Topic: মেডিক্যাল টার্ম : জেনে রাখা ভালো
দৈনন্দিন জীবনে অনেক সময়ই ডাক্তাররা বলেন বা যেসব মেডিক্যাল টার্ম ব্যবহার করেন, সেগুলো আমরা সহজে বুঝতে পারি না। ফলে আমাদের বোধগম্যতা ও চিকিৎসাসেবার মধ্যে পার্থক্য রয়ে যায় বিস্তর। লিখেছেন ডা. রাশনি জাবীন
ডেঙ্গুজ্বর নির্ণয়ে প্লেটলেট পরীক্ষা
ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলা হয় প্লেটলেট কাউন্ট বা অণুচক্রিকা গণনা। সুস্থ-স্বাভাবিক দেহে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ প্লেটলেট থাকে। এই প্লেটলেট যখন কোথাও কেটে যায় তখন রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। হেমোরেজিক ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর প্লেটলেট দ্রুত কমতে থাকে, যা রক্তের তারল্যের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এ জন্য এ সময় প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন।
যদি কারো রক্তে প্লেটলেটের সংখ্যা অনেক কমে যায় এবং সঙ্গে জ্বর, বমি ও অন্যান্য উপসর্গ থাকে, তা হলে তৎক্ষণাৎ তরল খাবার পান করা আরম্ভ করতে হবে।
হাইপো ও হাইপার
ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে একটা কথা খুব শোনা যায়; হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়ে যাওয়া কিংবা হাইপারগ্লাইসেমিয়া হওয়া। এগুলো কী? হাইপো শব্দের অর্থ ঘাটতি বা কমে যাওয়া। যেমন_রক্তে শর্করা বা চিনির মাত্রা কমে যাওয়া বা হাইপো হয়ে যাওয়া। এর ঠিক বিপরীত অর্থ বহন করে হাইপার শব্দটি। এর অর্থ উচ্চমাত্রায় কোনো কিছুর উপস্থিতি। হাইপার টেনশন অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা।
আইসিইউ ও আইসিসিইউ
প্রায় প্রতিটি হাসপাতালেই ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) নামে একটি বিভাগ থাকে। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের এখানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এ জন্য এর নাম নিবিড় বা ইনটেনসিভ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। আবার হৃদরোগে আক্রান্ত গুরুতর অসুস্থ রোগীদের রাখা হয় করোনারি কেয়ার ইউনিটে, সংক্ষেপে যাকে বলা হয় সিসিইউ। করোনারি শব্দটি হৃদরোগ সংশ্লিষ্ট রোগসংক্রান্ত ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। একইভাবে পালমোনারি শব্দটি ব্যবহৃত হয় ফুসফুসের ক্ষেত্রে। ধূমপায়ীদের সাধারণ ফুসফুসজনিত সমস্যা হলো ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ বা সিওপিডি।
সাবকিউটিনাস ইনজেকশন
ইনসুলিন ইনজেকশন কিন্তু অন্য যেকোনো সিরিঞ্জ দিয়ে নেওয়া ইনজেকশনের মতো নয়, অর্থাৎ ইনসুলিন ধমনি বা শিরায় কিংবা মাংসপেশিতে দেওয়া হয় না। একে অতিসতর্কতা অবলম্বন করে চামড়ার নিচে প্রবেশ করানো হয়। ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলা হয় সাবকিউটিনাস ইনজেকশন। মানবদেহের সর্বশেষ বহিরাবরণ অর্থাৎ চামড়াকে বলা হয় কিউটিকল। এখান থেকেই সাবকিউটিনাস শব্দের উৎপত্তি। হেপারিন, ইরাইথ্রোপোয়েটিন ইনজেকশনও এভাবে দিতে হয়।
সিরাম ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা
ক্রিয়েটিনিন হলো একধরনের কিডনির এনজাইম, যা দিয়ে আমাদের রেচন অঙ্গের কর্মক্ষমতা পরিমাপ করা হয়। সুস্থভাবে জীবনযাপনের জন্য ক্রিয়েটিনিন স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকা আবশ্যক। যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ডায়বেটিস ও হৃদরোগে আক্রান্ত তাঁদের নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করাটা জরুরি।
ইলেকট্রোলাইট
বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আমাদের দেহে সঠিক মাত্রায় লবণ থাকাও অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এসব লবণ রক্তে দ্রবীভূত অবস্থায় ধনাত্মক বা পজিটিভ এবং ঋণাত্মক বা নেগেটিভ আয়ন আকারে থাকে। এদের একসঙ্গে বলা হয় ইলেকট্রোলাইট। ইলেকট্রোলাইট সামান্য পরিমাণ (০.১ মাত্রায়ও) কমে যাওয়াও মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। এমনকি দেখা দিতে পারে নার্ভের সমস্যাও। এটাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স বা আয়নের অসাম্যাবস্থা। এসব আয়নের সাম্যতা আনার জন্য নানা রকম পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
এসব হয়তো অনেকের কাছে খুবই সাধারণ বিষয়; কিন্তু আগে থেকে জানা বিষয়গুলোই সঠিক সময়ে মনে না আসার কারণে নির্বাক ও হতবুদ্ধি হয়ে থাকতে হয়। জানা থাকলে বিপদের ঝুঁকি তো বহুলাংশে কমে; একই সঙ্গে ডাক্তার বা রোগী দুই পক্ষেরই রোগ নির্ণয় ও নিরাময় সহজতর হয়।
লেখক : আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
সুত্র : কালের কণ্ঠ