Topic: কাশির সঙ্গে রক্ত গেলে - ডা. একেএম মোস্তফা হোসেন
ডা. একেএম মোস্তফা হোসেন
পরিচালক
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল
কাশির সঙ্গে রক্ত, ফোঁটা ফোঁটা রক্তের দাগ বা লম্বা সরু দাগ থেকে শুরু করে প্রচুর পরিমাণ রক্ত আসতে পারে। মেডিকেল ভাষায় একে হেমোপটোসিস বলে। কাশির সঙ্গে অল্প বা বেশি পরিমাণ রক্ত দেখা যাক না কেন তার সঠিক ইতিহাস জানা এবং অন্তর্নিহিত কারণ বের করা প্রয়োজন। কারণ কাশির সঙ্গে রক্ত দেখা দিলে কখনও কখনও ফুসফুসে জটিলতা সন্দেহ করা হয়, যেমন ফুসফুসে ক্যান্সার। যদি দ্রুত রোগ নির্ণয় করা যায় তা হলে সঠিক চিকিৎসা করালে বেশিরভাগ রোগই পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব, যেমন যক্ষ্মা রোগ প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে ৬ মাসের ওষুধ খেলে সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়।
নিম্নলিখিত কারণে কাশির সঙ্গে রক্ত যেতে পারে
১. ব্রংকাইটিস
২. ফুসফুসে ক্যান্সার
৩. যক্ষ্মা
৪. ব্রংকিইয়েকটেসিস
৫. ফুসফুসে ফোঁড়া
৬. পালমোনারি থ্রম্বোএম্বলিজম
৭. হার্টের ভাল্বের সমস্যা যেমন-Mitral Stenosis
৮. হার্ট ফেইলর
অন্যান্য কারণেও কাশির সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। যেমন, বুকে আঘাতজনিত কারণে। বিভিন্ন ধরনের ভাসকুলাইটিস যেমন, (পালমোনারি শিরা-ধমনির জটিলতা)। রক্তের বিভিন্ন ধরনের রোগের কারণ যেমন, হেমোফিলিয়া। ওষুধের কারণে যেমন, ওয়ারফেরিন, ব্যথানাশক ওষুধ (ঘঝঅওউং)।
কিছু বিরল কারণ যেমন, মহিলাদের প্রতি মাসে ঋতুস্রাবের সময় কাশির সঙ্গে রক্ত যেতে পারে যাকে বলে ক্যাটামেনিয়াল হেমোপটেসিস।
প্রথমে কাশির সঙ্গে রক্ত, বমির সঙ্গে নাকি নাক-কান ও গলার কোন কারণে রক্ত যায় তা সঠিকভাবে নির্ণয় করতে হবে। অনেক সময় গলা খাকাড়ি দিলে রক্ত আসতে পারে। এজন্য রোগীর কাছ থেকে বিস্তারিত ইতিহাস জানতে হবে।
উৎস
যেমন, নাক দিয়ে রক্ত আসা, গলা ফ্যাঁস ফ্যাঁস হয়ে যাওয়া, মুখে যদি ঘা থাকে তাহলে সন্দেহ হবে যে শ্বাসনালীর ওপর অংশ থেকে রক্ত বের হচ্ছে। যেমন, সাইনোসাইটিস।
* কালচে লাল রক্ত, নোনতা লাগা, বমি বমি ভাব হওয়া, পেটে ব্যথা, মদ পান করা, পূর্বে জন্ডিসের ইতিহাস থাকলে, বমির সঙ্গে রক্ত এসেছে বলে ধারণা করা যায় এবং এর উৎস খাদ্যনালী অথবা লিভারের কারণে তা আলাদা করা কঠিন হয়ে যায়, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য এন্ডোসকপি জাতীয় পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
রক্তের রঙ ও কাশির কারণ
১. লাল পরিষ্কার ফেনাযুক্ত কাশি হেমোপটোসিস
২. কালচে লাল, নোনতা (হেমাটেমেসিস) খাদ্যনালীজনিত।
৩. গোলাপি রঙের ফেনাযুক্ত কাশি হার্ট ফেইল
বয়সজনিত কারণ সাধারণত ৪০ বছরের আগে হলে কারণ যক্ষ্মা, হার্টের ভাল্বে সমস্যা, ৪০ বছরের পর কারণ হল, ফুসফুসে ক্যান্সার, ব্রংকাইটিস, হদরোগজনিত কারণে।
