলিক ভিত্তিগুলোর একটি। কুরআনের অসংখ্য আয়াতে সালাতের পাশাপাশি জাকাতের বিষয়টি আলোচিত হয়েছে।

ইজমা :

সকল মুসলিম একমত যে, জাকাত একটি ফরজ বিধান। সুতরাং জাকাত ফরজ জেনেও যদি কোন ব্যক্তি তা অস্বীকার করে, তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে। আর যে জাকাত প্রদানে কৃপণতা করবে বা পরিমাণের চেয়ে কম দিবে, সে লাঞ্চনা ও কঠিন শাস্তির উপযুক্ত হবে।

চার ধরনের সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ :

প্রথম প্রকার : ভূমি থেকে উৎপাদিত শস্য ও ফল-ফলাদি। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন :
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنْفِقُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّا أَخْرَجْنَا لَكُمْ مِنَ الْأَرْضِ
‘হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের বৈধ উপার্জন এবং আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে যে শস্য উৎপন্ন করি তা থেকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যয় কর।’

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন :
وآتو حقه يوم حصاده. (الأنعام : ২৬৭)
‘ফসল কাটার সময় তার হক (জাকাত) আদায় কর।’

ফসলের জাকাত প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
فيما سقت السماء أو كان عثريا العشر وفيما سقى بالنضح نصف العشر.
‘বৃষ্টির পানিতে উৎপন্ন ফসল ও উশরী জমিতে উৎপন্ন ফসলের জাকাত বিশ ভাগের একভাগ।’

ফসলের ওপর জাকাত ওয়াজিব হওয়ার নির্ধারিত পরিমাণ হচ্ছে ‘নিসাব’। পাঁচ ওসকে নিসাব হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
لَيْسَ فِي حَبٍّ وَلَا تَمْرٍ صَدَقَةٌ حَتَّى تَبْلُغَ خَمْسَةَ أَوْسُقٍ.
‘শস্য বা ফলমূল এর ওপর জাকাত ওয়াজিব হবে না, যতক্ষণ তা পাঁচ ওসক পরিমাণ না হয়।’
‘ওসক’ এর পরিমাণ : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ব্যবহৃত ৬০ ‘সা’ এর সমপরিমাণ এক ওসক। সে হিসেবে জাকাতের নিসাব হওয়ার জন্য ৩০০ ‘সা’ এর প্রয়োজন। আর এক ‘সা’ সমপরিমাণ ২০৪০ গ্রাম। সুতরাং নিসাব এর পরিমাণ দাড়াল ৬১২ কেজি। তাই এর কম ফসলে মধ্যে জাকাত ওয়াজিব নয়। উক্ত নিসাবে বিনাশ্রমে প্রাপ্ত ফসলে জাকাতের পরিমাণ হল এক দশমাংশ আর শ্রম ব্যয়ে প্রাপ্ত ফসলে জাকাতের পরিমাণ হল এক বিশমাংশ।
ফলমূল, শাক-সব্জি, তরমুজ ও এ জাতীয় বস্তুর ওপর জাকাত ওয়াজিব নয়। ওমর রা.বলেন,
ليس في الخضروات صدقة
‘শাক-সব্জিতে জাকাত নেই।’ আলী রা. বলেন,
ليس في التفاح وما اشبه صدقة
‘আপেল ও এ জাতীয় ফলের ওপর জাকাত ওয়াজিব নয়।’
যেহেতু এগুলো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার জাতীয় শস্য বা ফল নয়, তাই এর ওপর জাকাত নেই। তবে যদি এগুলো টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হয়, যার অংক নিসাব পরিমাণ, তাহলে এ মূল্যের ওপর এক বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর জাকাত ওয়াজিব হবে।

দ্বিতীয় প্রকার : যে সকল প্রাণীর ওপর জাকাত ওয়াজিব হয় তা হল, উট, গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ। যদি এ সকল প্রাণী সায়িমা হয় ও মাঠ চড়ে ঘাষ খায় এবং এগুলো বংশ বৃদ্ধির জন্য পালন করা হয় ও তা নিসাব পরিমাণ হয়, তাহলে এদের জাকাত দিতে হবে। উটের নিসাব ন্যুনতম ৫টি, গরুর ৩০টি, আর ছাগলের ৪০টি।
সায়িমা ঐ সকল প্রাণীকে বলে, যেগুলো সারা বছর বা বছরের অধিকাংশ সময় চারণভূমিতে ঘাস খেয়ে বেড়ায়। যদি এ সকল প্রাণী সায়িমা না হয়, তবে এর ওপর জাকাত ওয়াজিব নয়। কিন্তু ব্যবসার উদ্দেশ্যে পালন করা হলে, সর্বাবস্থায় এগুলোর জাকাত দিতে হবে, যদি তা নিসাব পরিমাণ হয়। আর নিসাবের কম হলে এগুলোর মূল্য অন্য সম্পদের সাথে যুক্ত করে নিসাব পরিমাণ হলে জাকাত দিতে হবে।

