Topic: বেহুলা লখিন্দর

http://www.samakal.com.bd/admin/news_images/663/image_663_148215.gif

বজলুল করিম বাহার

'হাজার বছর ধর‌্যা বেউলা-লখাই গাথা কালীদহে ভাসে
লোহার বাসরঘরে কালনাগিনী ফোঁসে
মাস্তানের দক্ষিণেতে চাঁদব্যানের গোকুল নিবাসে।'
উপরোলি্লখিত কবিতার চরণ বগুড়ার ঐতিহাসিক এক প্রাচীন জনপদকে নিয়ে রচনা করেছেন কোনো এক অনামা কবি। এই কবিতার ছত্রজুড়ে রয়েছে বেহুলা-লখিন্দরের পৌরাণিক উপাখ্যানের নির্যাস। বেহুলা-লখিন্দরের বাসরঘর মিথটি বগুড়ার এ অঞ্চল তথা উত্তরবঙ্গের লোক প্রচলিত আখ্যান। বহু প্রাচীন জনগোষ্ঠীর কাছে এই মিথ পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে লোকপরম্পরায় বিশদতর একটি কাহিনীর আকার পেয়েছে। জনশ্রুতিতে রূপান্তরিত এই আখ্যানকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে 'মনসামঙ্গল' ও 'পদ্মপুরাণ'-এর মতো প্রাচীন কাব্য। যাত্রা, পালা, জারিগান প্রভৃতি লোকসংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে উঠেছে এই কাহিনী। দীর্ঘকাল ধরে এ অঞ্চলের সামাজিক আবেগমূলক ভাবগত জীবনে ছায়াপাত করেছে বেহুলার রহস্যময় আখ্যান।
বগুড়া শহর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে ও মহাস্থানগড় থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণে গোকুল নামক গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে যে ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তূপটি রয়েছে, এটিই বেহুলার বাসরঘর নামে কথিত। এর আরেক নাম গোকুলের মেধ বা ম্যাড়। মেধ শব্দের অর্থ যজ্ঞ। পূজার স্থান। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মতানুযায়ী আনুমানিক খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যে এটি নির্মিত হয়েছিল। ভূমি থেকে এটি প্রায় ৪৩ ফুট উঁচু। এই মেধ প্রাচীন স্থাপত্য কৌশলের একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। ১৯৩৪-৩৬ সালে খননের ফলে এই স্তূপটিকে বৌদ্ধ সংঘারাম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এতে মোট ১৭২টি কুঠুরি আবিষ্কৃত হয়। কুঠুরিগুলোকে বিভিন্ন তলে একই অভিন্ন সারিতে নির্মাণ করে পাইলিং পদ্ধতিতে মাটি দিয়ে এমনভাবে ভরাট করা হয়েছিল যাতে এসব উঁচু মন্দির ভবনের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। খননের ফলে প্রাপ্ত নিদর্শন থেকে এই স্তূপকে গুপ্তযুগের বলে ধরা হয়। এর বহুতল বিশিষ্ট ভিত্তি মণ্ডপের ওপর বৌদ্ধ কেন্দ্রীয় উপাসনালয় নির্মিত হয়েছিল।
বর্তমান গবেষকদের মতে, এই স্মৃতিস্তম্ভ খ্রিস্টপূর্ব ৮০৯-৮৪৭ অব্দে দেবপাল নির্মাণ করেছিলেন। বেহুলার কাহিনী লেনযুগের বহু আগের উপাখ্যান। অনুমিত হয় যে, এই সংঘারাম নির্মাণেরও বহুকাল আগে কথিত বেহুলার বাসরঘর এখানে নির্মিত হয়েছিল। আজ আর এ আখ্যান ঐতিহাসিক বাস্তবতার দ্বারা প্রমাণ করে ঘটনাকাল সুনির্দিষ্টভাবে নির্ণয়ের উপায় নেই। জনগোষ্ঠীর সমসায়িক জীবনচর্যা ও সামাজিক আধুনিকায়নের প্রভাবে বেহুলা-লখিন্দরের পৌরাণিক অশরীরী ছায়ার প্রভাব আজ সভ্য মানুষের কাছে বিলুপ্তপ্রায়।
এর বাস্তবতা তার মিথের শরীরেই লীন হয়ে আছে। তবে 'বেহুলার বাসরঘর' আখ্যানের অন্তর্গত বিভিন্ন ব্যক্তি ও স্থানের পৌরাণিক নাম হাজার বছর ধরে বহু কবির কাছে কল্পনাশ্রিত হয়ে জনশ্রুতির পরিণামের মধ্যে আজও তার মিথিক চরিত্রটি বজায় রেখেছে। বেহুলা-লখিন্দরের উপাখ্যান এমন এক কাহিনীর অবয়ব তুলে ধরে, যা একাধারে লৌকিক ও অলৌকিক। ঘটনা এগিয়ে চলে তার কর্মকাণ্ডকে ভিত্তি করে। এভাবেই পুরাকথার এক পূর্ণাঙ্গ স্বরূপ দানা বেঁধে ওঠে। প্রাচীন জনগোষ্ঠীর পুরাকথা অনেক সময় সমকালীন সভ্য জগতের পাঠকের কাছে নিতান্তই অর্বাচীন বলে মনে হতে পারে। তবে এতকাল পরেও এসব পুরাকথা বহমান সমাজের নিজ নিজ অবস্থার বাতাবরণে সাধারণ জনসমাজে যথেষ্ট সক্রিয় থাকতে পেরেছে। বহুশ্রুত বেহুলা-লখিন্দরের কাহিনীর প্রতি চোখ রাখা যায় : চম্পাই নগরে চাঁদ সওদাগর নামে এক বণিক ছিলেন। সর্পরানী মনসাদেবী মহাদেবকে সন্তুষ্ট করে বর পেয়েছিলেন যে, যদি চাঁদ সওদাগর তাকে পূজা দেন, তবেই ত্রিলোকে মনসার পূজা প্রচলিত হবে। চাঁদ সওদাগর মনেপ্রাণে ছিলেন মনসাবিদ্বেষী। শৈব ছিলেন। তিনি নিজেও মহাজ্ঞান শক্তি বর হিসেবে পেয়েছিলেন। এর বিনিময়ে সর্প দংশিত ব্যক্তিকে নিরাময় করতে পারতেন। তাই তিনি মনসা পূজায় সম্মত হননি। মনসা কৌশলে তার মহাজ্ঞান হরণ করেছিলেন। বন্ধু ওঝা ধন্বন্তরীর মৃত্যু ঘটালেন। চাঁদের ছয় পুত্র ও জনবল বিনাশ করলেন। তার বাগান অগি্ন নিঃশ্বাসে পুড়িয়ে ছারখার করলেন। এতকিছু সত্ত্বেও চাঁদ সওদাগর মনসার কাছে আত্মসমর্পণ না করে বরপ্রাপ্ত হেমতালের লাঠির আঘাতে তাকে তাড়িয়ে দিয়ে ঘৃণা সহকারে বললেন :
যে হাতে পূজেছি আমি দেব শূলপাণি
সে হাতে পূজিব আমি ব্যাঙখাকি কানি।

