Topic: মিলাদ উৎসব বা ঈদে মিলাদুন্নবী কি ইবাদত ?

বিষয়টি উপলব্ধি করার জন্য ইবাদত সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা একান্তই প্রয়োজন। ইবাদত শব্দটি অত্যন্ত ব্যাপক অর্থবোধক একটি শব্দ। অভিধানে শব্দটিকে প্রধানত পাঁচটি অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। যথা
১. বাধ্য হওয়া,অনুগত হওয়া,পরাধীনতা।
২. বিনয়ের সাথে আনুগত্য করা।
৩. পুজা করা।
৪. কোন কিছু নিজের জন্য অত্যাবশ্যক করে নেয়া। যেমন সে অত্যাবশ্যক করেছে,তাকে পৃথক হতে দেয়নি।
৫. বিরত রাখা,যেমন বলা হয় কোন জিনিষ তোমাকে আমা হতে বিরত রেখেছে।
পবিত্র কোরআনে এ পাঁচটি অর্থেই ইবাদত শব্দটি ব্যবহার হয়েছে। সাধারনত ইবাদত যদি ইসলামী রীতিতে না হয় তবে তাকে আমাদের দেশে পূজা আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।

ইবাদতের পারিভাষিক সংজ্ঞা :
নবী রাসুলগণের বর্ণনানুযায়ী আল্লাহর নির্দেশ পালনের মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য করাকে ইবাদত বলে।
ইবাদত একটি ব্যাপক পরিভাষা,আল্লাহ পছন্দ করেন-সন্তুষ্ট হন এমন কথা ও কাজ সবই ইবাদতের অর্ন্তভুক্ত। তা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য যাই হউক না কেন।
আল্লাহর একাত্মবাদের ঘোষনা ও তাঁর দ্বীনের বিধি-বিধান প্রতিপালন করাকে ইবাদত বলে। বিণয় ও নম্রতা ইবাদতের মুল।
সার কথা হলো আল্লাহর নির্দেশিত রাসুল (সাঃ) প্রদর্শিত বিধান মতে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যা কিছুই করা হয় তা-ই ইবাদত । সুতরাং বুঝা গেল মুমিন বান্দা শরীয়াত মোতাবেক যা-ই করুন না কেন তাই ইবাদতের মধ্যে গণ্য।
“মহান আল্লাহ যথার্থই বলেছেন”
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
“আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি। ”। (সুরা আয-যারিআত-৫৬)

“ইবাদত/আ’মল বিশুদ্ধ হওয়া কবুল হওয়ার শর্ত”
ইবাদত কাকে বলে একথা জানার পর একথাটিও আমাদের জানা প্রয়োজন যে,এই ইবাদত আল্লাহর দরবারে কীভাবে কবুল হয়? ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার ভিত্তি/শর্ত বা কি ? কারন ইবাদত করার আসল উদ্দেশ্যই হলো কবুল হওয়া।

“ইবাদত কবুলের প্রথম শর্ত”
বান্দার যেকোন ধরনের ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার জন্য প্রথম ও অন্যতম শর্ত হচ্ছে “একনিষ্টতা”। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইবাদত করা। এটি রুহ ও নফসের সাথে সম্পৃক্ত। ইবাদতের এটাই আসল কথা। যে ইবাদতে আল্লাহর সন্তুষ্টি ভিন্ন অন্য কোন মাকসুদ(উদ্দেশ্য) থাকে সে ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। কোরআনের অসংখ্য আয়াত ও বহু হাদিসে এর প্রমান পাওয়া যায় যেমন-
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاء وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ
আর তাদেরকে হুকুম করা হয়েছে যে, তারা যেন একনিষ্ট হয়ে আন্তরিক ভাবে আল্লাহর দ্বীন পালনের মাধ্যমে একমাত্র তাঁরই ইবাদত করে। আর তারা যেন সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দান করে। এটাই হচ্ছে সরল ও মজুবত দ্বীন (ব্যবস্থা) (সুরা আল-বাইয়্যেনা-আয়াত ০৫)

