Topic: লেডি উইথ দি ল্যাম্প
ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল ১৮২০ সালের ১২ মে ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার ছোটবেলা কেটেছে ইংল্যান্ডের ডার্বিশায়ার অঞ্চলের তাদের পুরনো বাড়িতে। ছোটবেলা থেকেই কেউ অসুস্থ হলে ফ্লোরেন্স সেখানে ছুটে যেতেন সেবা করার জন্য। ১৭ বছর বয়সে তিনি ডার্বিশায়ার থেকে লন্ডনে আসেন। সে সময় লন্ডনের হাসপাতালগুলোর অবস্থা ছিল খুবই করুণ। এর অন্যতম কারণ সে সময়ে কেউ সেবিকার কাজে এগিয়ে আসতেন না। এ পেশাকে সবাই খুব ছোট করে দেখতেন। ফ্লোরেন্স অভিজাত পরিবারের সন্তান হয়েও এ পেশা গ্রহণ করবেন তা কিছুতেই তার বাবা মেনে নিতে পারেননি। আর এজন্য এ পেশা থেকে নিজের মেয়েকে সরিয়ে নিতে ফ্লোরেন্সের বাবা তাকে দেশভ্রমণে পাঠিয়ে দিলেন। ফ্লোরেন্স প্রথমে রোমে গেলেন।তিনি সেখানে তিন মাস একটি স্কুলে সেবিকার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলেন। এরপর তিনি বিভিন্ন দেশ ঘুরে হাসপাতালের সেবামূলক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে থাকলেন। সে সময়ে লন্ডনের হার্লে স্ট্রিটে ডাক্তাররা মেয়েদের জন্য একটি হাসপাতাল তৈরি করেছিলেন। ফ্লোরেন্স এ হাসপাতালের সুপারিন্টেন্ডেন্ট পদে যোগ দিলেন। তার অক্লান্ত চেষ্টায় কয়েক মাসের মধ্যেই হাসপাতালের চিত্র পাল্টে গেল। কমতে থাকল রোগী মৃত্যুর হারও। ফ্লোরেন্সের এ প্রবর্তিত চিকিৎসা পদ্ধতির সুনাম সারা বিশেব ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময় ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় হাসপাতালে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হল। ১৮৪৫ সালে তুরস্কের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হলে ফ্লোরেন্স তুরস্কের হাসপাতালে সুপারিন্টেন্ডেন্ট পদে নিযুক্ত হলেন। এ হাসপাতালে তিনি ৩০ জনের একটি সেবিকার দল গঠন করেন। তার মধ্যে ১০ জন ছিলেন রোমান ক্যাথলিক, ৮ জন চার্চের সভ্য এবং ২০ জন বিভিন্ন হাসপাতালের সেবিকা। দেশে যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখা দিল। সব হাসপাতালের চত্বরে ভিড় করল আহত সৈনিকরা। চতুর্দিক থেকে শোনা গেল আহত মানুষের আর্তনাদ। ফ্লোরেন্স তার সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন আহত মানুষের সেবায়। ফ্লোরেন্স আহত সৈনিকদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য সাহায্যের আবেদন জানালেন বিশ্ববাসীর কাছে। তার আবেদনে ব্যাপক সাড়া দিল সমগ্র ইংল্যান্ডের মানুষ। ফ্লোরেন্সের আত্মত্যাগ ও কর্মনিষ্ঠা মানুষকে উজ্জীবিত করল। ফ্লোরেন্স ছিলেন সেবার এক মূর্তপ্রতীক। তিনি তার জীবনের সবটুকু সময় ব্যয় করেছেন মানুষের সেবায়। প্রবল তুষারপাত ও বৃষ্টির মধ্যেও তিনি বিভিন্ন হাসপাতলে হাসপাতালে ঘুরে বেড়াতেন। ১৮৫৬ সালে দু’বছর আহত সৈনিকদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে ফ্লোরেন্স তার জন্মস্থান নাইটিংগেলে ফিরে আসেন। সমগ্র ইংল্যান্ডের মানুষ তাকে সন্মান জানানোর জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড অর্থ তুলে ফ্লোরেন্সের হাতে তুলে দিলেন। তিনি এ অর্থ দিয়ে ১৮৫৯ সালে সেন্ট টমাস হাসপাতালে তৈরি করলেন প্রথম নার্সিং স্কুল ‘নাইটিংগেল হোম’ যা আধুনিক নার্সিং শিক্ষার প্রথম পাঠগৃহ। ১৯১০ সালের ১৩ আগস্ট এই মানব দরদী মহীয়সী মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র : এখানে