Topic: ছোঁয়াচে বা সংক্রামক বলতে কোনো রোগ নেই
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “তোমরা আল্লাহ পাক-এর সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না।” (সূরা লুকমান ১৩)
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো কিছু বিষয় দ্বারা। সেগুলো হচ্ছে- ভয়-ভীতি, ক্ষুধা দ্বারা এবং মাল, জান ও খাদ্যশস্যের ক্ষতি দ্বারা। তবে ধৈর্যশীলদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে।” (সূরা বাক্বারা ১৫৫)
অত্র আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে বলা হয়েছে যে, রোগ মূলত আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে এসে থাকে। রোগ বা অসুস্থতা দানের কয়েকটি হিকমত রয়েছে। যথা:
১. যারা নেককার বান্দা, উনাদেরকে রোগাক্রান্ত করা হয় উনাদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য।
২. যারা মু’মিন-মুসলমান কিন্তু ফাসিক বা গুনাহগার, তাদেরকে অসুখ দেয়া হয় তাদের গুনাহ-খতা ক্ষমা করে পবিত্র করার জন্য।
৩. আর যারা মুনাফিক, কাফির, মুশরিক ও কঠিন অত্যাচারী তাদেরকে রোগগ্রস্ত করা হয় শাস্তিস্বরূপ।
ইসলামে ছোঁয়াচে বা সংক্রামক বলতে কোনো রোগ নেই। ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ আছে বলে বিশ্বাস করা কুফরী। কেননা তা সরাসরি হাদীছ শরীফকে অস্বীকার করার নামান্তর।
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে, সাইয়্যিদুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ বলতে কিছু নেই, তারকার (উদয় বা অস্ত যাওয়ার) দ্বারা বৃষ্টি বা কোনো কিছু হওয়া বা না হওয়াও ভিত্তিহীন এবং ছফর মাসে অশুভ বলতে কিছু নেই।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ/৩৯১, শরহুস সুন্নাহ-৬/২৭১ ও মিরকাত শরীফ)
আমাদের দেশে কিছু ব্যক্তি বিশেষ আছে এবং অজ্ঞ ডাক্তারও রয়েছে যারা বলে যে, পিতার হার্টের প্রেসার, ডায়াবেটিস, হাঁপানি ইত্যাদি রোগ থাকলে সন্তানেরও ওই রোগ হয়। যা সুস্পষ্ট কুফরী আক্বীদা। কারণ ইসলামে ছোঁয়াচে রোগ বলতে কোনো রোগ নেই। যে কোনো ব্যক্তির হতে পারে। এতে পিতা-মাতার থাকা না থাকা শর্ত না।
আবার, দেশী-বিদেশী কতিপয় ডাক্তার যে বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু, নিপাহ ভাইরাস ইত্যাদি রোগকে ছোঁয়াচে আখ্যায়িত করে থাকে। আসলে তাদের অজ্ঞতার কারণেই তা করে থাকে। এজন্য ডাক্তারীসহ যে কোন হুনুরী জ্ঞান-বিজ্ঞান অর্জন করার পূর্বশর্ত হলো প্রথমে ফরয পরিমাণ দ্বীনি ইলম অর্জন করা।
হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে, ‘প্রত্যেক রোগের আকৃতি আছে। যখন কোনো রোগ এলাকায় নাযিল করা হয়, তখন যে ব্যক্তিকে স্পর্শ করে শুধু ওই ব্যক্তিরই সেই রোগ হবে। অন্য কারো হবে না।”
যেমন ডাক্তার সারা জীবন অসংখ্য রোগীর চিকিৎসা করে কিন্তু ওই রোগীর রোগ ডাক্তারের হয় না। অতএব, প্রমাণিত হল যে, ছোঁয়াচে, বংশগত রোগ বলতে কোন রোগ নেই। বংশগত রোগ কিংবা ছোঁয়াচে রোগ আছে বিশ্বাস করা ইসলামের দৃষ্টিতে সুস্পষ্ট করা কুফরী।
যেহেতু কোন রোগই সংক্রামক নয়। কাজেই রোগ-ব্যাধিকে সংক্রামক বা ছোঁয়াচে মনে করা কুফরী-শিরকীর অন্তর্ভুক্ত।
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “কোন রোগই সংক্রামক নয়। পেঁচার মধ্যে কুলক্ষণের কিছুই নেই এবং ছফর মাসের মধ্যেও অশুভ কিছু নেই। তখন এক ব্যক্তি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তাহলে উটের এ অবস্থা হলো কেন? যে উটগুলো ছিল জংলী হরিণের মত তরু-তজা, যেগুলো ময়দানে স্বাধীনভাবে বিচরণ করতো। এমতাবস্থায় কোথা হতে এক চর্মরোগাক্রান্ত উট এসে সে উটের পালে মিলিত হলো এবং উটগুলোকে চর্মরোগী বানিয়ে দিলো। ফলে এ উটগুলোও খুজলীযুক্ত হয়ে গেল। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আচ্ছা তাহলে প্রথম উটটির চর্মরোগ কোথা থেকে হলো?” অর্থাৎ প্রথম উটটি যেভাবে খুজলীযুক্ত হয়েছিল ঠিক পরবর্তী উটগুলোও সেভাবে খুজলীযুক্ত হয়েছে। (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ/৩৯১, শরহুস সুন্নাহ-৬/২৬৫)
স্মর্তব্য যে, চিকিৎসা শাস্ত্রের পাঠ্যসূচিতে অদ্যাবধি ইসলামী আক্বীদা সংক্রান্ত কোন ইলম সূচিভুক্ত না থাকার কারণে অনেক সময় কোন কোন চিকিৎসক কিছু কিছু রোগ সম্পর্কে যেমন- চর্মরোগ, খুজলী-পাঁচড়া, কুষ্ঠ, কলেরা-বসন্ত ইত্যাদিকে সংক্রামক বা ছোঁয়াচে বলে অভিমত ব্যক্ত করে থাকে। যা সম্পূর্ণ কুফরী শিরকীর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং এরূপ ভ্রান্ত আক্বীদা হতে বিরত থাকা ফরয।