Topic: নাসিরুদ্দীন হোজ্জা

1. এক রাতে হোজ্জা দেখে বাগানে এক লোক দাঁড়িয়ে আছে। চোর ভেবে হোজ্জা ধনুক বের করে চোরের দিকে তীর ছুড়ল। পরদিন সকালে গিয়ে দেখে তারই জামা মেলে দেয়া ছিল; যেটাকে হোজ্জা চোর মনে করে তীর ছুড়েছিল এবং সেই তীর জামাতে বিদ্ধ হয়ে আছে। সাথে সাথে হোজ্জা মোনাজাত করে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানায়। হোজ্জার বিবি অবাক হয়ে বলল, ‘ তুমি এখন মোনাজাত করছ কেন’? ‘ভাগ্যিস জামার ভিতর আমি ছিলাম না’, হোজ্জার উত্তর।


2. একদিন হোজ্জা গাধার পিঠে লবণ বোঝাই করে বাজারের দিকে রওনা দিলেন। পথে একটা নদী পড়ল। গাধাসহ নদী পার হলেন। কিন্তু নদীর পানিতে লবণ গলে একাকার। পণ্য হারিয়ে হোজ্জা বিরক্ত। গাধা তো মহা খুশি বোঝা থেকে বেঁচে গিয়ে। এর পরেরবারও হোজ্জা ওই পথ দিয়ে গেলেন, তবে এবার তুলা বোঝাই করে। গাধা যখন নদী পার হলো তখন তুলা ভিজে ওজন বেড়ে গেল। গাধা ওজনদার মাল নিয়ে টলমল পায়ে এগিয়ে যেতে লাগল। হোজ্জা চেঁচিয়ে বললেন, ‘ভেবেছিলি প্রতিবার পানি দিয়ে গেলে পিঠের ওপরের মালের ওজন কমে যাবে, তাই না?


3. গাধার পিঠে চেপে হোজ্জা প্রায়ই ইরান, গ্রিস চলে যান। প্রতিবারই গাধার পিঠে দুই বোঝা খড় চাপিয়ে নিয়ে যেতেন এবং ফিরে আসতেন পায়ে হেঁটে। প্রতিবার তাঁকে তল্লাশি করা হতো বেআইনি সামগ্রীর খোঁজে। কিছুই পাওয়া যেত না। কী নিয়ে যান আপনি, হোজ্জা‘? ’আমি একজন চোরাচালানি।’ কয়েক বছর পর হোজ্জার অবস্থা আরও রমরমা। মিসরের উদ্দেশে রওনা দিলেন। সেখানে একদিন এক সীমান্তরক্ষী তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। বলুন হোজ্জা, কী করে গ্রিস ও ইরানের আইন ফাঁকি দিয়ে গেলেন আর এখানেও বেশ ভালোই আছেন, কী চোরাচালান করতেন যে কখনোই ধরা যেত না‘? ’গাধা।’


4. নাসিরুদ্দিন হোজ্জা তখন কাজী। বিচার আচার করেন। একদিন বিচারে বসেছেন। ফরিয়াদি আসামির সম্পর্কে তার অভিযোগের বয়ান দিতেছে। হোজ্জা মনযোগ দিয়া তার কথা শুনছেন। বাদীর বলা শেষ হয়ে মাথা ঝাকিয়ে বললেন, ‘তোমার কথাই ঠিক’। এইবার আসামি বলে উঠল, হুজুর, আমার দুইটা কথা ছিল ।  হোজ্জা বললেন, ঠিকাছে তুমি তোমার বক্তব্য বল । আসামির বক্তব্যও মনযোগ দিয়া শোনার পর হোজ্জা বললেন, তোমার কথাই ঠিক। হোজ্জার স্ত্রী পর্দার আড়ালে এতক্ষণ সব কথা শুনছিলেন। বিরক্ত হয়ে স্বামীকে তিনি বললেন, ‘দুইজনই ঠিক হয় কিভাবে? হয় আসামির কথা ঠিক অথবা ফরিয়াদির কথা ঠিক’। হোজ্জা স্ত্রীর দিকে ফিরে সমর্থনসূচক হাসি দিয়ে বললেন, ‘বিবি তোমার কথাই ঠিক’।


