Topic: ঢাকা মেডিক্যালে প্রথম কিডনি সংযোজন

http://www.chobimohol.com/image-0935_4C53CAC5.jpg

প্রতি বছর ৫ লাখ লোক কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে

সরকারিভাবে কিডনি ইনস্টিটিউটের বাইরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হতদরিদ্র এক তরুণের প্রথম কিডনি সংযোজন করা হয়। তার সহোদর ভাই বিবিএ’র ছাত্র কিডনি দান করেছে। দুই ভাই সুস্থ রয়েছে। গত সোমবার উক্ত হাসপাতালে কোরআনে হাফেজ জুবায়ের হোসেনের (২৩) দেহে ছোট ভাই সোহেল আবেদীনের কিডনি সংযোজন করা হয়। এদেশে কিডনি চিকিৎসা ব্যবস্থা চরম অবহেলিত। এই ধরনের অত্যাবশ্যকীয় চিকিৎসা উন্নয়ন নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর কোন ধরনের উদ্যোগ নেয়নি। কর্মকর্তা দলীয় বিবেচনায় শীর্ষ পদে যোগদান করে শুধু আখের গোছানো নিয়ে ব্যস্ত। মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরে কর্মকর্তাদের সদিচ্ছা না থাকায় এবং তারা শুধু কোটি কোটি টাকা আয় করা নিয়ে বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থাকায় স্বাধীনতার ৩৯ বছর পরও কিডনি চিকিৎসার মত একটি অতীব জরুরি চিকিৎসা অবহেলিত থাকবে এটা উদ্বেগের বিষয় বলে ১০ জন সিনিয়র অধ্যাপক ও হাসপাতাল পরিচালকগণ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। কিডনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, প্রতিবছর ৫ লাখ লোক কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়। ২৫ লাখ লোকের জন্য একজন কিডনি বিশেষজ্ঞ এবং ৪০ লাখ লোকের জন্য একজন ট্রান্সপ্ল্যানটেশন সার্জন রয়েছে বলে কিডনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান। যে দল ক্ষমতায় আসে চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন বিএমএ ঐ দলের সমর্থিত নেতা-কর্মীদের নেতৃত্বে থাকে। দলীয় আরেক চিকিৎসক সংগঠন একইভাবে নেতৃত্ব দেয়। ডাক্তারদের এই সকল সংগঠনের নেতারা নিয়োগ বদলি বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, কেনাকাটা ও নিজেদের আখের গোছানো নিয়ে ব্যস্ত। নেতারা স্বাস্থ্য সার্ভিসের উন্নয়ন নিয়ে তেমন কোন ভূমিকা রাখেননি। যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও জ্যেষ্ঠতার মূল্যায়ন না করে দলীয় বিবেচনাকে গুরুত্ব দেয়ায় কিডনি চিকিৎসা ব্যবস্থার মত অন্যান্য চিকিৎসার করুণ অবস্থা। এজন্য এই নেতাদের ভূমিকাই দায়ী বেশি বলে বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দাবি করেছেন।

মুন্সিগঞ্জ জেলার দরিদ্র পরিবারের সদস্য জুবায়ের ৮ মাস আগে নেফ্রাইটিসে আক্রান্ত হয়, তার দুইটি কিডনিই বিকল হয়ে যায়। তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কিডনি বিভাগে ভর্তি করা হয়। ছয় মাস যাবৎ প্রতি সপ্তাহে তিনবার হেমোডায়ালাইসিস করে বিশেষজ্ঞরা তাকে বাঁচিয়ে রাখেন। ছয় মাসে হেমোডায়ালাইসিস করতে সরকারি নির্ধারিত ফী ১৮ হাজার টাকা। দরিদ্র জুবায়েরের পক্ষে এই টাকা দেয়া সম্ভব না হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিনামূল্যে ডায়ালাইসিস করেন। কিডনি সংযোজন না করলে এই তরুণ জুবায়েরকে ডায়ালাইসিস করে কত দিন বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব? এই নিয়ে চিকিৎসকরা চিন্তিত। জুবায়েরকে স্বাভাবিক জীবনে বেঁচে থাকতে হলে কিডনি সংযোজন করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। কিডনি দাতা হিসেবে তার ছোট ভাই সোহেলকে ঠিক করা হয়। ভাইকে বাঁচিয়ে রাখতে অতি আগ্রহী ছোট ভাই চিকিৎসকদের নিকট তার একটি কিডনি দিতে প্রস্তুত। কিডনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. নিজামউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে জুবায়েরের দেহে কিডনি সংযোজনের প্রস্তুতি নেয়া হয়।

