Topic: গোপন ডায়েরী
আজ শনিবার,শনির দশায় যে প্রবল বিশ্বাস ছিল তাহা নহে;তবুও পুর্ববর্তী বিশ্বাসের মাত্রাটা বেশ বাড়িয়া গেল যখন প্রকৌশলের প্রথম ক্লাসে শনিপতির দর্শন মিলিল।পূর্বদিনই পুর্ববর্তী বড় ভাইদের দ্বারা জ্ঞাত হইয়াছি যে, জগতে যে সকল বিরল ও আশ্চর্য ঘটনা রহিয়াছে, পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিজ হস্ত দ্বারা নিজ কর্ণমর্দন না করার ব্যাপার তাহা অপেক্ষা অধিক আশ্চর্যজনক।
গুজব ছড়াইয়া পড়িতে বিলম্ব হইলনা তবে এও আশ্বস্ত হইলাম যে, যে পন্ডিতের প্রভাবে নিজের হাত আপন কানের উপর অত্যাচারী হইয়া ওঠে ,তিনি তৈলমর্দনকে স্বীয় সহধর্মিণীর ন্যায় পছন্দ করিয়া থাকেন।সুতরাং আগের দিনই খাঁটি তৈল বোতলজাত করিয়া লইয়াছিলাম।
আমি ছিলাম ইংরেজী বর্ণমালার প্রথম অক্ষরের গ্রুপে। অদৃষ্টগুণে দ্বিতীয় বর্ণের গ্রুপে উপস্থিত হইয়া অপমানিত হইবার প্রহর গুনিতেছিলাম। সবার নাম ডাকা হইলেও যখন আমারটা ডাকা হইলনা তখনই বুঝিলাম আমি এই সেকশনের নই।
অপমানিত হইতে হইলনা শুধু নিজ সেকশনে যাইতে নির্দেশ করা হইল।আমি তড়িঘড়ি করিয়া আজ্ঞা পালনে প্রবৃত্ত হইলাম।
সেখানে যিনি ক্লাস লইতেছিলেন তিনি আইনস্টাইন গোছের মানুষ। ভেতরে ঢুকিতেই ন্ম্র সুরে তিনি বলিলেন, ''
দেরি হল কেন ?" আমি ততোধিক নম্র সুরে বলিলাম, 'স্যার, পথ ভুল হয়ে অন্য সেকশনে কিছু সময় নষ্ট হয়েছে।' বাক্যের শেষ শব্দ উচ্চারিত হইবার পূর্বেই তিনি সিংহের ন্যায় গর্জন করিয়া উঠিলেন। আমার মাথা কর্ণবন্ধবী দ্বারা আবদ্ধ ছিল যাহা তাঁহার ভদ্রতা পরিমাপক যন্ত্র দ্বারা অস্বীকৃত হইয়াছিল। আমার মাথা অনুর্বর হইলেও আশু করণীয় কার্য শুরু করিতে বিলম্ব হইলনা। তথাপিও এই কর্ম সম্পাদনে সাহায্য করিতে পন্ডিত মহাশয় নিজে উৎসাহী হইলেন, সজোরে হ্যাঁচকা টান মারিয়া ইহা খুলিয়া কহিলেন 'পোরো ব্যাগে পোরো' । তাহার কিয়ৎ পূর্বেই ইহা ব্যাগে পোরা হইয়াছিল।
কয়েকজন ছাত্রছাত্রী গাদাগাদি করিয়া এক জায়গায় দাঁড়াইয়া রহিয়াছিল। আমাকে তাহা অপেক্ষাও উচ্চাসনে দাঁড়াইতে আদেশ করা হইল যাহাতে আমার চেহারা সকলের দৃষ্টিগোচর হয় । আমাদের সংখ্যা নিত্যান্ত নগণ্য ছিলনা , মনের ভিতর অনবরত উদয় হইতেছিল 'দশে মিলে করি কাজ-হারি জিতি নাহি লাজ ।' কান মলিতে হইলনা,এইরূপ অপরাধ আর সংঘটিত হবে না, এই প্রতিজ্ঞা পু্নঃপু্নঃ করিয়া তবেই মুক্তি পাইলাম ।
এইবার পন্ডিত মহাশয় নিজের বক্তব্য আলোচনা করিতে আরম্ভ করিলেন । আলোচনার আলোচ্য বিষয় এই যে, তিনি নিজে সাংঘাতিক পাংচুয়াল এবং অন্যদের ব্যাপারেও খুব কড়া ।ঘুরাইয়া ফিরাইয়া তিনি বারবার সেই কথাই বুঝাইতে লাগিলেন, আমরাও ভালই বুঝিলাম । এইবার কে কি বুঝিল তাহা উপস্থাপন করিবার পালা ।যাহাদের তৈল মর্দনের কৌশল জানা ছিল তাহারা আপন কার্যগুণে পন্ডিত মহাশয়ের অন্তরের কাছাকাছি বিচরন করিতে লাগিল । কিন্ত আমি? সেই গুনের কিঞ্চিত মালিক হওয়া সত্বেও তাহা হইতে বঞ্চিত হইলাম কারন আমার তৈলের বোতল ক্লাসে ঢুকিবার সঙ্গে সঙ্গেই ভাঙ্গিয়া গিয়াছে ।
Fh Rigan
03.02.08