5. একদিন রাতে হোজ্জার প্রতিবেশি শুনল হোজ্জার সাথে তার স্ত্রীর ঝগড়া চলছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর ভারী একটা কিছু পড়ার আওয়াজ হলো তারপর সব চুপচাপ। পরদিন সকালে প্রতিবেশি হোজ্জা কে জিজ্ঞাস করে, ‘কাল রাতে আপনার বাসায় ভারী কিছু একটা পড়ার শব্দ পেলাম’। ’আমার বিবি রাগ করে আমার কোর্তা জানালা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়’, হোজ্জা জানায়। ’একটা কোর্তা পড়ায় এত শব্দ হয়’, প্রতিবেশি অবাক। ’আরে কোর্তার ভিতর তো আমিও ছিলাম’, হোজ্জা বিরস মুখে জানায়।


6. একদিন একজন পুরুষ ও একজন মহিলা বিচারক হোজ্জার দরবারে এল। মহিলাটি ফরিয়াদ জানায়, ‘আমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি, অপরিচিত এই লোকটা হঠাৎ এসে আমাকে চুমু দিয়েছে। আমি বিচার চাই’। ’আমিও মনে করি তোমার বিচার পাওয়া উচিত’, হোজ্জা বলে। ‘সুতরাং আমি নির্দেশ দিলাম, তুমি লোকটাকে চুমু দাও এবং তোমার প্রতিশোধ নাও’।


7. একদিন নাসিরউদ্দিন চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল। তার শালা এসে জিজ্ঞাস করে, ‘ আপনি কি ঘুমাচ্ছেন?’ ’কেন জিজ্ঞাস করছ’, নাসিরুদ্দিন বলে। ’আমি ভাবছিলাম আপনি যদি আমাকে কিছু টাকা ধার দিতেন’। ’ওকে, তাইলে তোমার প্রথম প্রশ্নের উত্তর, আমি ঘুমাচ্ছি’, নাসিরউদ্দিন বলে। ‘ এখন আমাকে একা থাকতে দেও’


8. একদা শিষ্যদের নিয়ে মেলায় গেলেন হোজ্জা। এক জায়গায় দেখতে পেলেন তীর নিক্ষেপ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। খেলায় অংশগ্রহণ করে প্রথম তীরটি নিক্ষেপ করলেন হোজ্জা। কিন্তু তীর গিয়ে পড়ল মাত্র কয়েক হাত দূরে। সবাই তাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে দেখে হোজ্জা বললেন, “আসলে এমনটি ঘটে সে মানুষের ক্ষেত্রে যে নিজেকে সবসময় ছোট ভাবে।”
“আর এমনটি ঘটে…” তীর নিক্ষেপ করেন হোজ্জা। নির্ধারিত জায়গার উপর দিয়ে বেশ দূরে গিয়ে পড়ে তীরটি এবার, আবারও হাসতে থাকে জনতা। “..এমনটি ঘটে যে মানুষ উদ্ধত আত্মবিশ্বাসে ভুগে, তার ক্ষেত্রে।” “আর এ হচ্ছে…”আবারও তীর নিক্ষেপ করেন হোজ্জা, ঠিক জায়গামত বিদ্ধ হয় এবার। হোজ্জা শান্ত গলায় বলেন, “এ হচ্ছে আমি।”


9. হাটবারের দিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে জড়বুদ্ধির মতো আচরণ করতেন হোজ্জা, ফলে নির্বোধ ভেবে মানুষ তাকে মুদ্রা দান করত। কিন্তু তার সামনে দুটি মুদ্রা তুলে ধরা হলে, সর্বদাই তিনি ছোট মুদ্রাটি গ্রহণ করতেন, যতবারই, যেভাবেই দেয়া হোক না কেন। একদিন সদাশয় এক ব্যক্তি তাকে বললেন, “নাসিরুদ্দীন, তুমি তো বড় মুদ্রাটা নিতে পার। এতে তোমার দ্রুত বেশ কিছু টাকা-পয়সা জমে যাবে আর মানুষও আগের মতো তোমাকে নিয়ে তামাশা করতে পারবে না।” “হুমম, আপনি যা বলছেন তা হয়তো ঠিক হতে পারে। কিন্তু আমি ভাবছি, আমি যদি সবসময় বড় মুদ্রাটা গ্রহণ করি, তাহলে মানুষ আমাকে তাদের চেয়েও নির্বোধ ভেবে যে আনন্দটা পায়, সে আনন্দটা আর পাবে না, ফলে দান হয়তো একেবারেই বন্ধ করে দিবে।” হোজ্জা জবাব দেন।


