(edited by Julhaz 2012-07-17 13:11:48)

Topic: ফযর এবং ইশার ওয়াক্ত নির্ণয়ে Twilight Angle-এর প্রভাব

Twilight Angle: পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল যদি না থাকতো তাহলে সূর্যাস্তের সাথে সাথেই পৃথিবীতে অন্ধকার নেমে আসতো। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল সূর্যদোয়ের পূর্বে এবং সূর্যাস্তের পরে আমাদের কাছে আলো পৌঁছে থাকে। সূর্যাস্তের পর সূর্য যত নীচে নেমে যেতে থাকে ততই অন্ধকার নেমে আসে এবং এক সময় আকাশে কোনই আলোর উপস্থিতি থাকেনা। আবার সূর্যোদয়ের অনেক পূর্ব থেকেই আকাশে আলোর রেখা দেখা যায় এবং সূর্য যত উপরে উঠতে থাকে ততই প্রভাতের আলো বেশি পড়ে এবং এক সময় সূর্য দিগন্ত রেখার উপরে উঠে আসে অর্থাৎ সূর্যোদয় হয়। দিগন্ত রেখার উপরে সূর্যদোয়ের পূর্বে আলোর বিস্তৃতি এবং সূর্যাস্তরে পর আলোর বিস্তৃতিকে ইংরেজীতে Twilight Angle বলে।

ফযর এবং ইশার ওয়াক্ত নির্ণয়ে Twilight Angle-এর মান: ফযরে এবং ইশার ওয়াক্ত-এর মান ব্যবহার করার অর্থ হচ্ছে দিগন্ত রেখার ঠিক কত ডিগ্রী নীচে সূর্য অবস্থান করছে। অর্থাৎ সূর্যাস্তের ক্ষেত্রে সূর্র যখন দিগন্ত রেখা অতিক্রম করলো তখন ০ ডিগ্রী অতিক্রম করে নীচে যেতে থাকে। এভাবে পর্যায়ক্রমে ... ১৫-১৬-১৮ এভাবে নেমে যেতে থাকে। আবার সূর্যোদয়ের সময় ২০-১৯-১৮-১৭... এভাবে উপরে উঠতে উঠতে দিগন্ত রেখায় ০ ডিগ্রী শেষ হয়।
সাধারণতঃ Twilight Angle-এর মান যত ছোট হবে তত দেরীতে ফযর এবং তাড়াতাড়ি ইশা হবে। Twilight Angle-এর মান বড় হলে তাড়াতাড়ি ফযর এবং দেরীতে ইশা হবে। নীচের ছকটি দেখলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

http://www.sabujbanglablog.net/wp-content/uploads/2012/06/Twilight-Angle-%E0%A7%A81.png

http://www.sabujbanglablog.net/wp-content/uploads/2012/06/800px-Types-of-twilight-en21.jpg

ফযরের সময় যখন সূর্যের অবস্থা ২০তে তখন যদি সময় হয় ৫.৩০ মিনিট তখন থেকে সূর্যের প্রতি ডিগ্রী উন্নতিতে সময় বেড়ে যাচ্ছে। সে অনুযায়ী ১৭তে সময় ৫.৪৫ মিনিট। তাহলে দেখা যাচ্ছে, মান ২০ ধরলে ফযরের ওয়াক্ত হবে ৫.৩০ মিনিট এবং মান ১৭ ধরলে ফযরের ওয়াক্ত হবে ৫.৪৫ মিনিট যা অনেকটা দেরীতে।
একইভাবে ইশার ক্ষেত্রে সূর্য যখন ১৭ পরিমাণ নামলো তখন সময় ৭.০০টা। এভাবে নেমে যেতে যেতে যখন ২০ পরিমাণ নামলো তখন সময় ৭.১৫ মিনিট। এক্ষেত্রে মান ১৭ ধরলে ইশার ওয়াক্ত হবে ৭.০০ টায় কিন্তু মান ২০ ধরলে ওয়াক্ত হবে ৭.১৫ মিনিটে। তাহলে দেখতে পাচ্ছি, ইশার ক্ষেত্রে Twilight Angle-এর মান বাড়লে ওয়াক্ত দেরীতে হবে এবং মান কমে গেলে ইশার ওয়াক্ত তাড়াতাড়ি হবে।