এ সময়ে চাঁদ সওদাগরের পরম রূপবান পুত্র লখিন্দরের জন্ম হয়। জ্যোতিষী ভাগ্যগণনা করে বলেন যে, বাসরঘরে সাপের কামড়ে তার মৃত্যু হবে। চাঁদ সওদাগর পুত্র লখিন্দরের বিবাহ দিলেন পরমা সুন্দরী সতী সাধ্বী বেহুলার সঙ্গে। সর্প দংশনের আশঙ্কায় নির্মাণ করলেন এক লোহার বাসরঘর। এই বাসরঘরে বেহুলার তন্দ্রার সুযোগে মনসার নির্দেশে সুতার আকারে পরিকল্পিত পথে ঢুকে কালনাগিনী লখিন্দরকে দংশন করে মৃত্যু ঘটায়।
বেহুলা স্বামীর শব ভেলায় চড়িয়ে নানা বিপদ-আপদ কাটিয়ে ইন্দ্রপুরীতে যেতে সক্ষম হন। সেখানে বেহুলা দেবতাদের নাচ দেখিয়ে খুশি করতে সমর্থ হন। পরিণামে শিবের নির্দেশে মনসা দেবী লখিন্দরকে পুনর্জীবিত করেন। এভাবেই পরবর্তীকালে চাঁদ সওদাগর কর্তৃক মনসা পূজিত হন, এতদঞ্চলে দেবী হিসেবে মনসা পূজা প্রচলিত হয় এবং শান্তি নেমে আসে এ অঞ্চলে। নারী হিসেবে বেহুলার পতিভক্তি, আত্মত্যাগ ও কাহিনী বিধৃত বেদনাময় স্মৃতি এই পুরাকথায় নানাভাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। বেহুলার বাসরঘরের এই উপাখ্যান নিয়ে গোকুল ও মহাস্থান এলাকায় চারণ কবিরা আঞ্চলিক ভাষায় গীত রচনা করেছেন, যা মুখে মুখে প্রচারিত। নিম্নবর্গের সাধারণ মানুষই এর রচয়িতা। মেলায়, পার্বণে, বিবাহ অনুষ্ঠানে গীত হিসেবে এসব গাওয়া হয়ে থাকে। বহুকাল ধরে আজ অবধি এ অঞ্চলের মানুষ কিছুটা হলেও এই ভাব বজায় রেখেছে। তারই কিছু কিছু সংগৃহীত বিচ্ছিন্ন নমুনা নিচে উল্লেখ করছি। এসব গীতের রচয়িতাদের নাম খুঁজে পাওয়া যায় না।

