Topic: পৌরুষ (উৎসর্গ-ইভটিজিংএর শিকার সকল বোনদের)
পৌরুষ
(উৎসর্গ-ইভটিজিংএর শিকার সকল বোনদের)
সম্পা খালামনির নাম যে নওরীন আফরোজ, তাহা জানিতে পারিলাম আজই এবং তৎসঙ্গে তাহার উচ্চমাধ্যমিকের যে রেজাল্ট আবিষ্কৃত হইল তাহা আমা অপেক্ষা আড়াইগুন কম এবং জনসন্মুখে প্রকাশ অযোগ্য,সুতরাং আমার নাক আপনা হইতেই সিঁটকাইল।
সম্পা আমার মামীর ছোট বোন এবং প্রায় আমার সমবয়সী।তাহার সহিত বিশেষ একটা যোগাযোগ নাই তাই তাহার সম্পর্কে আমার ভিতরে উচ্চ ধারণাটা না থাকাটাই স্বাভাবিক,কিন্তু ধারণা লাভের সু্যোগ যখন আসিল তখন ভাল করিয়াই ধারনা লাভ করিলাম এবং তাহা সারাজীবন ধরিয়াই মনে থাকিবে।
আমার ক্ষেত্রে ইহা ধ্রুব সত্য যে যদাচ কাহারও দূর্বল দিক লইয়া উপহাস করিয়াছি তো সেই উপহাসই বুমেরাং হইয়া আমাকেই আহত করিয়াছে; সম্পা খালামনির ক্ষেত্রে তাহা আরো যন্ত্রনাদায়ক হইল এবং দুই রাত্রের ঘুম ও সমান দিনের শ্রেণীপাঠ শিক্ষার দফারফা করিয়া তবেই ছাড়িল।
আমি যেইখানে থাকি সেইখানে আমার মামা-মামীও থাকেন।মামী আমাকে পুত্রসম স্নেহ করেন এবং মাঝেমাঝেই তাঁহার সুখ-দুঃখের কথা ভাগাভাগি করিয়া থাকেন। আমি যেদিন খলামনির নাম আবিষ্কার করিলাম তাহার কিছুদিন পর রাতের আহারান্তে মামী আমার সহিত গল্প করিতে বসিলেন। সেইদিন আমার কান যাহা শুনিয়াছে তাহার সবটুকু ভাব যদিও প্রকাশ সম্ভব নহে তবুও যেটুকু মনে আছে তাহার সারমর্ম এই যে-
অনেক চিন্তা-ভাবনা করিয়া অনূজা সম্পাকে তাহারা মহিলা কলেজে ভর্তি করাইয়া দিয়াছিলেন। কিন্ত মহিলা কলেজে ভর্তি হইলেও পুরুষ পশুরা তাহার পিছু ছাড়িল না।
বিজ্ঞান বিভাগে পড়িতেছে ,সুতরাং ছাত্রীর প্রাইভেট পড়া আবশ্যক।কিন্তু অধিক খোঁজাখুজি না করিয়া,বান্ধবীরা যেইখানে পড়িতেছে সেও সেইখানে ভর্তি হইতে স্থীর করিল। শিক্ষক অন্য এক কলেজে অধ্যয়ন করিতেছেন;নওজোয়ান,তাই তাঁহার প্রতি ছাত্রীদের আগ্রহ কিঞ্চিত বেশি।
দীক্ষা আরম্ভ হইল! কিন্তু গতানুগতিক ধারার নহে; সাধারণ পাঠের পাশাপাশি পায়ের উপর পা রাখিয়া খোঁচা মারিয়া ইশারায় কি জানি গোপন জিনিস শিখাইতে গুরু ব্রতি হইলেন,কিন্তু দূর্বল মেধার ছাত্রী তাহা বুঝিয়া উঠিতে পারিল না।
গুরু দমিলেন না,এইরূপে বুঝানো যাইতেছে না দেখিয়া তিনি তাঁহার কৌশল পাল্টাইলেন।বিদ্যাভাস শেষে ছাত্রী যখন তাহার খাতা সমর্পন করিল,তখন খাতার পরিবর্তে গুরু ছাত্রীর হাত আটকাইয়া আপন হাতের তালু দিয়া স্থীর করিয়া রাখিলেন।
পায়ের উপযুক্ত ইশারা বুঝিয়াও না বুঝিবার ভান করিয়াছে যে অবাধ্য, হাত হস্তগত করিয়া তাহাকে জব্দ করাটাই প্রকৃত কর্তব্য। ঘটিলও তাহাই,কিন্ত সুখের সময় দীর্ঘক্ষণ থাকিল না। গুরুর গৃহে গৃহিনী আছে,সুতরাং অন্য নারী বিশেষ করিয়া আপন শিষ্যার শরীরের প্রতি যে তাঁহার লোভ আছে এমন কিছু কল্পনা করা অসঙ্গত এবং ক্ষেত্রবিশেষে বড়মাপের অন্যায়ও বটে। এইরূপ অন্যায় করিয়াই ছাত্রী বলপূর্বক আপন হাত টানিয়া লইয়া তাহার শিক্ষককে ভৎসনার সুরে বলিল, ‘ভাইয়া আপনি আমার সাথে এরকম করছেন কেন?’