আমিরুল মোমেনিন হযরত উমর ফারুক (রাঃ) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি,সমস্ত কাজের ফলাফল নিয়ত অনুযায়ী হবে। প্রত্যেকেই যে নিয়তে কাজ করবে সে তাই পাবে। কাজেই যার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সন্তুষ্টির জন্য হয়েছে তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সন্তুষ্টির জন্য হয়েছে (বলে পরিগনিত হবে) । আর যে ব্যক্তি কোন পার্থিব স্বার্থ উদ্ধারের ইচ্ছায় কিংবা কোন মহিলাকে বিয়ে করার আশায় হিজরাত করবে তার সেই হিজরাত সেই উদ্দেশ্যে হয়েছে বলে গণ্য হবে। (বুখারী ও মুসলিম)

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন,আল্লাহ তোমাদের শরীর ও চেহারার দিকে ভ্রুক্ষেপ করেন না,বরং তোমাদের মনের ও কর্মের দিকে দৃষ্টিপাত করেন। (মুসলিম শরীফ)

“ইবাদত কবুলে ২য় শর্ত”:
ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার দ্বিতীয় অত্যাবশ্যকীয় শর্ত হলো-আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আপনি যে ইবাদত করছেন-তা অবশ্যই সুন্নাহ মোতাবেক হতে হবে। এটা বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে সম্পৃক্ত। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে ইবাদতটি করা হচ্ছে তা নিজ খেয়াল খুশিমত করা যাবে না। ইবাদতের জন্য আপনার হাত,পা, চোখ, কান, জবান, চেহারা, বিবেক-বুদ্ধি, অর্থ-সম্পদ ইত্যাদি আপন খুশিমত পরিচালনা করলে চলবে না বরং তা সুন্নাহ মোতাবেক হতে হবে। ইবাদতটি আপনাপর দৃষ্টিতে যতই সুন্দর, যুক্তিযুক্ত, আকর্ষনীয়, সময়োপযোগী, কল্যাণময়ী হউক না কেন, আপনার নিয়ত যতই ভাল থাক না কেন,যতই আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করেন না কেন সেই সেই ইবাদত যদি সুন্নাহ মোতাবেক না হয় তবে সেটি ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে না। যে আ’মল আপনি করেছেন তার নমুনা নকশা গ্রহণ করতে হবে মহা নবী (সাঃ) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের আ’মল হতে।ইবাদত কবুলের দ্বিতীয় অত্যাবশ্যকীয় শর্তের উপরে কোরআন-হাদীসের অসংখ্য দলিল বিদ্যমান।

এ ব্যাপারে বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য নীচে তুলে ধরা হলো।
”এমন কথার কোনই মুল্য নাই যা আ’মল করা হয় না। কথা ও আ’মল কোনটাই গ্রহণযোগ্য হবে না যতক্ষন না নিয়তের খুলছিয়াত থাকবে। কথা, আ’মল নিয়ত কেনটাই গ্রহণযোগ্য হবে না যতক্ষন না এসব সুন্নাত মোতাবেক হবে।” (ইরশাদুত-তালেবিন)

তাফসিরে কাবিরে আল্লামা ফখরুদ্দিন রাযী (রঃ) বলেন,আল্লাহ তা’আলার বাণী,”উত্তম আ’মল এর ব্যাখ্যা মুফাসসীরীনে কেরাম কয়েক ভাবে করেছেন। একটি হলো এই যে, আ’মল এখলাসের সাথে নির্ভূল পন্থায় না হয়,তবে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। অনুরুপভাবে যদি আ’মল এখলাস শুন্য হয় নির্ভূল হয় তবে তাও গ্রহণযোগ্য হবে না। এখলাসের সাথে হওয়ার অর্থ হলো-আ’মল একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হওয়া। নির্ভূল হওয়ার অর্থ হলো-আ’মল সুন্নাত মোতাবেক হওয়া।” (তাফসিরে কাবীর ৮ম খন্ড,২৪৩ পৃষ্ঠা আল আবুদিয়্যাহ২০-২১পৃঃ)