10. কাজী থাকাকালীন একদা নিজের কক্ষে বসে কাজ করছেন হোজ্জা। এমন সময় এক প্রতিবেশি এসে বললেন, “আচ্ছা, হোজ্জা, একজনের গরু যদি আরেকজনের গরু মেরে ফেলে, এর বিধান কী? প্রথম গরুর মালিক কি এতে দায়ী হবে?”“এটা আসলে নির্ভর করে…।”“আচ্ছা, তাহলে খুলেই বলি, আপনার গরুটা আমার একটা গরুকে মেরে ফেলেছে।”“ওহ! সবাই জানে একটা গরু কখনো মানুষের মতো চিন্তা করতে পারে না, তাই গরুর কোনো বিচার হতে পারে না, আর এর মানে হচ্ছে, গরুর মালিকও দায়ী হতে পারেন না।”“আমি আসলে একটা ভুল করেছি, হোজ্জা। আমি বলতে চাচ্ছিলাম আমার গরুটা আপনার গরুকে মেরে ফেলেছে।”নাসিরুদ্দীন কয়েক মুহূর্ত চিন্তা করেন। তারপর বলেন, “একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখলাম, বিষয়টা আসলে প্রথমে যেরকম ভেবেছিলাম, অতটা সহজ নয়।” তারপর কেরাণীর দিকে ফিরে নির্দেশ দিলেন, “তোমার পেছনে বইয়ের তাক থেকে মোটা বইটা পেড়ে নিয়ে আস তো।”


11. একদিন হোজ্জার স্ত্রী খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং চিকিৎসক ডাকতে বলেন।হোজ্জা তাঁর স্ত্রীর অসুস্থতা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লেন।তিনি ছুটে গেলেন চিকিৎসক ডেকে আনার জন্য।কিন্তু রাস্তার দিকের জানালার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় স্ত্রী জানালা দিয়ে গলা বের করে চেঁচিয়ে বললেন, আল্লাহকে ধন্যবাদ! ব্যথাটা চলে গেছে, চিকিৎসকের দরকার নেই। হোজ্জা স্ত্রীর কথা শুনলেন এবং চিকিৎসকের বাড়ির দিকে দৌড়ে গেলেন। বললেন, ডাক্তার, আমার স্ত্রী খুব অসুস্থ ছিল এবং আপনাকে ডেকে আনার জন্য বলেছিল। কিন্তু আপনাকে ডেকে আনতে বের হওয়ার সময় বলল সে সুস্থ বোধ করছে, আপনাকে ডাকার দরকার নেই। তাই আপনাকে পুরো ব্যাপারটা বলতে এলাম এই জন্য যে তাকে দেখতে আসতে হবে না।


12. বিবির পিড়াপিড়িতে নাসিরুদ্দিন হোজ্জা একটা গরু কিনল।কিন্তু গরু ও গাধার জন্য গোয়াল ঘরে পর্যাপ্ত যায়গা না থাকায়, একটা ঘুমালে আরেকটাকে দাড়িয়ে থাকতে হতো।প্রিয় গাধার এই দুরবস্থা দেখে হোজ্জা একদিন খোদার কাছে প্রার্থনা করছে: হে আল্লাহ, দয়া করে গরুটাকে মেরে ফেল যাতে আমার গাধাটা একটু আরাম করে ঘুমাইতে পারে। পরদিন সকালে সে গোয়াল ঘরে গিয়ে দেখে যে গাধাটা মরে পরে আছে। প্রানপ্রিয় গাধার মৃত্যুতে দুঃখিত ও হতাশ হয়ে হোজ্জা বিরস বদনে আকাশের দিকে তাকায়ে বলল: কোন অভিযোগ করবনা, খোদা, কিন্তু তুমি এতদিন ধরে সারা দুনিয়ার মালিক হয়েও, কোনটা গরু কোনটা গাধা এইটা চিনলানা!