একই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বে একটি টীম এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজিস্ট ডা. সাজিদ হাসানের নেতৃত্বে অপর একটি টীম। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল অপারেশন থিয়েটারে গত সোমবার সাড়ে ৩ ঘণ্টা ব্যয় করে উক্ত তিনটি টীম জুবায়েরের দেহে সফল কিডনি সংযোজন করেন। বর্তমানে জুবায়ের ও তার ভাই সোহেল সুস্থ বলে কিডনি বিভাগের প্রধান জানিয়েছেন। এই প্রথম ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একজন কিডনি রোগীর দেহে সফল কিডনি সংযোজনে তিনি আনন্দিত বলে জানান।

হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহিদুল হক মল্লিক বলেন, এই হাসপাতালে নিয়মিত কিডনি সংযোজনের উদ্যোগ নেয়া হবে। সারাদেশের কিডনি রোগীদের একটি বিশাল অংশ এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। আগতদের মধ্যে ৯০ ভাগ হতদরিদ্র বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান। প্রতিদিন আগত অর্ধশতাধিক কিডনি রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। প্রতিদিন কিডনি রোগীদের চাপ বাড়ছে বলে চিকিৎসকরা জানান।

কিডনি ইনস্টিটিউটের বাইরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা রয়েছে। ২০টি হেমোডায়ালাইসিস মেশিনের মধ্যে ৫টি বিকল। ১৫টি দিয়ে রোগীদের ডায়ালাইসিস করা হচ্ছে। চিকিৎসার চাপের কারণে ৫টি মেশিন বিকল হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান। এই হাসপাতালের বাইরে পুরাতন বাকি ৭টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে সলিমুল্লাহ, চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হেমোডায়ালাইসিসসহ কিডনি রোগের চিকিৎসার কিছুটা ব্যবস্থা রয়েছে। বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কিডনি রোগীদের হেমোডায়ালাইসিস বন্ধ রয়েছে। পুরাতন ৮টি মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে ৭টিতে এবং নতুন ১০ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে মাত্র খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কিডনি রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। নতুন ৯টিতে এই চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। মোট সরকারি ১৮টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে ৮টিতে কিডনি রোগের চিকিৎসা চলছে। তবে চাহিদার তুলনায় এই ব্যবস্থা অতীব নগণ্য বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান।

শেরে বাংলা নগর কিডনি ইনস্টিটিউটে গত দেড় বছর যাবৎ কিডনি সংযোজন চলছে। এই ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফিরোজ খান বলেন, গত দেড় বছরে ২০টি কিডনি সংযোজন করা হয়। এই ২০ জন রোগী সুস্থ রয়েছে। এই ইনস্টিটিউটে হেমোডায়ালাইসিসসহ কিডনি রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে বলে পরিচালক জানান। সরকারি হাসপাতালের বাইরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কিডনি সংযোজন নিয়মিত হচ্ছে। এই মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে সাবেক আইপিজিএমআরএ (সাবেক পিজি হাসপাতাল) ১৯৮২ সালে প্রথম কিডনি সংযোজন করা হয়। এরপর থেকে এই হাসপাতালে কিডনি সংযোজন নিয়মিত হয়ে আসছে। চলতি বছর ২৫টি কিডনি সংযোজন এই মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছে। বারডেমে কিডনি সংযোজন হচ্ছে। কিডনি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও খ্যাতিমান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক হারুন অর রশীদ বলেন, এই ফাউন্ডেশনে স্বল্পমূল্যে কিডনি সংযোজন এবং ডায়ালাইসিস করা হচ্ছে। ২০০৬ সাল থেকে কিডনি ফাউন্ডেশনে কিডনি সংযোজন শুরু হয়েছে। প্রতি বছর ৪০টি রোগীর দেহে কিডনি সংযোজন করা হয়। দেশে প্রায় ২ কোটি লোক কিডনি রোগে আক্রান্ত। ভেজাল ও বিষাক্ত খাদ্যসামগ্রী, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনি রোগীর সংখ্যা ব্যাপকহারে বেড়ে চলছে। চাহিদার তুলনায় চিকিৎসা ব্যবস্থা সীমিত বলে উক্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানান।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন বলেন, দ্রুত খুলনা স্পেশালাইজড হাসপাতালে কিডনি সংযোজনের ব্যবস্থা শুরু করা হবে। কিডনি ট্রান্সপ্ল্যানটেশন সার্জনদের সংখ্যা সীমিত। জনবলের অভাবে চিকিৎসার সমস্যা হচ্ছে। জনবল তৈরিসহ কিডনি চিকিৎসা ব্যবস্থা দ্রুত সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে মহাপরিচালক জানান।

০০ আবুল খায়ের
সুত্র : ইত্তেফাক

Shout Me Crunch আমার ব্যক্তিগত টেক ওয়েবসাইট।