Topic: বাজারে প্রচলিত নামাযের চিরস্থায়ী ক্যালেণ্ডারে সময়ের পার্থক্যে গরমিল
আমরা জানি, পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘুরছে। সে কারণে পূর্ব থেকে ধীরে ধীরে পশ্চিমে সূর্য অস্ত যেতে থাকে এবং উদয়ের ক্ষেত্রেও পূর্ব দিকে সূর্য প্রথম উদয় হয়। সে কারণে ঢাকায় যখন সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় হয় তার পূর্বেই ঢাকার পূর্বদিকে অবস্থিত খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি এলাকায় সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় হয় এবং ঢাকার পশ্চিমদিকে অবস্থিত দিনাজপুর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশোরে ঢাকার কয়েক মিনিট পরে সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় হয়। এছাড়াও কোন শহর ঢাকার চেয়ে কতটা উঁচু বা নীচু অক্ষাংশে অবস্থিত এ বিষয়টাও সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের উপর প্রভাব ফেলে অর্থাৎ ফযর এবং ইশার ওয়াক্তের মধ্যে তারতম্য ঘটে।
বাজারে প্রচলিত চিরস্থায়ী সময়সূচীতে দেখানো হয়েছে, ঢাকার সময়ের সঙ্গে দিনাজপুরে সাহরীর সময়ে ৬ মিনিট যোগ করতে হবে। অর্থাৎ দিনাজপুরে সূর্যোদয় ঢাকার সূর্যোদয়ের ৬ মিনিট পরে সংঘটিত হবে। আবার ফরিদপুরে সাহরীতে যোগ করতে হবে ৭ মিনিট অর্থাৎ ফরিদপুরে আরো বিলম্বে সূর্যোদয় ঘটবে।
অথচ যেখানে দিনাজপুরের অবস্থান হচ্ছে অক্ষাংশ ২৫০৩৭' ৩৫" উত্তর, দ্রাঘীমা ৮৮০৩৮' পূর্ব।
সেখানে ফরিদপুরের অক্ষাংশ ২৩০৩৬' ১৫" উত্তর, দ্রাঘীমা ৮৯০৫০' ৩০" পূর্ব এবং
ঢাকার অক্ষাংশ ২৩০৪৩' ৩৮" উত্তর, দ্রাঘীমা ৮৯০৫০' পূর্ব।
দেখা যাচ্ছে, ফরিদপুরের অবস্থান ঢাকার নিকটবর্তী এবং দিনাজপুরের অবস্থান ঢাকার চেয়ে দূরে। তাহলে ফরিদপুরের সময়ের সাথে সাহরীর ৭ মিনিট যোগ করলে দিনাজপুরে কেন ৬ মিনিট যোগ করতে হবে? নিঃসন্দেহে বিষয়টির গরমিল এখানে স্পষ্ট। প্রকৃতপক্ষে ফরিপুরের যে অবস্থান, সে অনুযায়ী ঢাকার সময়ের সাথে যোগ হবে সর্বাবস্থায় ২ মিনিট এবং দিনাজপুরের অবস্থান অনুযায়ী ঢাকার সময়ের সাথে যোগ হবে উর্র্ধ্বে ১১ মিনিট এবং নিম্নে ১ মিনিট। সময়ের এই উর্দ্ধসীমা এবং নিম্নসীমা দেয়ার কারণ হচ্ছে, বছরের সব সময় ঢাকার সময়ের সঙ্গে অন্যান্য সকল শহরের সময়ের পার্থক্য একই রকম হবে না। যদিও বিশেষ স্থানে অবস্থানের কারণে কোন কোন শহরের ওয়াক্তের সময়ের পার্থক্য ঢাকার সাথে সারা বছরেই একই রকম থাকবে তবে সে রকম শহরের সংখ্যা খুবই কম।
একইভাবে সিলেটে ফযরের ক্ষেত্রে ঢাকার সঙ্গে সর্বোচ্চ বিয়োগ হবে ১০ মিনিট এবং সর্বনিম্ন ৪ মিনিট। সেখানে কোন ক্যালেন্ডারে দেখানো হয়েছে ৫ মিনিট আবার কোন ক্যালেণ্ডারে ৪ মিনিট সর্বাবস্থায়।
এছাড়া ঢাকার সময়ের সাথে অন্যান্য মোট ১৯টি শহরের পার্থক্য দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ ধারণা দেয়া হচ্ছে যে, এই ১৯টি শহরের সময়ের পার্থক্য জানা গেলেই সমগ্র দেশের নামাযের সময়সূচী পাওয়া যাবে। কিন্তু বাস্তবে সেটা সম্ভব নয়। যেমন, চট্টগ্রামের সময় বর্ণনা করলেও কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটির সময়ের বর্ণনা নেই। একই রকমভাবে দিনাজপুরের বর্ণনা থাকলেও কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, নওগাঁর বর্ণনা নেই। অথচ উল্লিখিত সবগুলো শহরেই সময়ের পার্থক্য ঢাকার সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন।
প্রচলিত সবগুলো ক্যালেন্ডারেই সারা বছরের জন্য ঢাকার সাথে অন্যান্য শহেরর সময়ের পার্থক্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু মূলতঃ এ সময়ের পার্থক্য সারা বছরেই এক রকম থাকে না বরং সময়ের পাথর্ক্য নীচের নিয়মানুসারে হয়।
সামিন (জানুয়ারী) মাস, তাসি’ (ফেব্রুয়ারী) মাস, সাদিস (নভেম্বর) মাস ও সাবি’ (ডিসেম্বর) মাসে প্রায় একই রকম সময়।
আ’শির (মার্চ) মাস ও খামীস (অক্টোবর) মাসে প্রায় একই রকম সময়।
হাদি আশার (এপ্রিল) মাস ও রবি’ (সেপ্টেম্বর) মাসে প্রায় একই রকম সময়।
ছানী আশার (মে) মাস, আউয়াল (জুন) মাস, ছানী (জুলাই) মাস ও সালিস (আগস্ট) মাসে প্রায় একই রকম সময়।