13. একবার নাসিরুদ্দিন হোজ্জা অসুস্থ।নিজের গাধাটাকে খাওয়ানোর জন্য বিবিকে বললেন।হোজ্জার বিবি একটু ত্যাদড় টাইপের।সে গাধা কে খাবার দিতে অস্বীকার করল।দুজনের মধ্যে এই নিয়ে তুমুল ঝগড়া।তারপর একটা সমঝোতা হল, যে আগে কথা বলবে সে গাধাকে খাওয়াবে।হোজ্জা বাজিতে জেতার ব্যপারে ডিটারমাইন্ড ছিল। সেইদিনই, হোজ্জার বিবি বাইরে গেছে, খালি বাসা দেখে একটা চোর ঘরে ঢুকল।হোজ্জা বাসায় ছিল, কিন্তু বাজিতে হেরে যাওয়ার ভয়ে চোরকে কিছু বলল না।চোর নির্বিঘ্নে ঘরের সব কিছু নিয়ে চলে গেল।হোজ্জার স্ত্রী বাসায় ফিরে এসে যখন দেখল সব কিছু খালি, চিৎকার দিয়ে বলল, হায় আল্লা! কি হইছে? হোজ্জা খুশিতে লাফিয়ে উঠল, আমি জিতছি বাজিতে, এখন তোমারেই গাধাকে খাওয়ান লাগবে।


14. একদিন হোজ্জা বাজার থেকে কলিজা কিনে বাসায় যাচ্ছিলেন।এদিকে তাঁর এক বন্ধু তাঁকে কলিজার পাই বানানোর রেসিপি দিয়েছিলেন, যাতে বাসায় গিয়ে কলিজার পাই রান্না করতে পারেন।কিন্তু হঠাৎ একটি বাজপাখি উড়ে এসে কলিজা ছিনিয়ে নিয়ে একেবারে নাগালের বাইরে উড়ে চলে গেল। বোকা কোথাকার!চেঁচিয়ে হোজ্জা বললেন, কলিজা নিয়ে গেছ ঠিক আছে, কিন্তু প্রস্তুত প্রণালী (রেসিপি )তো আমার কাছে!


15. এক তুর্কির ষাঁড় হোজ্জার বাগানের বেড়া ভেঙে ভেতরে ঢুকে তছনছ করে দিয়ে মালিকের কাছে ফিরে গেল।হোজ্জা পুরো ব্যাপারটা লক্ষ করলেন, তারপর একটা বেত নিয়ে বেরিয়ে এসে ষাঁড়টাকে পেটাতে শুরু করলেন। কোন সাহসে আমার ষাঁড়কে আপনি পেটাচ্ছেন! তুর্কি চেঁচিয়ে বলল। কিছু মনে করবেন না আপনি, হোজ্জা বললেন, ও পুরো ব্যাপারটা জানে।এটা ওর আর আমার ব্যাপার!


16. একদিন রাত্রে দুজনের পায়ের শব্দ পেয়ে নাসিরুদ্দীন ভয়ে একটা আলমারিতে ঢুকে লুকিয়ে রইল। লোক দুটো ছিল চোর। তারা বাক্সপ্যাটরা সবই খুলছে, সেই সঙ্গে আলমারিটাও খুলে দেখল তাতে মোল্লাসাহেব ঘাপটি মেরে বসে আছেন। চোর : কী হল মোল্লাসাহেব, লুকিয়ে কেন?
মোল্লাসাহেব : লজ্জায়।
চোর : লজ্জায়?
মোল্লাসাহেব : হ্যাঁ, লজ্জায়। আমার বাড়িতে তোমাদের নেবার মতো কিছুই নেই, তাই লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছি না!


