Topic: পলাশ মাহমুদ এবং হোমপ্যাত মুন্সি
: তুই কখনো কি মানুষ হবি না?
আমি বিরক্ত হয়ে ভুরু কুচকালাম। ইদানিং কিছু হলেই অটোমেটিক ভুরু কুচকে যাচ্ছে। আম্মু কেন মানুষ হবার কথা বলছে, বুঝতে পারছি না। লেখাপড়া করছি, সাথে একটা ব্যবসাও করছি। অন্যান্য ছেলেরা যখন মাঠে খেলাধুলা করতে যায় আমি তখন দোকান খুলে বসি। সকালে ঘুম আংটিকে চোখ থেকে বিদেয় দিয়ে দুটো টিউশনিও পড়াচ্ছি। তারপরও কোন অংশে মানুষ হতে এখনো বাকি আছে? তা বুঝতে পারছি না।
: তোর প্রবলেমটা কি? তুই নাকি আবারো মোবাইল এর কল রেট কমিয়েচ্ছিস?
আমার ব্যবসা হচ্ছে মোবাইলের ব্যবসা। প্রতি মিনিট চার টাকা। ছোট-খাট একটা দোকান। এখন আটানা কমিয়েছি তাও প্রথম মিনিটের পর থেকে কিন্তু এটা নিয়ে আম্মুর মাথাব্যাথা কেন? কিছুই বুঝতেছি না। আমার ভুরু আরো কুচকে গেল।
: এই ভুরু কুচকাবি না, ভুরু টান।
আমি ভুরু টান করলাম।
: তা মোবাইলের কলরেট কমিয়েছি তাতে প্রবলেমটা কোথায়? দোকান নিয়ে আপনার এতো চিন্তা ভাবনা কবে থেকে শুরু হলো?
আম্মু রেগে গিয়ে বললো- “আমার চিন্তা শুরু হয়নি, হয়েছে হোমপ্যাত মুন্সির”।
আমি অবাক হয়ে বললাম – “কেন”?
: তুই বলে তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছিস! আরো যা-তা বলে গেল মুন্সির ওয়াইফ।
এতোক্ষনে বুঝলাম ঘটনাটা কি? আমি কলরেট কমানে পাশের বাড়ির দোকানদারের গায়ে কষ্ট লেগেছে। আমি হাসি হাসি মুখে আম্মুকে বললাম- “এটা নিয়ে আপনি কোন টেনশন করবেন না। ওরা যা-তা লোক, যা-তা তো বলবেই। বিষয়টা আমি দেখতাছি”।
যতোই হাসিমুখে আর ঠান্ডা মাথায় কথাগুলো বললাম কিন্তু কথাগুলো শোনার পর মাথা ততোটা ঠান্ডা না। ভিষন গরম। কতো বড়ো সাহস। বাড়িতে এসে আম্মুকে যা-তা বলে যায়? আইজকা ওর একদিন তো আমার যতোদিন লাগে।
বিকেলে বন্ধুদের নিয়ে মিটিং এ বসলাম। বিষয় বস্তু- “ কি ভাবে হোমপ্যাত মুন্সিকে একটা শিক্ষা দেওয়া যায়”?
কেউ বললো- রাতে চল বাড়ির চালে ঢিল ছুড়ি, আরেকজন বললো- চল ওর শালিকে লাভ লেটার পাঠাই, অন্য একজন বললো- চল তুলে নিয়ে আসি। তখন সবারই উঠতি বয়স। উঠতি বয়সের যুবকরা বড়োই ডেঞ্জারাস হয়। আমি সবার প্রস্তাব নাকোচ করে দিয়ে দোকানে চলে আসলাম।
বহু ভেবে চিন্তে একটা বুদ্ধি বের করলাম। সব বন্দুদের কল করে খবর দিলাম- “ রাত ১২টার সময় দোকানে আসবি। জরুরী কাজ আছে”।
রাত ১২টা থেকে রাত ২টা পযর্ন্ত আমরা পাচ বন্ধু খুব পরিশ্রম করলাম। পুরো দু’ঘন্টাই হাটা-হাটির উপরেই ছিলাম। তারপর সবাইকে বিদেয় দিয়ে নিশ্চিত মনে ঘুমুতে গেলাম। যাক হোমপ্যাত মুন্সি কাল সকালে ঘুম থেকে উঠে জীবনের বড়ো একটা সারপ্রাইজ পাবে জাতির সবার তরফ থেকে ভাবতেই হাসি পাচ্ছে।
পরের দিন জুম্মাবার। নামাজ পরতে মসজিদে গেলাম। জুম্মার নামাজ শেষ হতে না হতেই হোমপ্যাত মুন্সি দাড়িয়ে বললেন- “হুজুর সবার উদ্দেশ্যে আমার একটা নালিশ আছে। দয়া করে কেউ যাবেন না”। বলেই হন হন করে হুজুরের সামনে গিয়ে হুজুরের হাত থেকে মাইক নিয়ে বলা শুরু করলেন- “আজকালকার পোলাপান এতো বেয়াদপ হয়েছে, এতো ফাজিল হয়েছে কি আর বলবো। এখন কার পোলাপান গুরু জনদের সালাম দেয় না। এদের শ্রদ্ধা করে না”।
