Topic: গরম, ঘাম ও পানিশূন্যতা

এই সময়ে শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পানি ও লবণ বেরিয়ে গিয়ে পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন হয়। মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হতে পারে এ থেকে। লিখেছেন ডা. সাবরিনা হুসাইন। পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেফ্রলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কে বি এম হাদিউজ্জামান

http://www.dailykalerkantho.com/admin/news_images/500/thumbnails/image_500_148219.jpg

পানিশূন্যতার ইংরেজিটাই আমাদের কাছে বেশি পরিচিত- ডিহাইড্রেশন। মূলত গ্রিক শব্দ ডিহাইড্রেশনের শাব্দিক অর্থ অতিরিক্ত পরিমাণ পানি বের হয়ে যাওয়া। কোষ তথা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পানির পরিমাণ কোনো কারণে রক্ষিত না হলে পানিশূন্যতা তৈরি হয়। এটি দুভাবে তৈরি হয়_
* পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি গ্রহণ না করলে।
* অতিরিক্ত পানি শরীর থেকে বেরিয়ে গেলে।

পানিশূন্যতা সাধারণত তিন ধরনের হয়
১. পানি বের হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের জন্য অপরিহার্য লবণ (বিশেষ করে সোডিয়াম) অতিরিক্ত পরিমাণ বেরিয়ে যায়, ফলে লবণের ঘাটতি প্রকট হয়ে যায়। এটি হাইপোটনিক ডিহাইড্রেশন নামে পরিচিত। এ ক্ষেত্রে কোষের ভেতরে ও বাইরের পানি ও লবণের সমতা রক্ষার জন্য কোষের ভেতরের পানিও কোষের বাইরে চলে আসে। ফলে পানিশূন্যতা মারাত্মক ধরনের হতে পারে।
২. অন্য ধরনটি হাইপারটনিক ডিহাইড্রেশন নামে পরিচিত। এতে লবণের তুলনায় অনেক বেশি পানি বের হয়ে যায়। ফলে পানিশূন্যতার পাশাপাশি লবণ ও পানির ভারসাম্যও বিঘি্নত হয়।
৩. সচরাচর আমরা তীব্র গরমে বা ঘামের কারণে যে ধরনের পানিশূন্যতায় আক্রান্ত হই, তা আইসোটনিক ডিহাইড্রেশন নামে পরিচিত। এ ক্ষেত্রে লবণ ও পানি একই সঙ্গে বের হয়।
কেন শরীরে পানির ঘাটতি হয়?
* শরীর থেকে প্রস্রাব, মলত্যাগ, ঘাম, এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমেও পানি ও লবণ বের হয়ে যায়। বাংলাদেশে চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে অতিরিক্ত গরম ও শুষ্ক আবহাওয়ায় পানি বের হয়ে যাওয়ার মাত্রা অনেক বেশি হয়। সেই তুলনায় পানি পান না করা হলে ও দীর্ঘক্ষণ বাইরে থাকা হলে (ঢ়ৎড়ষড়হমবফ যবধঃ বীঢ়ড়ংঁৎব) শরীরে ধীরে ধীরে পানিশূন্যতা তৈরি হয়।
* শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা যদি পানির কথা বলতে না পারে ও পানি খাওয়ানো না হয়, তবে তাদের ক্ষেত্রে পানিশূন্যতা হতে পারে।
* সংজ্ঞাহীন রোগী ও কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বেঁচে রয়েছে এরূপ রোগী এবং অপারেশনের পর রোগীদের প্রয়োজনীয় তরলের পরিমাণ সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না হলে পানি ও লবণশূন্যতা হতে পারে।
* মানসিক সমস্যায় ভুগছেন এমন রোগীরা পানি পান করার কথা ভুলে যান বা ইচ্ছা করেই পান করেন না। তাঁদের ক্ষেত্রে তাই পানিশূন্যতা খুব বেশি দেখা যায়।
* মুখের ভেতর, গলা পুড়ে গেলে, ঘা বা ব্যথাযুক্ত ফোঁড়া বা ফুসকুরি হলে_এমনকি ইনফেকশন হলেও পানি খাওয়া কমে যায়। এ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে পানি নিঃসরণ বেশি হয়। ফলে তৈরি হয় পানিশূন্যতা।
* বেড়াতে গেলে বা প্রস্রাব আটকে রাখলে বা প্রস্রাব করার ভয়ে পানি কম পান করলে, খাওয়ার পানি না পাওয়া গেলে পানিশূন্যতা হতে পারে।
* যাদের গিলতে সমস্যা_যেমন ইসোফেগাসে ক্যান্সার থাকলে পানিশূন্যতা হয়।