আহমদ ইবনে আবুল হাওয়ারী (রঃ) বলেন, “যে বব্যক্তি সুন্নত পরিপন্থী কোন কাজ করবে কার আ’মল বাতিল বলে গণ্য হবে।” (ই’তিছাম,১ম খন্ড ১১৪ পৃঃ)
হযরত আবু সুফিয়ান সাওরী (রঃ) বলেন,”কোন কথা,আ’মল ও নিয়ত সুন্নাত মোতাবেক না হল্ তা গ্রহণযোগ্য হবে না।” (তালবীসু ইবলিস,পৃঃ ৯)

হযরত আঃ কাদির জিলানী (রঃ) বলেন, “আ’মলবিহীন কথা গ্রহণযোগ্য হবে না। ইখলাস ও সুন্নাতের অনুসরনবিহীন আ’মলও গ্রহণযোগ্য হবে না।” ( ফতহে রব্বানী,১ম খন্ড,পৃঃ ১৪) এ ব্যাপারে বিস্তারিত দেখুন-ফতুয়ায়ে রহিমিয়া,২য় খস্ড.২৮০-২৮২ পৃঃ)

সুতরাং মিলাদ উৎসব বা ঈদে মিলাদুন্নবী পালন কারী ভাইদের মধ্যে নিয়তের খুলছিয়াত থাকলেও যেহেতু উৎসব পালন সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়, উৎসব পালন করা রাসুলে করীম, (সাঃ) সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাতও নয় সেহেতু উক্ত মিলাদ বা ঈদে মিলাদুন্নবী উৎসবটি কোনক্রমেই ইবাদতে গণ্য হওয়ার যোগ্য নয়।

পুর্বে এখানে প্রকাশিত

http://www.rongmohol.com/uploads/1805_prochesta_logo.gif

http://www.obosor.com/banner_468.gif


Re: মিলাদ উৎসব বা ঈদে মিলাদুন্নবী কি ইবাদত ?

তাফসীরে কবীর-এর লিখক হযরত ফখরুদ্দীন রাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,

مَا مِنْ شَخْصٍ قَرَاَ  مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلٰى مِلْحٍ اَوْ بُرٍّ اَوْشَىء اٰخَرَ مِنَ الْمَأكُوْلاتِ اِلا ظَهَرَتْ فِيْهِ الْبَركَةُ فِىْ كُلِّ شَىء

অর্থ: “যে ব্যক্তি মীলাদ শরীফ পাঠ করে বা মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করে, লবণ, গম বা অন্য কোন খাদ্যদ্রব্যের উপর ফুঁক দেয়, তাহলে এই খাদ্যদ্রব্যে অবশ্যই বরকত প্রকাশ পাবে। এভাবে যে কোন কিছুর উপরই পাঠ করুক না কেন।” (তাতে বরকত হবেই)। সুবহানাল্লাহ! (আন নি’য়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম)
হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন,

وَصَلَ اِِلَيْهِ مِنْ ذٰلِكَ الْمَأكُوْلِ فَاِنَّهٗ يَضْطَرِبُ وَلا يَسْتَقِرُّ حَتى يَغْفِرَ اللهُ لاٰكِلِهٖ.

অর্থ: “উক্ত মুবারক খাদ্য মীলাদ শরীফ পাঠকারীর বা মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপনকারীর জন্য আল্লাহ পাক-এর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি তাঁকে ক্ষমা না করা পর্যন্ত সে ক্ষান্ত হয়না।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’য়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম)
হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন,

وَاِنْ قُرِئَ مَوْلِدُ النَّبِىِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلٰى مَاءٍ فَمَنْ شَرِبَ مِنْ ذٰلِكَ المْاَءِ دَخَلَ قَلْبَهُ اَلْفَ نُوْرٍ وَّرَحَمَةٍ وَخَرَجَ مِنْهُ اَلْفُ غِلٍّ وَعِلَّةٍ وَلايَمُوْتُ ذٰلِكَ الْقَلْبُ يَوْمَ تَمُوْتُ الْقُلُوْبُ.

