Topic: সাধারণ্যে; সাধ্যের নাগালে চীনা হ্যান্ডসেট
সাধারণ্যে; সাধ্যের নাগালে চীনা হ্যান্ডসেট
একটা সময় ছিলো এদেশে মোবাইল ফোনের জন্য নগদে অনেক উচ্চমূল্যই গুণতে হতো। কিন্তু বাজারে এখন বাহারি রঙের ও ডিজাইনের অনেক মোবাইল হ্যান্ডসেটই মিলবে। এর মধ্যে কোনোটি নামকরা ব্র্যান্ডের আবার কোনোটা স্রেফ প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের সেটেরই ‘লুক অ্যালাইক’ বা সহজ বাংলায় নকল। বাজারে থাকা এসব হ্যান্ডসেটগুলোর দামের দিক থেকেও অনেক পার্থক্য চোখে পড়বে। একটা সময় ছিলো- মোবাইল ফোন কেবলই ধনী লোকজনের বিলাসের সামগ্রী হিসেবেই প্রচলিত ছিলো। কিন্তু বর্তমানে মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্তের হাতেও চলে এসেছে মোবাইল ফোন। কম দামের মোবাইল ফোন সেটগুলোর প্রভাব এ ক্ষেত্রে অস্বীকার করার উপায় নেই। বাজারে থাকা এমন সাশ্রয়ী মোবাইল হ্যান্ডসেটগুলো যেমন প্রয়োজন মেটাতে ব্যবহার হচ্ছে তেমনি বিনোদনের খোরাক হিসেবেও এ সেটগুলো যথেষ্টই জনপ্রিয়।
বাজারে থাকা এসব সাশ্রয়ী মোবাইল মানুষের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলেছে অনেক ক্ষেত্রেই। সম্প্রতি, দেশে মোবাইল ফোনের ব্যবহারও বেড়েছে বলে মোবাইল অপারেটরদের বরাতে জানা গেছে।
দেশে দ্রুত বাড়ছে মোবাইল ফোনের ব্যবহার। ২০০০ সালেও যেখানে মোবাইলের ব্যবহারকারী ছিল লাখের ঘরে, এখন কেবল গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যাই দাঁড়িয়েছে তিন কোটিতে। অন্যান্য অপারেটরদের গ্রাহকও বেড়েছে যথেষ্টই। বাংলাদেশে বর্তমানে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা পাঁচ কোটি আশি লাখ। ফলে, বর্তমানে বিশ্বে মোবাইল ফোন ব্যবহার বৃদ্ধির দিক থেকে অন্যতম শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। আর একই সঙ্গে বাড়ছে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও।
১৯৯৩ সালে সিটিসেল এর হাত ধরে বাংলাদেশে যে মোবাইল ফোনের যাত্রা শুরু তা এখন কেবল কথা বলাতেই সীমাবদ্ধ নেই। দিন দিন মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বাড়ছে। তথ্য-উপাত্ত বলছে, বাংলাদেশে বর্তমানে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দশ লাখের বেশি। আর এক্ষেত্রে এগিয়ে তরুণ প্রজন্মই। এর পাশাপাশি যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে মোবাইল ফোন আমাদের সামনে অনেক বিকল্প সুযোগও তৈরি করেছে। সম্প্রতি মোবাইল ফোনেই ট্রেনের টিকিট কেনা, স্বাস্থ্য সেবা, টাকা পাঠানোর সুবিধাসহ অনেক সুযোগ তৈরি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ব্যবহার বৃদ্ধির যে ধারা দেখা যাচ্ছে, তাতে ২০১৪ সাল নাগাদ মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়াবে সাত কোটি ২০ লাখ। একই হারে বাড়বে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী।
বাজারে খুচরা হ্যান্ডসেট বিক্রেতারা জানিয়েছেন, সাশ্রয়ী মূল্যের হ্যান্ডসেটে ক্রেতাদের আগ্রহ বেড়েছে। মোবাইল ফোন কেনার সময় কম দামে বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে এমন হ্যান্ডসেটের খোঁজ করেন ক্রেতারা।
পাশাপাশি, মোবাইল ফোন অপারেটদের বিভিন্ন আকর্ষণীয় অফারও হ্যান্ডসেট ক্রেতাদের আকর্ষণ করছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন।
ব্যবসায়িক দিক থেকে এখন অপারেটরাও হ্যান্ডসেট বিক্রির সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। যেমন সিটিসেল হাউয়েই হ্যান্ডসেটের সঙ্গে তাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অপারেটর হ্যান্ডসেটের সঙ্গে তাদের প্যাকেজ অফার দিয়েছে।
বাজারে থাকা সাশ্রয়ী হ্যান্ডসেটগুলো অনেক সুবিধাযুক্ত হলেও সেগুলো কেনার সময় সতর্ক থাকার কথা জানিয়েছেন টেকনিশিয়ানরা। কারণ এসব হ্যান্ডসেট অনেক সময় ভালো সার্ভিস দিতে পারে না এমনই অভিযোগ ক্রেতাদের।