আরো যে কারণে পানিশূন্যতা হতে পারে
* জ্বর হলে পানিশূন্যতা তৈরি হয়, বিশেষ করে তাপমাত্রা ১০২০ঋ-এর বেশি হলেই শরীর পানি হারানো শুরু করে।
* প্রচণ্ড কায়িক পরিশ্রম হলে।
* অতিরিক্ত বমি হলে।
* ডায়রিয়া, আমাশয়, কলেরা হলে।
* ইনফেকশনের কারণে ঘন ঘন প্রস্রাব হলে।
* শরীরের কোথাও পুড়ে গেলে।
* ক্ষুদ্রান্ত্র বা বৃহদন্ত্রের কোনো অপারেশন হলে বা ফিস্টুলা হলে।
* বিশেষ কোনো অসুখে যেমন ডায়াবেটিস কিটোএসিডেসিস হলে।
* অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে।

সাবধানে থাকুন যদি_
* দীর্ঘসময় বাইরে একনাগাড়ে কাজ করার সময়ে
* জ্বর থাকলে
* দুই দিনের বেশি ডায়রিয়া থাকলে (শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে এক দিনের ডায়রিয়াও মারাত্মক হতে পারে)
* এক দিনের বেশি ঘন ঘন ও প্রচুর পরিমাণে বমি হলে।
* ডায়াবেটিস থাকলে।
* কিছু ওষুধ সেবন করার ক্ষেত্রে।
* দুর্বল শরীরে রোজা রাখলে বা উপবাস করলে।

পানিশূন্যতা প্রতিরোধে যা করতে পারেন
স্বাভাবিক দিনে একজন প্রাপ্তবয়স্কের অন্তত দুই লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। যদি গরমে বাইরে বেশিক্ষণ থাকেন তবে পানি পানের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। বাইরে যাওয়ার সময় সঙ্গে বোতলে পানি নিন।
* বাচ্চারা স্কুলে খেলাধুলা ও অন্যান্য কাজ করে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাদের ফ্লাস্কে বা বোতলে পানি দিয়ে দিন ও প্রতিদিন দেখুন বাচ্চা পানি পান করেছে কি না। অনেক বাচ্চার পানি পান করারও অভ্যাস গড়ে ওঠে না। এটি অনেক সময় বিপজ্জনক হতে পারে। বিশেষ করে শিশুরা কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়।
* যাঁরা খেলাধুলা করেন বা ব্যায়াম করেন, তাঁরা ইনস্ট্রাক্টর, কোচ বা ডায়েট্রেশিয়ানের মাধ্যমে শরীরে প্রয়োজনীয় পানির পরিমাণ জেনে নিন ও সেই অনুযায়ী পানি পান করুন।
* যদি ৪-৫ ঘণ্টা পর পর প্রস্রাবের বেগ হয় ও প্রস্রাব হয় এবং প্রস্রাবের রং যদি স্বাভাবিক থাকে (হালকা হলুদ) তবে বুঝতে হবে, শরীরে পানির পরিমাণ স্বাভাবিক আছে। কিন্তু যদি ৮-১০ ঘণ্টা প্রস্রাবের বেগ না হয় ও প্রস্রাবের রং গাঢ় হলুদ হয়, তবে বুঝতে হবে শরীরে পানি কমে গেছে।
* পানি খেলেই যে পানিশূন্যতা রোধ হবে এমন কোনো কথা নেই। তাজা সবজি, ফল যেমন_তরমুজ, শসা ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে, তাই অফিসে বা বাড়িতে কাজের ফাঁকে ফাঁকে ফলের রস, সালাদ ইত্যাদি খান।
* বাচ্চাদের বা বৃদ্ধদের ডায়রিয়া এক দিনেও মারাত্মক লবণ ও পানিশূন্যতা তৈরি করতে পারে। তাই দুইবারের বেশি পাতলা পায়খানা হলেই স্যালাইন খাওয়ানো শুরু করুন। ডাবের পানিও অত্যন্ত উপকারী। মনে রাখবেন, স্বাভাবিক খাবার খাওয়ানো বন্ধ করবেন না_কারণ খাদ্যের মাধ্যমেও প্রচুর পানি ও লবণ শরীরে প্রবেশ করে।
* স্বাভাবিক মানুষের ক্ষেত্রে যখন তৃষ্ণা পায়, তখন পানি পান করাই যথেষ্ট; কিন্তু যাঁরা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, বিশেষ কোনো ওষুধ খান তাঁরা খানিকটা সময় পর পরই পানি পান করুন।

