Topic: রিউমাটিক ফিভার(বাতজ্বর) সম্মন্ধে সাধারণ তথ্য
পেশাগত জীবনে যে সমস্ত বাত রোগে সবচে বেশী “ভুল” দেখতে পেয়েছি তা হল রিউমাটিক ফিভার বা বাতজ্বর নিয়ে। আমাদের দেশে এই ভুল কোথা থেকে এল তা চিন্তার বিষয়। রিউমাটিক ফিভার হার্ট ভাল্ব রোগের অন্যতম কারন,বিশেষ করে অল্প বয়সে।
রিউমাটিক বা বাত , গিঠ ফোলা, ব্যাথা ইত্যাদির সাথে জ্বর থাকলেই বাতজ্বর এমন ধারনা অস্বাভাবিক ও নয়।হয়ত তারই ধারাবাহিকতায় আজ ও এই ভুল। রিউমাটিক ফিভার বা বাতজ্বর হল এক প্রকার প্রদাহজনিত রোগ যা স্ট্রেপ্টোকক্কাস নামক এক প্রকার ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমনের পর হয়ে থাকে।
কারনঃ- সারা পৃথিবীতেই বাতজ্বর দেখা যায়। তবে উন্নত বিশ্বে প্রাদুর্ভাব নেই বললেই চলে।বাংলাদেশেও অনেক কমে গেছে এই রোগ। এন্টিবায়োটিক ঔষধের সহজ লভ্যতা, স্বাস্থ্যগত উন্নতি, উন্নত পয়ঃনিস্কাসন, বাসস্থান বিশুদ্ধ পানি ইত্যাদি রোগটির প্রাদুর্ভাব কমার কারন।এটা বাচ্চাদের রোগ । শতকরা ৯০ ভাগের ও বেশী রোগীর বয়স ৫ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে।
স্ট্রেপ্টোকক্কাস ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমনের কারনে গলাব্যাথা, টনসিলাইটিস, স্কারলেট ফিভার ইত্যাদি হয়ে থাকে। তার প্রায় ৩-৪ সপ্তাহ পর এই রোগের লক্ষন দেখা দেয়।
যে সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বাতজ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকেঃ- হৃৎপিন্ড, গিঠ, চামড়া, মস্তিস্ক ইত্যাদি।
উপসর্গ:-
• জ্বর
• পেটে ব্যাথা,
• গলা ব্যথা , বুকে ব্যথা্,শ্বাস কষ্ট,বুক ধড়ফড়, ইত্যাদি।
• গিঠে ব্যাথা, গিঠ লাল হয়ে,গরম হয়ে ফুলে ওঠা। প্রধান গিঠঃ হাটু কনুই, গোড়ালি, কবজি ।গিঠ ফোলার বৈশিষ্ঠ হল যে একাধিক গিঠ আক্রান্ত হয় এবং একটা গিঠ ফোলা উন্নতি হয় তো আরেকটা গিঠ আক্রান্ত হয় যাকে বলে মাইগ্রেটরি পলিআরথ্রাইটিস।
• বুক পিঠ বাহু বা পায়ের চামড়ার উপর গোটা, বা দাগ দেখা যেতে পারে।
• খিচুনি, হঠাৎ হটাৎ হাত মুখ বা পায়ের অনিচ্ছাকৃত ঝাকুনি ইত্যাদি।
লক্ষনঃ-
ভিন্ন ভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আক্রমনের কারনে নানা ভাবে রোগটি দেখা যায়। কোন ক্ষেত্রে গিঠের সমস্যা , কোন ক্ষেত্রে গলা ব্যাথা বুক ব্যাথা বা হার্টের সমস্যা।
পরীক্ষাঃ-