সাশ্রয়ী মোবাইল হ্যান্ডসেটের মধ্যে নকিয়া, স্যামসাং, এলজি-এর মতো ব্র্যান্ড যেমন বেছে নেয়া যাবে, তেমনি চীনের তৈরি বিভিন্ন হ্যান্ডসেটও কেনা যাবে। সাশ্রয়ী মোবাইলের মধ্যে সবচে এগিয়ে চীনের তৈরি মোবাইল হ্যান্ডসেটগুলো। দেশে ইতোমধ্যে এসব হ্যান্ডসেট ‘চায়না মোবাইল’ নামেই পরিচিতি পেয়েছে। দামের দিক থেকে এসব হ্যান্ডসেট অনেক সাশ্রয়ী আবার অনেক আধুনিক সুবিধাও আছে।
চায়না মোবাইল :
বাজারে চায়না মোবাইলের মধ্যে সবচে বেশি পরিচিত এবং সাশ্রয়ী মোবাইল হ্যান্ডসেটের মধ্যে আছে সিম্ফনি, স্মার্ট, জোডিয়া, টেকনো, ম্যাক্সিমাস।
সিম্ফনি হ্যান্ডসেটের মধ্যে সিম্ফনি টি৬০আই অনেক সাশ্রয়ী এবং প্রয়োজনীয় অনেক বৈশিষ্ট্যই আছে। এতে আছে ৩২০ ী ২৪০ পিক্সেল ডিসপ্লে, ডুয়াল সিম, ২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা, এফএম রেডিও, ব্লুটুথ, এজ, জিপিএস। এ মোবাইলের দাম পড়বে ৫ হাজার ৭০০ টাকা।
এছাড়াও সিম্ফনির আরো যেসব সাশ্রয়ী হ্যান্ডসেট আছে তার মধ্যে এক্স৯০, এক্স৯৫, এবং এক্স ১০০। এসব হ্যান্ডসেটের দাম ২ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে।
টেকনো টি৩৭০ আরেকটি সাশ্রয়ী মোবাইল। ডুয়াল সিম, ১.৩ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা, এমপ্রিথ্রি প্লেয়ার, এফএমরেডিও, ব্লুটুথ, টর্চ, মেমোরি কার্ড সাপোর্টসহ এ হ্যান্ডসেটের দাম ২হাজার ৭০০ টাকা।
আইমোবাইল২২২ নামের এ হ্যান্ডসেটে আছে ২.২ ইঞ্চি ডিসপ্লে, ১ গিগাবাইট মেমোরি কার্ড সাপোর্ট, জিপিআরএস, ভিজিএ ক্যামেরা, এফএম রেডিও, এমপিথ্রি প্লেয়ার। দাম ৪ হাজার ২০০ টাকা।
জোডিয়া জেড৯ নামের মোবাইল হ্যান্ডসেটে আছে ডুয়াল সিম, ভিডিও ক্যামেরা ২ ইঞ্চি ডিসপ্লে , জিপিএস এবং মেমোরিকার্ড সুবিধা সহ এ হ্যান্ডসেটের দাম ৩ হাজার ৬০০ টাকা।
জোডিয়ার মতোই চায়না হ্যান্ডসেটের সাশ্রয়ী দুটি ব্র্যান্ড হলো স্প্রিন্ট, স্মার্ট। স্মার্টের এস৮৮আই হ্যান্ডসেটটি পাওয়া যাবে ৩ হাজার ৮০০ টাকায়। এ হ্যান্ডসেটে থাকছে ডুয়াল সিম, এফএম রেডিও, জিপিএস সুবিধা। এতে ২ গিগাবাইট পর্যন্ত কার্ডও সাপোর্টও করে।
ব্র্যান্ডেড মোবাইল :
ব্র্যান্ডের হ্যান্ডসেটগুলোর মধ্যে সাশ্রয়ী মুল্যে পাওয়া যাবে নকিয়া, স্যামসাং, সনি এরিকসন, মটরোলা, এলজিসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানির তৈরি হ্যান্ডসেট।
নকিয়া ১২০২ একটি সাশ্রয়ী হ্যান্ডসেট। চায়না মোবাইলের মতো অনেক বেশি সুবিধা না থাকলেও এ হ্যান্ডসেটটি বেশ কাজের। এর দাম ১ হাজার ৮৭০ টাকা। নকিয়ার আরেকটি সাশ্রয়ী মডেলের নাম নকিয়া ২৩২৩। রঙিন মনিটর, এফএম রেডিও সুবিধাযুক্ত এ হ্যান্ডসেটের দাম ৩ হাজার ৪৫০ টাকা।
সনি এরিকসন জে১৩২ সাশ্রয়ী একটি হ্যান্ডসেট । এর দাম ২হাজার ৯৯০ টাকা।
স্যামসাং ই১১১০ মডেলের হ্যান্ডসেটের দাম মাত্রই ১ হাজার ৭৫০ টাকা। এছাড়াও স্যামসাংয়ের আরো কম দামের একটি মোবাইল বাজারে পাওয়া যাবে, স্যামসাং বি ১৩০। এ সেটে লাউড স্পিকার, এফএম রেডিও শোনার সুবিধাও পাওয়া যাবে। এর দাম ১ হাজার ৬৫০ টাকা ।
কালার মনিটর, লাউড স্পিকার সুবিধাযুক্ত এলজির সাশ্রয়ী হ্যান্ডসেটের নাম এলজি জিএস১০৮। এর দাম ১৭৫০ টাকা।
মোবাইলের বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজারে থাকা সাশ্রয়ী হ্যান্ডসেটগুলোর অনেক সুবিধা থাকায় ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় যোগ এ হয়েছে এসব হ্যান্ডসেটগুলো।
সাশ্রয়ী এ হ্যান্ডসেটগুলো দেশের প্রায় প্রতিটি মার্কেট ও খুচরা বাজারে পাওয়া যাবে।
তবে সাশ্রয়ী মোবাইল কেনার আগে হ্যান্ডসেটের সবদিক বিবেচনা করে কেনাই ভালো বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। কারণ সস্তার তিন অবস্থা বলে একটি কথা প্রচলিত রয়েছে, এ কথাটির প্রতি সম্মান রেখে যাচাই-বাছাই করে সেট কেনাই ভালো।
বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম/মিন্টু/এইচবি/এইচআর/মে ২৬/১০
সূত্র : এখানে