তৃতীয় প্রকার : স্বর্ণ- রৌপ্যের ওপর (নিসাব পরিমাণ হলে) সর্বাবস্থায় জাকাত ফরজ।
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন :
وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ. يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَذَا مَا كَنَزْتُمْ لانْفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُونَ
‘যারা সোনা-রূপা জমা করে রাখে অথচ তা আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যয় করে না। আপনি তাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ প্রদান করুন। কিয়ামত দিবসে ঐ সোনা-রূপাকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠে ছেকা দেয়া হবে এবং বলা হবে এ হল তোমাদের সে সকল ধন-সম্পদ যা তোমরা নিজেদের জন্য সঞ্চয় করে রাখতে। সুতরাং আজ জমা করে রাখা সম্পদের স্বাদ গ্রহণ কর।’
সঞ্চয় করে রাখার অর্থ হল, আল্লাহর নির্দেশিত পথে পরিমাণ মত ব্যয় না করা। আর সর্বোত্তম ব্যয় হল- জাকাত প্রদান করা।
এ বিষয়ে আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
ما من صاحب ذهب ولا فضة لا يؤدي منها حقها إلا إذا كان يوم القيامة صفحت له صفائح من نار فأحمى عليها في نار جهنم فيكوى بها جنبه وجبينه وظهره كلما بردت أعيدت له في يوم كان مقداره خمسين ألف سنة حتى يقضي بين العباد. رواه مسلم
‘যে সকল সোনা-রূপার মালিকগণ তাদের সম্পদ থেকে নির্ধারিত হক আদায় করে না, কিয়ামত দিবসে তার জন্য কতগুলো আগুনের পাত প্রস্তুত করে তা জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তা দ্বারা ঐ লোকদের ললাট ও পিঠে চেপে ধরা হবে, তাপ কমে গেলে উত্তপ্ত করে পুনরায় চেপে ধরা হবে। পঞ্চাশ হাজার বছর দীর্ঘ সময় বান্দাদের হিসাব-নিকাশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এভাবে শাস্তি চলতেই থাকবে।’
হক আদায় না করার অর্থ হল জাকাত আদায় না করা। যা অন্য রেওয়ায়েতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।
সোনা-রূপ জাতীয় দিনার, দিরহাম, চাকা বা টুকরা, অলংকারসহ সকল কিছুর ওপরই জাকাত ফরজ, কারণ সোনা-রূপা সংক্রান্ত সকল আয়াত বা হাদীসে এগুলো ব্যাপকভাবে বর্ণিত হয়েছে।
আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
أَنَّ امْرَأَةً أَتَتْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَعَهَا ابْنَةٌ لَهَا وَفِي يَدِ ابْنَتِهَا مَسَكَتَانِ غَلِيظَتَانِ مِنْ ذَهَبٍ فَقَالَ لَهَا أَتُعْطِينَ زَكَاةَ هَذَا قَالَتْ لَا قَالَ أَيَسُرُّكِ أَنْ يُسَوِّرَكِ اللَّهُ بِهِمَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ سِوَارَيْنِ مِنْ نَارٍ قَالَ فَخَلَعَتْهُمَا فَأَلْقَتْهُمَا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَتْ هُمَا لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَلِرَسُولِهِ-رواه النسائي وأبو داؤد
‘একদা একজন মহিলা তার মেয়েকে সাথে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এল, ঐ মেয়ের হাতে স্বর্ণের দু’টি ভারি ও মোটা বালা ছিল, তা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি এগুলোর জাকাত দাও? মেয়ে বলল, না। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি এটা পছন্দ কর যে কিয়ামত দিবসে আল্লাহ এগুলোর দ্বারা দু’টি আগুনের চুড়ি বানিয়ে তোমার হাতে পড়িয়ে দিবেন? মেয়েটি এ কথা শুনে বালা দু’টি খুলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিয়ে বলল : এগুলো আল্লাহর রাস্তায় দান করলাম।
অন্য এক হাদীসে আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন
دَخَلَ عَلَيَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرَأَى فِي يَدَيَّ فَتَخَاتٍ مِنْ وَرِقٍ فَقَالَ مَا هَذَا فَقُلْتُ صَنَعْتُهُنَّ أَتَزَيَّنُ لَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ أَتُؤَدِّينَ زَكَاتَهُنَّ قُلْتُ لَا أَوْ مَا شَاءَ اللَّهُ قَالَ هُوَ حَسْبُكِ مِنْ النَّارِ-رواه أبو داؤد
‘একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এলেন তখন আমার হাতে কয়েকটি রূপার আংটি ছিল, তখন তিনি বললেন, এগুলো কি? আমি বললাম, আপনার সামনে সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য এগুলো তৈরি করেছি। তিনি বললেন, তুমি কি এগুলোর জাকাত প্রদান কর? আমি বললাম না, তিনি বললেন, তোমার জাহান্নামে যাওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট।

সোনা-রূপার নিসাব পূর্ণ হলে তার ওপর জাকাত ফরজ :
স্বর্ণের নিসাব হল ২০ দিনার। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
ليس عليك شيئ حتى يكون لك عشرون دينارا
‘সোনা বিশ দিনার পরিমাণ হলে তাতে জাকাত ফরজ হবে।’
দিনার বলতে ইসলামী দিনার উদ্দেশ্য যার ওজন এক মিছকাল। মিছকাল সমান সোয়া চার গ্রাম। সে হিসাবে সোনার নিসাব হল ৮৫ গ্রাম। যা এ দেশীয় মাপে ৭.৫ ভরি হয়।
রূপার নিসাব হলো পাঁচ আওকিয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ليس فيما دون خمس اواق صدقة
‘পাঁচ আওকিয়ার কম রূপার ওপর জাকাত নেই।’

এক আওকিয়া সমান ৪০ ইসলামী দিরহাম। সে মতে রূপার নিসাব হল ২০০ দিরহাম। আর এক দিরহাম হল এক মিছকালের সাত দশমাংশ, এর মোট ওজন ১৪০ মিছকাল, যার বর্তমান প্রচলিত ওজন হল, ৫৯৫ গ্রাম। যা এ দেশীয় মাপে ৫২.৫ ভরি, তা থেকে ৪০ ভাগের ১ ভাগ জাকাত দেয়া ফরজ।

কাগজের তৈরি নোটের ওপরও জাকাত ওয়াজিব। কারণ এ নোটগুলো রূপার বদলেই চলমান, সুতরাং এগুলো রূপার স্থলাভিষিক্ত হবে এবং এর মূল্য রূপার নিসাবের সমপরিমাণ হলে, তাতে জাকাত ওয়াজিব হবে।
সোনা-রূপা ও কাগজের নোট ইত্যাদির ওপর সর্বাবস্তায় জাকাত ওয়াজিব। চাই এগুলো হাতে মজুদ থাকুক বা অন্য কারো কাছে ঋণ থাকুক। এ থেকে বুঝা যায়, সব ধরনের ঋণ (চাই তা কর্জ হোক বা বিক্রয়কৃত মূল্য হোক অথবা ভাড়া বা এ ধরনের যাই হোক না কেন) তার ওপর জাকাত ওয়াজিব। উক্ত ঋণ আদায় হওয়া পর্যন্ত প্রতি বছর অন্যান্য সম্পদের সাথে সাথে এগুলোর জাকাত দিতে হবে। এক সাথেও দিতে পারে, যদি ঋণ এমন লোকের কাছে থাকে যে স্বচ্ছল এবং যার থেকে সহজে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আর যদি দরিদ্র বা প্রতারক লোককে ঋণ দেয়া থাকে, তাহলে ঋণ আদায় হওয়ার পর শুধুমাত্র ঐ বছরের জাকাত প্রদান করবে।
সোনা-রূপা ছাড়া অন্য সকল খনিজ পদার্থের ওপর জাকাত ওয়াজিব নয়। তবে যদি সেগুলো ব্যবসার জন্য হয়ে থাকে, তবে নিসাব পরিমাণ হলে অবশ্যই জাকাত দিতে হবে।

