আমার জীবনে দেখা অন্যতম বিস্ময়কর ঘটনাগুলোর অন্যতম হচ্ছে দেশ বিভাজন রেখায় সভ্যতা ও সংস্কৃতির পার্থক্য। আমার বাড়ি সীমান্তসনলগ্ন হওয়ার কারনে বিষয়টি খুব খাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে।
একটি গ্রামের দুইটি পাড়া যদি দুই দেশের সীমান্তে অবস্থিত হয় তবে আপাত দৃষ্টিতে গ্রাম দুটির মানুষের কথাবার্তা , চাল-চলন হুবহু একই রকম হবার কথা, কিন্তু বাস্তবে তা হয় ন...া, দুই পাড়ার মানুষের মধ্যে অনেক পার্থক্য চোখে পড়ে।
এমন ক্ষেত্রে যে পাড়া ইন্ডিয়ার ভেতরে পড়েছে সেখানকার মানুষ শারীরিকভাবে অপেক্ষাকৃত দূর্বল গড়নের, এরা বেশ ভীতু আর সাংঘাতিক কঞ্জুস ধরণের। দয়া-মায়া ও নিঃসার্থ পরোপকারে এদের বেশ অনাগ্রহ। পক্ষান্তরে বাংলা সীমান্তের মানুষ শক্ত গড়নের, এরা সাহসী ও অপেক্ষাকৃত উদারচিত্তের; কোন কোন মানুষ বেশ হিংস্র প্রকৃতির হয়। তাছাড়া ধনী-দরিদ্র বৈষম্য বাংলাদেশের তুলনায় ইণ্ডিয়াতে বেশি। এ গুলো হচ্ছে আমার পর্যবেক্ষণকৃত মতামত।

এবার আসল কথায় আসি। মননশীলতা ও সংস্কৃতির দিক থেকে আমরা ইন্ডিয়ান্ডের তুলনায় ঢের এগিয়ে। কিন্তু একটা দিক থেকে আমরা তাদের থেকে পিছিয়ে, সেটা হল , “খাসলত”। বাঙালীদের খাসলতখুবই নিচু মানের। বিদেশীদের অন্ধ অনুকরণ না করলে আমাদের মনে সুখ আসেনা, নিজেদের ঐতিহ্য- সংস্কৃতি সস্তাদরে বিকিয়ে দিয়ে চড়া দামে ফালতু সংস্কৃতির চাদর গায়ে না ঘুরলে আমাদের ইমেজ বাড়েনা। ভারতের আবর্জনা ছাড়া আমাদের কম্পোস্ট সারও তৈরী করা চলেনা। চিংকুপিয়াহে কিংবা মুন্নী বদনাম হুঁইয়ে বাজনা ছাড়া আমাদের বিয়ে শাদী, বনভোজন কিছুই পূর্ণতা পায় না। ঈদ-পূজা যাই হোক না কেন , কাহারুক খান স্যুট প্যান্ট না পরলে বাঙ্গাল দাদাবাবুদের ইজ্জত ঢাকেনা, ‘কারিনা কামিজ-সালোয়ার’ ছাড়া খোকার মায়ের আহ্লাদ পূরণ হয় না। আরো আছে ভয়ংকর দিক। চটি গল্প অবলম্বনে রচিত স্টারপ্লাসের বস্তাপচা পরকীয়া কাহিনি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়া দিদিমনি, ভাবী সাহেবানরা নিদ্রা যায় আর স্বপ্নে দেখেন পাশেরবাড়ির ছোকরাটা তার গা টিপে দিচ্ছে। এই হচ্ছে আমাদের অস্তিত্বের গন্তব্য। নিজেরা উন্নত হওয়া সত্বেও আমরা অবনত ও নোংরা ভারতীও সংস্কৃতি গিলছি। এসবই কিন্তু খাসলত।

পহেলা বৈশাখ আসছে, আসছে বাঙালী সংস্কৃতি ফুটিয়ে তুলবার দিন। কিন্তু পোড়া কপাল আমাদের; গরীবেরা যে পান্তা আর পোড়া মরিচ খেয়ে জীবন ধারণ করে , পহেলা বৈশাখে নির্লজ্জ ধনী বাঙ্গালরা চড়া দামে টাটকা গরম পান্তা কিনে খেয়ে সেই গরিবদের প্রচ্ছন্ন ব্যাঙ্গ ও উপহাস করে বলে, “ আমরাও বাঙ্গাল রে….হে... হে... হে, আমরাও...। কিছুক্ষণ পরপর পান্তা খাওয়ার ঢেকুর উঠবে, তাতে উগলে বের হবে আমাদের সংস্কৃতি- ঐতিহ্য, ঘটা করে টিভি চ্যানেলগুলো তা প্রচার করবে।

সংস্কৃতি ইন্সটল দেবার বিষয় নয়, অভ্যাসের মাধ্যমে অর্জনের বিষয়। বসে বসে সুখপাঠ্য অনেক কিছুই রচনা করা যায়, তাতে কাজের কাজ কিছুই হয় না। নিজের মেরুদন্ড সোজা না করে দাঁড়ালে সীমান্তে কাঁটাতারে বেড়ায় ঝুলে থাকতে হবে , উলঙ্গ হয়ে বি.এস.এফ এর হাতেমার খেতে হবে। এজন্য দরকার ভীনদেশী সংস্কৃতি প্রতিরোধ করা, নিজেদেরকে মেলে ধরা ।

পহেলা বৈশাখ হোক নিজের ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরবার মোক্ষম হাতিয়ের। রামেকের সবাইকে বাংলা নববর্ষের অগ্রীম শুভেচ্ছা।

এফ এইচ রিগ্যান
৩০ শে চৈত্র, ১৪১৮

valo

মীরজাফরদের পরিণতি সবসময়ই করুণ হয়। এই করুণ পরিণতির শিকার হওয়া সর্বশেষ ছাগু হচ্ছে্ন চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় । এই মানুষটি জন্মসূত্রে হয়েছিলেন ক্ষমতাধর ব্যক্তি, বাংলার মাটি পানিতে বেড়ে ওঠা রাজার স্বাভাবিক চিন্তা থাকা উচিৎ ছিল বাংলার মানুষের জন্য কাজ করা, এদেশের মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করা। কিন্তু তিনি তা করেননি, তিনি করেছেন ঠিক তার উল্টাটা। ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধে এই পশু হাত মিলিয়েছিল ফাকিস্তানি দানবদের সাথে। স্বাধীনতার পর ক্ষমাপ্রিয় বাঙ্গালী তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছিল, তিনি এদেশে আসেননি, এমনকি তার মার অনুরোধও অগ্রাহ্য করে তিনি পাকিস্তানে থেকে যান। সে এক বিশাল পাকিপ্রেম, মজনুকে ছাড়া যেমন লাইলি থাকতে পারেনা ঠিক তেমনি।

