Topic: ৯ই ফাল্গুন ও ২১ শে ফেব্রুয়ারি এবং ভাষাশহীদদের ব্যর্থ আত্মত্যাগ
একজন পতিতার কিংবা সার্কাসের ভাঁড়ের( জোকার)অতিরিক্ত মাত্রার সাজুগুজুর প্রয়োজন পড়ে, খদ্দের আকৃষ্ট করবার জন্য, সে খদ্দের ক্ষনিকের, প্রয়োজন ফুরালেই মাত্রাতিরক্ত সাজগোজসহকারে পতিতা/ভাঁড় পরিত্যাক্ত হয়। কিন্তু সাধারণ সৌন্দর্যচর্চার কোন মানুষ কখনই পরিত্যাক্ত হয় না, রুচিবোধের মাত্রাসীমায় অবস্থিত সৌন্দর্যের দাম থাকে চীরকালই।
ভাষার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। ব্যকরণের নিয়ম অনুযায়ী কিংবা আঞ্চলিকতার রেশ অনুযায়ী উচ্চারিত ও লিখিত বাংলা সাধারণ সৌন্দর্যমন্ডিত,এর আবেদন চিরকাল। আমরা যে বাংলিশ কিংবা বাংহিন্দিশ ( বাংলা+হিন্দি+ইংলিশ ) বাংলা বলে লোকের কাছে বেশি আধুনিক হবার চেষ্টা করি তা হচ্ছে পতিতার মত অতিরিক্ত সাজুগুজু করার নামান্তর মাত্র। এর মাধ্যমে গুটিকয়ের গর্দভের কাছে নিজের মর্যাদা পেতে পারি, কিন্তু প্রকৃত বাঙ্গালীরা আমাদের নিয় ঠিকই হাসাহাসি করবে।
ভাষার বিকাশে বিদেশী ভাষার ব্যবহার ব্যকরণসন্মত, কারন ভাষা সার্বজনীন, এক ভাষার সাথে অন্যভাষার অনেক শব্দের পরিমিত অনুপ্রবেশ ঘটে নানা বাস্তব প্রয়োজনের তাগিদে। কিন্তু বাঙ্গালীদের বাংলা ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে তা যেন কয়েকগুণ দ্রুত ঘটে।
রেডিও জকি তথা রেডিও জোকারদের ভাষা নিশ্চয় শুনেছেন ? আমি বাংলায় কথা বলি কারন আমি বাংলা মায়ের গর্ভে জন্মেছি, কারন আমি বাংলা পিতার ঔরসজাত। আমি ইংরেজী ভাষা ব্যবহার করি তখনই যখন শুধু প্রয়োজন পড়ে। যারা বাংলা ভাষা জানা সত্বেও অকারণে বাংলার মধ্যে অন্য ভাষার মিশেল করে নিজের ভাব বাড়ানোর চেষ্টা করে আর আমার মায়ের ভাষার গুষ্ঠি উদ্ধার করে তারা নিশ্চয় ভিন্ন ভাষাভাষির একাধিক পিতার ঔরসে জন্মেছে ? না হলে এতগুলো ভাষার একসাথে ব্যবহার কোথা থেকে শিখল সে ?
ঘুম থেকে উঠে দেখি গান বাজে ছাম্মাক ছাল্লু, ঘুমাতে যাবার সময় শুনি উল্লালা উল্লালা। আর মাঝের সময়টাতে হিন্দি মুভি না দেখলে বিনোদন পূর্ণই হয়না। টিভিতে সারাদিন চলে হিন্দি সিরিয়াল, আমাদের নতুন প্রজন্ম কোথা থেকে প্রমিত বাংলা শিখবে, রেডিওতে টিভিতে মশারী পরা খালামুনি কিংবা বকরির মত দাড়ি রাখা আজব সাজে সজ্জিত গর্দভেরা যে ভাষায় কথা বলে তা শুনলে গা ঘিনঘিন করে ওঠে, শিশুরা ভাল মন্দ বোঝেনা, এরা এই ভাষাধর্ষণকারীদের অনুকরণ করে বেড়ে উঠছে এক সংকর প্রজন্ম হিসাবে। সালাম বরকত, জব্বারেরা যদি আজ বেঁচে থাকতেন তবে ভাষার জন্য জীবন দেবার আগে তাঁরা এই বিকৃত রুচির এবং বাংলা ভাষা ধ্বংসকারীদের পাছায় অন্তঃত কয়েকটা লাত্থি দিতেন। ওনারা বেঁচে নেই, সে লাত্থি দেবার দায়িত্ব এখন আমাদের।
৯ ই ফাল্গুন ভাষাশহীদদের স্মরণে মিনারে গিয়ে ফুল দিব, ফুলের তোড়ায় লিখা থাকবে “২১ শে ফেব্রুয়ারী, আমি কী ভুলিতে পারি”। ওপারে থেকে শহীদেরা আমাদের ব্যাঙ্গ করে বলবে, “ওরা গাধারা, আজ ২১ শে ফেব্রুয়ারী নয়, আজ যে ৯ ই ফাল্গুণ, আমরা মুঠোফোনে তারিখ মিলিয়ে দেখব, নাহ আজতো ২১ শে ফেব্রুয়ারীই” শহীদেরা মনে মনে বলবে, ২১ শে ফেব্রুয়ারীকে ৯ ফাল্গুণ বানাতে পারেনা যে জাতি, তাদের জন্য আমরা জীবন দিয়েছিলাম। সে কথা কারো কানেই যাবে না,আমরা কাকাবাবুর দলেরা শহীদমিনারে ফুল দেয়া শেষে চিকনি চামেলীর গানটা গাইতে গাইতে হলে ফিরব । তাতে আমাদের বাঙ্গালী জাতিসত্বার গায়ে শুধু কালিরই লেপন ঘটে, উন্নতি ঘটেনা। উলটা পথে হাঁটা বন্ধ করার সময় এখনই, সোজা পথে চলতে মানুষকে সাহায্য করার দায়িত্ব তরুণদেরই।
এফ এইচ রিগ্যান
৯ ই ফাল্গুণ, ১৪১৮।