এতক্ষণ ধরিয়া যাহা বুঝাইতে চাহিলেন ছাত্রী তাহা বুঝিতে পারিয়াছে, কিন্তু গুরুদেব তাহাতে খুশি হইতে পারিলেন না এবং অবলার স্পর্ধা দেখিয়া ভীষন চটিয়া গেলেন,এক্ষণে উচ্ছৃঙ্খলকে শাসাইয়া তিনি বলিলেন “আমি এর শেষ দেখতে চাই” ।
আশেপাশে আর যাহারা বিদ্যার্থীনি ছিল তাহারা নীরবে গুরু-শিষ্যার এই লীলা দেখিতে লাগিল, কেহ টু শব্দটি পর্যন্ত করিল না।
উৎসাহী জওয়ান যে শেষ দেখিতে চাহিয়াছিল,তাহার আরম্ভটা শুরু হইবার পূর্বেই ছাত্রী প্রাইভেটে ইস্তফা দিল।সুতরাং পরিকল্পনা ধুলিস্মাৎ হইয়া গেল এবং গুরুর রাগ এইবার গুরুতর আকার ধারণ করিল।
বিদ্যাশিক্ষা দিয়া যাহার মস্তিষ্ককে দিনের পর দিন উর্বর করিয়াছে,তাহার হাতখানি ধরিয়া স্পর্শ সুখলাভ যে বিশেষ দোষের কিছু নহে তাহা বুদ্ধিমান প্রানীমাত্র কল্পনা করিতে পারে এবং এইজন্য ছাত্রীর এহেন আচরনে গুরুর বন্ধুমহলে চরম অসন্তোষের অবতারণা হইল।
এইদিকে যাহার দূর্মতিতে এইরূপ গোলযোগ উৎপন্ন হইয়াছে তাহার অবস্থাটাও আর খুব স্বাভাবিক থাকিল না। সেইদিন প্রাইভেট শেষে ছাত্রীনিবাসে যখন সে পৌঁছাইল, ঘটনার প্রভাবে তখনও তাহার শরীর কাঁপিতে লাগিল। একসময় সে তাহার বড় বোনের কাছে ফোন করিয়া ঘটনার আদ্যোপান্ত বর্ণনা করিল ।কিন্তু “জলে বাস করিয়া কুমিরের সহিত ঝগড়া করা” ছোট ভগ্নিকে বড় বোন তিরষ্কার না করিয়া আপন গৃহে সত্বর উপস্থিত হইতে নির্দেশ করিল।সম্পা নির্দেশ পালনে প্রবৃত্ত হইল কিন্তু তিরিশ কিলোমিটার রাস্তা একা ভ্রমণের সাহস তাহার হইল না।অবশেষে সৌভাগ্যযোগে এক বান্ধবীর সহায়তায় অপরাধী এলাকাছাড়া হইল।
সম্পা স্থান ত্যাগ করিল কিন্তু ভয় তাহাকে ত্যাগ করিল না। দূর্জন হইতে দূরে চলিয়া গিয়া আপনজনের কাছে আসিলেও শত্রুভয়ে তাহার শরীরের কাঁপুনী পূর্বের ন্যায় বহাল থাকিল।
ইহার পরে অনেক দিন অতিবাহিত হইয়াছে,বিস্তীর্ণ পদ্মার অনেক বালুকণা স্থানান্তরিত হইয়াছে,দুই একজন ছাড়া আর সবাই সেই কামুক গুরুর নিকটই বিদ্যাশিক্ষা করিতেছে আর হতভাগীর বিড়ম্বনা কমে নাই বরং পাল্লা দিয়া বাড়িয়াছে। কলেজে গমনকালে এই মোড়ে একবার, ঐ মোড়ে একবার গতিরোধিত হইয়া