দেবী মনসা প্রসঙ্গে

দেবী বিষহরি মনসা নাগিনীর রানী
পিতা শিব ভোলা মহেশ্বর, পার্বতী জননী
মনসা জন্মেছিল কালীদহ সাগরে
সেই থিকা বিষ জ্বালা এ ভুবন হলো কালা
দেবীকে অবজ্ঞা করে চাঁন সদাগর
এ কথায় বুক জ্বলে পারে না সহিতে
গর্জে ওঠে নাগিন কন্যা বলিতে লাগিল
বংশ নির্বংশ হবি না পারবু পতি জিয়াইতে

চাঁদ সদাগর প্রসঙ্গে

চম্পাই নগরে থাকে চাঁন সদাগর
ধনেমানে গুণেকূলে মানুষটা সোন্দর
সর্বদা পূজা করে শিব মহেশ্বরে।
দেবতারে তুষ্ট করে মহাজ্ঞান পালো বরে
হেমতাল লাঠি পালো সাপেরে ঠ্যাঙাইতে
চাঁন কয় অহঙ্কারে, কখনো পূজিবো না আমি
ব্যাঙখাকি সাপিনীরে
শত পদ্মা হামাক কি করবার পারে?
ছয় পুত্র লয়া সুখে সংসার করে
চম্পাই নগরে

সনেকা দেবী প্রসঙ্গে

চাঁন সদাগরের বউ দেবী সনেকা।
ছয় পুত্র লয়া থাকে সোয়ামির সংসারে
তাহার আরেক পুত্র বালা লখিন্দর।
বেউলা যাহার বউ ত্রিভুবনে সব জানে
গোপনে পূজা দেয় মনসা দেবীরে।
বলে, সর্বদা পূজিব তোরে, নাগিনী মাতা,
বর দেও মোরে, যাতে চাঁন সোয়ামী হামার

সকল জনমধরে থাকে ধনে জনে মানে।
ছয় বউ সাথে লয়া মনসা পূজা করে





লখিন্দর প্রসঙ্গে
চাঁন সদাগরের ছেলে লখিন্দর নাম
চম্পাই নগরে লখাই জন্মালো
পাঁচ বছরের শ্যাষে ছেলে হাতে খড়ি দিল
নয় বছরে লখাইয়ের চূড়া করণ হলো
এক দুই তিন করে বয়স বার বছরে পড়িল
এ সময়ে মা তার বিবাহের কথা পাড়লো
চাঁন সদাগর এ কথা না মেনে কলো,
আগে হামাক বানাবার দেও লোহার বাসরঘর
তারপর বিয়ার কথা আসবার পারে
তা না হলে হামাকেরে লখা মরিবে সর্প দংশনে
এ কথা কয়্যা চাঁদ বিশ্বকর্মাকে ডাকিল
বাসরঘর বানাবার কথা তাক ভাল কর‌্যা কলো

বিশ্বকর্মা প্রসঙ্গে
বিশ্বকর্মা রাজমিস্ত্রি তুলনা তার নাই
দক্ষিণ দুয়ারি ঘর তাই তৈরি করি দিল
মনসা এ কথা শুনে ভয় দেখালো
আমার নাগিনী যাবার সুড়ঙ্গ এখন তৈরি করো
না হলে তোমার জান হইবে ছারখার
বেহুলা সুন্দরীর বিবাহ প্রসঙ্গে
উজানী নগরে থাকে বাসো বানিয়া।
তার ঘরেতে জন্ম নিছে বেহুলা সুন্দরী
রূপে গুণে ব্যবহারে নাই কেহ তাহার সমান
পছন্দ করলো তাকে চাঁন সদাগর
এই কন্যার সাথে লখার বিয়া করাও
গণ্ডা গণ্ডা ঢাক ঢোল সাথে করে লিয়ে
শহর ভেঙে আসলো সবাই চামুনাই গ্রামে
ছয় কুড়ি বরযাত্রী করলো সাজন
লখাইয়ের বিবাহে জুড়লো বাজন
রাতদিন কতরকম বাদ্যো বাজিল
অ্যাংকা করে বিয়া শেষে বউ ঘরোত আসলো।
বেহুলার রূপে লখাই দিওয়ানা বনিল