চতুর্থ প্রকার : ব্যবসায়ী পণ্য। স্থাবর-অস্থাবর সকল প্রকার ব্যবসায়ী পণ্যের ওপর জাকাত ওয়াজিব। বছরান্তে সেগুলোর মূল্য নির্ধারণ করত, তার ৪০ ভাগের এক ভাগ জাকাত দিতে হবে। মেশিনারিজ বা খুচরা যন্ত্রাংশ ও এ জাতীয় ক্ষুদ্র পণ্যের ব্যবসায়ীদের কর্তব্য হল, ছোট-বড় সকল অংশের মূল্য নিধারণ করে নিবে, যাতে কোন কিছু বাদ না পড়ে। পরিমাণ নির্ণয়ে যদি জটিলতা দেখা দেয়, তাহলে সতর্কতামূলক বেশী দাম ধরে জাকাত আদায় করবে, যাতে সে সম্পূর্ণ দায়িত্ত্ব থেকে মুক্ত হতে পারে।
মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু যথা খাবার, পানীয়, আসবাবপত্র, বাহন, পোষাক, (সোনা-রূপা ছাড়া) অলংকারসহ ব্যবহার্য পণ্যের ওপর জাকাত আবশ্যক নয়। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মুসলিমদের গোলাম, বাদী, ঘোড়া এগুলোর ওপর জাকাত নেই।’
ভাড়া দেয়ার জন্য প্রস্তুতকৃত পণ্যের ওপর জাকাত আসবে না। তবে সেগুলো থেকে প্রাপ্ত অর্থের ওপর নিসাব পূর্ণ হবার পর জাকাত আসবে।

প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা! আসুন আমাদের সম্পদের জাকাত যথাযথ ভাবে আদায় করে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করি, এতে আমাদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ সাধিত হবে, কোন অকল্যাণ বা ক্ষতি হবে না। আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদের প্রদানকৃত জাকাত কবুল করেন এবং অবশিষ্ট সম্পদে বকরত দান করেন। আমীন

পুর্বে এখানে প্রকাশিত

রমজান মাসের ফযীলত
এক. এ মাসের সাথে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুকনের সম্পর্ক রয়েছে; আর তা হলো সিয়াম পালন
দুই. রমজান হল কুরআন নাযিলের মাস
তিন. রমজান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় ও জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয় শয়তানদের
চার. রমজান মাসে রয়েছে লাইলাতুল কদর
পাঁচ. রমজান মাস দোয়া কবুলের মাস
ছয়. রমজান পাপ থেকে ক্ষমা লাভের মাস
সাত. রমজান জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের মাস
আট. রমজান মাসে সৎকর্মের প্রতিদান বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেয়া হয়
নয়. রমজান ধৈর্য ও সবরের মাস

সিয়ামের ফযীলত
এক. সিয়াম শুধু আল্লাহর জন্য
দুই. সিয়াম আদায়কারী বিনা হিসাবে প্রতিদান লাভ করে থাকেন
তিন. সিয়াম ঢাল ও কুপ্রবৃত্তি থেকে সুরক্ষা
চার. সিয়াম জাহান্নাম থেকে বাঁচার ঢাল
পাঁচ. সিয়াম হল জান্নাত লাভের পথ
ছয়. সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ আ-ল্লাহর কাছে মেশকের চেয়েও উত্তম
সাত. সিয়াম ইহকাল ও পরকালের সাফল্যের মাধ্যম
আট. সিয়াম কেয়ামতের দিন সুপারিশ করবে
নয়. সিয়াম হল গুনাহ মাফের কারণ ও গুনাহের কাফফারা

রমজান মাসে যে সকল নেক আমল করা যায়
(১) কিয়ামুল লাইল
(২) আল-কুরআন খতম ও তিলাওয়াত
(৩) সদকা বা দান
(৪) এতেকাফ
(৫) ওমরাহ আদায়
(৬) রোজাদারদের ইফতার করানো
(৭) দোয়া-প্রার্থনা করা
(৮) তওবা করা
(৯) অধিক হারে নেক আমল করতে চেষ্টা অব্যাহত রাখা
(১০) ইসলামী শিক্ষা অর্জনের প্রতি গুরুত্ব প্রদান

সিয়ামের হিকমত ও তার লক্ষ্য এবং উপকারিতা
(১) তাকওয়া বা আল্লাহ-ভীতি
(২) শয়তান ও কু-প্রবৃত্তির ক্ষমতা দুর্বল করা
(৩) সিয়াম আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ ও তার দাসত্ব প্রতিষ্ঠার প্রশিক্ষণ
(৪) ঈমানকে দৃঢ় করা, মোরাকাবা ও আল্লাহর ভয় সৃষ্টি করা
(৫) ধৈর্য, সবর ও দৃঢ় সংকল্পের প্রশিক্ষণ
(৬) আখেরাতমুখী করার প্রশিক্ষণ
(৭) আল্লাহর অনুগ্রহের প্রতি শুকরিয়া ও সৃষ্টি জীবের সেবা করার দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়া
(৮) সিয়াম সমাজ সংস্কারের একটি বিদ্যাপীঠ
(৯) শারীরিক শক্তি ও সুস্থতা অর্জন

সিয়ামের আদব
(১) ইসলামকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুসরণ করা
(২) সকল প্রকার অন্যায় থেকে বিরত থাকা
(৩) ইখলাস অবলম্বন করা
(৪) সুন্নতে নববীর অনুসরণ
(৫) সিয়াম ভঙ্গের সহায়ক বিষয়গুলো পরিহার করে চলা
(৬) ভয় ও আশা পোষণ করা
(৭) সাহরী খাওয়া
(৮) দেরি করে সাহরী খাওয়া
(৯) সাহরীর সময়কে সুযোগ মনে করে কাজে লাগানো
(১০) ইফতারি করতে বিলম্ব না করা
কেন বিলম্ব না করে ইফতার ও দেরিতে সাহরী খাবেন
(১১) যে সকল খাদ্য দ্বারা ইফতার করা মুস্তাহাব
(১২) ইফতারের সময় দোয়া করা
(১৩) বেশি করে ভাল ও কল্যাণ মূলক কাজ করা এবং কুরআন পাঠ করা
(১৪) ইবাদত-বন্দেগীতে তাওফীক দানের ব্যাপারে আল্লাহর অনুগ্রহ অনুধাবন করা
(১৫) দরিদ্র ও সহায় -সম্বলহীনদের প্রতি মমতা ও তাদের সেবা করা
(১৬) সুন্দর চরিত্র, ধৈর্য ও উত্তম আচরণ দ্বারা নিজেকে সজ্জিত করুন
(১৭) অপচয় ও অযথা খরচ থেকে বিরত থাকুন
(১৮) রুটিন করে সময়টাকে কাজে লাগান
(১৯) দুনিয়াবি ব্যস্ততা কমিয়ে দিন
(২০) খাওয়া ও নিদ্রায় ভারসাম্য বজায় রাখুন