17. নাসিরুদ্দীন হোজ্জা ছিলেন বেশ চালাক চতুর। এমনকি বলা যায় ধূর্তও। সে খুবই হিসেবী। এবং খুবই সতর্ক। বাড়ীতে তার এক চাকর নতুন কাজে যোগ দিয়েছে। তাই তার মনে কেবলই ঘুরপাক খায় বেটাকে ঠিকঠাক মতো তালিম দিয়ে নিতে হবে। তা না হলে কী না কী ক্ষতি করে বসে। মানে ভুল-চুক আরকি। তো একটা গ্লাস দিয়ে নাসিরুদ্দীন তার চাকরকে বললো, “এ্যাই শোন, ওটা কিন্তু কাঁচের। খুব দামী। ভেঙে যায়না যেনো। খুব সাবধান!” কিন্তু সে এটা বলেও নিজেকে স্থির রাখতে পারছিলেন না। মনে খুঁতখুঁতি কখন ভেঙে ফেলে। এতোকিছু কিন্তু মাত্র কয়েক সেকেন্ডের চিন্তা। হঠাৎ করেই, “এ্যাই শিগগীর এদিকে, গ্লাসটা দেতো!” (খুব সাবধানে নিজেই এগিয়ে গিয়ে গ্লাসটা হাতে নিয়ে টেবিলে রাখলেন)  এরপর চাকরকে কষে একটা চড়! :O বললেন, “কাঁচের গ্লাস কোনোদিন ধরেছিস? খুব সাবধানে ধরতে হয় বুঝলি? দেখিস খুব সাবধান ভাঙেনা যেন” এটা বলে খুব সাবধানে গ্লাসটা চাকরের হাতে দিলেন। চাকরটি কাচুমাচু-অপ্রস্তুত-কিংকর্তব্যবিমূঢ়ের মতো কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি নিজেকে ঠিক করে নিলো। মনিবরা এমন করতেই পারে।
হোজ্জার বন্ধুরা এমন অবাক কাণ্ডে কিছু না বলে পারলো না। বললো, “সে কী হে হোজ্জা! এ কি করলে? গরীব ছেলেটা কাজ করতে এসেছে। কোনো কারণ ছাড়াই ওকে মারলে যে!”
হোজ্জার উত্তর, “আরে ভাই, সেটাই তো সমস্যা। যদি ওটা ভেঙে ফেলে তাই আগেই সতর্ক করে দেয়া। ও যে গরীব ওকে তো জরিমানা করলে আমার ঠকা হবে।”


18. এক সন্ধ্যায় হোজ্জা হঠাৎ দেখতে পেলেন একদল ঘোড়সওয়ার তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে। তিনি দিব্যদৃষ্টিতে যেন দেখতে পেলেন তাঁকে ধরে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে কিংবা সেনাবাহিনীতে জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। হোজ্জা লাফ দিয়ে দেয়াল টপকে গোরস্থানে গিয়ে একটা খালি কবর দেখে শুয়ে পড়লেন। তার আচরণে কৌতূহলী হয়ে ঘোড়সওয়াররা গোরস্থানে ঢুকে পড়ল। দেখল হোজ্জা একটা খালি কবরে শক্ত কাঠ হয়ে শুয়ে আছে। ‘কবরের ভেতর কী করছেন আপনি? আমরা কি সাহায্য করতে পারি?’ ‘প্রশ্ন করেছেন বলেই সব প্রশ্নের সোজাসাপটা জবাব দেওয়া যায় না’, হোজ্জা বললেন। ‘পুরো ব্যাপারটা আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করছে। যদি বলি আপনাদের জন্য আমার এখানে আসা আর আমার জন্যই আপনাদের এখানে আসা-তাহলে কি কিছু বুঝবেন?’


19. রাজার মেজাজ খারাপ। রাজপ্রাসাদ থেকে বেরিয়ে শিকারে যাওয়ার পথে হোজ্জা সামনে পড়ে গেলেন। ‘শিকারে যাওয়ার পথে হোজ্জার সামনে পড়ে যাওয়াটা আমার ভাগ্যের জন্য খারাপ’, প্রহরীদের রাগত গলায় বললেন রাজা। ‘আমার দিকে ওকে তাকাতে দিয়ো না-চাবুকপেটা করে ওকে পথ থেকে সরিয়ে দাও।’প্রহরীরা তা-ই করল।শিকার কিন্তু ভালোই হলো।রাজা হোজ্জাকে ডেকে পাঠালেন।‘আমি সত্যি দুঃখিত, হোজ্জা। ভেবেছিলাম তুমি অশুভ। কিন্তু তুমি তা নও।’‘আপনি ভেবেছিলেন আমি অশুভ!’ হোজ্জা বললেন। ‘আপনি আমাকে দেখার পর ভালো শিকার করেছেন। আর আমি আপনাকে দেখে চাবুকপেটা খেয়েছি। কে যে কার অশুভ, বুঝলাম না।’


