Topic: লাউড স্পিকার ইলিয়াস!
“অতি আদরে মানুষ নাকি বাদর হয়” বাংলায় মনে হয় এমনই একটা প্রবাদ চালু আছে। বাদর হবার সাথে সাথেই টপ করে লাফ দিয়ে মাথায় চড়ে বসে। একবার যদি কোন ভাবে মাথায় চড়ে বসতে পাড়ে তাহলে তো আর কথাই নেই শত হইচই হট্টগোল করেও মাথা থেকে
নামানো সম্ভব হয়ে উঠে না। এর ধীরে ধীরে আদর পেয়ে মাথায় চড়ে বসলেও এদেরকে মাথা থেকে ধীরে ধীরে নামানো যায় না। এদেরকে মাথা থেকে নামানোর জন্য যতোই বুঝানো হয় ততই মাথার চুল, চোখ, নাক, কান ঝাপটে ধরে। এদের নামানোর একটাই পন্থা- “তোল হাতিয়ার, মারো গুলি”। এদেরকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে মাথা থেকে নামানোর কোন মানে হয় না। এদেরকে ধরেই দিতে হয় আছাড়। যেই সেই আছাড় নয়, যাকে বলে কোমড় ভাংগা আছাড়। এখন আমি এমনি একখান আছাড় দেবার পূর্ব প্রস্তুতি নিচ্ছি। পিচ্চিটারে লায় দিতে দিতে মাথায় তুলে ফেলেছি। এক্ষুনি মাথা জাড়া দিয়ে ফেলতে হবে। আমি চিৎকার দিলাম- “তুই কি কান্না থামাবি নাকি মুখে কস্টেব লাগিয়ে দেব”?
যাকে ধমক দিলাম সে নির্বিকার। কান্না থামানোর কোন লক্ষনই নাই বরং সময় এর তালে তালে কান্না বেড়েই যাচ্ছে। কিছুক্ষন পর পর বিকট শব্দে চিৎকার দিচ্ছে- “কলার খোসা লাগিয়ে দাও”।
ইলিয়াস! ইলিয়াস আহমেদ। আমার ভাতিজা। পৃথিবীতে আমার সবচেয়ে চির শত্রুদের সাথে বসে থাকতেও আমি অস্বস্থি বোধ করি না কিন্তু এ যদি আমার পাশে থাকে তাহলে বিরাট অস্বস্থি আর হতাশায় আমার বুক ধকফক করতে থাকে। বিরাট টেনশনে ভুগতে থাকি। কখন না জানি কি ঘটে যায়? বয়স কম, গোলগাল চেহারা। চেহারার মাঝেই কি রকম যেন একটা কান্না কান্না ভাব আছে। উনিশ থেকে বিশ অথবা বাংলার প্রবাদের ভাষায় বলতে গেলে- “পান থেকে চুন খসলেই শুরু হয়ে যায় ইলিয়াসের বিকট শব্দে কান্না। এ কান্না কি যেমন তেমন কান্না? মরা বাড়ির লোকজনও এতো ফুল ভলিউমে কাদতে পারে কিনা আমার সন্দেহ আছে। শুধু মাত্র কান্নাতেই সীমাবন্ধ থাকলে হতো, তা না কান্নার সাথে সাথে আকাশ-বাতাস কাপানো চিৎকার। পুরো একটা মহল্লার সকল লোকজন মাঝরাতে জাগ্রত করবার জন্য ইলিয়াসের একটা চিৎকারই যথেষ্ট।