কিন্তু সময়ের স্রোতে রাজার সে ভরা যৌবন বিগত হয়েছে, সে এখন চামড়া ঢিলা পতিতা মাত্র, পাকিস্তান তাকে আর মূল্য দেয়না। পরিত্যাক্ত এ রাজা এখন মৃত্যুর পরে বাংলাদেশে সমাহিত হতে চান। আমাদের ঘুঁটাবুদ্ধির কর্তাবাবুদের তাতে আপত্তি নাই। আপত্তি আছে আমাদের, আমরা যারা মা-বাবা, ভাইকে হারিয়েছি, বোনের ইজ্জত হারানো অসহায়ের মত দেখেছি, তারা চাইনা বাংলা মায়ের বুকে একটা জঞ্জাল বেশি ভার তৈরি করুক। এখানে কর্তাবাবুরা একটা যুক্তি দেখাচ্ছেন, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউরের মরদেহ পাকিস্তান প্রদান করে বাংলাদেশের ইচ্ছা পূরণ করেছে, এখন বাংলাদেশের উচিৎ বন্ধুত্বের প্রতিদান দেওয়া, পাকিস্থানের ইচ্ছা পূরণ করা।

এখানে বলে রাখা ভাল, কেউই জঞ্জাল নিজের ঘাড়ে রাখতে চায়না। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান আমাদের গর্ব, কিন্তু পাকিস্তানীদের কাছে গাদ্দার, জঞ্জাল। ওরা ওদের জঞ্জাল সরিয়েছে মাত্র। কিন্তু চাকমা রাজা বাংলাদেশের জঞ্জাল, পাকিস্তানীদের সম্পদ। আমরা জঞ্জাল নিতে চাইনা, সম্পদ যে দেশের  সে দেশেই থাকুক। গভীর আনুগত্য থাকা সত্বেও যে ব্যক্তি পাকিস্তানে উজির এ খামাকা ( অকর্মা বলদারগু) নামে পরিচিত তাকে বাংলাদেশে এনে পাকিস্তানকে বন্ধুবাৎসল্য  কিংবা আদিখ্যেতা দেখানোর কোন দরকার নাই , আমরা নতুন প্রজন্ম এর ঘোরতর বিরোধী।

এফ এইচ রিগ্যান
২৬/০২/১২
আরো জানতে লিঙ্কে গুতা দিন
http://www.kalerkantho.com/?view=detail … _id=232282

sawontheboss4 wrote:

ঠিক কথা!

হুম

ধন্যবাদ ভাইটি

একজন পতিতার কিংবা সার্কাসের ভাঁড়ের( জোকার)অতিরিক্ত মাত্রার সাজুগুজুর প্রয়োজন পড়ে, খদ্দের আকৃষ্ট করবার জন্য, সে খদ্দের ক্ষনিকের, প্রয়োজন ফুরালেই মাত্রাতিরক্ত সাজগোজসহকারে  পতিতা/ভাঁড় পরিত্যাক্ত হয়। কিন্তু সাধারণ সৌন্দর্যচর্চার কোন মানুষ কখনই পরিত্যাক্ত হয় না, রুচিবোধের মাত্রাসীমায় অবস্থিত সৌন্দর্যের দাম থাকে চীরকালই।
ভাষার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে।  ব্যকরণের নিয়ম অনুযায়ী কিংবা আঞ্চলিকতার রেশ অনুযায়ী উচ্চারিত ও লিখিত বাংলা সাধারণ সৌন্দর্যমন্ডিত,এর আবেদন চিরকাল। আমরা যে বাংলিশ কিংবা বাংহিন্দিশ ( বাংলা+হিন্দি+ইংলিশ ) বাংলা বলে লোকের কাছে বেশি আধুনিক হবার চেষ্টা করি তা হচ্ছে পতিতার মত অতিরিক্ত সাজুগুজু করার নামান্তর মাত্র। এর মাধ্যমে গুটিকয়ের গর্দভের কাছে নিজের মর্যাদা পেতে পারি, কিন্তু প্রকৃত বাঙ্গালীরা আমাদের নিয় ঠিকই হাসাহাসি করবে।
ভাষার বিকাশে বিদেশী ভাষার ব্যবহার ব্যকরণসন্মত, কারন ভাষা সার্বজনীন, এক ভাষার সাথে অন্যভাষার অনেক শব্দের পরিমিত অনুপ্রবেশ ঘটে নানা বাস্তব প্রয়োজনের তাগিদে। কিন্তু বাঙ্গালীদের বাংলা ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে তা যেন কয়েকগুণ দ্রুত ঘটে।
রেডিও জকি তথা রেডিও জোকারদের ভাষা নিশ্চয় শুনেছেন ? আমি বাংলায় কথা বলি কারন আমি বাংলা মায়ের গর্ভে জন্মেছি, কারন আমি বাংলা পিতার ঔরসজাত। আমি ইংরেজী ভাষা ব্যবহার করি তখনই যখন শুধু প্রয়োজন পড়ে। যারা বাংলা ভাষা জানা সত্বেও অকারণে বাংলার মধ্যে অন্য ভাষার মিশেল করে নিজের ভাব বাড়ানোর চেষ্টা করে আর আমার মায়ের ভাষার গুষ্ঠি উদ্ধার করে তারা নিশ্চয় ভিন্ন ভাষাভাষির একাধিক পিতার ঔরসে জন্মেছে ? না হলে এতগুলো ভাষার  একসাথে ব্যবহার কোথা থেকে শিখল সে ?
ঘুম থেকে উঠে দেখি গান বাজে ছাম্মাক ছাল্লু, ঘুমাতে যাবার সময় শুনি উল্লালা উল্লালা। আর মাঝের সময়টাতে হিন্দি মুভি না দেখলে বিনোদন পূর্ণই হয়না। টিভিতে সারাদিন চলে হিন্দি সিরিয়াল, আমাদের নতুন প্রজন্ম কোথা থেকে প্রমিত বাংলা শিখবে, রেডিওতে টিভিতে মশারী পরা খালামুনি কিংবা বকরির মত দাড়ি রাখা আজব সাজে সজ্জিত গর্দভেরা যে ভাষায় কথা বলে তা শুনলে গা ঘিনঘিন করে ওঠে, শিশুরা ভাল মন্দ বোঝেনা, এরা এই ভাষাধর্ষণকারীদের অনুকরণ করে বেড়ে উঠছে এক সংকর প্রজন্ম হিসাবে। সালাম বরকত, জব্বারেরা যদি আজ বেঁচে থাকতেন তবে ভাষার জন্য জীবন দেবার আগে তাঁরা এই বিকৃত রুচির এবং বাংলা ভাষা ধ্বংসকারীদের পাছায় অন্তঃত কয়েকটা লাত্থি দিতেন। ওনারা বেঁচে নেই, সে লাত্থি দেবার দায়িত্ব এখন আমাদের।
৯ ই ফাল্গুন ভাষাশহীদদের স্মরণে মিনারে গিয়ে ফুল দিব, ফুলের তোড়ায় লিখা থাকবে “২১ শে ফেব্রুয়ারী, আমি কী ভুলিতে পারি”। ওপারে থেকে শহীদেরা আমাদের ব্যাঙ্গ করে বলবে, “ওরা গাধারা, আজ ২১ শে ফেব্রুয়ারী নয়, আজ যে ৯ ই ফাল্গুণ, আমরা মুঠোফোনে তারিখ মিলিয়ে দেখব, নাহ আজতো ২১ শে ফেব্রুয়ারীই” শহীদেরা মনে মনে বলবে, ২১ শে ফেব্রুয়ারীকে ৯ ফাল্গুণ বানাতে পারেনা যে জাতি, তাদের জন্য আমরা জীবন দিয়েছিলাম। সে কথা কারো কানেই যাবে না,আমরা কাকাবাবুর দলেরা শহীদমিনারে ফুল দেয়া শেষে  চিকনি চামেলীর গানটা গাইতে গাইতে হলে ফিরব । তাতে আমাদের বাঙ্গালী জাতিসত্বার গায়ে  শুধু কালিরই লেপন ঘটে, উন্নতি ঘটেনা। উলটা পথে হাঁটা বন্ধ করার সময় এখনই, সোজা পথে চলতে মানুষকে সাহায্য করার দায়িত্ব তরুণদেরই।