অর্থ: “যদি মীলাদ শরীফ পাঠ করে বা মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করে কোন পানিতে ফুঁক দেয়, অতঃপর উক্ত পানি কেউ পান করে তাহলে তাঁর অন্তরে এক হাজার নূর ও রহমত প্রবেশ  করবে। আর তাঁর থেকে হাজারটি বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ রোগ দূর হবে যে দিন সমস্ত ক্বলব (মানুষ) মৃত্যুবরণ করবে সেদিনও ঐ মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পানি পানকারী ব্যক্তির অন্তর মৃত্যুবরণ করবেনা।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’য়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম)
হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন,

وَمَنْ قَرَأَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلٰى دَرَاهِمَ مَسْكُوْكَةٍ فِضَّةٍ كَانَتْ اَوْ ذَهَبًا وَخَلَطَ تِلْكَ الدَّرَاهِم بِغَيْرِهَا وَقَعَتْ فِيْهَا الْبَرْكَةُ وَلا يَفْتَقِرُ صَاحِبُهَا وَلا تَفْرُغُ يَدُهٗ بِبَرْكَةِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَمَ.

অর্থ: “যে ব্যক্তি মীলাদ শরীফ পাঠ করে বা মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করে রৌপ্যের অথবা স্বর্ণের দেরহামসমূহের উপর ফুঁক দেয় অতঃপর তা অন্য জাতীয় মুদ্রার সাথে মিশায় তাহলে তাতে অবশ্যই বরকত হবে এবং এর পাঠক কখনই ফকীর হবে না। আর উক্ত পাঠকের হাত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর (মীলাদ শরীফ পাঠের) বরকতে কখনো খালি হবে না।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’য়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম)
মুসলমানদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশি কিতাব লিখেছেন, যিনি হিজরী দশম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও ইমাম, সুলত্বানুল আরিফীন হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

قَالَ سُلْطَانُ الْعَارِفِيْنَ الْاِمَامُ جَلالُ الدِّيْنِ السُّيُوْطِىُّ قَدَّسَ اللهُ سِرَّهٗ وَنَوَّرَ ضَرِيْحَهُ فِىْ كِتَابِهِ الُمُسَمّٰى الْوَسَائِلِ فِىْ شَرْحِ الشَّمَائِلِ" مَا مِنْ بَيْتٍ اَوْ مَسْجِدٍ اَوْ مَحَلَّةٍ قُرِئَ فِيْهِ مَوْلِدُ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلا حَفَّتِ الْمَلٰئِكَةُ ذٰلِكَ الْبَيْتَ اَوِ الْمَسْجِدَ اَوِ الْمَحَلًّةَ  صَلَّتِ الْمَلٰئِكَةُ عَلٰى اَهْلِ ذٰلِكَ الْمَكَانِ وَعَمَّهُمُ اللهُ تَعَالٰى بِالرَّحْمَةِ وَالرِّضْوَانِ واَمَّا الْمُطَوَقُّوْنَ بِالنُّوْرِ يَعْنِىْ جِبْرَائيلَ وَمِيْكَائِيْلَ وَاِسْرَافِيْلَ وَعَزْرَائِيْلَ عَلَيْهِمُ السَّلامُ فَاِنَّهُمْ يُصَلُّوْنَ عَلٰى مَنْ كَانَ سَبَبًا لِقَرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

অর্থ: সুলত্বানুল আরিফীন হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘ওসায়িল ফী শরহি শামায়িল’ নামক কিতাবে বলেন, “যে কোন ঘরে অথবা মসজিদে অথবা মহল্লায় মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয় সেখানে অবশ্যই আল্লাহ পাক-এর ফেরেশতাগণ বেষ্টন করে নেন। আর তাঁরা সে স্থানের অধিবাসীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করতে থাকেন এবং আল্লাহ পাক তাঁদেরকে স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টির আওতাভুক্ত করে নেন। আর নূর দ্বারা সজ্জিত প্রধান চার ফেরেশতা অর্থাৎ হযরত জিবরাঈল, মীকাইল, ইসরাফিল ও  আজরাইল আলাইহিমুস সালাম মীলাদ শরীফ পাঠকারীর উপর ছলাত-সালাম পাঠ করেন।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’য়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম)
হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন,