দশ প্রকার মানুষ যাদের জন্য সিয়াম পালন ফরজ নয়
প্রথম : কাফের বা অমুসলিম
দ্বিতীয় : অপ্রাপ্ত বয়স্ক
অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়ে কখন বালেগ বা প্রাপ্তবয়স্ক হয়
তৃতীয় : পাগল
চতুর্থ : অশীতিপর বৃদ্ধ যে ভাল-মন্দের পার্থক্য করতে পারে না
পঞ্চম : যে ব্যক্তি সিয়াম পালনের সামর্থ্য রাখে না
কীভাবে মিসকিনকে খাদ্য প্রদান করবে
ষষ্ঠ : মুসাফির
সপ্তম : যে রোগী সুস্থ হওয়ার আশা রাখে
অষ্টম : ঋতু-স্রাবগ্রস্ত নারী
নবম : গর্ভবতী ও দুগ্ধ দান কারী নারী
দশম : যে অন্যকে বাঁচাতে যেয়ে সিয়াম ভেঙে ফেলতে বাধ্য হয়

পুর্বে এখানে প্রকাশিত

অনেকদিন পর আরএমসি তে আসলাম।

ইসলামের মূল পাঁচটি রুকনের মধ্যে তৃতীয় রুকন হলো রোজা। রোজা শব্দটি ফারসি যার আরবি প্রতিশব্দ হলো সিয়াম। সিয়ামের আভিধানিক অর্থ থেমে যাওয়া, বিরত থাকা বা বিরত রাখা। ইসলামি শরিয়তে সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়ত সহকারে কোনো কিছু পানাহার, পাপাচার ও কামাচার থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম বা রোজা। শুধু অনাহারে দিনযাপনের নাম সিয়াম নয়। শুধু উপবাসে স্বাস্থ্যগত কিছু উপকার হলেও হতে পারে, কিন্তু নৈতিক ও আত্মিক উন্নতির মুখ দেখা যেতে পারে না।

রোজা এবং তারাবির তাৎপর্য ও গুরুত্ব অপরিসীম। দিনের বেলায় সিয়াম সাধনা আর রাতের বেলায় কিয়াম সাধনা মাহে রমজানের প্রধান বৈশিষ্ট্য। রোজা এবং তারাবিহ্‌ দ্বারা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বিগত জীবনের যাবতীয় পাপাচার মোচন করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। যারা একমাত্র রাব্বুল আলামীনকে রাজি-খুশি করার নিমিত্তে রোজা এবং তারাবিহ্‌ আদায় করবে পাকপরওয়ার দিগারের রহমত ও মাগফিরাতের দুয়ার তাদের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাবে। হজরত আবু হোরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলে করীম সাঃ রমজান শরীফে তারাবির প্রতি উৎসাহ প্রদান করতেন। তিনি এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রমজান রজনীতে ঈমানসহ ও পুণ্যের আশায় তারাবির নামাজ আদায় করবে তার পূর্ববর্তী পাপগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে। (মুসলিম শরিফ)।
নবী করীম সাঃ বলেন, হে লোক সকল! তোমাদের কাছে একটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ও বরকতপূর্ণ মাস আগমন করেছে। এ মাসে এমন একটি রাত রয়েছে, যা ১ হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। গোটা রমজান মাসটিই আমাদের কাছে এক মহাপবিত্র এবং সওয়াব অর্জনের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। আর এ মাসের মধ্যে এমন একটি রাত রয়েছে যে রাতে ইবাদত-বন্দেগি করলে ১ হাজার মাসের ইবাদত-বন্দেগির চেয়েও অধিক ফজিলত হাসিল করা যায়। ওই রাতটি হলো ২৭ রমজানের রাত। এ রাতেই পবিত্র কুরআন মাজিদ নাজিল হয়েছিল বলেই রাতটি এত মর্যাদাপূর্ণ। আর কুরআন মাজিদ হলো মানবজাতির জন্য হিদায়াতের দিশারী।

বিশ্বজাহানের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার বান্দাদের মাহে রমজানের মাধ্যমে বিশেষ সুযোগ দান করেছেন¬ নবী করীম সাঃ এরশাদ করেছেন¬ রমজানের প্রথম অংশ হচ্ছে রহমত, মধ্যভাগ মাগফিরাত আর শেষ ভাগ হলো দোজখ থেকে মুক্তি।

হজরত আবু হোরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, মহানবী সাঃ বলেছেন, প্রত্যেক জিনিসের জাকাত রয়েছে, আর শরীরের জাকাত হলো রোজা। (ইবনে মাজাহ) আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার আলোকে প্রমাণিত হয়, রোজা স্বাস্থ্যের জন্য কল্যাণকর এবং জটিল রোগ থেকে মুক্তিদানকারী।

রোজাদাররা সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকেন।
প্রথমত, যারা পাপ থেকে মুক্ত এবং অধীর আগ্রহে রমজানের জন্য অপেক্ষমাণ থাকেন। রমজান এদের জন্য অফুরন্ত রহমতের বার্তা নিয়ে উপনীত হয়।

দ্বিতীয়ত, যারা পাপে লিপ্তঃ তবে রমজানের আগমন উপলক্ষে তওবা করতে থাকেন এবং পাপ থেকে দূরে থাকার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করতে থাকেন। রমজানের প্রথম দশক রোজা রাখার পর দ্বিতীয় দশক শুরু হওয়ার সাথে সাথে তাদের জন্য ক্ষমার ঘোষণা শোনানো হয়।

তৃতীয়ত, ওই সব লোক যাদের পাপের বোঝা অত্যন্ত ভারী। কিন্তু রমজান আসার সাথে সাথে তারা তওবা করেন ও ভক্তিসহকারে রোজা রাখতে শুরু করেন। শেষ দশকে উপনীত হওয়ার পর এসব লোকের জন্যও জাহান্নাম থেকে মুক্তি নছিব হয়ে যায়।

সহীহ হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, হজরত আবু হোরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত প্রিয় নবী সাঃ বলেছেন, আল্লাহ বলেন, রোজা ছাড়া বনী আদমের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য, রোজা আমার জন্য, আমি নিজেই তার প্রতিদান দেবো। (বুখারি শরিফ)।