20. একদিন এক গার্ড দেখল হোজ্জা তাঁর শোয়ার ঘরের জানালা খুলে বেরিয়ে আসতে চাইছেন। তখন ছিল গভীর রাত।‘কী করছেন আপনি হোজ্জা? এভাবে বাইরে আসতে চাইছেন কেন?’‘হিস্‌স্‌স্‌! ওরা বলে আমি নাকি ঘুমন্ত অবস্থায় হাঁটি। সেটা দেখার জন্যই চেষ্টা করে যাচ্ছি।’


21. একদিন এক চায়ের স্টলে হোজ্জা সবাইকে বললেন, ‘আমি একজন অতিথিপরায়ণ ব্যক্তি।’‘বেশ, তাহলে আজ দুপুরে আমাদের সবাইকে খাওয়ান’, সবচেয়ে চতুরজন কথাটা বলল।হোজ্জা তাদের নিয়ে নিজ বাসার দিকে রওনা দিলেন।বাড়ির কাছে এসে হোজ্জা বললেন, ‘আমি আগে আগে বাসায় গিয়ে স্ত্রীকে বলি আর তোমরা আসতে থাকো।’খবরটা শোনার পর স্ত্রী রেগে আগুন, ‘ঘরে কোনো খাবার নেই, ওদের ফিরে যেতে বলো।’‘তা পারব না, আমি যে অতিথিপরায়ণ, তার একটা সুনাম আছে।’‘বেশ, তাহলে তুমি ওপরের তলায় গিয়ে বসো; আমি ওদের বলছি তুমি বেরিয়ে গেছ, বাড়িতে নেই।’এক ঘণ্টা পর অতিথিরা এসে দরজায় ধাক্কা দিল আর বলতে লাগল, ‘আমাদের ভেতরে ঢুকতে দাও হোজ্জা।’হোজ্জার স্ত্রী দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন।‘হোজ্জা তো বাড়ি নেই।’‘সেকি আমরা তো তাকে বাড়িতে ঢুকতে দেখেছি আর দরজার দিকে লক্ষ রেখেছি তার ঢোকার পর থেকে। বের তো হয়নি।’স্ত্রী চুপ করে গেলেন।ওপরতলার জানালা দিয়ে হোজ্জা পুরোটাই দেখছিলেন। নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে জানালা দিয়ে ঝুঁকে বললেন, ‘আমি কি পেছনের দরজা দিয়ে বাইরে যেতে পারি না?’


22. ‘আমি যখন মরুভূমিতে গিয়েছিলাম তখন আমার কারণে একটি বেদুইন গোষ্ঠী দৌড়ের ওপর ছিল।’ একদিন হোজ্জা বললেন সবাইকে গর্বের সঙ্গে।‘কিন্তু কীভাবে?’‘একেবারে সহজ। হঠাৎ ওদের সামনে দিয়ে যেই দৌড় লাগিয়েছি, অমনি পুরো দলটা আমার পিছু পিছু দৌড় লাগাল, ব্যস।’


23. হোজ্জাকে একদিন একজন রাস্তায় থামিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘আজকে সপ্তাহের কোন দিন?’‘বলতে পারব না’, জবাবে হোজ্জা বললেন, ‘আমি এই এলাকায় নতুন। জানি না এখানকার মানুষেরা সপ্তাহের কোন দিনটি মেনে চলে।


24. একদিন হোজ্জা তাঁর বাড়ির চারপাশে শুকনো খাবারের টুকরো ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন।‘কী করছেন হোজ্জা?’ একজন জিজ্ঞেস করল।‘বাঘকে দূরে সরিয়ে রাখছি।’‘কিন্তু এ এলাকায় কোনো বাঘ তো নেই।’‘ঠিক বলেছ, খুবই কার্যকর পদ্ধতি, তাই না?’