مَا مِنْ مُسْلِمٍ قَرَاََ فِىْ بَيْتِهٖ مَوْلِدَ النَّبِىِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلا رَفَعَ اللهُ سُبْحَانَهٗ وَتَعَالٰى اَلْقَحَطَ وَالْوَبَاءَ وَالْحَرْقَ وَالْغَرَقَ وَالاَفَاتِ وَالْبَلِيَّاتِ وَالْبَغْضَ وَالْحَسَدَ وَعَيْنَ السُّوْءِ وَاللُّصُوْصِ عَنْ اَهْلِ ذٰلِكَ الْبَيْتِ فَاِذَا مَاتَ هَوَّنَ اللهُ عَلَيْهِ جَوَابَ مُنْكِرٍ وَنَكِيْرٍ وَيَكُوْنُ فِىْ مَقْعَدِ صِدْقٍ عِنْدَ مَلِيْكٍ مُّقْتَدِرٍ.

অর্থ: “যখন  কোন মুসলমান নিজ বাড়িতে মীলাদ শরীফ পাঠ করে তখন সেই বাড়ির অধিবাসীগণের উপর থেকে আল্লাহ পাক অবশ্যই খাদ্যাভাব, মহামারি, অগ্নিকা-, ডুবে মরা, বালা-মুছিবত, হিংসা-বিদ্বেষ, কু-দৃষ্টি, চুরি ইত্যাদি উঠিয়ে নেন। যখন উক্ত ব্যক্তি মারা যান তখন আল্লাহ পাক তাঁর জন্য মুনকার-নকীরের সুওয়াল-জাওয়াব সহজ করে দেন। আর তাঁর অবস্থান হয় আল্লাহ পাক-এর সন্নিধানে সিদকের মাক্বামে।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’য়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম)



Re: মিলাদ উৎসব বা ঈদে মিলাদুন্নবী কি ইবাদত ?

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,

عَنْ اَبِى الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّهٗ مَرَّ مَعَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلٰى بَيْتِ عَامِرِ الاَنْصَارِىِّ وَكَانَ يُعَلِّمُ وَقَائِعَ وِلادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَبْنَائِهٖ وَعَشِيْرَتِهٖ وَيَقُوْلُ هٰذَا الْيَوْمَ هٰذَا الْيَوْمَ فَقَالَ عَلَيْهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلامُ اِنَّ اللهَ فَتَحَ لَكَ اَبْوَابَ الرَّحْمَةِ وَالْمَلائِكَةُ كُلُّهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ لَكَ  مَنْ فَعَلَ فِعْلَكَ نَجٰى نَجٰتَكَ.

অর্থ: হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে হযরত আবু আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে নিয়ে আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস; এই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যমীনে তাশরীফ এনেছেন এবং ইত্যাদি ইত্যাদি ঘটেছে)।
এতদশ্রবণে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা উনার রহমতের দরজা আপনার জন্য উম্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতাগণ আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ আপনার মত এরূপ কাজ করবে, সেও আপনার মত নাযাত (ফযীলত) লাভ করবে।” সুবহানাল্লাহ! (আত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর- শায়খ হাফিয আবিল খত্তাব ইবনে দাহিয়্যা, মাওলূদুল কাবীর- লি-ইমাম হাফিয ইবনে হাযর মক্কী, দুররুল মুনাযযাম- লিল আল্লামা আবিল ক্বাসিম মুহম্মদ বিন উছমান, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইমাম জালালুদ্দনি সুয়ূতী, ইশবাউল কালামি ফী ইছবাতিল মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়ামি- মাওলানা সালামতুল্লাহ ছিদ্দীক্বী কানপুরী, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী- বেশারতুল্লাহ মাদানীপুরী)
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে,

عَنْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمَا اَنَّهٗ كَانَ يُحَدِّثُ ذَاتَ يَوْمٍ فِىْ بَيْتِهٖ وَقَائِعَ وِلادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِقَوْمٍ ، فَيَسْتَبْشِرُوْنَ وَيُحَمِّدُوْنَ اللهَ وَيُصَلُّوْنَ عَلَيْهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاِذَا جَاءَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ حَلَّتْ لَكُُمْ  شَفَاعَتِىْ.


অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা উনার নিজগৃহে সমবেত ছাহাবীগণকে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক-এর প্রশংসা তথা তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর (ছলাত-সালাম) দরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় রসূল-এ পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় উপস্থিত হলেন এবং (মীলাদ শরীফ পাঠের অনুষ্ঠান দেখে) বললেন: “তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব।” সুবহানাল্লাহ! (আত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর- শায়খ হাফিয আবিল খত্তাব ইবনে দাহিয়্যা, মাওলূদুল কাবীর- লি-ইমাম হাফিয ইবনে হাযর মক্কী, দুররুল মুনাযযাম- লিল আল্লামা আবিল ক্বাসিম মুহম্মদ বিন উছমান, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইমাম জালালুদ্দনি সুয়ূতী, ইশবাউল কালামি ফী ইছবাতিল মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়ামি- মাওলানা সালামতুল্লাহ ছিদ্দীক্বী কানপুরী, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী- বেশারতুল্লাহ মাদানীপুরী)



Re: মিলাদ উৎসব বা ঈদে মিলাদুন্নবী কি ইবাদত ?

বিশ্বখ্যাত ইমাম মুহাদ্দিছ, মুফাসসির হযরতুল আল্লামা আহমদ শিহাবুদ্দীন হাইতামী (হাইছামী) শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর লিখিত বিশ্ব সমাদৃত, সর্বজন স্বীকৃত ও সুপ্রসিদ্ধ মীলাদ শরীফ-এর কিতাব “আন নি’য়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম”-এ বর্ণিত রয়েছে,

قَالَ اَبُوْ بَكْرِنِ الصِّدِِّيْقِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَمًا عَلٰى قِرَائَةِ  مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ رَفِيْقِىْ  فِىْ الْجَنَّةِ.

অর্থ: (নবীদের পরে শ্রেষ্ঠ মানুষ) হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “যে ব্যক্তি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফ পাঠ উপলক্ষে এক দিরহাম ব্যয় করবে, সে জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবে।” সুবহানাল্লাহ!

وَقَالَ عُمَرُ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ  مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ  عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ  اَحْيَا الاِسْلامَ.

অর্থ: হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “যে ব্যক্তি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফকে বিশেষ মর্যাদা দিল, সে মূলত ইসলামকেই পুনরুজ্জীবিত করলো।” সুবহানাল্লাহ!

وَقَالَ عُثْمَانُ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ  مَنْ اَنْفَقَ  دِرْهَمًا عَلٰى قِرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَاََنَّمَا شَهِدَ  غَزْوَةَ  بَدْرٍ وَحُنَيْنٍ.

অর্থ: হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “যে ব্যক্তি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফ পাঠ উপলক্ষে এক দিরহাম খরচ করল, সে যেন বদর ও হুনাইন যুদ্ধে শরীক থাকলো।” সুবহানাল্লাহ!

وَقَالَ عَلِىٌّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ وَكَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ سَبَبًا لِِّقِرَائَتِهٖ لايَخْرُجُ مِنَ الدُّنْيَا اِلا بِالاِيْمَانِ وَيَدْخُلُ الْجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ.

অর্থ: হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “যে ব্যক্তি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফ পাঠের কারণে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করলো, সে ব্যক্তি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” সুবহানাল্লাহ!
অতএব যারা বলে যে, হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন তথা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের যামানায় মীলাদ শরীফ-এর কোনরূপ অস্তিত্ব ছিল না, তাদের সে কথা সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা এবং এটা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি মিথ্যারোপের কারণে কাট্টা কুফরী।