এফ এইচ রিগ্যান
৯ ই ফাল্গুণ, ১৪১৮।

বিকৃত যৌনতার বিশেষ স্বাদ আছে , সেই স্বাদ পেতে বিকৃত মানুষেরা বেছে নেয় বিচিত্র রকম পথ। সেই পথে হাটতে গিয়ে মাড়িয়ে যায় হাজার তাজা ফুল, পেছনে পড়ে থাকে স্বজন হারানোদের বুকফাটা আহাজারী।  অকালে ঝরে যাওয়ার  পথে এমনই এক ফুল লাভলী যার উপর দিয়ে বয়ে গেছে নানামুখী অত্যাচার । বলছি -একই সাথে বেশ কয়েকটি জটিল সামাজিক সমিকরণ মোকাবেলা করা সেই অদ্ভুদ কাহিনী।
লাভলীর বাবা গ্রামের বাজারে পিঁয়াজু, চানাচুর, বাদাম বিক্রি করেন। বাদামের দোকান এবং দোকানের মালিকের বর্ণনা দেবার আগেই নিশ্চয় কল্পনায় ভেসে উঠেছে ছেঁড়া কাপড় পরা জীর্ণদেহি এক সহজ সরল মানুষের ছবি। লাভলীর বাবা তাই-ই। নিজের বাড়িতে থাকার জায়গা নেই, তাই আট-নয় বছর  বয়সী লাভলীর  থাকার ব্যবস্থা করেছেন পাশের বাড়িতে । গৃহপতি সম্পর্কে লাভলীর বড়আব্বা। সুতরাং নিশ্চিন্তেই ছিলেন মেয়ের বাবা। কিন্ত এই নিশ্চয়তার বেড়াজালে যে লুকিয়ে ছিল অশান্তির কালো বাঘ তা তিনি ঘুণাক্ষরেও টের পাননি।
পরের ঘটনা সংক্ষেপ এরকম-
শিশু লাভলীর উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে যৌনদস্যু গৃহপতি আবুল হোসেনের, সম্পর্কে ভাতিজি হলেও নিজের কামনা ধরে রাখতে পারেননি। প্রথম দিকে নানা প্রসাধনি সামগ্রি কিনে দিয়ে শিশুর সরল হৃদয়কে কব্জা করে ফেলেন তিনি। এরপর শুরু হয় অবুঝ শিশুর সাথে আদিম লীলা। সুন্দর চেহারার লাভলী পশুভারে মলিন হয় ,দিনে দিনে হতে থাকে হাড্ডিসার।
ঘটনা এখানেই থেমে নেই। আবুলের আপন ভাগিনা সুমন(ছদ্মনাম) অনেকবার চেষ্টা করেও যখন লাভলীর কাছ থেকে বারবার প্রত্যাখাত হতে থাকে তখন তার মাথায় চাঁড়া দিয়ে ওঠে পেছনের রহস্য উদ্ঘাটনের। সুমন সফলও হয়ে যায় অচিরেই,আপত্তিজনক অবস্থায় দেখতে পার লাভলী আর আবুলকে । নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছেনা সুমন, যে মামাকে এত শ্রদ্ধা ভক্তি করত  সে, সেই মামাই এতখানি পিশাচ হতে পারে ? মামার প্রতি প্রবল অশ্রদ্ধা আর প্রত্যাখাত হওয়ার বেদনায় রাগে ক্ষোভে সে  লাভলীর মা বাবাকে বলে দেয়সব ঘটনা  । ঘটনা এখানেই শেষ হতে পারত কিন্তু না, নির্মমতার বাঁকি আছে আরো অনেক।
সবকিছু জেনেও দরিদ্র পিতার সামর্থ্য হয়নি এই অন্যায় বন্ধ করতে।দিনের পর দিন নিজের মেয়েকে ধর্ষিতা হতে দেখেও মানসন্মানের ভয়ে প্রভাবশালী আবুলের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দ  করার সাহস পাননি তিনি। আল্লাহর কাছে বিচার  দিয়ে নীরবে চোখের পানি ফেলতে থাকেন লাভলীর  মা। কালক্রমে ঘটনা জেনে যায় আবুলের স্ত্রী রহিমা। সে আরো একধাপ এগিয়ে। বদমেজাজী এবং সাংঘাতিক কুটিল হৃদয়ের রহিমা শুরু করে স্ত্রীবুদ্ধির চাল। প্রথমে লাভলীকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর স্বামীর সাথে শুরু হয় রহিমার অশান্তি। কিন্তু জজকোর্টের উকিলের মুহুরী চতুর আবুল এক নতুন চাল চালেন। তার অর্জিত সব টাকা এবং জমিজমা নিজের নামে লিখে দেওয়ার চুক্তিতে আবুলের কর্মকান্ডে মৌন সন্মতি জ্ঞাপন করেন রহিমা । সম্পদ পেয়েও তৃপ্ত হতে পারেননি রহিমা, নিজের স্বামী অন্যের কাছে যাবে তা মানা যায় না। শান্তিচুক্তি অনুযায়ী স্বামীকে কিছু বলতে না পারলেও,পাশাপাশি বাড়িতে থাকায় লাভলীর উপর দিনে রাতে চলে মানসিক নির্যাতন।উপরন্তু রহিমা আঁটলেন নতুন এক ফন্দি। নিয়ে আসলেন লাভলীর বিয়ের ঘর। লাভলীর মা-বাবাও খুঁজছিলেন মুক্তির পথ।রাতের আঁধারে তড়িঘড়ি করে অপ্রাপ্তবয়স্ক ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া লাভলীকে বিয়ে দিয়ে আপদ বিদায় করে দেওয়া হয়।
