(edited by পলাশ মাহমুদ 2011-01-08 14:37:56)

Topic: পলাশ মাহমুদ আর একখান সাপ (জীবন থেকে নেওয়া)

আমি গ্রামে বড় হলেও গ্রামের পরিবেশের সাথে নিজেকে কিছুতেই মিল করতে পারিনি। গ্রামের ছেলে মেয়েরা অনেক কিছু পারে, যেমন: বাদরের মতো গাছে উঠতে পারে, শুধু তাই নয়, গাছের এক ডাল থেকে আরেক ডালে দৌড়ঝাপ করতে পারে। আমি পারি না। অনেক চেষ্টা করেও গাছে উঠা শিখতে পারিনি। তারপর তারা ধান কাটতে পারে, হাল বাইতে পারে, গরু চড়াতে পারে, মাছ ধরতে পারে আমি তার কিছুই পারি না। এছাড়াও তারা গরুর গোবর দিয়ে বিচিত্র স্টাইলে মাটির সাথে মিশিয়ে ঘরে প্রলেপ দিতে পারে যা আমার দেখলেই গা গুলিয়ে আসে। ও হ্যা, তারা খুব সুন্দর সাতার কাটতে পারে । এমনও সাতারু গ্রামে আছে যারা এক ডুব দিয়ে একটা বিশাল পুকুরের এই পার থেকে অপর প্রান্তে চলে যায়। আমি বহু কষ্টে সাতার শিখলাম কিন্তু সমস্যা একটাই আমি ডুব দিতে পারি না। ডুব দিলেই নাক দিয়ে গল গল করে পানি ঢুকে যায়। আমার ডুব দিতে হয় এক হাত দিয়ে নাক চেপে । হায় কিযে মুসকিল।
আমি তখন চার ক্লাশে পরি। স্কুলের ক্রীড়া অনুষ্টানে সাতার প্রতিযোগিতায় নাম দিলাম। স্যাররা  নাম দিতে চায়নি তবুও জোর করে দিলাম। বড় বড় কন্ঠে স্যারকে বললাম- “স্যার খেলায় হারজিত তো থাকবেই তাই বলে অংশগ্রহন করবো না এটা কেমন কথা?”

সাতার শুরু হলো। পুকুরের এক মাথা থেকে অপর মাথায় যেতে হবে তারপর আবার এই মাথায় আসতে হবে। আমি মহা আনন্দে সাতার কাটছি। আমার সাথে অন্যান্য প্রতিযোগিরা। আমি পুকুরের মাঝামাঝি যেতে না যেতেই অন্যরা অপর প্রান্ত ছুয়ে আমার কাছাকাছি চলে এসেছে। সাতার কাটা যে এতো কষ্ট কে জানে? আমি পুকুরের মাঝামাঝি গিয়ে হাবুডুবু খেতে থাকলাম। সাতার কাটতে কাটতে পা অসার হয়ে গিয়েছে। আমি সামনেও যেতে পারছি না পিছনেও যেতে পারছি না। যতোই চেষ্টা করছি ভেসে থাকতে ততোই ডুবে যাচ্ছি।

তো যাই হোক সেইদিন আমাকে ডুবে যাবার হাত থেকে আমাদের স্কুলের স্যার বাচিয়েছেন। তিনি আমাকে পুকুরের মাঝ থেকে কান ধরে টেনে টেনে নিয়ে এসেছেন। আপনারা ভাবছেন ডুবন্ত মানুষকে স্যার কান ধরে টেনে নিয়ে এসেছেন কেন?  এরও কারন আছে। স্যার আমার সামনে গিয়ে বলেছিলেন – “পলাশ আমার হাত ধর, ভয় পাবার কিছু নেই। আমি তোমাকে পারে নিয়ে যাচ্ছি”।
আমি স্যারের গলা জড়িয়ে ধরলাম। স্যার আমার ওজনে ডুবে যাচ্ছেন। বারবার হাবুডুবু খাচ্ছেন আর চিৎকার করে বলছেন- “গাধা গলা ছাড়, গলা ছাড়”। স্যার যতোই চিৎকার করছে আমি ততোই খড় কুটো আকড়ে ধরবার মতো শক্ত করে তার গলা চেপে ধরছি। স্যার কোন মতে আমার হাত থেকে উনার গলাকে মুক্ত করে আমার কান ধরে টেনে নিয়ে আসলেন পুকুরের পাড়ে। হায়রে সাতার। এর জন্য স্যার পুরো এলাকাবাসির সামনে আমার কান ধরলো। আপসোস। বিরাট আপসোস।

আপনারা ভাবছেন অপমানিত হয়ে আমি সাতার কাটা ছেড়ে দিয়েছি। আমি সাতার ছাড়িনি। অপমান হবার পরও আমি সাতার কেটেছি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পুকুরে।

