Topic: নববর্ষের শুভেচ্ছা ও ডিজিটাল ইলিশ -১৪১৮
বলুন তো এটা বাংলা কত সাল ?
এর উত্তর ১০ জনে ১ জন পারবে । গ্রামের মহিলাদের জিজ্ঞাসা করলে তারা ১০/১০ পাই।
যাই, হক রাত পেরিয়ে আগামি কাল থেকে শুরু হচ্ছে বাংলা নববর্ষ -১৪১৮ ।
আর এম সি এর পক্ষ থেকে সব্বাইকে শুভেচ্ছা।
মাছের রাজা ইলিশ! খুবই মজাদার আল্লাহর এক অপূর্ব সৃষ্টি। এই ইলিশের মজার ও ঘ্রাণের সাথে তুলনা করবে এমন মাছ সাগরে আর দ্বিতীয়টি নেই। বঙ্গোপসাগর হল ইলিশের মূল বিচরণ ক্ষেত্র। কুতুবদিয়ার ৪০ মাইল পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের স্থানকে মাছের খনি বলা হয়। ইলিশ গভীর পানির মাছ, পূর্বের গভীর পদ্মা নদী ছিল ইলিশ মাছের পছন্দের স্থান, এখন সাগরে বাস করে। তবে সে ডিম পারে মিঠা পানিতে। আগে পদ্মায় যখন গভীর পানি ছিল, তখন ইলিশ মাছের প্রাচুর্য ছিল দেশে। পদ্মায় ডিম পারত, সেখানে মা মাছেরা বসবাস করত। বাংলাদেশের অতীব গুরুত্বপূর্ন সহযোগী এবং বিশ্বস্থ বন্ধু ভারতের কল্যাণে পদ্মায় এখন আর পানি নেই। ফারাক্কা বাঁধের দয়া ও মহীমায়, মাশায়াল্লাহ পদ্মায় এখন ক্রিকেট খেলা যায়, গরুগাড়ী চলে, ঠেলাগাড়ী আসে!
যাক, ইলিশ এখন কল্পনার বস্তুতে পরিণত হয়েছে। দেশের ধনীর দুলাল-দুলালীরা (তির্যক মন্তব্যকারীদের ভাষায় গরীবের প্রতি বছরের প্রথম তামাশা) পহেলা বৈশাখের আনন্দে, বাসি পান্থাভাতে পোড়া মরিচ পিষে যে ইলিশ চূর্ন খেতেন! সেটার কল্যাণে ইলিশের কদর আকাশ চুম্বি হয়েছে। চলতি সপ্তাহে সে ইলিশের হালি প্রতি দাম দশ হাজার টাকা! বৈশাখের শুরুতে নাকি দাম হালি প্রতি ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত পৌঁছতে পারে! তার মানে একটি ব্লাক বেঙ্গল ছাগল বিক্রি করেও একটি ইলিশ কেনা দুঃষ্কর হয়ে যাবে! তাছাড়া শোনা যাচ্ছে, এ বছর ইলিশের বাজারে ক্রেতা শিকারে এন, বি, আর ও দূদকের নজরদারী থাকবে। তাই ইলিশের অকালের দিনে আপনাদের সবাইকে ডিজিটাল ইলিশ খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
কয়েক দিন ধরে আমার ছেলে টা যেখানে মাছ দেখে সেটা কে ইলিশ বলছে। আপনাদের ভাবিসাব বলেছে পচা ইলিশ খাবনা । কারন ভাল ইলিশ রাজশাহি তে পাওয়া যাই না। বগুড়া তে মোটামুটি ভাল ।
তো আসুন আগে খাওয়া দাওয়া পরব সেরে নিই।
ইলিশ ভাজি:
তাজা ইলিশকে কেটে দুই ঘন্টা মেরিনেট করে হালকা আঁচে ভাজা হয়েছে, মোটা মরিচ ও বেগুনের হালকা টুকরা যোগে তৈরী করা হয়েছে এই ডিশ। একবার খেলে বারবার খেতে এখানে ঢুঁ মারতে ইচ্ছে করবে। দেশ গ্রামে এই ডিশের মেলা কদর।
ইলিশ ফ্রাই:
মরিচ-হলুদ গুড়োর হালকা ঝালে প্রস্তুত, খুবই স্বুসাদু এই ডিশ। যে খায়নি তার জীবনই বৃথা। পুদিনা ও ধনে পাতার মিশ্রণে এর ঘ্রাণ একবার নাকে ঢুকলে টয়লেটে যাবার আগ পর্যন্ত ইলিশের ঘ্রাণ নাকে বহাল থাকবেই। এই ফ্রাই ইলিশের কাঁটাগুলিও চনাচুরের মত মচমচে, দারুন উপাদেয়।
ইলিশ কাবাব:
বেয়াড়া প্রকৃতির শাশুড় কে যে পুত্রবধু এই ইলিশ কাবাব একবার খাইয়েছেন, বাকী জীবনে যৌতুক চাওয়ার কথা ভূলে যাবেন। জায়ফল, যত্রিক, মিঠা জিরার মিশ্রনের এই ইলিশ ফ্রাই দশ বাড়ী সুগন্ধময় করে তুলবে।
ইলিশ বার্গার:
ক্রন পাউডার, অল পারপোস গুড়া এবং আমেরীকান বার্গার চসের মাধ্যমে তৈরী এটি। যেমনি ফাষ্ট ফুডের গন্ধ, তেমনি মজাদার! একবার খেলেন তো সারাজীবনে স্বাধ ভূলবেন না। চিকন বাচ্চাদের মোটা করার উপযোগী মায়োনাইজ এতে সুন্দরভাবে ব্যবহার করা হয়েছে একবার গিলাতে পারলেই ব্যস!
ইলিশ পোলাও:
আ-হা-হা...। বাদাম, পোস্ত দানা, কিসমিসের গুড়ার সাহায্যে রান্না করা ডিশ। বিয়ে-শাদীতে স্পেশাল হিসেবে দারুন ব্যবহৃত হয়। একবার খেলে বহুদিন পর্যন্ত মনে থাকবে এর স্বাদের কথা! টম্যাটো সচ ও সয়া সচ যোগে খেলে মজার ঢেঁকুর উঠবে, যেমনি ঘ্রাণ তেমনি অপূ্র্ব স্বাদ!
পিটা ইলিশ:
আগের যুগের চাষা-কৃষকদের মজাদার ডিস। বর্তমানে পাঁচ তারা হোটেলের অভিজাত শ্রেনীর খুবই পছন্দনীয় এটি। কালিজিরা, মিঠাজিরা, পুদিনার ঘ্রাণের সাথে রসালো ইলিশের পাগল করা গন্ধ যে কোন, রসহীন ব্যক্তিকেও ভোজন রসিক বানিয়ে ছাড়বে। আজ না খেলেও কোন এক শীতের দূপুরে বেড়াতে আসুন, আজীবন মনে থাকবে দারুন অনুভূতির কথা।
ফ্রুট ইলিশ:
এটি খ্যাতিমান হোটেলের খাবার! আলুর ভর্তা, ছাঁটা পিঁয়াজ মিশিয়ে ইলিশের রসা রসা টুকরা দিয়ে বানানো এই ডিশ। ইলিশের পাগল করা ঘ্রাণ, পাকা আনারসের মাতাল করা মৌ গন্ধে পরিবেশটাই আলাদা হয়ে যাবে। মুখে নির্ঘাত লোল আসবে, জীবনে একবার হলেও খেয়ে দেখবেন। নতুন জামাইকে বরন করতে এটি একটি দারুন খাবার হিসেবে বিবেচিত।
ইলিশ বিরানী:
মোগল আমল থেকেই প্রসিদ্ধ, আবহমান বাংলার ঘরে ঘরে প্রসিদ্ধ এই বিরানী। নুতন জামাই, বেয়াই, বধুকে বরণ করতে এই ডিশের জুড়ি নেই। কমলা লেবু, কিংবা পাতি লেবুর সামান্য টক মিশ্রণে এর স্বাদ এতটুকু বাড়ে, ঘ্রাণেই অর্ধভোজন হয়ে যায়। কখনও সুযোগ হারানো চলবেনা।
খিচুরী ইলিশ:
বৃষ্টির দিনে কিংবা নৌ ভ্রমনে এই ইলিশ ডিশের তুলনা নাই। বনভোজনে এই ডিশ রাজকীয় হালতে উপভোগ করা যায়। প্রতিটি ঢেঁকুড়েই বেরিয়ে আসবে ইলিশ মাছ খাবার মহা প্রশান্তি! খেলেনতো হজম হল এভাবে বারবার খেলেও বিরক্তি আসবেনা, মনের স্বাদও অপূর্ন থাকে!