কিন্তু বিধি বাম, স্বামীর বাড়িতে গেলেও আবুলের প্রভাবমুক্ত হতে পারেনি সে। এ জন্য  সেখানেও পড়ে এক প্রতিকূল পরিবেশের। বয়সন্ধিকালের খামখেয়ালিপনা মেনে নেবার মত পরিস্থিতিও নেই অশিক্ষিত শ্বশুর-শ্বাশুড়ির। ভরদুপুরে তেঁতুল কুড়াতে যাওয়া কিংবা সমবয়সীদের সাথে হেসে কথা বলার মত অপরাধে সেখানেও চলতে থাকে শারিরীক এবং মানসিক শাস্তি। স্বামী তার রূপমুগ্ধ কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দিতে অক্ষম, এ যেন নতুন হৈমন্তির কেচ্ছা। অভিমান করে লাভলী বাপের বাড়ি আসে,কিন্তু সুখ নেই ,আছে রহিমার রক্ত চক্ষু আর আবুলের কামনার আগুন।সকাল সন্ধ্যা শোনা যায় রহিমার ভর্ৎসনা আর সংসারের মারপ্যাঁচ অজ্ঞ লাভলীর কান্না।
স্বামী শ্বশুরও বসে থাকেনা। পুত্রবধুকে নেবার জন্য আসেন তাঁরা, কিন্তু আবুলের ফাঁদে আটকা লাভলী আর সে দোজখে যেতে চায় না। শুরু হয় গ্রাম্য শালিস , সে শালিসের প্রধান বিচারক হয় স্বয়ং আবুল। বিচিত্র সে বিচার-সব দোষ হয় লাভলীর। সে কাউকেই কিছু বোঝাতে পারেনা , ছোট্ট সে শরীর মনে বিশাল জোঁয়াল টানার কত বড় ক্ষত লুকিয়ে আছে!
লাভলী এখন সারাক্ষণ বিড়বিড় করে সবাইকে অভশাপ দেয়।সবাই সে অভিশাপের জবাব দেয় পাগলী কিংবা জ্বীনে ধরা বলে টিটকারীর মাধ্যমে। একসময় লাভলী সত্যিসত্যিই আংশিক মানসিক  ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।শুরু হয় কবিরাজি চিকিৎসা। একদিন দেখা গেল বেত দিয়ে পিটিয়ে লাভলীর পা ফুলে তুলেছেন কবিরাজ।
ট্রাজেডির শেষ ধাপ মৃত্যুকে অতিক্রম করেনি লাভলী, সুতরাং পত্রপত্রিকার সাংবাদিকের কাছে সেটা মামুলী ব্যাপার, কেউ সেটার খোঁজ রাখেনি। হয়তো লাভলী একদিন আত্নহত্যা করবে, কিংবা এভাবেই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়েই বাঁকি জীবন কাটাবে।
এখন মা-বাবাকে দেখেও তেড়ে মারতে যায় সে, আবুল হোসেন নিজের সোনাতে হাত বোলায় আর আহ উহ করে প্রেমিকার নধর দেহ বঞ্চিতের কথা জানান দেয়, আর রহিমা! মিশন সফলের অট্ট হাসিতে মাঝে মাঝে সে ফেটে পড়ে, কয়লা কালো সে চেহারা দিনে দিনে  হয়ে ওঠে নূরানী।
লাভলী আমাকে খুব সন্মান করে, একদিন আমাকে বলল, “ভাই, সবাই মোক পাগলী কয়,তুই জান কসনা, মুই আসলে পাগলী নয়” এরপরে কথা শেষ হবার আগেই লাভলীর মা এসে টেনে হিঁচড়ে  নিয়ে যায় তাকে।
আর কি কথা যে সে বলতে চায় জানা যায় না। সে অব্যক্ত কথা কানে কানে বলে যায় হৈমন্তি, বিলাসীরা, সে কথা প্রতিধ্বনি হয়ে ফেরে চতুর্দিকে “দুনিয়ার তামাম আবুলদের থামাও…থামাও......আমাদের বাঁচাও” । সে ডাকে আমার রক্ত গরম হয় কিন্তু আবুলদের সামনে গেলে আবার সেই রক্তই হয়ে যায় ভয়ে হিমশীতল। কারন আমি যে সমাজের আর আট-দশজনের মতই নপুংশক। 
এফ এইচ রিগ্যান
১/১০/১১

ধন্যবাদ

পড়ার জন্য ধন্যবাদ

রাক্ষসরাজ রাবণ হাঁকিয়া কহে মোরে
ওরে ছোট, দিনমান এল গেল, নীশিথ টুটিল কত
বঙ্গদেশে কী পেয়েছিস ওরে?

