Topic: পলাশ মাহমুদ এবং অচেনা কন্ঠ!!!
পট-পট-পট ধুম! বিকট শব্দে বোমা ফাটার শব্দ হলো। কিছু বুঝবার আগেই মেশিন গানের গুলি ঠুস-ঠাস শব্দে বাহির হতে থাকলো তার সাথে সাথে যুক্ত হলো কামানের শব্দ।
আমি ধরমরিয়ে শোয়া থেকে বসলাম। এ আমি কোথায়? চারিদিকে গোলাগুলির শব্দ কেন? চারিদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার। আমি অবাক হয়ে চারপাশে তাকাতে থাকলাম।
কিছুক্ষনের মাঝেই বুঝুলাম আমার মোবাইল বাঝছে। বালিশের পাশে হাত দিয়ে ঘড়িটা নিলাম। মোবাইলের আলোতেই টাইম দেখলাম। রাত পোনে-তিনটা। এতো রাতে কে কল দিয়েছে? প্রচন্ড বিরক্তির ভাব চলে আসলো। একি নিশাচর নাকি? রাত-বিরাতে পরের ঘুম নষ্ট করে।
একবার কল বেজে কেটে যাবার পাঁচ মিনিট পর আবারো গোলা-গুলি শুরু হয়ে গেল। হায়রে.........মোবাইল কোম্পানী! কী জন্য যে রাত বারটার পর ফ্রি দিলো? দুনিয়াতে মোবাইল ও থাকা উচিত না, ফ্রি থাকাও উচিত না। প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে ফোন ধরলাম-
: “আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক” হ্যালো!
: মানে? কি বললেন বুঝলাম না?
ফোনটা করেছে একটা মেয়ে। আশে পাশে আরো মেয়েদের চাপা কন্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে। এ ধরনের মেয়েদের আমার খুব ভালো ভাবেই চিনা আছে। হয়তো কোন কলেজ অথবা কোন ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। হোস্টেলে থাকে। মানুষকে মদন বানানোর জন্য আননোন নম্বরে কল দিয়ে মধুর কন্ঠে কথা বলে। এরা জীবনে যেমন হুট করে আসে তেমনি হুট করেই চলে যায়।
: বাংলা ভাষায় সালাম দিলাম। আপনি কি লেখাপড়ায় কাচাঁ নাকি? সালামের বাংলা অর্থটুকুও জানেন না?
: কেমন আছো সিব্বির?
এই শুরু হয়ে গেল। কন্ঠ মাশাল্লাহ সুন্দর। যে কোন ছেলেই পাগল করবার মতো কন্ঠ। প্রথম কথায় আপনি, দ্বিতীয় কথায় তুমি। আল্লাহ-ই জানে তার পরের কথায় কি বলবে? এদের হাত থেকে সর্বদা দের হাজার মাইল দূরে থাকা উচিত!
: কি ব্যাপার! কি হলো তোমার? কথা বলছো না কেন সিব্বির?
: আমি আমার ফ্যামিলির বায়োডাটা সার্চ দিতাছি!
: মানে?
: মানে আর কি? আমিতো সিব্বির না। আমার চৌদ্দপুরুষের মাঝে কেউ সিব্বির নামে আছে কিনা তাই দেখতাছি।
: তাহলে তুমি খোকন! তাই না?
: না!
: এবার চিনেছি তুমি সাব্বির! সাব্বির না হযে পারোই না।
: এবারও হলো না।
: তাহলে তুমি কে?
: আমি কে তা বলবার আগে খালাম্মা একটা ছোট্র প্রশ্ন করি।
খালাম্মা বলাতে মনে হয মেয়ে মাইন্ড খাইছে। করুন কন্ঠে বললো- “ করেন”। যাক তুমি থেকে এক ধাপ খালাম্মার গুনে উপরে উঠা গেল।
: প্রশ্নটা করলে মাইন্ড করবেন না তো?
: না।
: কসম করি কন- মাইন্ড করবেন না তো?