চিকিৎসা
* পানিশূন্যতা যদি সামান্য পরিমাণে হয়, তবে বারবার পানি পান করলেই পানির পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে যায়।
* অতিরিক্ত ঘাম হলে রোগীকে ঠাণ্ডা স্থানে নিয়ে বাতাস করতে হবে ও পানি পান করাতে হবে।
* শিশুকে বারবার বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। ছয় মাসের বেশি বয়স হলে দুধের পাশাপাশি স্যালাইন খাওয়াতে হবে ।
* পানিশূন্যতা বেশি হলে রিহাইড্রেশন করতে হবে মুখে খাবার স্যালাইন ড়ৎধষ ৎবযুফৎধঃরড়হ ংধষঃ ঃযবৎধঢ়ু দিয়ে। এ ক্ষেত্রে যত ইচ্ছা স্যালাইন খাওয়া যেতে পারে।
* পানিশূন্যতা অতিরিক্ত হলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তর করে শিরায় স্যালাইন দিতে হবে।

মনে রাখবেন পানিশূন্যতা শনাক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ পানিশূন্যতায় মৃত্যুর হারও অনেক।


সূত্র



Re: গরম, ঘাম ও পানিশূন্যতা

অত্যন্ত সময়পযোগী টপিক! আমি নিজেই মনে হয় রাজশাহীর গরমে পানি শূন্যতাতে ভুগছি! বিশুদ্ধ পানির বড়ই অভাব!

Shout Me Crunch আমার ব্যক্তিগত টেক ওয়েবসাইট।


Re: গরম, ঘাম ও পানিশূন্যতা

দরকারি পোস্ট।  thumbs up

মোঃ সাঈদুজ্জামান উপল
http://img684.imageshack.us/img684/3410/fb1d.jpg


Re: গরম, ঘাম ও পানিশূন্যতা

বাজারে তরমুজ, শসা পাওয়া যাচ্ছে , এগুলো খাওয়া উচিত্ ?

মেডিকেল বই এর সমস্ত সংগ্রহ - এখানে দেখুন
Medical Guideline Books


Re: গরম, ঘাম ও পানিশূন্যতা

dr.shamim wrote:

বাজারে তরমুজ, শসা পাওয়া যাচ্ছে , এগুলো খাওয়া উচিত্ ?

      অবশ্যই এগুলো খাওয়া উচিত সাথে গ্লুকোজ, স্যালাইন, দেশীয় ফলের শরবত
নিয়মিত খাওয়া উচিত।