রমজান মাস ও রোজার ফজিলত অপরিসীম। আবু হোরায়রা রাঃ বর্ণিত, বিশ্বনবী সাঃ বলেছেন¬ যখন রমজান মাস শুরু হয়ে যায় তখন শয়তান ও অবাধ্য উচ্ছৃঙ্খল জিনদের বন্দী করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় (রমজানের শেষ পর্যন্ত)। আর একজন ঘোষক এরূপ ঘোষণা দিতে থাকে¬ হে কল্যাণ অন্বেষণকারী! অগ্রগামী হও। হে অকল্যাণের সন্ধানী! থেমে যাও। আর আল্লাহ জাহান্নাম থেকে পাপীদের দলে দলে মুক্তি দেন। আর এ ঘোষণা প্রতি রাতে দেয়া হয়ে থাকে। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, আহমদ)।

হজরত সাহল ইবনে সাদ রাঃ থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবীজী সাঃ এরশাদ করেছেন, বেহেশতের আটটি দরজা রয়েছে। তন্মধ্যে একটি দরজার নাম ‘রাইয়ান’। ওই দরজা দিয়ে শুধু রোজাদাররাই প্রবেশ করবেন। (বুখারি, মুসলিম শরিফ)।

হজরত আবু হোরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হুজুর আকরাম সাঃ এরশাদ করেছেন, রোজাদারের জন্য দু’টি আনন্দ রয়েছে¬ একটি হচ্ছে তার ইফতারের সময় এবং দ্বিতীয়টি তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাতের সময়। (বুখারি, মুসলিম) রোজাদার তার এই মহা আনন্দের প্রথমটি দুনিয়াতে লাভ করবেন আর দ্বিতীয়টি আখিরাতে লাভ করবেন।

হজরত আবু হোরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন¬ প্রিয়নবী সাঃ এরশাদ করেছেন, যার হাতে আমি মুহাম্মদের প্রাণ তাঁর কসম, রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ তায়ালার কাছে মিশকের সুগন্ধের চেয়ে উৎকৃষ্ট। (বুখারি, মুসলিম)।

রমজান রহমত ও বরকতের মাস, গুনাহ মাফের মাস। জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাস। রিজিক বৃদ্ধির মাস। পারস্পরিক সহমর্মিতা ও সাম্যের মাস। ৭০ গুণ সওয়াব বৃদ্ধির মাস। এ মাসেই জান্নাতের সব দরজা খুলে দেয়া হয়। জাহান্নামের সব দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। শবেকদরের মাস। এ রাতেই পবিত্র কুরআন শরিফ অবতীর্ণ হয়। বেশি বেশি নফল ইবাদত-বন্দেগির মাস। হাদিস শরিফে আছে, রমজানের নফল ইবাদতের সওয়াব ফরজের পরিমাণ দেয়া হয়, আর ফরজের সওয়াব বৃদ্ধি পেয়ে ১০ গুণ বেড়ে যায়। (মিশকাত)।

বিশ্বনবী সাঃ এরশাদ করেছেন, কেউ যখন রমজানের প্রথম রোজাটি করে ফেলে তখন আল্লাহ পাক তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে ৭০ বছরের দূরত্বে সরিয়ে দেন। (বুখারি শরিফ)।

নবী করীম সাঃ এরশাদ করেছেন, মানুষের আমলের সওয়াব ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, বান্দা একমাত্র আমার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যেই ইন্দ্রিয় তৃপ্তি এবং খাদ্য-পানীয় ত্যাগ করে।

হজরত আবু হোরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী সাঃ বলেছেন, কেউ যদি মিথ্যা কথা বলে, মিথ্যাচার পরিত্যাগ না করে, শুধু খাদ্য ও পানীয় পরিত্যাগ করায়, পরনিন্দা করে পরচর্চা করে, আল্লাহর সে রোজার কোনো প্রয়োজন নেই। (বুখারি শরিফ)। মহানবী সাঃ আরো বলেন, এমন অনেক রোজাদার আছে তাদের রোজা দ্বারা শুধু পিপাসাই লাভ হয়। (দারেমি)।

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা যখন রোজা রাখবে, তখন অশ্লীল বাক্যালাপ করবে না। চেঁচামেচি করবে না। যদি কেউ গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে আসে বা তোমাকে গালি-গালাজ করে, তবে বলে দেবে, আমি রোজাদার। (ঝগড়া-ফ্যাসাদ আমার পক্ষে সাজে না) (বোখারি, মুসলিম)।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ বর্ণিত, প্রিয় নবীজী সাঃ এরশাদ করেছেন, যারা সেহরি খায় তাদের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত প্রেরণ করা হয়। ফেরেশতারাও তাদের জন্য রহমতের দোয়া করতে থাকেন। (তিবরানি)।

হজরত সহল রাঃ বর্ণিত, নবী করীম সাঃ এরশাদ করেছেন, লোকেরা তত দিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে, যত দিন তারা ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করার বিষয়টির প্রতি গুরুত্বারোপ করবে। (বুখারি, মুসলিম)।

হজরত সালমান ইবনে আমর রাঃ বর্ণিত, নবী করীম সাঃ এরশাদ করেছেন, তোমরা খেজুর দিয়ে রোজার ইফতার করবে। কেননা খেজুর অত্যন্ত বরকতময় ফল। যদি খেজুর না পাও তবে পানি দিয়ে ইফতার করো। কেননা পানি শরীরের ভেতর-বাহির পাক করে দেয়। (তিরমিজি)।

হজরত আবু হোরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলে পাক সাঃ বলেছেন, রোজাদার ব্যক্তিসহ তিন ব্যক্তির দোয়া কখনো ব্যর্থ হয় না
১. ইফতারের সময় রোজাদার ব্যক্তির দোয়া
২. ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ এবং
৩. অত্যাচারিত ব্যক্তি।

পবিত্র রমজানের রাত জেগে যে ব্যক্তি তারাবিহ ও তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে পারে, তার জীবনের সব গোনাহ্‌ মাফ হয়ে যায়। অনুরূপ পূর্ণ ঈমানসহ যে ব্যক্তি শবেকদরে নফল নামাজ পড়বে, তারও জীবনের সব গোনাহ্‌ মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারি, মুসলিম)।
পবিত্র রমজানের শেষের ১০ দিন অতি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সেই ১০ দিনের মাঝেই রয়েছে লাইলাতুল কদর। (বুখারি শরিফ)।

লাইলাতুল কদরের এবাদত বান্দার যাবতীয় গুনাহ্‌গুলো ক্ষমা করে দেয়। (বুখারি শরিফ)।

নবী করীম সাঃ রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফের মাধ্যমে শবে কদর তালাশ করেছেন এবং করতে বলেছেন।

