Topic: অ্যানথ্রাক্সে আতঙ্ক নয়, চাই সচেতনতা।

অ্যানথ্রাক্স সম্পর্কে কিছু তথ্য:-
অ্যানথ্রাক্স কী
ব্যাকটেরিয়াঘটিত একটি রোগ। ব্যাকটেরিয়াটির নাম ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় রোগজীবাণুটি এক ধরনের গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া। ব্যাকটেরিয়াটি যে রোগের কারণ, তা প্রথম বের করেন জার্মান বিজ্ঞানী ড. রবার্ট কো।
সাধারণত যেসব প্রাণী ঘাস খায় যেমন_ছাগল, ভেড়া, গরু, ঘোড়া এ রোগে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত প্রাণীর সংস্পর্শে এলে মানুষও আক্রান্ত হতে পারে। তবে মানুষ থেকে মানুষে এ রোগ ছড়ায় না।
জীবাণুটির বৈশিষ্ট্য হলো এটি স্পোর তৈরি করে প্রতিকূল পরিবেশে বছরের পর বছর (৪৮ বছর পর্যন্ত) বেঁচে থাকতে পারে এবং বারবার রোগের প্রকাশ ঘটাতে পারে। গৃহপালিত পশু থেকে এ রোগ দ্রুত মানুষে বিস্তার লাভ করে।
Bacillus anthracis এর ছবি;-
http://i.imagehost.org/0605/230px-Bacillus_anthracis_Gram.jpg
http://i.imagehost.org/0451/anthrax_2.jpg
ব্যাক্টেরিয়ার স্পোর

