Topic: ৪৯ এর গল্প...

49TH MBBS, RMC

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে চান্স পাওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের পদবী এটাই।

এই মেডিক্যাল কলেজে আসার আগে আমরা অনেকেই অনেককে চিনতাম না। প্রায় ২০০ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে আমাদের ব্যাচের পথচলা শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালের ১০ জানুয়ারি।

প্রথম প্রথম আমাদের সবারই এই মেডিক্যাল এর পরিবেশ ভালো লাগত না, পরিবার কে সবাই খুব মিস করতাম। ২ দিনের ছুটি পেলেই সবাই বাড়ি যাওয়ার টিকিট কেনার জন্য লাইন দিতাম। বাংলা মিডিয়ামের আরামের পড়াশোনাকে খুব মিস করতাম। মেডিক্যালের বোরিং বইগুলো পড়তাম আর ভাবতাম, কেন এলাম এই পঁচা সাবজেক্ট পড়তে??

মেডিক্যাল হোস্টেলে আমাদের অধিকাংশ ব্যাচমেট থাকতাম। তখনও সবার সাথে বন্ধুত্ব হয় নি। অনেকের নামই জানতাম না। চেহারাও চিনতাম না। জীবনটাকে অনেক কঠিন মনে হত। ভাবতাম, এই RMC কারাগারে আমি এক বন্দী। কোন এক অজানা গুরুতর অপরাধের শাস্তি হিসেবে আমার এখানে আগমন। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে ভাবতাম, কবে কাটবে ৬ বছর??? কবে মিলবে মুক্তি???

পরীক্ষাকে সারাজীবনই ভয় পেতাম। এখানে আসার পর সেই ভয় যেন দ্বিগুণ হল। মনে পড়ে, জীবনের প্রথম আইটেম যখন দিতে বসি, আমার মনে হচ্ছিল, আমি কোন চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে বসেছি!! আস্তে আস্তে অবশ্য সেই ভয় কমে গিয়েছিল। পরে বুঝতে পেরেছিলাম, আইটেম একটা প্রহসনের নাম!! না পড়েও যা পাস করা যায়!!

এতক্ষণ তো বললাম কষ্টের কথা। মেঘের কোলে যেমন সূর্য থাকে, তেমনি এই কষ্টের পরেই আমাদের জীবনে এমন কিছুর আবির্ভাব হল, যা স্থায়ী ও অপরিবর্তনশীল। আর সেটাই হল বন্ধুত্ব। এ এক জাদুকরী সম্পর্ক, যা আমাদের সব দুঃখ-কষ্টকে ভুলে নতুনভাবে বাঁচার পথ দেখাল। ৪৯ তম ব্যাচের সবার সাথে ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব হয়ে গেল। সবার সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিয়ে আমরা “৪৯তম এমবিবিএস, আরএমসি” নামক একটা পরিবারের অংশ হয়ে গেলাম। আস্তে আস্তে এমন অবস্থা হল, ছুটি হলে আর বাড়ি যেতে মন চাইত না। মন চাইত বন্ধুদের সাথে হোস্টেলে বসে আড্ডা দিতে, মুভি দেখতে, বিকালবেলা বাইরে কোথাও দল বেঁধে বেড়াতে যেতে। জীবনে এক নতুন রঙের আবির্ভাব, জীবনটাই বদলে গেল আমাদের।

প্রথম বর্ষে আমাদের যেখানে চিন্তা হত, কবে কাটবে ৬ বছর; এখন চিন্তা হয়, কেন এত তাড়াতাড়ি সময় কেটে যাচ্ছে??? আর মাত্র কয়েক বছর পরে আমাদের এই RMC ছেড়ে চলে যেতে হবে, ভাবতেই মনটা কেঁদে ওঠে। তখন আর আমাদের এই প্রিয় বন্ধুগুলোকে প্রতিদিন দেখতে পাব না। কেউ বলবে না, “দোস্ত, চল, সবাই দল বেঁধে পদ্মার ধারে বেড়াতে যাই”, অথবা, “দোস্ত, কাল অমুক স্যারের ক্লাস আছে, ক্লাসে আসিস...”

কয়েক বছরের দেখায়, কথা বলায়, আমরা এমন এক বাঁধনে বন্দী হয়ে যাব, যে বাকিটা জীবনের প্রতিটা দিন আমাদের মনে পড়বে আজকের এই দিনের কথা।

জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়টা আমরা এখন পার করছি। এই যৌবনকাল একবার চলে গেলে আর ফিরে আসবে না। এই সময় আমরা যে বন্ধুগুলো পেয়েছি, আমরা ইচ্ছা করলেও তাদের কোনদিন ভুলতে পারব না।

এখন ডিজিটাল যুগ। আগেকার মত এখন আর কেউ কষ্ট করে চিঠি লিখে লিখে কারোর খোঁজখবর নেয় না। মোবাইল আর ফেসবুকের কল্যাণে যে যেখানেই থাকুক না কেন, সবাই থাকে একসাথে। তাই এখান থেকে চলে গেলেও আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে।

আমাদের ব্যাচের সবাই সবার বন্ধু। সব বিভেদের উপরে উঠে আমাদের পরিচয়, আমরা 49TH MBBS, RMC. হয়ত আজ থেকে ২০ বছর পরে, কোন এক রাস্তায়, আমাদের ব্যাচের কারোর সাথে দেখা হবে। প্রথম দেখায় হয়ত চিনতেও কষ্ট হবে। কিন্তু সেইদিনও আমাদের এই বন্ধুগুলোর প্রতি ভালবাসা এক বিন্দু কমবে না। চিনতে পারলেই আবার ফিরে আসব আজকের এই দিনগুলোতে। কত কথা হবে, কত গল্প হবে, কত স্মৃতিচারণ হবে। আবার আমরা যৌবনকালে ফিরে যাব। এভাবেই আমাদের ব্যাচের গল্প এগিয়ে যাবে......

আমরা চিৎকার করে বলব,
49TH MBBS, RMC IS THE BEST…
AS WE ARE HERE…