নানাভাবে হেনস্থা হইতে হইয়াছে। এইদিকে গ্রামের বাড়িতে এক প্রতিবেশীও সম্পার পাণিপ্রার্থী ছিল,ইহাও কম জ্বালাতন করে নাই;ঈশ্বরের কি ইচ্ছা! এই দুই শত্রুতে কাকতালীয়ভাবে সাক্ষাত ঘটিয়া যাহা শুরু হইল তাহা বর্ণনাতীত। কোনদিন এসিড নিক্ষিপ্ত হইবার হুমকি আসিল,কোনদিন বা অপহরণের,আবার একদিন দেখা গেল অচেনা গুন্ডারা আসিয়া সম্পার বাবার গতিরোধ করিয়া টুঁটি চাপিয়া ধরিয়া এই বলিয়া শাসাইয়া গেল যে তাহাদের প্রেরকের সহিত মেয়ের বিবাহ না দিলে জীবনখানা খোঁইয়াইতে হইবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
এই যে এত কিছু ঘটিয়াছে যাহা তাহার শিক্ষাজীবনের উপর কত বড় প্রভাব ফেলিয়াছে এবং পরিশেষে অন্তরে কত বেদনা ও ক্ষোভ লইয়া এই শিক্ষানগরী হইতে বিতাড়িত হইয়াছে,পুরুষ প্রাণীটি হইয়া আমি তাহার বিন্দুমাত্র কল্পনা করিতে পারিনা; তবে এইটুকু বেশ কল্পনা করিয়ে পারি যে, যাহার নুন্য গ্রেড পয়েন্ট দেখিয়া নাক সিঁটকাইয়াছিলাম তাহারই কৃতিত্ব- যেইখানে আছে হায়েনার হিংস্রতা উপেক্ষা করিয়া কলেজে গমন,পরীক্ষা দিয়া একবারেই পাশ করিবার গৌরব অর্জন এবং আরো অনেক কিছু যাহা আমার মত কুটিল হৃদয়ের পক্ষে প্রকাশ সম্ভবপর নহে।
পত্রিকায় কত ছাত্রির লাঞ্চনার খবর আগ্রহভরে পড়িয়াছি,বন্ধুদের সহিত তাহা লইয়া কত হাসাহাসি করিয়াছি তাহার ইয়ত্তা নাই কিন্তু আজ শুনিলাম আমারই আপনজনের লাঞ্চনার খবর,এই দিবসে আমার দুঃখের সীমা নাই।
যখন আমার বোধদয় হইল তখন মনে হইল অবমানিতার কাছাকাছি হইতে পারিলে তাহার পায়ে হাত রাখিয়া মিনতি করিয়া বলিতাম- মাগো এমন সন্তান জন্ম দিও,যে জগতে আসিয়া পশু এবং পশুর লীলা উপভোগকারী সাক্ষীগোপাল এই আমাদেরকে কচুকাটা করিয়া বিনাশ করিবে।
গল্প শেষ করিয়া মামী আমার দিকে তাকাইয়া বলিল, “তুমি সে সময় এখানে থাকলে এতো কিছু ঘটত না।“ আমি যদিও জানিতাম পান্ডাটা রাজনীতি করিত এবং হিংস্রের সঙ্গীর অভাব নাই তবুও চরম ক্রোধ সহকারে আমি এই কথা উপস্থাপন করিলাম যে, আমি থাকিলে জ্বালাতন তো দূরের কথা, ভয়ে হারামজাদাটা খালামনির কাছে ঘেঁষিতেই পারিত না,এমনি আমার পৌরুষের জোর!!