Anthrax Cycle:-
http://j.imagehost.org/0335/anthrax1.gif

রোগের ধরন
আক্রান্ত স্থান অনুযায়ী তিন ধরনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করা হয়েছে। খাদ্যনালি অর্থাৎ মুখগহ্বর থেকে পায়ুপথ পর্যন্ত অংশ আক্রান্তকারী অ্যানথ্রাক্স, শ্বাসতন্ত্রে আক্রান্তকারী অ্যানথ্রাক্স এবং ত্বক আক্রান্তকারী অ্যানথ্রাক্স। এর মধ্যে ত্বকে বা স্কিনে যে অ্যানথ্রাক্স হয়, তা তুলনামূলক নিরাপদ। ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে চিকিৎসায় এ ধরনের অ্যানথ্রাক্স ভালো হয়ে যায়। খাদ্যনালির অ্যানথ্রাক্স তুলনামূলক জীবনঘাতী। চিকিৎসার পরও প্রায় ৪০ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হতে পারে। তবে সবচেয়ে ভয়ানক হলো শ্বাসনালীর অ্যানথ্রাক্স। সঠিক সময়ে চিকিৎসা করালেও প্রায় ৫০ ভাগ ক্ষেত্রে রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। আশার কথা, আমাদের দেশে যে অ্যানথ্রাক্সের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে, তা ত্বক বা স্কিনেই এ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ।
কাদের হয়
গৃহপালিত পশু যেমন_গরু, ছাগল, ভেড়া, ঘোড়া ইত্যাদি এ রোগে প্রথম আক্রান্ত হয়। যারা পশুপালনের সঙ্গে যুক্ত তাদের এ রোগ হতে পারে। এ ছাড়া যাঁরা ট্যানারি শিল্পে কাজ করছেন, তাঁদেরও এ রোগ হতে পারে। আমাদের দেশে মানুষ বা গৃহপালিত পশু কারোরই এ রোগের প্রতিষেধক বা টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় আমরা ঝুঁকির মধ্যে আছি।
কিভাবে ছড়ায়
গৃহপালিত পশু ঘাস খাওয়ার সময় জীবাণুর স্পোর খেয়ে ফেলে। এ স্পোর তখন পশুর দেহে অ্যানথ্রাক্স রোগের সৃষ্টি করে। পশুটি তখন নিজেই রোগের উৎস হিসেবে কাজ করে। মূলত গৃহপালিত পশুর সংস্পর্শে এলে বা স্কিন কন্টাক্ট হলে এ রোগ এক দেহ থেকে অন্য দেহে ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া অ্যানথ্রাক্স রোগের জীবাণুর স্পোর নিঃশ্বাসের সঙ্গে প্রবেশ করতে পারে। আক্রান্ত প্রাণীর গোশত খেলেও অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আক্রান্ত পশু মারা গেলে খোলা পরিবেশে ফেলে রাখলে তা দ্রুত পরিবেশদূষণ করে অ্যানথ্রাক্স জীবাণুর বিস্তার ঘটায়।
উপসর্গ
জীবাণু শরীরে প্রবেশের দুই থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে নানা উপসর্গ দেখা দেয়। ত্বকের অ্যানথ্রাক্সে শুরুতে শরীরে ছোট ছোট ঘা দেখা দেয়। ঘা বা আলসারগুলোয় কোনো ব্যথা থাকে না, একসময় শুকিয়ে কালো হয়ে যায়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে জীবাণু রক্তে মিশে যেতে পারে। ফলে সেপসিস হয়ে রোগী মারা যেতে পারে। ফুসফুসীয় অ্যানথ্রাক্স রোগে সাধারণ সর্দি-কাশির মতো সমস্যা দেখা দেয়। শ্বাসকষ্ট হয়, বুকে ব্যথা হয়। একসময় রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম দেখা দিতে পারে, যার পরিণতি নিশ্চিত মৃত্যু। খাদ্যনালির অ্যানথ্রাক্সে মুখে আলসার হতে পারে, ডায়রিয়া হতে পারে, রক্তবমি ও পায়খানার সঙ্গে রক্ত বের হতে পারে।
http://i.imagehost.org/0730/2010-09-03_01-11_bacillus-anthracis-picture_jpg.jpg
http://i.imagehost.org/0251/2010-09-03_01-10_anthrax_8_jpg.jpg
http://j.imagehost.org/0237/anthrax_6.jpg
http://j.imagehost.org/0200/anthrax_4.jpg
http://j.imagehost.org/0850/anthrax_5.jpg
http://i.imagehost.org/0669/anthrax_3.jpg
http://i.imagehost.org/0576/anthrax_7.jpg
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
মূলত উপসর্গ দেখে রোগের ধরণ বোঝা যায়। পরীক্ষাগারে গ্রাম স্টেইনিং নামের বিশেষ একটি পরীক্ষা, রক্তের কালচার পরীক্ষা, এলাইজা পরীক্ষা, অ্যাগলুটিনেশন টেস্ট ইত্যাদি বিশেষ পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে রোগজীবাণুর অস্তিত্ব নির্ণয় করা যায়।
চিকিৎসা
এ রোগের চিকিৎসায় সিপ্রোফ্লক্সাসিন, ডক্সিসাইক্লিন, ইরাইথ্রোমাইসিন, পেনিসিলিন ইত্যাদি ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। তবে সাধারণ সময়ের চেয়ে অনেক বেশি দিন অর্থাৎ প্রায় দুই মাস পর্যন্ত এসব ওষুধ গ্রহণের প্রয়োজন পড়তে পারে। আতঙ্কের বিষয়, শ্বাসতন্ত্র বা খাদ্যনালির অ্যানথ্রাক্স রোগে এসব শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকও ঠিকমতো কাজ না করতে পারে।
প্রতিরোধ
সুখবর হলো, এ রোগ প্রতিরোধী টিকা বা ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। ছয়টি টিকা দিতে হয়। প্রথম দিন একটি, দ্বিতীয় সপ্তাহে একটি, চতুর্থ সপ্তাহে একটি, পরবর্তী সময়ে ছয় মাস, ১২ মাস এবং ১৮ মাসে গিয়ে একটি করে টিকা নিতে হবে। এভাবে ছয়টি নেওয়ার পর প্রতিবছর একটি করে বুস্টার ডোজ নিতে হবে।
এ রোগ সফলভাবে প্রতিরোধ করতে চাইলে আক্রান্ত এলাকায় গৃহপালিত পশুর সঙ্গে সংস্পর্শের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কেউ আক্রান্ত পশুর সংস্পর্শে এলে তাকে ভালোভাবে সাবান দিয়ে অথবা অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে ওয়াশ করে নিতে হবে। আক্রান্ত পশুর কাছে যাওয়ার আগে নাক ও মুখ রুমাল দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। আক্রান্ত গরু-ছাগল বা রোগের ঝুঁকিতে থাকা পশুর গোশত গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। মৃত পশুকে গভীর গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। কোনো অবস্থাতেই মৃত পশু খোলা পরিবেশে রাখা যাবে না।
অ্যানথ্রাক্স রোগে আতঙ্ক নয়, চাই সচেতনতা।
অধ্যাপক ডা. মো. জাকির হোসেন
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল

সুত্র:- কালের-কণ্ঠ+নিজের কিছু জ্ঞান ও ছবি।

মোঃ সাঈদুজ্জামান উপল
http://img684.imageshack.us/img684/3410/fb1d.jpg


Re: অ্যানথ্রাক্সে আতঙ্ক নয়, চাই সচেতনতা।

এই জীবনুটি পশুর শরীরে প্রবেশ করলে পশুরটির কি ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে?



Re: অ্যানথ্রাক্সে আতঙ্ক নয়, চাই সচেতনতা।

godhuli wrote:

এই জীবনুটি পশুর শরীরে প্রবেশ করলে পশুরটির কি ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে?

(y)  আমিও এই প্রশ্নের জবাব চাই !  :তালি:

Shout Me Crunch আমার ব্যক্তিগত টেক ওয়েবসাইট।


Re: অ্যানথ্রাক্সে আতঙ্ক নয়, চাই সচেতনতা।

godhuli wrote:

এই জীবনুটি পশুর শরীরে প্রবেশ করলে পশুরটির কি ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে?

মানুষের মতই,তবে দেখার বিষয় হচ্ছে পেট অনেক ফুলে যায়।

মোঃ সাঈদুজ্জামান উপল
http://img684.imageshack.us/img684/3410/fb1d.jpg