সরষে ইলিশ:
এটার সাথে নতুন করে পরিচয় করে দেবার দরকার নেই। তাজা পাকনা সরষের সাথে হালকা মসল্লা লাগিয়ে এটি তৈরী করতে হয়। সরষে ইলিশ সর্ম্পকে বেশী না বলে দিল্লীর লাড্ডুর সাথে তুলনা করা যায়: “দিল্লাকা লাড্ডু যো খায়া ও’বি পস্থায়া। যো নেহি খায়া ও’বি পস্থায়া”। সেভাবে এই ডিশ খেয়ে কিভাবে পস্থাবেন সেটা আপনারাই ঠিক করুন।
প্রেজেন্টেশন ইলিশ:
এটি মূলত পরিবেশনার জন্য ব্যবহৃত হয়। এখানে মাছের স্বাদের চেয়ে পরিবেশনাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় বেশী। তবে ইলিশ মাছ আপনিতেই স্বাদের মাছ। লবন দিয়ে সিদ্ধ করলেও তার স্বাদের কমতি হয়না। ক্যাপসিকাম, লেটুস, লেবু, টম্যাটো, শসা মিলিয়ে যত সুন্দরভাবে পরিবেশন করা যায়, সেটাই এই ডিশের মূল উদ্দেশ্য। নামী-দামী হোটেল স্যূটে এই সৌন্দর্য উপস্থাপনা লাগবেই।
ভূনা ইলিশ:
হোটেল রেস্তোরার অতি পরিচিত একটি ডিশ। এটি বাংলার ঘরে ঘরে প্রচলিত, প্রসিদ্ধ একটি প্রানালী। হলুদ, মরিচ, জিরা, ধনিয়া যোগে রান্না করা। আঁচ তাপে রান্না করলে মাছের কাঁটা পর্যন্ত চুষে খেতে ইচ্ছে করে। এই ডিশ একবার খেলে হাতের আঙ্গুলেই ঘ্রাণ লেগে থাকে পুরো একদিন। যেমনি মন কাড়া ঘ্রাণ তেমনি সুস্বাদু!
কদুপাতা ইলিশ:
এটি একটি আদি পদ্ধতি। তেল, লবন, মরিচ মিশিয়ে কদু পাতায় পেঁচিয়ে কড়াইয়ে ছেড়ে দিলেই চলে। পুরো মহল্লার মানুষ বুঝতে পারে, কদু-ইলিশের রাজকীয় রান্না চলছে। এটি এতই মজা, ফাঁসির রসিতে ঝূলবার আগে, শেষ খানা হিসেবে, আসামী এটা খেতে চায়। ইলিশের এই ডিশ যারা খাননি, তারা জানবেই না ইলিশ কি জন্য দুনিয়াতে বিখ্যাত। এই ডিশে মাছের চেয়ে পাতার মজা বহুগুনে বেড়ে যায়। কদুপাতার অভাবে কচু পাতায়ও এটা মজার রাজা।
পান্থা ইলিশ:
এটাই সেই ঐতিহাসিক পান্থা-ভর্তা-ইলিশ। এখানে ইলিশ মাছ কি ধরনের হতে হবে সেটা কোন শর্ত নয়। শর্ত হল ভাত পঁচা-বাসী হতে হবে। ভাত ভাল করে বাসি করতে পারলে সেটাতে এলকোহল ফর্ম করবে। ভোজন রসীকেরা বৈশাখের প্রথম দিনে পোড়া কিংবা কাঁচা মরিচ, লবন, পিঁয়াজ, ভর্তাযোগে বেশী দাম দিয়ে কিনে খায়! শরীরে দারুন মাদকানুভূতি তৈরী হবে। খেয়ে ঝিমুতে থাকুন, নিজেকে নিজে বাহবা দিন এবং ভাগ্যবান ভাবুন।
নদী মাতৃক বাংলাদেশ এখন বালি মাতৃক বাংলাদেশে পরিনত হয়েছে। আল্লাহ আমাদের ছো্ট্ট ভূখন্ডে বরকত আর রহমত দিয়ে ভরে দিয়েছিলেন, শুধু আমাদের গাফেলতির কারনেই আমরা অন্যের দ্ধারা সৃষ্ট বৈষম্যের শিকার। আমরা বেশী সভ্য হয়ে অসভ্যদের বৈষম্যের দেয়াল ভাঙ্গতে পারছিনা! এটা আমাদের ব্যর্থতা।
Medical Guideline Books