• এ এস ও টাইটারঃ- রক্তের এই পরীক্ষা দিয়ে স্ট্রেপ্টোকক্কাস ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমন বোঝা যায়।টাইটার বা পরিমান বেশী হলে তা সংক্রমনের ইঙ্গিত দেয়।এটি কখনই রিউমাটিক ফিভার বোঝায় না, শরীরের যে কোন স্থানে স্ট্রেপ্টোকক্কাস ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমন থেকে পরীক্ষাটি পজিটিভ হতে পারে। এর ৩০০ থেকে ৪০০ হলেই পজিটিভ বলা যাবে না। follow up এ যদি পজিটিভ থাকে তবে বলা যেতে পারে ।
• রক্তের রুটিন পরিক্ষাতে ই এস আর বেশী থাকে।
• ব্লাড কাউন্টে শ্বেত কনিকা বেশী থাকে।
• ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম ইকোকার্ডিওগ্রাম পরীক্ষা করে হৃৎপিন্ড আক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত বোঝা যাবে না । বিশেষ করে মায়ট্রাল ভাল্ব এর সমস্সা ।
ডায়াগনোসিসঃ- সঠিক ভাবে ডায়াগনোসিসের জন্য কতগুলো মেজর এবং মাইনর ক্রাইটেরিয়া
মেজর ক্রাইটেরিয়া
অনেকগুলো গিঠের প্রদাহ এবং ফোলা বা আরথ্রাইটিস
হৃৎপিন্ডের প্রদাহ
চামড়াতে গোটা যাকে erythema marginatum বলে
চামড়াতে দাগ
হাত পায়ের হটাৎ লাফ মারা বা খিচুনি
মাইনর ক্রাইটেরিয়াঃ-
o জ্বর
o ইএস আর বেশি
o গিঠে ব্যাথা
o অনান্য প্ররীক্ষা
দুটো মেজর বা একটি মেজর এবং দুটি মাইনর ক্রাইটেরিয়ার সাথে যদি স্ট্রেপ্টোকক্কাস সংক্রমনের প্রমান( উচুচ এ এস ও টাইটার) থাকে তবে রিউমাটিক ফিভার ডায়াগনসিস করা হয়ে থাকে।
চিকিৎসাঃ-
এন্টিবায়টিকঃ- পেনিসিলিন বা ইরাইথ্রোমাইসিন খুবই কার্যকর ঔষধ।
ব্যাথার ঔষধঃ-গীঠের ব্যাথার জন্য এস্পিরিন বা অন্য ব্যথার ঔষধ বা স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
স্বল্প মাত্রায় পেনিসিলিন(বেঞ্জাথিন পেনিসিলিন মাসে একটা ইঞ্জেকশান অথবা পেনিসিলিন ভি ট্যাবলেট ) বা ইরাইথ্রোমাইসিন ঔষধ দির্ঘদিন খাওয়ার দরকার পড়ে। সাধারণত রোগের প্রকাশ থেকে সর্ব নিম্ন ৫ বছর অথবা ২১ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত । অথবা যেটি বেশি হবে সে পর্যন্ত ঔষধ খেতে হয় যাতে আবার স্ট্রেপ্টোকক্কাস সংক্রমন না হতে পারে।
জটিলতাঃ-
হৃৎপিন্ডের আক্রমন প্রধান সমস্যা। ভাল্বের রোগ মাইট্রাল স্টেনোসিস,রেগারজিটসন , এরিদমিয়া, এন্ডকার্ডাইটিস, হার্ট ফেলিওর পেরিকার্ডাইটিস, ইত্যাদি
মস্তিস্কের আক্রমনে;- খিচুনী , হাত পায়ের অনিচ্ছাকৃত লাফালাফি ইত্যাদি।
প্রতিরোধঃ দ্রুত এবং সঠিক চিকিৎসা করা জরুরী, পুনরায় সংক্রমনের হাত থেকে প্রতিরোধে দীর্ঘদিন এন্টিবায়টিক ঔষধ সেবন অপরিহার্য। এবং অবস্শয় সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ মত চলতে হবে । তবেই সুস্থ জীবনের নিশ্চয়তা ।
Heart foundation এর Rheumatic fever এর Guidelines এর লিংক দিলাম । কাজে লাগতে পারে।
Medical Guideline Books