কাশির সঙ্গে বেশি পরিমাণ রক্ত যায়
ফুসফুসে ক্যান্সার
যক্ষ্মা
ফুসফুসে ফোঁড়া
ব্রংকিইয়েকটেসিস
কাশির সঙ্গে অল্প পরিমাণ রক্ত যায়
ব্রংকাইটিস
নিউমোনিয়া
হার্ট ফেইলর
কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়ার শুরু
হঠাৎ করে কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া হার্ট ফেইলুর
ক্রমাগত কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া মাঝে মাঝে রক্ত যায় তাহলে ফুসফুসে ক্যান্সার সন্দেহ করা হয়।
রোগের ইতিহাস
বয়স ৪০ এর বেশি, দীর্ঘদিনের কাশি, মাঝে মাঝে হালকা রক্ত যাওয়া, দীর্ঘদিনের ধূমপানের ইতিহাস, অল্প পরিমাণ শ্লেষ্মাযুক্ত কাশি এবং আপনা আপনি রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায় তাহলে সন্দেহ করা হয় ক্রনিক ব্রংকাইটিস।
ধূমপানজনিত কারণে কাশি, প্রথম শুকনো পরে হঠাৎ করে কাশির প্রকৃতি পরিবর্তন এবং তার সঙ্গে রক্ত ক্রমাগত বেড়ে যায়, শিল্প কারখানায় কাজের ইতিহাস, দীর্ঘদিনের ধূমপানের ইতিহাস ফুসফুসে ক্যান্সার সন্দেহ করা হয়।
দীর্ঘদিনের কাশি, সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর প্রচুর কাশি, সঙ্গে প্রচুর রক্ত যাওয়া, আগে কোন ফুসফুসে প্রদাহ বা যক্ষ্মা রোগ, শ্বাসনালীতে ফরেনবডি (সিমের বীচি, পুঁথির দানা, ছোট পয়সা ইত্যাদি) ঢুকে যাওয়ার ইতিহাস থাকলে ব্রংকিইয়েকটেসিস জনিত কারণে হতে পারে।
অল্প অল্প জ্বর, বিকালের দিকে জ্বর, রাতে গা ঘামানো, খাবারে অরুচি, ধীরে ধীরে শরীর শুকিয়ে যাওয়া, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বসবাস, যক্ষ্মা রোগীর কাছে বেশি সময় থাকা, এক কক্ষে গাদাগাদি করে থাকার কারণে অনুমান করা হয় যক্ষ্মা রোগ হয়েছে।
খুব বেশি জ্বর, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, সঙ্গে বুকে ব্যথা, কাশির সঙ্গে মরিচা রঙের কফ হলে সন্দেহ করা হয়, তার নিউমোনিয়া হয়েছে।
কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, রক্ত এবং দুর্গন্ধযুক্ত কাশি হলে ফুসফুসে ফোঁড়া হয়েছে সন্দেহ করা হয়।
হঠাৎ করে কাশির সঙ্গে রক্ত আসা, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট হলে পালমোনারি এম্বলিজম সন্দেহ করা হয়।
বুক ধড়ফড় করা, অল্প পরিশ্রমে হাঁফিয়ে যাওয়া, ছোটবেলা থেকে বাতজ্বর হওয়ার ইতিহাস থাকে তাহলে হার্টঅ্যাটাক হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়।
হঠাৎ বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট হওয়া, কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া, আগে হ্রদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস থাকলেও Heart Attack হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়।
সুত্র: দৈনিক যুগান্তর