ফযর ও ইশার ওয়াক্ত নির্ধারনের পৃথিবীর প্রচলিত পদ্ধতিগুলো: পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ফযর এবং ইশার সময় নির্ধারণের বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কোন কোন দেশ যেখানে ফযর এবং ইশার ক্ষেত্রে ভিন্ন মান রেখে, কখনও বা সূর্যাস্ত এবং সূর্যদোয়ের সময় থেকে নির্দিষ্ট সময় যথাক্রমে যোগ এবং বিয়োগ করে নির্ধারণ করছে। নীচের কয়েকটি দেশে ব্যবহৃত ইশা এবং ফযরের Twilight Angle-এর মান দেয়া হলো-

http://www.sabujbanglablog.net/wp-content/uploads/2012/06/Twilight-Angle.png

ফযরে এবং ইশার সময় নির্ধারণে Twilight Angle ১৮ ব্যবহারের কারণ এবং যৌক্তিকতা: সূর্যাস্তের পর থেকে সূর্য দিগন্ত রেখার যত নীচে নেমে যেতে থাকে ততই ধীরে ধীরে অন্ধকার নেমে আসে। সূর্য কতটুকু নীচে নেমে গেল এবং সেই অনুযায়ী কতটুকু আলো বিকিরণ করলো তার উপর নির্ভর করে মহাকাশবিজ্ঞানে Twilight Angleকে তিনভাবে ভাগ করা হয়েছে। যথা- সিভিল, নটিক্যাল এবং এস্ট্রানমিক্যাল। সিভিল ৬, নটিক্যাল ১২, এস্ট্রোনমিক্যাল ১৮
সিভিল: উজ্জল তারাগুলো দৃশ্যমান হয় এবং সমুদ্র থেকে দিগন্ত স্পষ্ট দেখা যায়।
নটিক্যাল: সমুদ্র থেকে দিগন্ত রেখা দেখা যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে এবং দিগন্ত রেখার সাপেক্ষে দিগন্ত রেখা থেকে উচ্চতা (Altitude) নির্ণয় করা সম্ভব হয়ে উঠে না।
এস্টোনমিক্যাল: যখন সম্পূর্ণরূপে অন্ধকার নামে এবং কোন প্রকার আলোকচ্ছটার উপস্থিতি থাকে না। সূর্য যখন দিগন্ত রেখার নীচে নেমে যেতে থাকে তখন ১৮ পরিমাণ নেমে যাওয়ার পরপরই মহাকাশবিজ্ঞান মতে প্রকৃত অন্ধকার নেমে আসে অর্থাৎ এরপর কোন আলোর উপস্থিতি থাকে না। আবার সূর্য যখন উপরে উঠতে থাকে, ১৮ পরিমাণ উঠে আসা পর্যন্ত আলোর কোন রেখা দেখা যায় না অর্থাৎ ১৮ হচ্ছে মহাকাশবিজ্ঞান মতে উর্দ্ধসীমা বা Upper Limit। আধুনিক বিশ্বে ফযরের এবং ইশা ওয়াক্ত নির্ধারণে ১৮ মানকে বেশী প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। মুসলিম মহাকাশবিজ্ঞানীরা বিশেষতঃ বাংলাদেশ, পকিস্তান, ভারত, ইয়েমেন এসব দেশসমূহের জন্য ১৮ মানকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
যে সকল মহাকাশবিজ্ঞানীরা ফযরের ক্ষেত্রে ১৮ মানের চেয়ে কম মান যেমন, ১৫, ১৭ ব্যবহার করেছেন তাদের যুক্তি হচ্ছে, ১৮ অবস্থানে অনেক অন্ধকার থাকে এতে প্রভাতের আলো দেখা যায় না। সেটা সম্পূর্ণ অন্ধকার। সেক্ষেত্রে ফযরের বেলায় যারা ১৯ এবং ২০ মান ব্যবহার করেন তারা শুধুমাত্র সতর্কতার জন্য করেছেন। এক্ষেত্রে আমাদের যুক্তি হচ্ছে ১৮ই হচ্ছে মহাকাশবিজ্ঞান মতে উর্দ্ধসীমা বা Upper Limit। অর্থাৎ সে পর্যন্ত কোন আলোর রেখা দেখা যায় না। তারপর থেকে প্রতি ডিগ্রী উন্নতিতে আলোর বিকিরণ বাড়তে থাকে। সাধারণভাবে প্রতি ডিগ্রী উন্নতিতে (অতি উচ্চ অক্ষাংশের দেশসমূহ ছাড়া) সময়ের পার্থক্য ৪ থেকে ৫ মিনিট। সেক্ষেত্রে ফযরের জন্য আলাদা করে অতিরিক্ত সতর্কতার জন্যে ১৯, ২০ মান ব্যবহারের কোন প্রয়োজন নেই। আবার যারা ১৫, ১৬ ব্যবহার করে তারা সূর্যের সেই অবস্থানে প্রভাতের আলো দেখতে পাওয়া যায় বলেই ফযরের ওয়াক্ত নির্ধারণে সে মান ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে বিশেষতঃ রমাদ্বান শরীফ-এ সাহরীর জন্য সাবধানতামূলক কোন সময় থাকে না। এসব দিক বিবেচনা করে ফযরের জন্য ১৮ মান ব্যবহার করা হচ্ছে সবদিক থেকে উত্তম।
এবার আসা যাক ইশা প্রসঙ্গে। আমরা আগেই বর্ণনা করেছি ১৮ অবস্থানে সূর্য নেমে যাওয়ার পর প্রকৃত অন্ধকার নেমে আসে। তাহলে ইশার ক্ষেত্রে ১৮র চেয়ে বেশী মান ব্যবহারের কোন যৌক্তিকতা নেই। আরব আমিরাতসহ অনেক মুসলিম দেশ ফযরের এবং ইশার সময় নির্ধারণে Twilight Angle ১৮ ব্যহার করে থাকে এবং সাহরীর সময় কয়েক মিনিট এগিয়ে উল্লেখ করে থাকে।