পবিত্র রমজান মাসে ফরজ জাকাত দেয়ার ফজিলত অনেক বেশি। এতিম, বিধবা, গরিব এবং বঞ্চিত অসহায়দের জন্য আল্লাহ তায়ালার তরফ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা হচ্ছে জাকাত। এটা সচ্ছল বিত্তবানদের ওপর দরিদ্র শ্রেণীর ন্যায্য হক; অনুগ্রহের দান নয়। রমজান মাসে যদি হকদারের সে হক পরিশোধ করে দেয়া হয় তবে এর দ্বারা যেমন দাতার সওয়াব সত্তর গুণ বেড়ে যায় তেমনি অসহায় হকদারদের রোজা রাখা ও ঈদের আনন্দ উপভোগের ক্ষেত্রেও বিশেষ সহায়তা হয়।

হে রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে রমজানের রোজা রাখার তৌফিক দান করুন। আমিন


পুর্বে এখানে প্রকাশিত

এক সময় রানা সিরিজের অনেক বই পড়েছি এখন আর পড়তে পারিনা সময়ের অভাবে আজ মাসুদরানা ভক্তদের জন্য আমার এ উপহার ।

আক্রমণ ১-২

অন্ধকারের বন্ধু

আসছে সাইক্লোন
বাঘের খাঁচা
বেদুইন কন্যা
বিদেশী গুগ্তচর ১
বিদেশী গুগ্তচর ২
বিষচক্র
বন্দী রানা
বোষ্টন জ্বলছে
চারিদিকে শত্রু ১ ২
দূরন্ত ঈগল
দূর্গম দুর্গ
গোপন শত্রু
আই লাভ ইউ ম্যান ১ ২ ৩
জাত গোক্ষর
জিম্মি
কালো নেশা
আসছে সাইক্লোন
বাঘের খাঁচা
খুনের দায়
কনক তরী
মেজর রাহাত
শান্তি  দূত ১
শান্তি দুত ২
মিশন তেল আবিব
অরক্ষিত জলসীমা
রানা সাবধান
রেড ড্রাগন
সেই পাগল বৈজ্ঞানিক
স্বপ্নের ভালবাসা
স্বর্ণ দীপ
টার্গেট বাংলাদেশ
ধ্বংস পাহাড়
দুঃসাহসিক

হারানো মিগ
আই লাভ ইউ ম্যান
মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা
প্রতিহিংন্সা ১ ২
রাত্রি অন্ধকার
স্বর্ণ খনি
শয়তানের দুসর

আমার এ উপহার আশাকরি রানা সিরিজের ভক্তদের নিরাশ করবে না।

৩৩

(৫ replies, posted in আত্মপরিচয়)

ফোরামে স্বাগতম।

৩৪

(৩ replies, posted in আত্মপরিচয়)

সেলিম রাজ তুমিও এস গেছ দেখছি। :তালি:    :তালি:   :তালি:  আর এম সি'তে তোমাকে স্বাগতম।

৩৫

(৬ replies, posted in আত্মপরিচয়)

আরএমসি তে স্বাগতম।

অবসর.কম আবারো আপনাদের জন্য নিয়ে এল ২টি আকর্ষনীয় প্যাকেজের ফ্রি হোষ্টিং ।

প্যাকেজ ০১
Plan Name: Free_100
Web Space: 100MB
Bandwidth: 2000MB
E-mail Accounts: 05
MySQL Databases: 05
FTP Accounts: 01
Addon Domains: 05
Parked Domains: 05
Sub-Domains: 05

শর্ত : প্রতিমাসে কমপক্ষে ২টি পোষ্ট বা হোম পেজ এ অবসর.কম এর ৪৬৮x৬০ সাইজের ব্যানার ব্যবহার করতে হবে।

প্যাকেজ ০২

Plan Name: Standard
Web Space: 200MB
Bandwidth: 5000MB
E-mail Accounts: 20
MySQL Databases: 20
FTP Accounts: 20
Addon Domains: 20
Parked Domains: 20
Sub-Domains: 20
শর্ত : প্রতিমাসে কমপক্ষে ৫টি পোষ্ট বা হোম পেজ এ অবসর.কম এর ৭২৯x৯০ সাইজের ব্যানার ব্যবহার করতে হবে।

বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন। অবসর.কম
ধন্যবাদ সবাইকে।

খালি ঘুম পায়।

উপল BD wrote:

দারুন কাজের জিনিস দিলেন ভাই,রেপু দিতেই হয়।

ধন্যবাদ উপল ভাই, আরো খুশি হয়েছি পোষ্টটাকে ষ্টিকি করায় ।

সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে চায়না মোবাইল সেটের ছড়াছড়ি চলছে, মোবাইল সেট সম্পর্কে ভাল ধারণা না থাকলে আপনি দেখে চিনতেই পারবেন না সেটটি আসল না নকল। হুবুহ বান্ডেড কোম্পানী যেমন নকিয়া, মটোরলা, সনি এরিকসন ইত্যাদি নামীদামী কোম্পানীর সেটের মতই দেখতে ফিচার ফাংশনও একই, এক্ষেত্রে যে কেউ ধোকায় পরে যাওয়া অসম্ভব কিছু না। আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো কিভাবে আপনি মোবাইল সেট যাচাই করে নিবেন। সেট আসল না নকল। প্রথমেই আপনি এখানে  সাইটে যান ।(মোবাইলের অপেরা মিনি ব্রাউজার দিয়ে এই সাইট ভাল ভাবে দেখা যায়)
নীচের স্ক্রীণশট এ দেখানো ছকে আপনার IME নাম্বার দিয়ে analyes বটন এ ক্লিক করুন আর দেখুন মুহুর্তেই আপনার সাবমিট IME নাম্বারের সেটটির ডিটেইলস চলে আসছে।

http://www.chobimohol.com/image-913D_4C244510.jpg

এখন প্রশ্ন আসতে পারে IME নাম্বার কিভাবে পাব ? IME নাম্বার পেতে আপিন চাপুন *#06# অথবা আপনি ব্যাটারি খুলে সেটের গায়ে সংযুক্ত লেবেলে ও নম্বরটি দেখতে পাবেন। এটি একটি ১৫ ডিজিটের ইউনিক নম্বর।। ব্যস এবার আর ধোকা নয়। মোবাইল সেট কিনার আগেই যাচাই করে নিন। আপনার মোবাইল সেট গুনগতমান, ধন্যবাদ সবাইকে ।