বাসার ভিতর হইচই করলে বাংলার প্রবাদে বলে- “বাড়ি মাথায় উঠে গিয়েছে”। আমার অবস্থা তার থেকেও উন্নত। আমার ক্ষেত্রে বলা উচিত- “পুরো মহল্লা মাথায় উঠে গিয়েছে”। এখন রাত পোনে বারটা। গ্রাম-অঞ্চল। পোনে বারটা মানে অনেক রাত। চারিদিক শুনশান নীরবতা। শুধু মাত্র শব্দ শোনা যাচ্ছে ইলিয়াসের কান্নার আর চিৎকারের। সমস্যা যে খুব একটা বেশি তা কিন্তু নয়; আমি আদর করে ইলিয়াসকে কলা খেতে দিয়েছিলাম। সে হাসিমুখে বললো- “চাচ্চু কলার খোসা ছাড়িয়ে দাও”? আমি কলার খোসা ছাড়িয়ে দিলাম। এবং পড়লাম মহা বিপদে। কলার খোসা বেশি ছাড়িয়ে ফেলেছি। এখন এটা জোড়া লাগিয়ে দিতে হবে। কি মুশকিলের কথা। কলার ছোকলা জোড়া লাগাবো কি ভাবে? ইলিয়াসের শুরু হলো আকাশ পাতাল কাপানো চিৎকার আর কান্না। আরেকটা যে কলা দেব তাও সম্ভব না। বাসায় কোন কলা নেই। দোকান থেকে যে কিনে নিয়ে আসবো তাও সম্ভব না। এখন মাঘ মাসের শীত। দোকান-পাট সবই বন্ধ। তাও যদি দোকান সামনে থাকতো তাহলে না হয় খুলবার ব্যবস্থা করা যেত। দোকান দুই কিলোমিটার দূরে। এই শীতের রাতে এখন দোকানদার খোজা আর খাল কেটে কুমির আনা একই কথা।
ইলিয়াসের চেচামেচি বেড়েই যাচ্ছে। মাঝ রাতে পাড়া প্রতিবেশি ঘুম হারাম করে ছুটে আসতেছে কি হয়েছে জানবার জন্য। যতোই সময় বয়ে যাচ্ছে ততই পাড়া প্রতিবেশির আনাগোনা বাড়ছে। আমার মেজাজের গরম ভাবটা ক্রমশই বাড়ছে। আমি মনে মনে বিরবির করলাম- “বাদর বংশধর নাকি? কলার প্রতি এতো টান কেন? বাদরেরও তো এতো টান থাকে না?”
শেষ পর্যন্ত পাড়া প্রতিবেশি আমাকে অনুরোধ করলো- “পলাশ ভাই। আপনার ভাতিজার লাউড স্পীকার অফ করানোর ব্যবস্থা করেন প্লিজ! যে ভাবে ফুল ভলিউমে চেচাচ্ছে তাতে করে ইলিয়াসের কন্ঠ ফিউজ না হলেও আমাদের কানের পর্দায় ছিদ্র হয়ে যেতে পারে। প্লিজ ওরে থামান। যেমন করেই হোক! এটা আপনার প্রতি মহল্লা বাসীর একটা অনুরোধ। প্লিজ প্লিজ প্লিজ…. কিছু একটা করেন?”
বাধ্য হয়েই আমাকে এই কনকনে শীতে বাড়ির বাহির হতে হলো। দোকানদার খুজে তার দোকান খুলে কলা নিয়ে বাসায় আসতে হলো। নতুন কলা এনে ইলিয়াসের হাতে দিলাম। ইলিয়াস গদ গদ হয়ে বললো- “চাচ্চু কলার খোসা ছাড়িয়ে দাও?” আমি হতাশ কন্ঠে বললাম- “ভাতিজা, এক কলার খোসা ছাড়িয়েই যেই বিপদে পরেছি, এখনো পর্যন্ত জোড়া লাগাতে পারি নাই। আবার আরেকটা দিচ্ছিস। দয়া করে আমারে মাফ কর আব্বাজান”।
এলোমেলো আকাশে উড়িয়েছো শাড়ির আচল,
হঠ্যাৎ যেন মেখে দিয়েছো, ঐ দু'চোখে ভালোবাসার কাজল!
আমাকে পাবেন এলোমেলো-তে!!!