Twilight Angle ১৯ এবং বাংলাদেশের প্রচলিত চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডার: একটি বিষয় মনে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, একটি নির্দিষ্ট শহরের নামাযের সময়সূচী বিভিন্ন ডিগ্রীতে (১৫-২০) পৃথক পৃথকভাবে নির্ণয় করলে দেখা যাবে শুধুমাত্র ফযর এবং ইশার সময়েরই পার্থক্য হচ্ছে অন্যান্য ওয়াক্তের সময় অপরিবর্তিত থাকবে। যেমন, যোহরের ওয়াক্তের সময় তখনই হয় যখন সূর্য স্থানীয় মধ্যরেখা অতিক্রম করে। এতে ফযর এবং ইশার Twilight Angle কত ধরা হয়েছে তার কোন প্রভাব নেই। বাংলাদেশে প্রচলিত চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডারে ফযর এবং ইশার ক্ষেত্রে ঢাকার যে সময় উল্লেখ করা হয়েছে তা ১৯ ধরে করা হয়েছে। কিন্তু ফযরের সময়ের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, সাবধানতার জন্যে সুবহে সাদিকের ৫ মিনিট পূর্বেই এ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে এবং উল্লিখিত সময়ের ৫ মিনিট পর ফযরের আযান দিতে হবে। অর্থাৎ ফযরের ওয়াক্ত হবে উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে ৫ মিনিট যোগ করার পর। তাহলে যোগকৃত সময়টা নির্ধারণ হবে ১৮ মানে। সেদিক থেকে বলা চলে, প্রচলিত চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডারে ফযরের Twilight Angle ধরা হয়েছে ১৮তে এবং ইশার ওয়াক্ত ১৯তে। এতক্ষণের দীর্ঘ আলোচনা থেকে বোঝা গেল, আমাদের দেশে প্রচলিত চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডারে ফযর ও ইশার ওয়াক্ত নির্ণয়ে Twilight Angle-এর মান যা ধরা হয়েছে সেটা ভুল বরং ১৮ মান ধরে সঠিক ওয়াক্ত নির্ণয় করতে হবে।