Topic: পলাশ মাহমুদ এর কলেজ লাইফ-পর্ব: ১
আমি অবাক হয়ে শুনছি, আমার ক্লাসমেট ফোনে কাকে যেন বকাবকি করছে। সে কি ভাষা। তুই কেন কল দিস? তোরে যদি হাতের সামনে পাই? ব্যাটা তোর পিছন দিক দিয়ে মোবাইল? আরো আজিব আজিব শব্দ। তার গালিগালাজ শুনে মনে হচ্ছে এর উপরে সে পি.এইচ.ডি. পাশ করে এসেছে। এখন কোন ছাত্রকে শিখাচ্ছে। আমি আর আমার বন্ধুরা বসে আছি হোটেলে। আমি টেবিলে দু’হাত রেখে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। পাচ দিন পরে কলেজে এসেছি, কিছুই বুঝতাছি না। বাকি সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে শুনছে। কেউ কেউ মোবাইল টেনে নিয়ে নতুন উদ্দোমে গালিগালাজ দিচ্ছে। এদের প্রবলেমটা কি? আজ কি গালিগালাজের উপর কোন পরীক্ষা আছে নাকি? সবাই এ ভাবে রিহার্সেল দিচ্ছে কেন?
পুরো সাত মিনিটেও যখন গালিগালাজ বন্ধ হলো না তখন আমি সুবোধ বালকের মতো কলেজের দিকে পা বাড়ালাম। পরে শোনা যাবে কি ঘটনা, আগে সবার সাথে দেখা সাৎকাত করে আসি। বহুদিন পর কলেজে এসেছি।
আমি ক্লাসে ঢুকেই পুরোনো ডাইলক নতুন ভাবে দিলাম- “হ্যালো, লেডিস এন্ড জেন্টল ম্যান, বুড়ো এবং বুড়ির নায়-নাতুর, আংকেল এবং আংটির ছোকরা-ছুকড়িরা, কেমন আছিস সবাই”?
আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই একজন বলে উঠলো- “আরে পলাশ তুই তো জানিস না, পুরো কলেজ জুড়েই এখন কি যে শুরু হয়েছে? ঐ ব্যাটারে তো সবাই কল করে কি যে বকা দিচ্ছে”?
: হ্যা, বুঝতে পেরেছি! কলেজে পা দিয়েই বুঝতে পেরেছি! তোরা এখন গালিগালাজ রিহার্সেল দিচ্ছিস। তা এর উপর কি টিচার ভাইবা পরিক্ষা নিবে নাকি? তোদের প্রবলেমটা কি?
: আরে আমাদের প্রবলেম না, প্রবলেম ঐ ব্যাটার।
: কেন? গালিগালাজ শুনতে কি ওর খুব ভালো লাগে?
: আরে না, ঐ ব্যাটা ম্যাডামকে ডিস্টাব করে। যখন তখন কল দিয়ে উল্টা পাল্টা কথা বলে। ম্যাডাম বিরক্ত হয়ে আমাদের বলেছেন। আমরা পুরো কলেজে নম্বর দিয়ে দিয়েছি। সবাই এখন ঘন্টা চুক্তিতে ব্যাটাকে গালিগালাজ দিচ্ছে………
আমার ক্লাসমেট মনে হয় আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল তার আগেই ঝড় এর বেগে ম্যাডাম প্রবেশ করলেন।
: পলাশ তুই এসেছিস? তোকেই দরকার?
অস্থির ভঙ্গিতে ম্যাডাম আমাকে বললেন। কলেজের সব শিক্ষক-শিক্ষিকা সব ছাত্র-ছাত্রীকে তুমি অথবা আপনি করে বলে শুধু মাত্র আমাকেই তুই করে কেন যে বলে আজো তার রহস্য আমি বেধ করতে পারি নাই। আমি মুখে একটা হাসি নিয়ে বললাম-
: কেন ম্যাডাম, এখনো কি আপনার সন্দেহ আছে?
: ফাইজলামী মার্কা কথাবার্তা বাদ দে……শোন আমি মহা জামেলায় পরেছি। তুই তো মনে হয় জানিস?
আমি মাথা নাড়লাম।
: কুচ কুচ।
: ছাত্রদের বকাবকিতে এখন লোকটা আরো বেশি কল দিচ্ছে এমন কি হুমকিও দিচ্ছে। তুই একটা কিছু কর?
: মোবাইল এর সিম খুলে হাতুড়ি দিয়ে বাইরিয়ে পাউডার বানাইয়া ফালান। মোবাইলও বন্ধ, কলও বন্ধ।
: তুই জানিস, মোবাইল নম্বর কতো জায়গায় দেওয়া আছে? মোবাইল বন্ধ করা যাবে না।
: তাহলে আমি গেলাম, আর কোন সমাধান আমার কাছে নাই।
: কই যাবি?
: বাসায়, ক্লাস করবো না। ক্লাসে এখন আর মন বসবে না।
: আমার বিষয়টার কি হবে?
: জাতির মাঝে আমার থেকেও বহু জ্ঞানী-গুনী লোক আছে তাদের সাহায্য নেন, আমাকে নিয়ে আবার এর মাঝে টানাহেচরা করছেন কেন?
ম্যাডাম মনে হয় আমার কথা শুনে বিরক্ত হয়েছেন। তিনি বললেন-
: জাতির মাঝে তোর মতো ফাজিল নাই, তাই টানাটানি করতাছি। তুইও ফাজিল, লোকটাও ফাজিল। ফাজিলে ফাজিলে কাটাকাটি বুঝলি। সবাই বলছিলো তুই কিছু করতে পারবি, তাই তোকে বলা। তুই কিছু করতে পারবি কি পারবি না, তা বল।
: পারবোনা কেন? অবশ্যই পারবো? তবে আমাকে কিছু ঘুস দিতে হবে।
: কি দিতে হবে?
: মাত্র তিনশত টাকা আমার মোবাইলে দিয়ে দেন। কালকের পরের দিন থেকে লোকটা আর কল দিবে না। কল দেওয়া বন্ধ হয়ে যাবে।
: ওকে ঠিক আছে। না পারলে জরিমানা হিসাবে তুই আমাকে পাচশত টাকা দিবি। বলেই ম্যাডাম তিনশত টাকা বাহির করে আমার হাতে দিলেন।
বি:দ্র: বাকি কাহিনী বাকিই থাক। দেখি কবে বাকির হালখাতা খুলে তা জমা দিতে পারি।
এলোমেলো আকাশে উড়িয়েছো শাড়ির আচল,
হঠ্যাৎ যেন মেখে দিয়েছো, ঐ দু'চোখে ভালোবাসার কাজল!
আমাকে পাবেন এলোমেলো-তে!!!