পুর্বে এখানে প্রকাশিত

বিষয়টি উপলব্ধি করার জন্য ইবাদত সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা একান্তই প্রয়োজন। ইবাদত শব্দটি অত্যন্ত ব্যাপক অর্থবোধক একটি শব্দ। অভিধানে শব্দটিকে প্রধানত পাঁচটি অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। যথা
১. বাধ্য হওয়া,অনুগত হওয়া,পরাধীনতা।
২. বিনয়ের সাথে আনুগত্য করা।
৩. পুজা করা।
৪. কোন কিছু নিজের জন্য অত্যাবশ্যক করে নেয়া। যেমন সে অত্যাবশ্যক করেছে,তাকে পৃথক হতে দেয়নি।
৫. বিরত রাখা,যেমন বলা হয় কোন জিনিষ তোমাকে আমা হতে বিরত রেখেছে।
পবিত্র কোরআনে এ পাঁচটি অর্থেই ইবাদত শব্দটি ব্যবহার হয়েছে। সাধারনত ইবাদত যদি ইসলামী রীতিতে না হয় তবে তাকে আমাদের দেশে পূজা আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।

ইবাদতের পারিভাষিক সংজ্ঞা :
নবী রাসুলগণের বর্ণনানুযায়ী আল্লাহর নির্দেশ পালনের মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য করাকে ইবাদত বলে।
ইবাদত একটি ব্যাপক পরিভাষা,আল্লাহ পছন্দ করেন-সন্তুষ্ট হন এমন কথা ও কাজ সবই ইবাদতের অর্ন্তভুক্ত। তা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য যাই হউক না কেন।
আল্লাহর একাত্মবাদের ঘোষনা ও তাঁর দ্বীনের বিধি-বিধান প্রতিপালন করাকে ইবাদত বলে। বিণয় ও নম্রতা ইবাদতের মুল।
সার কথা হলো আল্লাহর নির্দেশিত রাসুল (সাঃ) প্রদর্শিত বিধান মতে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যা কিছুই করা হয় তা-ই ইবাদত । সুতরাং বুঝা গেল মুমিন বান্দা শরীয়াত মোতাবেক যা-ই করুন না কেন তাই ইবাদতের মধ্যে গণ্য।
“মহান আল্লাহ যথার্থই বলেছেন”
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
“আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি। ”। (সুরা আয-যারিআত-৫৬)

“ইবাদত/আ’মল বিশুদ্ধ হওয়া কবুল হওয়ার শর্ত”
ইবাদত কাকে বলে একথা জানার পর একথাটিও আমাদের জানা প্রয়োজন যে,এই ইবাদত আল্লাহর দরবারে কীভাবে কবুল হয়? ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার ভিত্তি/শর্ত বা কি ? কারন ইবাদত করার আসল উদ্দেশ্যই হলো কবুল হওয়া।

“ইবাদত কবুলের প্রথম শর্ত”
বান্দার যেকোন ধরনের ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার জন্য প্রথম ও অন্যতম শর্ত হচ্ছে “একনিষ্টতা”। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইবাদত করা। এটি রুহ ও নফসের সাথে সম্পৃক্ত। ইবাদতের এটাই আসল কথা। যে ইবাদতে আল্লাহর সন্তুষ্টি ভিন্ন অন্য কোন মাকসুদ(উদ্দেশ্য) থাকে সে ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। কোরআনের অসংখ্য আয়াত ও বহু হাদিসে এর প্রমান পাওয়া যায় যেমন-
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاء وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ
আর তাদেরকে হুকুম করা হয়েছে যে, তারা যেন একনিষ্ট হয়ে আন্তরিক ভাবে আল্লাহর দ্বীন পালনের মাধ্যমে একমাত্র তাঁরই ইবাদত করে। আর তারা যেন সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দান করে। এটাই হচ্ছে সরল ও মজুবত দ্বীন (ব্যবস্থা) (সুরা আল-বাইয়্যেনা-আয়াত ০৫)

আমিরুল মোমেনিন হযরত উমর ফারুক (রাঃ) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি,সমস্ত কাজের ফলাফল নিয়ত অনুযায়ী হবে। প্রত্যেকেই যে নিয়তে কাজ করবে সে তাই পাবে। কাজেই যার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সন্তুষ্টির জন্য হয়েছে তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সন্তুষ্টির জন্য হয়েছে (বলে পরিগনিত হবে) । আর যে ব্যক্তি কোন পার্থিব স্বার্থ উদ্ধারের ইচ্ছায় কিংবা কোন মহিলাকে বিয়ে করার আশায় হিজরাত করবে তার সেই হিজরাত সেই উদ্দেশ্যে হয়েছে বলে গণ্য হবে। (বুখারী ও মুসলিম)

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন,আল্লাহ তোমাদের শরীর ও চেহারার দিকে ভ্রুক্ষেপ করেন না,বরং তোমাদের মনের ও কর্মের দিকে দৃষ্টিপাত করেন। (মুসলিম শরীফ)

“ইবাদত কবুলে ২য় শর্ত”:
ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার দ্বিতীয় অত্যাবশ্যকীয় শর্ত হলো-আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আপনি যে ইবাদত করছেন-তা অবশ্যই সুন্নাহ মোতাবেক হতে হবে। এটা বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে সম্পৃক্ত। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে ইবাদতটি করা হচ্ছে তা নিজ খেয়াল খুশিমত করা যাবে না। ইবাদতের জন্য আপনার হাত,পা, চোখ, কান, জবান, চেহারা, বিবেক-বুদ্ধি, অর্থ-সম্পদ ইত্যাদি আপন খুশিমত পরিচালনা করলে চলবে না বরং তা সুন্নাহ মোতাবেক হতে হবে। ইবাদতটি আপনাপর দৃষ্টিতে যতই সুন্দর, যুক্তিযুক্ত, আকর্ষনীয়, সময়োপযোগী, কল্যাণময়ী হউক না কেন, আপনার নিয়ত যতই ভাল থাক না কেন,যতই আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করেন না কেন সেই সেই ইবাদত যদি সুন্নাহ মোতাবেক না হয় তবে সেটি ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে না। যে আ’মল আপনি করেছেন তার নমুনা নকশা গ্রহণ করতে হবে মহা নবী (সাঃ) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের আ’মল হতে।ইবাদত কবুলের দ্বিতীয় অত্যাবশ্যকীয় শর্তের উপরে কোরআন-হাদীসের অসংখ্য দলিল বিদ্যমান।