আমি অবাক হয়ে ভাবতে থাকলাম, এর কি মাথা নষ্ট হয়ে গেল নাকি। এখন বাসায় যাবো, যাবার সময় এগোলো কি বলা শুরু করেছে। পুরো পাচ মিনিট বহুত ধৈয্য নিয়ে শুনলাম তারপর আর টিকতে না পেরে দাড়িয়ে বললাম- “দয়া করে কি বলবেন আপনার মেইন প্রবলেমটা কোথায়? আজকালকার পোলাপান কেমন তাতো জাতি ভালো ভাবেই জানে”। মসজিদের সবাই আমার কথায় সায় দিলো- “হ্যা, আসল কথা বলেন? এতো লেকচার শুনতে ভালো লাগছে না”।
হোমপ্যাত মুন্সি পকেটে হাত দিলেন। একটা কাগজ বের করে আনলেন। সবার সামনে তুলে ধরে বললেন- “আসল কথা হচ্ছে এটা! আজকালকার পোলাপান আমাকে নিয়ে পোষ্টারিং করেছে পুরো এলাকা জুড়ে। এখন আমি ঘরেও থাকতে পারছি না আবার বাইরেও থাকতে পারছি না”।
একজন বললো- “কাগজে কি লেখা আছে তা একটু পড়ে শোনান! দূর থেকে দেখা যাচ্ছে না”।
হোমপ্যাত মুন্সি পড়া শুরু করলেন-
সুখবর, সুখবর, সুখবর
৫০তম বিবাহ বার্ষিকি উপলক্ষ্যে বিশেষ ছাড়
মোবাইল টু মোবাইল
প্রতি মিনিট মাত্র ১টাকা
বি:দ্র: জনাব…………….সাহেব আপনাদের দোয়া প্রার্থী। আপনারা সবাই তার ফ্যামিলির জন্য দোয়া করবেন।
যোগাযোগের ঠিকানা:.……………………………………………………..গাজীপুর, বাংলাদেশ।
পুরো মসজিদ জুরেই হাসির প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল। একজন আরেকজন এর উপর হাসতে হাসতে গড়িয়ে পরছে আর হোমপ্যাত মুন্সি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন।
কিছুক্ষন পর হাসির পরিমান কমলো। মুন্সি বিচার চাইলো- কিন্তু কার বিচার কে করে? কে লিখে পোষ্টারিং করেছে তা কে জানে? তবুও হুজুর আমাকে ডাক দিলেন- “পলাশ তুমিতো সবার সাথেই চলাফেরা করো, তোমার কি ধারনা, এই কাজ কে করতে পারে”?
আমি বললাম- “হুজুর আপনিতো জানেন আমাদের এই এলাকার পোলাপান এতো টেলেন্ট না। এটা মনে হয় অন্য এলাকার ছেলেরা করেছে। তবুও হুজুর আপনার কথায় আমি প্রতিটি ছেলেকে ডেকে এক এক করে জিজ্ঞাসা করছি, এ নিয়ে কোন টেনশন করবেন না”।
হোমপ্যাত মুন্সি করুন কন্ঠে বললেন- “এখন যে মানুষজন আমার বাড়ি আসা-যাওয়া করছে, এটার কি হবে”?
হুজুর বললেন- “এটাতো একটা সমস্যা। কয়েক এলাকায় যদি পোষ্টারিং করে থাকে তাহলেতো সমস্যা”।
আমি হাসি মুখে বললাম- “হুজুর এ দায়ত্ব আমার উপর ছেড়ে দেন। আমি এ সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছি”।
বিকেলে বন্ধুদের নিয়ে বের হলাম। এলাকার লোকজন হোমপ্যাত মুন্সির বাড়ি আসা বন্ধ করতে হবে। বহুত জামেলাম কাজ। সন্ধ্যার দিকে পুরো এলাকার প্রতিটি মসজিদে মসজিদে মাইকিং করলাম-
প্রিয় এলাকাবাসি……………………..প্রিয় এলাকাবাসি………………………..
“আজ সকাল বেলা যে বিবাহ বার্ষিকির পোষ্টারিং দেয়ালে দেয়ালে করা হয়েছিলো তা বাতিল হয়ে গিয়েছে। গোপন সূত্রে জানা গিয়েছে আজ তার ৫০ তম বিবাহ বার্ষিকি না। তাই তিনি মোবাইলের কল রেট কমান নি। সামনে ওনার ৩০তম বিবাহ বার্ষিকি। আপনারা সবাই ওনার জন্য দোয়া করবেন।”
এলোমেলো আকাশে উড়িয়েছো শাড়ির আচল,
হঠ্যাৎ যেন মেখে দিয়েছো, ঐ দু'চোখে ভালোবাসার কাজল!
আমাকে পাবেন এলোমেলো-তে!!!