লোহার বাসরঘর ও সর্পদংশনে লখাইয়ের মৃত্যু
বাসরঘরে ঢুকে নাগিন দংশিতে লখারে
লখার রূপ দেখিয়া নাগ হায় হায় করে
এ যেন মুখ নয় রূপের চন্দ্রহার
কি করে দংশন করি এই সোন্দর বাছারে
কোথায় দংশিব একে কপালে না বুকেতে
কোমরে দংশিব নাকি দংশিব হাতে
বালা বালির রূপেতে বাসর দেয় যেন নাড়া
সিথানেতে লখার বুকে নাগ ছত্র ধরিলো
মশার কামড়ে লখাই পাশ ফিরিল
অ্যাংকা করে ঘুরিতে পা নাগ ফণাতে লাগিল
দুইবার লখার পায়ের আঘাত মাপ করিয়া দিল
তিনবারের বেলায় নাগ লখারে কামড়াইলো
মলাম মলাম বলে লখাই অচেতন হইলো
ঘুমের ঘোরে বেহুলা কিছুই না টের পাইলো
হাঁটু থেকে কালবিষ কোমরে উঠিল।
কোমরে ছিল বিষ মাথায় উঠিল
বেহুশ হইয়া লখাই পালঙ্কে পড়িল
প্রাণ লয়ে যমরাজ গমন করিল
তাই দেখে মনসা দেবী তুষ্ট হইল
বাসরঘরে বেহুলা পাইল চেতন
সবকিছু জেনে কন্যা কাঁদিতে লাগিল
বেহুলার কান্না শুনে সকলে কাঁদিল
চম্পা নগরী হলো দুঃখের সাগর
পতিহারা বেহুলার হাতের শাখা সিঁদুর গেল
কপালের লিখন কভুও হয় না তো খণ্ডন

লখিন্দরের স্বর্গযাত্রা প্রসঙ্গে
লখাইয়ের শবদেহ ঘরের বাহির করো
তুলসীর মালা গেঁথে পালঙ্কে তুলিল
হরিবোল বলে সব বাড়ির বাহির হলো
সকলে মিলিয়া শবদেহ নদীর ঘাটে নিল
হরিবোল বলে সবাই লখাইরে নামাইল
একে একে সবাই ধরে ভুঁরাতে তুলিল
সতি নারী বেহুলা পতির সঙ্গে চলিল
পতিরে জিয়াইতে হবে যে কোনো মূল্যে
এই প্রতিজ্ঞা বুকে লয়া জলে ভেলা ভাসাইলো
বক্ষ্যমাণ রচনার গীতগুলো এ অঞ্চলের চারণ কবিরা নানা জনে রচনা করেছেন। এর কোনো লিখিত পূর্ণাঙ্গ রূপ খুঁজে পাওয়া যায় না। মুদ্রিত কোনো গ্রন্থও সন্ধান করে পাইনি। এতে রয়েছে আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার। রয়েছে ছন্দের অসঙ্গতি। কিন্তু যুগপরম্পরায় লোকমুখেই নিম্নবর্গের মানুষেরা এই আখ্যান সহজাত প্রক্রিয়ায় ধারণ করে রেখেছে সংস্কৃতির অংশ হিসেবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই উপাখ্যান নিয়ে 'বিষহরি' নামক একটি গ্রন্থের কথা জানা যায়। এই গ্রন্থে চাঁদ সওদাগরের বাড়ি, ওঝা ধন্বন্তরী, নেতাই ধোপানির ঘাট, শ্রীকলার বাজার, মনসার বাড়ি, কালীদহ, ত্রিবেণীর ঘাট প্রভৃতি জায়গাকে আশপাশের ধ্বংসস্তূপগুলোকে কল্পনা করা হয়েছে। গোকুলের মেধকে বেহুলা সুন্দরীর বাসর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই উপাখ্যানের ঐতিহাসিক সত্যতা নিশ্চিত নয়। তবে এই মিথগুলো ঐতিহ্যাশ্রয়ী সমাজে জীবনের বহমান স্রোতে লোক প্রচলিত আখ্যান হিসেবে কল্পনাকে ক্রিয়াশীল রাখতে সমর্থ হয়। কখনও কখনও তা আমাদের অতীতের মানব গুণগত স্বরূপটিকে চেনাতে সাহায্য করে।

লেখক :প্রাবন্ধিক, অনুবাদক

সুত্র

মেডিকেল বই এর সমস্ত সংগ্রহ - এখানে দেখুন
Medical Guideline Books


Re: বেহুলা লখিন্দর

valo hoisay