Topic: "নিজে ধুমপান ত্যাগ করুন, অন্যকে ত্যাগ করতে বলুন" (*নেশাকে না বলুন*)
ধূমপানে বিষ পান। এ এমনই এক বিষ যা পানকারীকে তো ধ্বংস করেই সেই সাথে তার কড়াল গ্রাসে ছোবল দেয় আশেপাশের সবাইকে। এই সামাজিক ব্যাধি থেকে সমাজকে মুক্ত করতে হলে প্রয়োজন সচেতনতা এবং সেই সাথে সকলের ইচ্ছাশক্তি ও প্রচেষ্টা।
ধূমপান পরিত্যাজ্য
সিগারেট-বিড়ি-হুক্কা-চুরুট-জর্দা গ্রহন এসবই ধূমপানের অর্ন্তগত। প্রতিনিয়ত ধূমপানের মাধ্যমে তামাকের বিষাক্ত নিকোটিন ও কার্বন মনোক্সাইড আমাদের শরীর ও পরিবেশের নানাবিধ ক্ষতি সাধন করে যাচ্ছে। একটি সিগারেটে চার হাজারেরও বেশি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা থেকে কমপক্ষে ২৫ টি জটিল রোগ হতে পারে। গবেষনায় দেখা গেছে প্রতিবছর বিশ্বে অন্তত পাঁচ মিলিয়ন লোক মৃত্যুবরন করছে এই তামাক সেবনের ফলে।
ধূমপানে শারীরিক প্রধান ক্ষতির বিবরন
ধূমপান কেবল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তা নয় বরং স্বভাব-চরিত্র, মন-মানসিকতা, অর্থ-সম্পদ, দেশ ও জাতি সবার জন্যই ক্ষতিকর। উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক অবক্ষয়-পরিবেশ দূষন-রোগাক্তান্তের অধিক হার এর আরেকটা কারন হচ্ছে ধূমপান।
ধূমপানে শারীরিক ক্ষতিসমুহ:
মৃত্যূ রোগ ক্যান্সার ধূমপানেরই পরিনতি। এছাড়াও যক্ষা, দন্তক্ষয়, ব্রংকাইটিস, গ্যাষ্ট্রিক, আলসার, ক্ষুধামন্দা, হৃদরোগ, ফুসফুসের প্রদাহ, মস্তিকে রক্তক্ষরন, করোনারী থ্রোম্বসিস, দৃস্টিহীনতা ইত্যাদি রোগের কারন ধূমপান। তামাকে “নিকোটিন” নামক এক প্রকার উগ্র বিষ আছে যার কারনে ধূমপায়ীরা ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। দুটো সিগারেটে যে পরিমান বিষ থাকে তা ইনজেকশনের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করালে মৃত্যু অনিবার্য। প্রতিটা সিগারেট ধূমপানে মানুষের জীবন থেকে খসে যায় ৫/৬ মিনিট গড় আয়ু। একজন ধূমপায়ীর ধূমপানের প্রভাব পড়বে তার পরিবার পরিজনের উপর। এর ফলে মায়ের গর্ভস্থ সন্তান বিকলঙ্গ হতে পারে এমনকি মারাও যেতে পারে । ধূমপানের ফলে পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা ব্যাপক হারে হ্রাস পায় ।
ধূমপায়ীর লান্সের করুন অবস্হা
ধূমপানে রোগে আক্রান্ত দাঁত
ধূমপানের ফলে এভাবেই পাকস্হলীর নালীতে ক্ষত(আলসার) হয়
ধূমপানের ফলে শতকরা ৫ থেকে ১০ ভাগ ধূমপায়ীর শারীরিক ক্ষমতা বা যৌন ক্ষমতা হ্রাস পায়। আর এই শারীরিক ক্ষমতা হ্রাসের প্রধান শত্রু হচ্ছে সিগারেট, বিড়ি, তামাক, জর্দ্দার মধ্যে থাকা বিষ নামের মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ নিকোটিন। নিকোটিন শুধু রক্তনালী সরু করে দেয় এবং হার্টের রক্তনালীতে চর্বি জমতে সাহায্য করে তাই নয়, এই নিকোটিন রক্তের স্বাভাবিক প্রবাহকে কমিয়ে দেয়। ফলে অঙ্গ-প্রতঙ্গের রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। এতে শারীরিক ক্ষমতা হ্রাস পায়, পাশাপাশি নিকোটিন ফুসফুস ও হার্টের স্বাভাবিক ক্ষমতাকেও হ্রাস করে। ফলে শারীরিক দুর্বলতা প্রতীয়মান হয় নানা ক্ষেত্রে। সিগারেটের নিকোটিন সাময়িক ভাবে মস্তিষ্ক উজ্জীবীত করলেও মস্তিষ্ক নিকোটিনের দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতি নানাবিধ। নিকোটিন মস্তিষ্কের রক্তনালীকে সরু করে দেয় ফলে মস্তিষ্কে রক্তচলাচলেও ব্যহত হয়। মস্তিষ্ক হয়ে পড়ে দুর্বল। ফলে বিশেষ ক্ষেত্রে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অধিক রক্ত প্রবাহের প্রয়োজন হলে মস্তিষ্ক হার্টকে প্রয়োজনীয় সিগনাল বিলম্ব ঘটায়। ফলে কাংখিত শারীরিক শক্তি অনেক ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না।
ডা: মোড়ল নজরুল ইসলাম
চর্ম, এলার্জি ও যৌনসমস্যা বিশেষজ্ঞ
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ফেব্রুয়ারী ২০, ২০১০
ধূমপানে শুধু গ্রহনকারী ব্যক্তিই না একই সাথে আক্রান্ত ও ক্ষতির সম্মুখীন হয় আশেপাশের অধূমপায়ীসহ সবাই। বিশেষ করে ধূমপানের ধোয়া শিশু ও অধুমপায়ীর নি:স্বাসে তাদের দেহের মধ্যে চলে যায় এবং ধূমপায়ীর চেয়ে বেশী পরিমান ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় তাদের। ধূমপানের কোন ধরনের ভাল দিক নাই। এটা পারে শুধু ক্ষতি করতে। শারীরিক-আর্থিক-সামাজিক ক্ষতির একটা বড় অংশ ধূমপানের সাথে সম্পৃক্ত। তাই সকলকেই এই ধূমপানের বিষাক্ত ছোবল থেকে দূরে থাকতে হবে। ধূমপান অবশ্যই পরিত্যাজ্য/বর্জনীয়। নিজের, পরিবারের ও সমাজের কথা চিন্তা করে ধূমপায়ীদের ধূমপান ছেড়ে দিতে হবে। ধূমপান ত্যাগ করতে শুধুমাত্র আমার/আপনার ইচ্ছা শক্তিই যথেষ্ঠ। নিজে ধূমপান ত্যাগ করতে হবে ও অন্যকে ধূমপান ছাড়তে উৎসাহিত করতে হবে। ইতিমধ্যে অনেক দেরী হয়ে গেছে। আর দেরী না, আসুন এই মুহূর্ত থেকে ধূমপানের কড়াল গ্রাস থেকে আমাদের বাঁচাতে কাজ শুরু করি।
সূত্রঃ এখানে