কথা শেষ হইতে না হইতেই আমার প্রকৃতির ডাক আসিল এবং আমি দৌড়াইয়া উপযুক্ত স্থানে গমন করিলাম। গেলাম হালকা হইতে কিন্তু হঠাৎ আমি আশ্চর্য হইয়া অনুভব করিলাম আমার মনের মধ্যে বিরাট পরিবর্তন সাধিত হইয়াছে এবং আরো অনুভব করিলাম যে, যেই আমি বাহুর শক্তি দেখাইয়া বন্ধুদের নিকট বাহবা পাইয়া থাকি, যেই আমার পৌরুষের গৌরবে কখনও কখনও নিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটিয়া থাকে সেই আমার পুরুষত্বের মেরুদন্ড ভাঙ্গিয়া গিয়া কখন যেন ইহার রং ম্লান হইয়া গিয়াছে।
উপাসনালয়ে গিয়া কোনদিনও প্রভুর নিকট সুস্বাস্থ্য ব্যাতিত আর কিছু চাহিয়াছি বলিয়া মনে পড়েনা, কিন্তু আজ এই শৌচাগারে বসিয়া বলিলাম- প্রভু আমি যাহা জানি তাহা তোমারও অজানা নহে যে, শুধুমাত্র অধিক সংখ্যকবার বীর্যপাতের মধ্যেই কেবল পৌরুষ নিবন্ধিত থাকেনা বরং অবিচার, উৎপীড়নে বাধা দিবার ক্ষমতাটাই খাঁটি পুরুষত্বের নিয়ামক,আমি তাহাই অর্জন করিতে চাই, হায় ঈশ্বর ! যে অনুপস্থিত বস্তু লইয়া এতকাল পুলকে কাটাইয়াছি,তুমি তাহা সত্বর আমার মধ্যে প্রবেশ করাইয়া দাও।
ভ্রাম্যমান প্রভু তাহা শুনিয়াছিল কিনা তাহা কে জানে? প্রার্থনা কবুল হইবার জন্য যে নুন্যতম যোগ্যতা লাগে তাহা আমার মত জীবন্মৃত শবদেহে অনুপস্থিত,তবুও আশায় বুক বাঁধি-তিনি তো সর্বদয়াময়!!!
দিন গড়াইতেছে আপন বেগে,নূতন নূতন কত কর্মপরিকল্পনাও করিতেছি ঢের, তবুও ইহারই মধ্যে আমার মনের ভেতর এই কথা খোদিত হইয়াছে যে-যেই দিন পুত্রহারা মায়ের চোখের বারিধারা মুছিয়া দিতে পারিব, সম্ভ্রম হারানো মেয়েটির ভাই সাজিয়া প্রতিশোধ লইতে পারিব, হাজারো সম্পাদের উত্যক্তকারীদের অন্তঃত একটাকে সজোরে চপেটাঘাত করিতে পারিব, যেইদিন অন্যায়ভাবে রক্তপাতকারী কোন দূর্ধর্ষ নব্য হালাকু খাঁর গতিরোধ করিতে পারিব কিংবা রক্তমাখা কোন মানবদেহ দেখিয়া আমার চিত্ত প্রকাশ্যে অস্থির হইয়া পড়িবে সেইদিন বুঝিব জগদীশ্বর সর্বত্রই বিরাজমান এবং তিনি শৌচাগারেও উপস্থিত থাকিয়া আমার প্রার্থনা শুনিয়াছেন এবং আমি একটু হইলেও পুরুষত্বপ্রাপ্ত হইয়াছি।
এফ এইচ রিগ্যান
২৩.০৪.১০