এ ব্যাপারে বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য নীচে তুলে ধরা হলো।
”এমন কথার কোনই মুল্য নাই যা আ’মল করা হয় না। কথা ও আ’মল কোনটাই গ্রহণযোগ্য হবে না যতক্ষন না নিয়তের খুলছিয়াত থাকবে। কথা, আ’মল নিয়ত কেনটাই গ্রহণযোগ্য হবে না যতক্ষন না এসব সুন্নাত মোতাবেক হবে।” (ইরশাদুত-তালেবিন)

তাফসিরে কাবিরে আল্লামা ফখরুদ্দিন রাযী (রঃ) বলেন,আল্লাহ তা’আলার বাণী,”উত্তম আ’মল এর ব্যাখ্যা মুফাসসীরীনে কেরাম কয়েক ভাবে করেছেন। একটি হলো এই যে, আ’মল এখলাসের সাথে নির্ভূল পন্থায় না হয়,তবে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। অনুরুপভাবে যদি আ’মল এখলাস শুন্য হয় নির্ভূল হয় তবে তাও গ্রহণযোগ্য হবে না। এখলাসের সাথে হওয়ার অর্থ হলো-আ’মল একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হওয়া। নির্ভূল হওয়ার অর্থ হলো-আ’মল সুন্নাত মোতাবেক হওয়া।” (তাফসিরে কাবীর ৮ম খন্ড,২৪৩ পৃষ্ঠা আল আবুদিয়্যাহ২০-২১পৃঃ)

আহমদ ইবনে আবুল হাওয়ারী (রঃ) বলেন, “যে বব্যক্তি সুন্নত পরিপন্থী কোন কাজ করবে কার আ’মল বাতিল বলে গণ্য হবে।” (ই’তিছাম,১ম খন্ড ১১৪ পৃঃ)
হযরত আবু সুফিয়ান সাওরী (রঃ) বলেন,”কোন কথা,আ’মল ও নিয়ত সুন্নাত মোতাবেক না হল্ তা গ্রহণযোগ্য হবে না।” (তালবীসু ইবলিস,পৃঃ ৯)

হযরত আঃ কাদির জিলানী (রঃ) বলেন, “আ’মলবিহীন কথা গ্রহণযোগ্য হবে না। ইখলাস ও সুন্নাতের অনুসরনবিহীন আ’মলও গ্রহণযোগ্য হবে না।” ( ফতহে রব্বানী,১ম খন্ড,পৃঃ ১৪) এ ব্যাপারে বিস্তারিত দেখুন-ফতুয়ায়ে রহিমিয়া,২য় খস্ড.২৮০-২৮২ পৃঃ)

সুতরাং মিলাদ উৎসব বা ঈদে মিলাদুন্নবী পালন কারী ভাইদের মধ্যে নিয়তের খুলছিয়াত থাকলেও যেহেতু উৎসব পালন সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়, উৎসব পালন করা রাসুলে করীম, (সাঃ) সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাতও নয় সেহেতু উক্ত মিলাদ বা ঈদে মিলাদুন্নবী উৎসবটি কোনক্রমেই ইবাদতে গণ্য হওয়ার যোগ্য নয়।

পুর্বে এখানে প্রকাশিত

৪১

(৬ replies, posted in আত্মপরিচয়)

আরএমসি তে স্বাগতম।

ধন্যবাদ সাইফ ।

আর ,এম,সিতে প্রায়ই সমস্যাটি হয় চলতি টপিকে ক্লিক করলে কয়েক সেকেন্ড পরে নীচের স্ক্রীণশট এ দেখানো মতো একটি পেজ চলে আসে ।
http://www.chobimohol.com/image-B08F_4C1B43E1.jpg
এ সমস্যার আশু সমাধান আশা করছি।

রেপিডশেয়ার ছাড়াও ইজিশেয়ার, ফাইলফ্যাক্টরী, আপলোডিং.কম, ইউটিউব, মেগাশেয়ার,
ডিপোজিটফাইলস, আপলোড.টো, নেটলোড, মেগাআপলোড, মেগাভিডিও এসব সাইট হতে এখন আপনি আরামসে রিজিউম সাপোর্টসহ ফাইল ডাউনলোড করতে পারবেন । তো কথা বলে সময় নষ্ট না করে আসুন জেনে নেই কিভাবে করব।আপনি প্রথমে এইওয়েবসাইটটি  তে প্রবেশ করুন। প্রবেশ করে নীচের ছবিতে দেখানো মতে I Agree তে ক্লিক করুন।
http://www.chobimohol.com/image-80DF_4C1A0D5B.jpg

এরপর নীচের ছবির মত একটি বক্স আসবে এখানে আপনার লিন্কটি পেষ্ট করে ডাউনলোড এ ক্লিক করুন।
http://www.chobimohol.com/image-6580_4C1A0D5B.jpg


এবার আসুন এক নজরে দেখে নেই কি কি সাইট সাপোর্ট করে ।

http://www.chobimohol.com/image-7F9C_4C1A0D5B.jpg

ধন্যবাদ সবাইকে ।

পুর্বে এখানে প্রকাশিত

dr.শামীম আপনি কিন্তু আপনার এ বিষয়টি নিয়ে একটা নতুন টপিক খুলতে পারতেন। ধন্যবাদ শেয়ার করায়।

ম্যারাডোনার সেই গোলটির কথা মনে আছে আপনাদের ? সেই যে ঈশ্বরের হাতে গোল এ জন্যই আর্জেনটিনাকে আমি পছন্দ করি না।

দারুন একটা সচেতনতামুলক পোষ্ট উপহার দিলেন অচেনা ভাই। ধন্যবাদ আপনাকে। সাথে +

শেয়ার করায় ধন্যবাদ,অচেনা ভাই।

ভালই হইছে । আজাইরা প্যাচাল পাড়ন যাইব।

sawontheboss4 wrote:

আল্লাহ আমাদের মাফ করুন আর রসূল কে ভালোবাসার তৌফিক দিন।

আমিন ছুম্মা আমিন!!!

অচেনাকেউ wrote:

যে কোন দিনই সেটা করা যেতে পারে।   
ধন্যবাদ ইলিয়াস ভাই, আরেকটি সচেতনতামূলক পোষ্ট উপহার দেবার জন্য।

অবশ্যই বাবা-মা, আন্তীয়-পরিজন যে কারো জন্য যে কোন সময় আপনি দোআর আয়োজন, দান খয়রাত করতে পারেন। ঐদিনই করতে হবে ভাবাটাই বেৎআত যা গুনাহের সমতুল্য, আপনাকেও ধন্যবাদ অচেনা ভাই।