আমি বলি –
বঙ্গমাতা নয়কো কৃপন, আছে তার ভুরিভুরি ঢের
পেয়াদারা সব অতীব তৎপর
দুহাতে করিতেছে সম্পদ সব বের।

শোন তবে-
ক্রসফায়ারে পেয়েছি লিমনের হাঁটুসহ পা, কব্জি
মাঝখানে আরো গোটা পনের
সে তো  কালোবাবুদের মর্জি।

হাসছো ? মরুভূমি ম্যাম নয় মোটেও দিশেহারা
আরো দিন আছে বাঁকি, পাবো ঢের মাসোহারা।

মিরসরাইয়ে পেলাম  প্রায় অর্ধশত
লঞ্চডুবিরও আছে  অনেক
চাইনা, আমি চাইনা, তবু পাই লাশ অবিরত।

আরো আছে আবুলের দল
ফাঁকিবাজ আর লুটেরা , উহাদের
থাবা আর দাঁতে রাক্ষসসম বল।

শোননি ?
মাটির ময়নার পিঞ্জরভেদে ঊর্দ্ধপানে উড়ে যায়
কত কৃতি, জ্ঞাণী গুণী ; দায় নাই কারো
পিশাচেরা সব ভিড়িছে  আজ  বেশ্যার কিনারায়।

এইতো সেদিন
মমতাজ উদ্দিনের তাজখানি পড়িল খসি, পুলিশি হেফাজতে
বিচিত্র নয়তো কিছুই শুনিব হয়তো
নোবেলজয়ীর লাশ পড়িল কোন এক প্রাতে।

মানুষ জন্মে মানুষ মরে তাতে কার কী এসে যায়
সমাজপতিরা আজ নরখাদক, হাড় মাংস সবই চিবি খায়।

একি হল ? চারিদিকে শুধু হাহাকার আর হাহাকার
হঠাৎ হয়তো মা পাবে তার
ছেলের লাশ বিশেষ উপহার।

এফ এইচ রিগ্যান
২৭.০৮.১১

১১

(৩ replies, posted in রসের হাঁড়ি)

হা হা হা

হোক বীতশ্রদ্ধ, সত্য বলতে ভয় আর দ্বিধা কিসের ??

একাডেমিক সেশন শুরুর আগেই ৫৬ দিন পিছিয়ে পড়া 10 সিরিজের অন্নপ্রাষন হয়ে গেল, দীর্ঘসময় হলের নিম্নমানের খাবার খাওয়ার একাডেমিক উদ্বোধন এবং সঙ্গে 06 সিরিজের বড়জনদের প্রস্থান দিবস তথা মুক্তি দিবস। এই মহাযজ্ঞের কিছু অনুভূতি প্রকাশ না করে থাকতে পারছিনা।

যজ্ঞ পরিচালক স্বয়ং ডিপার্টমেন্ট অধিপতি, সুতরাং শুধু ইলাহি কান্ড ঘটাটাই স্বাভাবিক, বাস্তবে হলোও তাই। রাজা-বাদশাহর  শাহী অনুষ্ঠান দেখার যে অলৌকিক খায়েশ এতদিন মনের মধ্যে পুষে রেখেছিলাম আজ তা পূর্ণ হল।
গুরুত্বপূর্ণ সকল দায়িত্বে দেখা গেল সিভিল অধিশ্বরের আস্থাভাজন প্রজারা।প্রভুর গুণকীর্তনে যারা বিশেষ পারদর্শী তাদের ঠাঁই হয়েছে অনুষ্ঠান পরিচালনা এবং  অধিক গুরুত্বপূর্ন কর্মে। সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ কাজ আমাদের, হাঁ হয়ে দেখা আর বিপুলবেগে করতল মারফত শব্দ উৎপাদন করা ।

বরণ ও বিদায়ের মুখস্থ পাঠ শেষ হওয়ার পরে মেধাবীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ শুরু হল। উপস্থাপক বললেন, যাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমে এবারের স্পেশাল পুরষ্কার প্রদান করা হচ্ছে সবার প্রিয় সেই মহান বাদশাহ নিজে এ ব্যাপারে ঘোষণা দিবেন। বাদশাহ ঘোষণা দিলেন - "প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, আমি অক্লান্ত পরিশ্রম করে সুদূর আমেরিকা হতে তমুকের কাছ থেকে..."  অক্লান্ত পরিশ্রমের কথা স্বয়ং জাহাপনা উচ্চারণ করেছেন, আমরা উপযুক্ত হর্ষধ্বনি করলাম।এরপরে বললেন " শোনো সকল এবারে শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, দেখ কি ঘটে !!!

এরই মধ্যে দুইজন গুরু নিজ নিজ সহধর্মিণী নিয়ে হাজির হলেন। গাধা হিসাবে আমার বিপুল কৌতূহল হল, ইস যদি ক্যামেরা থাকত !! ক্ষাণিকবাদে দেখলাম  স্বগোত্রীয় ৩০/৩৫ জন আমার  মনের ইচ্ছা বিপুল উৎসাহে পালন করছে, প্রথমে আমার মতিভ্রম হল, ফের মিশেল ওবামা আসল কিনা ??

এরপরে শুরু হল তাক ধিনা ধিন ধিন। ০৮ সিরিজের নাট্যপ্রতিভা দেখে মুগ্ধ না হয়ে থাকতে পারলাম না। এই একটা ক্ষেত্রেই গাধার পরিচয় গোপন করতে সক্ষম হয়েছিলাম।উনুষ্ঠানের মাঝে গাধা চরিত্রের গুণে বহুবার অকারণে হাত তালি দিয়েছি, অবশ্য বহুসংখ্যক স্বজাতির অনুরূপ কর্মে বুকে পুলক সঞ্চার করেছিল।  সবশেষে খাবারের সুদৃশ্য পোটলা হাতের পেলাম কিন্তু বিশেষ উপভোগ করতে পারলাম না।
আমি তো গাধা তাই ভালমত গুছিয়ে লিখতে এবং অনুষ্ঠানের ভাল দিক উপস্থাপন করতে পারলাম না।পরিশেষে-

সিভিল বাদশাহ আশানুরূপ বাহবা পেলেন না, তদস্থলে খানিকটা তিরষ্কৃত হলেন। যারা আমার মত নিকৃষ্ট শ্রেণীর, তারা বলাবলি করতে লাগল, “বরণ ও বিদায়” নয়,  নাম হওয়া উচিৎ ছিল “বাবার শেষকৃত্যানুষ্ঠান”। উল্লেখ্য পুরকৌশল অধিশ্বরকে  আড়ালে তেলখোর ভন্ডবাবা বলে ডাকা লোকের সংখ্যা নেহায়েৎ কম নয়।

হে হে

বিপদ যে কখনো একা আসেনা তাহা উপলব্ধি করিলাম আরো একবার, সঙ্গে এও উপলব্ধি করিলাম যে, একক বিপদের চেয়ে সংঘবদ্ধ বিপদের মাত্রা গুণিতক আকারে যত হইবার কথা ছিল, বাস্তবে তাহার চেয়ে অনেক বেশি হয়।