: বললাম তো করবো না।
: আপনার সিব্বির, সাব্বির, খোকন কার সাথে এফেয়ার। নাকি এক ফ্যামিলির তিনজনের সাথেই। মাশাল্লাহ আপনিই পারবেন।
মেয়েটি কোন কথা বললো না কিন্তু চারপাশের মেয়েদের চাপা হাসির শব্দ শোনতে পেলাম। কিছুক্ষন পর লাইন কেটে দিলো। আমি আবারো ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলাম।
পরের রাতে আবারো কল দিলো। যাক রাত ১২টা বাজার সাথে সাথেই দিয়েছে। এই টাইমে আমি ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নেই।
: হ্যালো!
: কেমন আছো?
আমি নিরব হয়ে গেলাম। এটা কালকের মেয়ে না। এর কন্ঠ আরো সুন্দর। এই সুন্দর কন্ঠের সাথে যে একটা বান্ধর লুকায়িত আছে তা বুঝতে পারছি। কাল আমাকে জব্দ করতে গিয়ে নিজেরাই জব্দ হয়েছিলো, তাই মনে হয় নামি দামি কোন বিটলানী(বিটলার স্ত্রী লিংগ) কে হায়ার করে নিযে এসেছে। মনে মনে নিজেকেই বললাম- “পলাশ এবার তোর খবরই আছে”।
: কি ব্যাপার কথা বলছো না কেন তুমি? আমার উপর রাগ করেছো? রাগ করোনা লক্ষিটি? প্লিজ কথা বলো!
আমি চুপ করেই থাকলাম। খালাম্মা বলবো কিনা ভাবতাছি কিন্তু বলতে পারছি না। কথার মাঝে আশ্চার্য্য রকমের একটা আকর্ষন আছে। শুনলে শুধু শুনতেই মন চায়।
: আসসালামলাইকুম!
: যাক বাবা কথা বললা তা হলে। কেমন আছো?
: ভালো!
: খাওয়া দাওয়া করেছ?
: জ্বি।
: আমার উপর রাগ করেছিলে তাই না?
এ রকম প্রশ্নের উত্তর কি দেব বুঝতে পারছি না তাই নিরবতা পালন করলাম।
: কি হলো তোমার? কথা বলছো না কেন?
: আমার মনে হয় আপনি ভুল করছেন? ঠিক নম্বরে কল দেন-নি।
: কি বলছো তুমি? তুমি এখনো আমার উপর রাগ করে আছো তাই না। তুমি সাব্বির না?
এই মেয়ে কথার মারপ্যাচ ভালোই পারে। একে না বললে জাোর করে হলেও আমাকে সাব্বির বানিয়ে ছাড়বে। এর কন্ঠের মাঝ সেই ক্ষমতা আছে। তাই আমি অস্বিকার করলাম না। আনন্দে চিৎকার দিয়ে বললাম-
: ও হ্যা, সাব্বির! এবার চিনেছি। কাল বলেছিলেন চিনতে পারি নি। আজ চিনেছি।
: মানে কি? তুমিই তো সাব্বির।
: আরে ধুর.......আমি সাব্বির হতে যাবো কেন? সাব্বির তো আমাদের বাড়ির কাজের ছেলে। রান্না ঘরে এখন ঘুমাচ্ছে। ওকে ডেকে দেব।
তারপর কি হলো-বুঝলাম না। হুট করে লাইন কেটে দিলো। এর পর কখনো আর কথা হয় নাই। এখনো মাঝে মাঝে স্বৃতির পাতা থেকে কন্ঠটা কানের মাঝে বেজে উঠে- “যাক বাবা কথা বললা তা হলে। কেমন আছো?”
বি:দ্র: পুরাতন ডাইরির পাতা উল্টাতে উল্টাতে এই কাহিনীটা মনে পরে গেল তাই তুলে ধরলাম।
এলোমেলো আকাশে উড়িয়েছো শাড়ির আচল,
হঠ্যাৎ যেন মেখে দিয়েছো, ঐ দু'চোখে ভালোবাসার কাজল!
আমাকে পাবেন এলোমেলো-তে!!!