Topic: ডাক্তার হবার স্বপ্ন
লেখক: ইশতিয়াক ইমন
বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান আদিবা। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী মেয়ে। পঞ্চম, অষ্টম শ্রেণীতে বৃত্তিসহ এস.এস.সি এবং এইচ.এস.সিতে রেজাল্ট সর্বোচ্চ। মেয়ে এবং বাবা মা’র তারপরও দুশ্চিন্তার শেষ নেই। কারণ মেয়ের ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ডাক্তারী পড়বে। ঘনিয়ে আসছে মেডিক্যালের ভর্তি পরীক্ষা। প্রস্তুতি বেশ ভালো থাকলেও কোন অজানা টেনশনে যেন সব গুলিয়ে যাচ্ছে। তবুও বেশ ভালো করবে বলে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে আদিবা। আদিবার মতো কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ইতিমধ্যে নিজেকে মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করতে মরিয়া। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর সরকারি বেসরকারি সকল মেডিক্যাল কলেজগুলোর ভর্তি পরীক্ষা একযোগে অনুষ্ঠিত হইবে ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের ভর্তি যুদ্ধের জন্য শিক্ষার্থীরা নিজেকে বেশ ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিচ্ছে।
মেডিক্যাল কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীদের ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এ বছর থেকে সকল সরকারি এবং বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোর বর্তমান আসন সংখ্যার ওপর ১০ শতাংশ আসন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এছাড়া বর্তমান মেডিক্যাল কলেজগুলোর পাশাপাশি নতুন করে আরও তিনটি সরকারি এবং একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সেক্টরে দক্ষ জনশক্তি গড়তে নতুন কলেজ চারটি ৫০টি করে মোট ২০০ শিক্ষার্থীর মেডিক্যালে পড়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করবে। নানা ঝামেলা এবং হয়রানিকে অবসান ঘটাতে প্রথমবারের মত এ বছর ভর্তি ফরম থেকে শুরু করে জমা নেয়া কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
দেশে বর্তমানে নতুন তিনটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজসহ ২১টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজসহ ২১টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। আর নতুন বেসরকারি ১টিসহ মোট বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে ৪৫টি। দেশে বর্তমানে সরকারি ১৮টি মেডিক্যাল কলেজ শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম চালাচ্ছে। যাতে মোট আসন সংখ্যা রয়েছে ২ হাজার ৪৬৫টি। এর সাথে এবার যুক্ত হবে আরও ১০ শতাংশ বর্ধিত আসনসহ নতুন তিনটি কলেজের ১৫০টি আসন। বেসরকারি ৪৫টি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির আসন রয়েছে ৩ হাজার ৪০০টি। যার সাথে নতুন করে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হবে। এছাড়া ঢাকা ডেন্টাল কলেজসহ রাজশাহী ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ সংযুক্ত ডেন্টাল ইউনিটে বিডিএস কোর্সে বর্তমানে আসন সংখ্যা রয়েছে ২১৮টি। যা ১০ শতাংশ বৃদ্ধির ফলে ২৪০ আসনে উন্নীত হবে। নতুন করে ডেন্টাল-এ পড়াশুনার জন্য রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজে ৫০ আসনের একটি ডেন্টাল অনুষদের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি ১৩টি ডেন্টাল কলেজে মোট আসন রয়েছে ৭৬৫টি।
মেডিক্যাল পড়াশুনার জন্য দেশের শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে সরকারি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ। ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে চাহিদার তুলনায় সামান্য সংখ্যক আসন। প্রতিবারই ভর্তি যুদ্ধে একটি আসনে ভর্তির জন্য শতাধিক শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে থাকে। এছাড়া শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ, শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বরিশাল, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোর মধ্যে অন্যতম। ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় এসব কলেজগুলো থাকে বলে শিক্ষার্থীরা জানান।
সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে শিক্ষা ব্যয় অনেক কম হলেও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে পড়াশুনা অনেকটা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তর জন্য আকাশ ছোঁয়া ব্যাপার। যে কারণে সরকারি কোন মেডিক্যাল কলেজে সুযোগ না হলে অনেক মেধাবীর ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। এদিকে বেশ কিছু বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে সীমিত আসন সংখ্যায় শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হলেও কিছু প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে মোটা অংকে উেকাচ-এর বিনিময়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে থাকে। ইতিপূর্বে এমবিবিএস এবং বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত হলেও এবার তা এক সাথেই হবে। পরীক্ষা দুটির পদ্ধতি একই হওয়ার কারণে কোন সমস্যা হবে না বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। মেডিক্যাল ভর্তিচ্ছুক কিছু শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে অনলাইনে ভর্তি ফরম পাওয়া ও জমা দেয়া যাবে বলে তারা বেশ স্বস্তি বোধ করছেন। ইতিপূর্বে ভর্তি প্রক্রিয়া দেখে তারা বেশ শংকিত থাকলেও সে ভয় তাদের কেটে গেছে। পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে ইতিমধ্যে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী কোচিং পদ্ধতিতে ও বাসায় টিউটর শিক্ষক দিয়ে পড়াশুনা করছে। এছাড়া রাজধানীর প্রথমসারির একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় বেশ ভালো ভাবেই তার পড়াশুনা চলেছে। তবে ব্যয় সাপেক্ষে শিক্ষা জীবনের অনেক কিছু থেকেই নিজেকে বঞ্চিত বলে মনে করেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলো নজরে নিলে আরও বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তিতে আগ্রহী হবে বলে মনে করেন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা জানান- বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা শিক্ষার্থীকে অনেক কিছুই দিই। কিন্তু তা তার প্রাপ্যের অনেক কম। এছাড়া গরীব মেধাবীদের জন্য প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে বিশেষ কিছু আসন বরাদ্দের জন্যও এ কর্মকর্তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন জানান।
ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের সাথে বেশ উদ্বিগ্ন রয়েছেন তার অভিভাবকেরা। বেশ কিছু অভিভাবকের সাথে আলাপকালে তারা জানান, সন্তানকে নিয়ে প্রত্যেক বাবা মায়েরই স্বপ্ন থাকে। কিন্তু বাস্তবতায় সে স্বপ্ন অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। স্বপ্ন আছে সন্তানকে ডাক্তার হিসেবে দেখব কিন্তু এত পরিশ্রম করার পরেও যদি দেখি কোন সরকারি মেডিক্যালে সুযোগ পায়নি তবে স্বপ্নকে স্বপ্ন হিসেবেই রেখে দিতে হবে। কেননা বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে পড়ানোর মত অর্থের যোগান দিতে পারব না। অনেক অভিভাবকই বলেন সরকারের উচিত মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা বাড়ানো যাতে করে মেধাবী অনেক মুখকেই তার স্বপ্ন থেকে দূরে সরে যেতে না হয়।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী পড়শী আক্তার বলেন-দেশের শীর্ষ বিদ্যাপীঠে পড়তে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। নতুন ভর্তিচ্ছুকদের জন্য শুধু এতটুকু বলব ভয়কে জয় করে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী পড়াশুনা করে টেনশন ফ্রি পরীক্ষা দিলে অবশ্যই সফলতা আসবে। পরীক্ষার পূর্বে অতিরিক্ত মাত্রার টেনশনের কারণে অনেকেরই ফলাফল ভালো হয় না। তাই সকলকে বলব ভয়ভীতি বাদ দিয়ে ভালো ভাবে পরীক্ষা দিতে হবে। মোবাইল কোম্পানী টেলিটকের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে ফরম পাওয়া যাবে। ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আশায় অনেক শিক্ষার্থীই দ্বিতীয়বার মতো পরীক্ষা দিয়ে থাকে। তাদের ঠেকাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিশেষ ব্যবস্থা নেবে বলে জানানো হয়েছে। ঐ সব পরীক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর থেকে ৫ নম্বর কমিয়ে কাউন্ট করার মত বিষয় যুক্ত হতে পারে। ইতিপূর্বে ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষায় এ রকম ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
সুত্র: ইত্তেফাক