টিপটিপ বৃষ্টি পড়িতেছে, বাহিরে যাইবার জো নাই, কিন্তু বাহির হওয়াটা আমার খুবই জরুরী; নানার বাড়িতে বেড়াতে আসিয়াছি, আজই গৃহে ফিরিয়া সবকিছু গোছাইয়া শিক্ষানগরীতে যাইতে হইবে। আমি অপেক্ষা করিতেছি, বৃষ্টি শেষ হইলে রওনা হইব কিন্তু বৃষ্টিও ছাড়িল না আমার যাত্রাও আরম্ভ হইল না।এই অপেক্ষার মধ্যেই ঘটিল আরেক বিপত্তি। দেড় বছর বয়সী খালাতো বোন টুম্পা প্রাকৃতিক কর্ম সারিয়া অশুচী অবস্থায় কখন হইতে যে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে তাহা লক্ষ্য করি নাই, আমার সামনা সামনি আসিবামাত্র তাহাকে কোলে তুলিয়া লইবার চেষ্টা করিলাম কিন্ত সে আসিতে চাহিল না। আমি যতই জোর করিতে লাগিলাম শিশু ততই হাত পা ছোঁড়া-ছোঁড়ি  করিয়া ভূমিতে নামিবার আপ্রাণ চেষ্টা করিতে লাগিল। অবশেষে ইহাকে পরাস্ত করিয়া কোলে যখন স্থাপন করিলাম তখনই আবিষ্কার করিলাম যে জবরদস্তির ফলটা একটু বেশিই খারাপ হইয়াছে। ওয়াক থু বলিয়া টুম্পাকে মাটিতে ছাড়িয়া দিয়া ভীষণ চিৎকার করিয়া উঠিলাম, আশেপাশের সবাই দৌড়াইয়া আসিয়া আমার দূরাবস্থা দেখিয়া হাসিয়া গড়াগড়ি খাইতে লাগিল। কিছুক্ষণ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হইয় থাকিয়া  আমিও তাহাদের সহিত যোগ দিলাম।

শীগগীর কাপড় ধৌত করিবার ব্যবস্থা করা হইল কিন্তু উপযুক্ত সময়ে তাহা শুকাইল না এবং সেইদিনে গৃহবন্দিত্ব ছাড়া আমার কোন উপায় রহিল না।

রাত্রিটা কোন রকমে কাটাইয়া আমি পরের দিন প্রত্যুষেই রওনা হইলাম। এই একদিনের বিলম্বই আমার জীবনের গতিপথ পাল্টাইয়া দিয়াছে,মন্থর করিয়াছে চলার গতি এবং সঙ্গে বপন করিয়াছে আমার মনের ভেতরে বিচিত্র অনুভূতির এক বীজ; আজ তাহা প্রকাশ করিয়া হাল্কা হইবার চেষ্টা করিতেছি মাত্র। জানি, যে বোঝা ছাড়িবার ত্রুটিমাত্র করিতেছি না, তাহা কোনমতেই ছাড়া সম্ভব নহে কারন ছাড়িতে গেলেই বিপুল বেগে ইহা বুকের উপর জাঁকিয়া বসে, মস্তিষ্কের যে অংশ চিন্তার কাজ করে তাহাকে আরো বেশি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে; এ যন্ত্রণা ছাড়িবার নহে, শুধুমাত্র চীরকাল বহিবার জন্যে।

ট্রেন ভ্রমনের প্রারম্ভটা বিশেষ সুবিধার হইল না, প্রত্যেক কামরাতেই প্রচন্ড ভীড় উপরন্তু আমার টিকিট আসনবিহীন। অনেক্ষণ দাঁড়াইয়া থাকিয়া একসময় প্রায় জোর করিয়া একজায়গায় বসিয়া পড়িলাম। যাঁহারা সেইখানে বসিয়া ছিলেন, নতুন ঝামেলা জোটায় তাঁহার কিঞ্চিত বিরক্ত হইলেন কিন্তু আমি অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করিলাম।
স্বাচ্ছন্দ্যবোধের আরো কারন আছে, আমাদের বিপরীতমুখী আসনে বসিয়া আছে আমার এক সহপাঠীর বান্ধবী, তাহার সহিত আজই পরিচয় ঘটিয়াছে। ভাবিলাম একেবারে চুপচাপ বসিয়া থাকিবার চেয়ে গল্পগুজব করিয়া সময় পার করাটাই উত্তম। আমার ভাবনার ব্যত্যয় ঘটিল না, অল্পক্ষণেই নানা বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত হইল এবং অপরিচিতার সহিত মিশিতে আমার বেশি সময় লাগিল না।
গল্পের তালে কিছুটা সময় ভালই কাটিল এবং ক্ষাণিকবাদে ট্রেন পরের স্টেশনে আসিয়া থামিল। একে তো ভীড় তার উপর যতজন যাত্রী নামিল, উঠিল তাহার ঢের বেশি, সুতরাং জনসংখ্যা প্রচুর  বাড়িয়া এমন হইল যে, কাহারো প্রকৃতির ডাক আসিলে বাধা ডিঙ্গাইয়া উপযুক্ত স্থানে যথাসময়ে গমন করিবার পূর্বেই দফা রফা হইবার আশংকাই বেশি।

এমনই জমাট ভীড় ঠেলিয়া আঠারো-ঊনিশ বছরের এক যুবতী বাচ্চা কোলে করিয়া আমার সামনের আসনে নব-পরিচিতা বান্ধবীর ঠিক পাশেই বসিল। আমি ভ্রু কুঞ্চিত করিয়া একবার তাহার দিকে তাকাইয়া ভাবিলাম, বাল্য বিবাহ কমিতেছে, না বাড়িতেছে ; যদি কমিয়াই থাকে তাহলে এত অল্প বয়ষ্কা মহিলা মা হইল কিভাবে ? 
উত্তরটা বিশেষ সুখকর হইল না ; কিছুক্ষন বাদেই অন্য একজন মহিলা হাঁপাইতে হাঁপাইতে যুবতীর পাশে বসিল এবং স্থীর হইয়া তাহার সন্তানকে কোলে লইয়া স্তন্য পান করাইতে লাগিল, বাল্যবিবাহ সংক্রান্ত আমার কিছুক্ষন আগের ধারণা আর দ্বিতীয়বার মনে আসিল না এবং আমি উদযোগী হইয়া যুবতীকে সম্বোধন করিয়া বলিলাম, ভাবলাম বাচ্চাটা আপনারই, বাচ্চা কোলে আপনাকে চিরায়ত বাঙ্গালী মায়ের মতই লাগছিল।
আমার কথা শুনিয়া তিনি হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিলেন; এক্ষণে তাহার সহিতও পরিচয় ঘটিল।
চলবে............

