Topic: আলিমের প্রকারভেদ

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আহওয়াছ ইবনে হাকীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট নিকৃষ্ট লোক সম্পর্কে জানার জন্য প্রশ্ন করলেন। তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তুমি আমাকে খারাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না বরং ভাল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো। তিনি এটা তিনবার বললেন। অতঃপর বললেন, সাবধান! নিশ্চয়ই নিকৃষ্টেরও নিকৃষ্ট লোক হলো দুনিয়ালোভী ধর্মব্যবসায়ী আলিমগণ আর নিশ্চয়ই সৃষ্টির শ্রেষ্ট হচ্ছেন হচ্ছেন হক্কানী-রব্বানী আলিম উনারা।” (দারিমী শরীফ)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ-এ মূলত দু’প্রকার আলিমের কথা বলা হয়েছে। যথা-
(১) হক্ব আলিম বা দ্বীনদার আলিম
(২) না-হক্ব আলিম বা দুনিয়াদার আলিম।
নিম্নোক্ত ঘটনা দ্বারা আরো সুস্পষ্টভাবে দ্বীনদার আলিম ও দুনিয়াদার আলিমের পরিচয় ফুটে উঠবে।

বাদশাহ শাহজাহান একবার তার দরবারী আলিমদের নিকট ফতওয়া তলব করে বললো, আমি অসুস্থ, অসুস্থতার কারণে আমার জন্য রেশমী কাপড় পরিধান করা জায়িয হবে কি? দরবারী আলিমরা বাদশার মনতুষ্টির জন্যই হোক বা দুনিয়াবী ফায়দা লাভের জন্যই হোক, তারা ফতওয়া দিল, বাদশাহ নামদার যেহেতু আপনি অসুস্থ আর আপনি অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজ্য অচল হয়ে পড়বে। কাজেই রাজ্য ও প্রজাদের বৃহত্তর স্বার্থে আপনার জন্য এ অবস্থায় রেশমী কাপড় পরিধান করা জায়িয হবে। বাদশা তার দরবারী আলিমদের মৌখিক ফতওয়ায় আশ্বস্ত না হতে পেরে লিখিত ফতওয়ার নির্দেশ দিলো। দরবারী আলিমরা বাদশাহকে এ ব্যাপারে লিখিত ফতওয়া দিল। বাদশাহ তাতেও নিশ্চিত হতে না পেরে বললো, এ ফতওয়াতে অন্যান্য আরো আলিমের দস্তখত লাগবে। দরবারী আলিমরা তখন তাদের সমগোত্রীয় ৩০০ আলিমের দস্তখত সংগ্রহ করে ফতওয়াটি বাদশাহর নিকট পেশ করলো। বাদশাহ ফতওয়াটি আদ্যপান্ত ভালরূপে পাঠ করে দেখে বললো যে, সেখানে তার শাহী মসজিদের যিনি খতীব, নূরুল আনওয়ার ও তাফসীরে আহ্‌মদীর ন্যায় বিশ্ববিখ্যাত কিতাবের মুছান্নিফ, তৎকালীন যামানার শ্রেষ্ঠতম আলিম, হযরতুল আল্লামা মুল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দস্তখত ব্যতীত এ ফতওয়া গ্রহনযোগ্য হবে না। তখন দরবারী আলিমরা উক্ত ফতওয়াটি হযরত মুল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবারে নিয়ে যায় দস্তখত নেবার জন্য। হযরত মুল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আমি আজ এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করবো না, বরং বাদশাহ আমার মসজিদে জুমুয়ার নামাজ পড়তে আসে, তাই আমি বাদশাহ ও মুছল্লীগণের সম্মূখে এ ব্যাপারে ফতওয়া দিব। অতঃপর জুমুয়ার দিন বাদশাহ তার উজীর-নাজীরসহ জুমুয়ার নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে গেলো। অনেক মুছল্লীও উপস্থিত হলো এবং দরবারী আলিমরাও উপস্থিত। সকলেই অপেক্ষা করছে হযরত মুল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফতওয়া শুনার জন্য। ইতিমধ্যে হযরত মুল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মিম্বরে উঠে বসলেন এবং বললেন, মুছল্লী ভাইয়েরা আমার নিকট ৩০০ আলিমের দস্তখত সম্বলিত একটি ফতওয়া এসেছে। যাতে বলা হয়েছে যে, বৃহত্তর স্বার্থে, বাদশাহর অসুস্থতার কারণে, বাদশাহর জন্য রেশমী কাপড় পরিধান করা জায়িয। এ ব্যাপারে আমার ফতওয়া হলো “যারা এ ফতওয়া দিয়েছে এবং যে চেয়েছে উভয়েই কাফির হয়ে গেছে।” কারণ ওহীর দরজা বন্ধ হয়ে গেছে, হারাম হারাম হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে গেছে এবং হালাল হালাল হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে গেছে। তাই শরীয়তের দৃষ্টিতে হারামকে হালাল আর হালালকে হারাম বলা কাট্টা কুফরী। যারা বলবে তারা কাট্টা কাফির হবে।

উপরোক্ত ঘটনা দ্বারা যেরূপ দুনিয়াদার আলিম বা ধর্মব্যবসায়ী আলিমদের মুখোশ সুস্পষ্টভাবে উম্মোচিত হলো, তদ্রুপ উলামায়ে হক্ব তথা দ্বীনদার আলিম উনাদের পরিচয় বা লক্ষণও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো।

সুতরাং, যাঁরা দ্বীনকে রক্ষা করার জন্য সবকিছু বিসর্জন দেন, প্রতিক্ষেত্রে ছহীহ্‌ আক্বীদা পোষণ করেন, মহান আল্লাহ পাক ও উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে ভয় করেন, ইলম অনুযায়ী আমল করেন, সুন্নতের ইত্তিবা (অনুসরণ-অনুকরণ) করেন, হারাম থেকে বেঁচে থাকেন উনারাই হক্কানী আলিম, আর উনারাই হলেন উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম।

আর যারা দুনিয়াবী ফায়দা হাছিলের লক্ষ্যে, দুনিয়ার সামান্য সম্পদ ও মান-সম্মান হাছিল করার জন্য ঈমান ও আমল ধ্বংস করে দেয়। যেমন বর্তমানে কেউ কেউ দুনিয়াবী ফায়দা হাছিলের জন্য বা ক্ষমতা লাভের উদ্দেশ্যে ইসলামের নামে গণতন্ত্র ভিত্তিক আন্দোলন করছে, যে গণতন্ত্র অনুসরণ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়িয। কারণ গণতন্ত্র হলো ইহুদী-নাছারা বা মানব রচিত মতবাদ। অথচ এক শ্রেণীর আলিম তাদের নিকট গণতন্ত্র হারাম একথা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও তারা গণতন্ত্র চর্চা করছে। (নাঊযুবিল্লাহ্‌) মূলতঃ তাদের গণতন্ত্রভিত্তিক আন্দোলন করার উদ্দেশ্য হলো দুনিয়াবী কিছু ফায়দা হাছিল করা।
তাদের মধ্যে আবার কেউ কেউ অহরহ পেপার-পত্রিকায় নিজের ছবি ছাপাচ্ছে এবং ইসলামের নামে টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করছে। (নাঊযুবিল্লাহ্‌) অথচ ছবি তোলা, আঁকা, রাখা ইত্যাদি সবই শরীয়তে কাট্টা হারাম। কিন্তু তারা বিনা দ্বিধায় এ হারাম কাজগুলো করে যাচ্ছে। মূলতঃ এরাই হলো ধর্মব্যবসায়ী অর্থাৎ না-হক্ব আলিম।