তখন আমি পড়ি সাত ক্লাশে। সময় আনুমানিক দুপুর বারটা। মুশলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। আমরা কয়েকজন বিষ্টিতে ভিজছি আর পুকুরে সাতার কাটছি। আমরা সাতার কাটতে কাটতে পুকুরের এক সাইট থেকে অপর সাইটে চলে গেলাম। আমার সাথে যারা ছিলো তারা অভিনব কায়দায় পুকুর থেকে ছোট ছোট মাছ হাত দিয়ে ধরছে। আমিও ভাবলাম , আমিও কম কিসে? পা দিয়ে মাছের উপর জোড়ে চাপ দিবো তারপর হাত দিয়ে মাছ ধরে ফেলবো। পুকুরের কোথাও গলা পানি কোথাও হাটু পানি আবার কোথাও ডুব পানি। আমি হাটু পানিতে দাড়িয়ে পা বিভিন্ন কায়দায় মাটিতে ফেলছি। একবার ডানে একবার বামে। কিন্তু কোনবারই কোন মাছের শরিরে পা ফেলতে  পারছি না। আমি নিরাশ। হতাশায় চোখ মুখ বিষন্ন হয়ে আসলো। হঠ্যাৎ করে পায়ের নীচে একটা নরম প্রানীর অনুভব পেলাম। আমার পায়ের স্পর্ষ পেয়ে তা নড়ে উঠলো। আমি মাছ মনে করে পা দিয়ে শক্ত করে তা চেপে ধরলাম। পা হতে বারবারই ছুটবার জন্য চেষ্টা করতাছে প্রানিটা। আমি এক হাত পানির নিচে দিলাম মাছটা ধরবার জন্য। এমন সময় পায়ের নিজের প্রানীটি কামরে ধরলো আমার পা। আমি আমার পাশের জনকে আশ্চায্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম- (ওর নাম টুটুল) “টুটুল, মাছ কি কখনো পা কামড়ে ধরে”?
সে হাসি হাসি মুখে বললো- “না পলাশ ভাই তবে শিং মাছ তার হুল ফুটিয়ে দেয়”!
আমি অবাক হয়ে বললাম- “তাই নাকি, ব্যাথা কেমন”?
সে বললো- “ব্যাথা ভিষন! একবার হুল ফুটালে সাতদিন পর্যন্ত পা নাড়তে পারবেন না”!
আমি আতংকিত কন্ঠে বললাম- “ও”।
তারপর হাত পানির নিচে ঢুকিয়ে দিলাম।  ওটা এখনো আমার পা কামড়ে ধরে আছে আর পা থেকে মুক্ত হবার জন্য আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমি হাত দিয়ে স্পর্শ  করলাম। স্পর্শ  করবার সাথে সাথেই শিরশির করে মেরুদন্ড বেয়ে একটা শিহরন বয়ে গেলো।  আমি পানির মাঝেই একটা লাফ দিলাম। এটা কোন মাছ নয় আমি এতোক্ষন একটা সাপ  পা দিয়ে চেপে ধরে রেখেছিলাম। আমি পা উচু করে দেখলাম। পায়ের পাতার উপর দুইটা ছিদ্র এবং দুই ফোটা রক্ত বিন্দু দেখা  যাচ্ছে। আমি শিউর এটা সাপে কেটেছে। তবুও টুটুলকে ডেকে বললাম- “দেখতো টুটুল এটা সাপে কেটেছে কিনা”?
সে আবারো এক গাল হেসে বললো- “না, পলাশ ভাই। মনে হয় শিং মাছ গুতো দিয়েছে”?
আমার কলিজা শুকিয়ে আসলো। আমি কোন মতে বললাম- “চলো ঐ পাড়ে যাই। এক সপ্তাহ ব্যাথায় কাতরাতে হবে ভাবতেই কেমন যেন লাগতাছে”!
আমরা পুকুরের অপর পারে যাবার জন্য সাতার দিলাম।

পুকুরের মাঝ বরাবর এসে আমার সাপে কামড়ানো পা অসার হয়ে গেলো। বিচিত্র রকমের একটা ব্যাথা হচ্ছে। পায়ের হাড্ডি মনে হচ্ছে কেউ কচ কচ করে কামড়াচ্ছে। আমি ব্যাথায় কুকড়ে যাচ্ছি। বারবার চোখের পর্দা ফ্যাকাশে হয়ে আসছে। আমি ডুবে যাবো নাতো? কাউকে যে বলবো ইচ্ছে করছে না। আর তো মাত্র কিছু দুর। পারবো যেতে মনে হয়। মনের শক্তির উপর ভরসা করে এক পা নাড়িয়ে সাতার কাটছি।



=========চলবে=========

http://img51.imageshack.us/img51/2053/adda1.png
এলোমেলো আকাশে উড়িয়েছো শাড়ির আচল,
হঠ্যাৎ যেন মেখে দিয়েছো, ঐ দু'চোখে ভালোবাসার কাজল!

আমাকে পাবেন এলোমেলো-তে!!!


Re: পলাশ মাহমুদ আর একখান সাপ (জীবন থেকে নেওয়া)

পালাসশ ভাই,সাপটা ঢুরা না কোবরা ছিলো? big grin

মোঃ সাঈদুজ্জামান উপল
http://img684.imageshack.us/img684/3410/fb1d.jpg


Re: পলাশ মাহমুদ আর একখান সাপ (জীবন থেকে নেওয়া)

হে হে ঢোরা সাপ