হুম

বাগজানা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল স্যারের নাম সহসা কেহ মুখে আনিত না, দূর্ভাগ্যবশঃত কদাচ তাঁহার চেহারাখানা যদি কাহারো অন্তরে ভাসিয়া উঠিত তাহলে আতংকিত মুখখানা দেখিয়াই বলিয়া দেওয়া যাইত যে অতীতে সে স্যারের হাতে কতখানি ধোলাই সেবন করিয়াছে। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মুখে মাঝে মধ্যেই শোনা যাইত, “ আহ! কত পিটুনি খাইছিরে।”

কামাল স্যারকে যতখানি পাষাণ মনে হইত তিনি আসলে ততখানি ছিলেন না। ছাত্রদের সহিত তিনি বন্ধুদের ন্যায় মিশিতেন এবং কখনো কখনো তাহাদের সহিত ক্রিকেট খেলিবার সময় যখন ব্যাট করিতেন তখন অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী বালকগণ তাঁহার গা লক্ষ্য করিয়া জোরে বল ছুঁড়িয়া মনে মনে উচ্চারণ অযোগ্য শব্দমালা আওড়াইত। কামাল স্যারও বিশেষ অদক্ষ ছিলেন না; তিনিও জোরে বল পিটাইয়া জবাব করিতেন। বিরল সুযোগে কেহ কৃতকার্য হইলে তৎক্ষণাৎ সে স্যারের সমব্যাথি হইত কিন্তু খেলা সাঙ্গ হইলে যতদূর সম্ভব পরিচিত দুষ্ট বালকগণকে পাওয়া যাইত তাহাদের সহিত ইহা লইয়া হাসি তামাশার কোন কমতি হইত না।

স্যারও কম যান না, কেউ পড়াশুনায় গাফিলতি করিয়াছে কিংবা ভুলেও কিছু একটা ভুল করিয়াছে তো তার আর রক্ষা নাই, সঙ্গে সঙ্গে বেত আনিয়া ইহার উপযুক্ত একটা বিহিত করিতেন। মারের প্রাক্কালে মার্জনাভিক্ষায় সাহসি হইয়া কেহ যদি বলিত, “ স্যার এবারের মত মাফ করে দেন” তো স্যার তাহাকে জিজ্ঞাসা করিতেন ,“আমার কাছে কি মাফের বস্তা আছে হে ?”
মাফের তো বস্তা হয় না, তাই অভিযুক্ত যখনই বলিত, “ না স্যার” অমনি শুরু হইত ধুম ধাড়াক্কা কিল।

একবার এক ছাত্র পঞ্চম শ্রেণী পাশ করিয়া গন্ডিমুক্ত হইয়া কামাল স্যারের কাছে গেল দোয়া চাইতে। স্যার দোয়া করিলেন। ছাত্র আবার বলিল , “ স্যার দুষ্টামি তো কম করি নাই, নিজগুণে অধমকে ক্ষমা করে দেবেন।”
স্যার ফিক করিয়া হাসিয়া বলিলেন, “ মাফ কিরে, যখনকার পাওনা তখনই তো বুঝে দিয়েছি! স্যারের সময়ানুবর্তী কর্তব্যনিষ্ঠা দেখিয়া অনুতপ্ত ছাত্র হো হো করিয়া না হাসিয়া থাকিতে পারিল না।

কামাল স্যার যেমনি পিটাইতেন ঠিক তেমনি ভালোওবাসিতেন। তাঁহার মারের গুরুত্বের কথা প্রায় সকল অভিভাবকের মুখে মুখে শোনা যাইত, যাঁহারা ভাবী ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারের পিতা হইবার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন থাকিতেন তাঁহারা নিজ সন্তানদের আচ্ছামত শাসন করিবার জন্য স্যারের কাছে বিশেষ অনুরোধ করিতেন; বলিতেন ‘স্যার, ছাত্রের হাড়গুলো আমার আর গায়ের মাংস সব আপনার, যা ইচ্ছা হয় তাতে তাই করেন।’ এত ক্ষমতা পাইয়াও স্যার কখনই ইচ্ছামত যখন তখন ছাত্রছাত্রীর মাংস ভূনা করিতেন না।

এই যে শাসন সোহাগ মিলাইয়া এতখানি হৃদয়রাজ্য দখল করিয়াছেন যিনি তাঁহার বিরুদ্ধেও আমার একখানা গুরুতর অভিযোগ আছে।

তৃতীয় শ্রেণী পাশ করিয়া সবেমাত্র চতুর্থ শ্রেণীতে প্রবেশ করিয়াছি। নূতন ক্লাসে নূতন অনুভূতি,পুরাতন দুষ্টামিগুলি হইতে আগের মত আর মজা পাইতেছলাম না। ইহার মাঝে পুরাতন একজনের সাথে বেশ ভাব হইয়া গেল। ইহার প্রধান শখ হইল রং বেরংয়ের বেলুন উড়ানো, আমিও তাহাতে সাগ্রহে যোগ দিলাম।

আমার দৈনিক বরাদ্দ ছিল এক টাকা। ইহার মধ্য হইতে বারো আনার ডালমুট খাইতাম আর চার আনা দিয়া একটা বেলুন কিনিতাম। সস্তা বেলুন কিনিতে কোন সমস্যা হইত না, কিন্তু তাহা ফুলাইতে গেলে বিশেষ অসুবিধা ঘটিত, কেমন জানি অপরিচিত একটা বোঁটকা গন্ধে নাক আপনা আপনিই বন্ধ হইয়া আসিত, কখনো কখনো বমি হইবারও উপক্রম হইত। আমরা বড় পাটকাঠি যোগাড় করিয়া নাসারন্ধ্র উপযুক্ত দুরত্বে রাখিয়া চার আনার বেলুন চতুর্গুণ উৎসাহে ফুলাইতাম।

