Topic: একজন রোগীর মর্মস্পর্শী কিছু কথা।
শিরোনামটি ঠিক যুতসই হলো কিনা বুঝতে পারছি না।তবে লেখাটি থেকে আশা রাখি পাঠকরা নিজের মত একটা শিরোনাম দিয়ে নিবেন।প্রতিদিনের মত আজও সন্ধ্যায় ওয়ার্ড এ গেলাম।ওয়ার্ডটি ছিলো মেডিসিনের(মেয়েদের)।স্যার ১ ঘণ্টার ক্লাস শেষ করার পর একজন রোগীর রোগের বর্ণনা নেওয়ার জন্য আরও বেশ কিছুক্ষণ ছিলাম।এই সময় হটাৎ এক মহিলা হাত ধরে টানতে লাগলেন এবং তার রোগীর সংকটাপন্ন অবস্থার কথা বলতে লাগলেন।কেবল ৩য় বর্ষে উঠা ছাত্রের পক্ষে ভ্যাবা-চ্যাকা খাওয়াই স্বাভাবিক।যাইহোক আমার সাথে আমার বন্ধু মুকুল ছিলো,তাকে সাথে নিয়ে বিষয়টি দেখতে গেলাম।অবস্থাটি হলো প্রায় ৪ দিন আগে মেয়েটি হারপিক খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়।ডাক্তাররা তার পেট ওয়াশ করে সমস্ত হারপিক বের করে দেন।কিন্তু তিনি সেইদিন থেকেই খুব দুর্বল ছিলেন।অত:পর আজ দুপুরে তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়।তিনি তার স্বামীকে ফোন দেন তাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।কিন্তু কোনো একটি কারণে উনার স্বামী না আসার কারণে তিনি খুব কষ্ট পেয়ে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।আমরা যেয়ে দেখি তার মুখ দিয়ে অনবরত থুথু উঠছে।কেস হিস্টোরী ও ট্রিটমেন্ট দেখে বুঝলাম উনার বর্তমানে অসুস্থ হওয়ার প্রধান কারণ মানসিক অশান্তি ও শারিরীক দুর্বলতা।পরবর্তীতে একজন সিনিয়র ডাক্তারকে নিয়ে রোগীর কাছে গিয়ে জানতে পারলাম প্রায় ৩ বছর ধরে রাজশাহী শহরের একজন ধনী ব্যবসায়ির সাথে প্রেম করার পর প্রায় দেড় মাস আগে তারা পরিবারের অমতে বিয়ে করেন,মেয়েটির পরিবার সচ্ছল হলেও খুব একটা টাকা-পয়সা তাদের ছিলো না।কিন্তু তারা একে অপরকে অনেক ভালোবাসতো।বিয়ের পর ছেলের পরিবার ও বিশেষ করে বন্ধুরা এরকম একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে বিয়ে করার জন্য ছেলেটিকে প্রায় ধিক্কার দিত।এভাবে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়।রাগ করে অনেকদিন মেয়েটি না খেয়ে থাকতো।এতে তার শরীর খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে।এক পর্যায়ে বন্ধু ও পরিবারের প্ররোচনায় ছেলেটি মেয়েটিকে তালাক দেওয়ার কথা বলে।এতে প্রচণ্ড মানসিক কষ্টে মেয়েটি আত্মহত্যার জন্য হারপিক খায়।বর্তমানে তার যতটা না শারিরীক কস্ট তার চেয়ে মানসিক কষ্টই বেশি।জানি না বিষয়টার সমাধান কি?তবে মহান আল্লাহর কাছে এই দোয়ায় করি আল্লাহ যেনো মেয়েটিকে দ্রুত সুস্থ করে তুলেন এবং তাদের সবাইকে ধৈর্য্য ধারন করে সুন্দর একটি সমাধানে আসার তৌফিক দান করেন।
পরিশেষে কিছু কথা বলতে চায়,জীবনে প্রেম করে বিয়ে বেশ অনেকগুলোই দেখেছি বা শুনেছি।কিন্তু কেনো যেনো তার বেশিরভাগ বিয়েই হয় ভেঙে গেছে আর না হয় তারা অনেক কষ্টে মান-সম্মানের ভয়ে বিয়েটা টিকিয়ে রেখেছে।অপরদিকে পারিবারিক বিয়েতে পারিবারিক ভাঙ্গনের হার এখনও অনেক কম।আমার ব্যক্তিগত মতামত যাকেই বিয়ে করেন,পরিবারের সম্মতি নিয়েই করেন,নতুবা না,কারণ বাবা-মার অমতের বিয়েতে আমার মনে হয় না আল্লাহ সন্তুষ্ট হন।