দিন ভালই কাটিতেছিল। একদিন হইল কি বন্ধুর নিকট পয়সা নাই, বেলুন কিনিতে আমি তাহাকে পয়সা ধার দিলাম, অতঃপর দুইজন মিলিয়া ঈষৎ গোলাপী রঙের বেলুন উড়াইতে লাগিলাম। চারিদিকে ছেলেমেয়েরা খেলা করিতেছে, আমরাও করিতেছি ; হঠাৎ লক্ষ্য করিলাম কামাল স্যার দূর হইতে ইশারায় বেলুন উড্ডীনকারী আমাদের দুইজনকে ডাকিতেছেন। আমরা ভাল করিয়াই জানিতাম, স্যারের নিজে মুখে আহ্বানের অর্থ কিছু একটা গোল বাধিয়াছে। খানিকটা ভয় পাইয়া দুরু দুরু বুকে নিকটবর্তী হইতেই তিনি বেলুন দুইখানা কাড়িয়া লইয়া দুই করতলের সাহায্যে ফটাস করিয়া ফাটিয়া দিলেন। আমরা অবাক হইয়া লক্ষ্য করিলাম যে, ক্রীড়াসামগ্রীদ্বয় বিনিষ্টকরণ সমাপ্ত করিয়াই কামাল স্যারের দুই হস্ত হাস্য করিতে করিতে আমাদের শ্রবণযন্ত্র অভিমুখে আসিতেছে। পালাইবার চিন্তা করিবার পুর্বেই দুইজনেই ধৃত হইলাম। তাহার পরে উভয়ের কানের উপর যে কি পরিমান অত্যাচার সাধিত হইল তাহা ভাষায় প্রকাশ করিতে পারিবনা। কানের যদি মুখ থাকিত তবে স্যার নিশ্চিত অপমানিত হইতেন।
প্রায় মিনিটখানেক শাস্তিভোগের পর অব্যাহতি পাইলাম। জীবনে আর এই বেলুন লইয়া খেলা করিব না এমন শপথবাক্য পাঠ করিয়া দুই বন্ধু মুক্তি পাইলাম।

নিজের চার আনা ক্ষতি হইল, বন্ধুকে যে পয়সা ধার দিয়াছিলাম তাহা ফেরৎ পাইবার বেলুন ব্যাতীত আর অন্য কোন খাত ছিল না, সুতরাং তাহাও মার গেল। অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয়, এই যে এত কিছু ঘটিল তবুও নিজের অপরাধখানা ঠিক ধরিতে পারিলাম না।
বহুদিন পার হইয়াছে, একদিন হঠাৎ করিয়া আবিষ্কার করিলাম যে, যে বেলুন স্যারের রাগের উদ্রেগ করিয়াছে তাহা সাধারণ বেলুন নহে, শিশুক্রীড়ার সামগ্রীতো নয়ই বটে।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এই বেলুনের গুরুত্বের কথা জানিতে পারিয়াছি আরো অনেক পরে। সেদিন বুঝিয়াছি স্যার যদি উপযুক্ত সময়ে আমাদের না থামাইতেন তাহলে কি যে ক্ষতি হইত !
কান মলিয়াছে মলুক, ব্যাথা যাইবার সঙ্গে সঙ্গে রাগও পড়িয়াছে, কিন্তু আট আনা ক্ষতি করিবার জন্য স্যারকে মনে মনে কতবার দোষারোপ করিয়াছি ; কিন্তু যেদিন প্রকৃত ব্যাপারখানা বুঝিয়াছি সেদিন শুধু শোকই ভুলি নাই, হাসিয়া গড়াগড়িও খাইয়াছি।

এফ এইচ রিগ্যান
২৩.০৩.১১

ভাল

১৯

(২ replies, posted in ভিন্ন জগত)

খুবই দুঃখজনক

২০

(২ replies, posted in ভিন্ন জগত)

বলেন তো ,শহীদ মিনারের দাবিতে মিছিল করে কোন পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ???

আমরা কত্ত সৌভাগ্যবান !! যদি এ বিষয়ে জরিপ চালানো হয় যে, ২১শের চেতনায় সবচেয়ে উজ্জিবীত কারা ? তবে ফলাফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি রুয়েটিয়ানরা ।
সবাই তৈরীকৃত(রেডিমেড) শহীদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলী দেয় আর আমরা শহীদ মিনারের জন্য বিক্ষোভ করি তারপর শিবলিঙ্গ ধরণের মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলী দেই। তাহলে কার সাফল্য বেশি হল ??? যাদের বাড়িতে ভাত নেই তারাই সবচেয়ে ভাতের কদর বেশি বোঝে, আমাদের শহীদ মিনার নেই তাই যতবার মূল রাস্তা দিয়ে চলাচল করি ততবারই এই অভাবটা গভীরভাবে অনুভব করি। আমরা মিনারের দাবিতে আন্দোলন করে আমাদের বিশ্বঃ ৩১ দিন বন্ধ রেখেছি, কেন জানি মনে হয় রফিক জব্বারেরা বেঁচে থাকলে আমদের পিঠ চাপড়ে বলত- সাবাস বিদ্রোহীরা, ঈভটিজার, রেডিও জকি আর বাংলায় মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়া নেতা অপেক্ষা তোমরা উত্তম। আর আমরা লজ্জায় লাল হয়ে বলতাম-হাল্লুম, রাজাকার আর বেঈমানদের বাংলাছাড়া করার দায়িত্ব নিলুম।

সেকুশ মানে কি ???
কবিতা  applause

উপল BD wrote:

আমিও ঝাপিয়ে পড়ার জন্য রেডি।টাইগাররা তাদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে লড়ে যাবে এটাই আশা থাকবে।  rock on!  rock on!


applause  applause  applause  applause

বাংলার বাঘকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা ইন্ডিয়ান ক্যাট বিগত হারের স্মৃতি রোমন্থন করছে আর গাত্রদাহে মরে যাচ্ছে। আজ পদ্মার পানি ঢেলে সে গাত্রদাহ নিভিয়ে দিয়ে বিড়ালকে শান্ত করা হবে। আর যদি ইন্ডিয়ানরা নিজেদেরকে বিড়ালের চেয়ে শক্তিশালী কুকুর ভাবে তবে, অতিরান্না করা বিরিয়ানি রেডি, আমরা খাওয়াতে প্রস্তুত। বাংলাদেশকে অবহেলা করা বাঞ্চতেরা দ্বিতীয়বার শিক্ষা লাভ করুক। হা ..............ল্লু................. ম.......

sawontheboss4 wrote:
রিগ্যান wrote:

ওরে সুকুমার পরাভূত কর সকল ব্যর্থতা ।

এই লাইন টার মানে কী?

সুকুমার-ভাল গুণাবলীর অধিকারী/চিন্তাকারী
ব্যর্থতা- এখানে ব্যক্তিগত এবং সামাজিক অসঙ্গতিকে বুঝাতে চেয়েছি

পোস্ট পড়ে খুবই ভাল লাগল +