Topic: এক দামের নামে প্রতারণা !!

প্রিয়জনের জন্য ঈদের উপহার কিনতে যাবেন? পোশাক কিংবা কসমেটিকস অথবা শোপিস যাই হোক; ক্রেতা সাধারণ সাবধান! রাজধানীর অনেক অভিজাত বিপণি বিতানে 'ফিক্সড প্রাইস' বা এক দামের দোকানে চলছে মহাপ্রতারণা। দোকানের সামনে 'ফিক্সড প্রাইস' কিংবা 'এক দাম' লেখা এবং পণ্যের গায়ে মূল্য নির্ধারণ করা থাকলেও দামাদামি করলে কম মূল্যে পণ্য পাওয়া যাবে। দেড় হাজার টাকা লেখা তৈরি পোশাক পাওয়া যায় এক হাজার টাকায়। যারা 'এক দাম' _এর নেপথ্যের খবর জানেন না তারা বেশি প্রতারিত হচ্ছেন। শিশুসহ সব বয়সী ছেলেমেয়ের বিভিন্ন পণ্য নিয়ে চলছে 'ফিক্সড প্রাইস' প্রতারণা। যেসব নারী ক্রেতা দরকষাকষি করে পণ্য কিনতে অভ্যস্ত তারা প্রতারক দোকানিদের খপ্পরে পড়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পণ্যের ন্যায্যমূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দাম লিখে রেখে ক্রেতাদের ঠকানো হচ্ছে। ক্রেতারা দরকষাকষি করে দাম কিছুটা কমালেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ন্যায্যমূল্যের চেয়ে অনেক বেশি নিয়ে নিচ্ছে বিক্রেতারা। ঈদ সামনে রেখে অনেক বেড়ে গেছে ক্রেতা ঠকানোর এ প্রবণতা। ঈদের কারণে বিপণি বিতান কর্তৃপক্ষ বা দোকান মালিক সমিতির নজরদারিও অনেক কম। রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি, ইস্টার্ন প্লাজা, রাপা প্লাজা, বেনারসি পল্লী, এলিফ্যান্ট রোড এবং বেইলি রোডের বিভিন্ন দোকান সরেজমিনে ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। বিভিন্ন বিপণিবিতানের দোকান মালিক সমিতি এবং কর্তৃপক্ষ দরকষাকষি করে পণ্য কেনাবেচাকে বাংলাদেশের রেওয়াজ এবং ক্রেতা-বিক্রেতার অভ্যাস বলে মন্তব্য করেছেন। জনপ্রিয় ব্র্যান্ড শপগুলোতে অবশ্য 'ফিক্সড প্রাইস' পণ্য দর কষাকষি ছাড়াই কেনাবেচা হতে দেখা গেছে। বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষ 'এক দাম' নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করলেও তাতে খুব একটা লাভ হচ্ছে না।
বসুন্ধরা সিটি : বসুন্ধরা সিটির দ্বিতীয় তলায় (লেভেল-২) 'ফিক্সড প্রাইস' স্টিকার টানানো জর্ডানা বাজার থেকে শিশুদের জন্য চেক শার্ট এবং জিন্সের প্যান্ট কিনলেন খাদিজা আক্তার। শার্টের দাম নির্ধারিত ছিল ১ হাজার ১৬০ টাকা আর প্যান্টের ১ হাজার ২০০ টাকা। খাদিজা দর কষাকষি করে শার্ট ৮৫০ এবং প্যান্ট
১ হাজার টাকায় কিনলেন। এর কিছুক্ষণ পর একই দোকানে আবুল বাশার নামে আরেক ক্রেতা শিশুদের পোশাক কিনতে গেলেন। ১ হাজার ২৮০ টাকা লেখা শিশুদের একটি পোশাক কিনলেন তিনি। দোকানি তাকে
'অনার' করলেন ৩০ টাকা। অর্থাৎ তিনি পোশাকটি কিনলেন সাড়ে বারশ' টাকায়। দরদাম কেন করলেন না জানতে চাইলে আবুল বাশার বললেন, 'লেখাই আছে ফিক্সড প্রাইস, তারপরও আমাকে ৩০ টাকা অনার করেছে। সমস্যার কিছু তো দেখছি না।' খাদিজার বক্তব্য, 'কোন দোকানে কী পদ্ধতিতে কেনাবেচা হয় তা জানা আছে। যেসব দোকান রিয়েল ফিক্সড প্রাইসের নয় সেসব দোকানে বার্গেনিং না করলে ঠকতে হবে। ওরা ফিক্সড প্রাইস স্টিকার লাগিয়ে দাম অনেক বেশি রাখে।'
বসুন্ধরা সিটির ষষ্ঠ তলায় (লেভেল-৬) এমটি সুজ নামে একটি দোকানে শফি মাহমুদ নামে এক ব্যক্তি জুতা কেনা নিয়ে বেশ দর কষাকষি করেছেন। এক জোড়া জুতায় দাম লেখা ৩ হাজার ৫০ টাকা। ক্রেতা জুতা জোড়ার দাম দেড় হাজার টাকা দিতে চাইলেন। দোকানি প্রথমে বললেন, আপনাকে খুব বেশি হলে একশ' টাকা অনার করতে পারি। অনেক নাটকীয়তা আর দর কষাকষির পর জুতা জোড়া বিক্রি হলো দেড় হাজার টাকাতেই।
অনুসন্ধানকালে এম চিত্র আরও দেখা গেল বসুন্ধরার লেভেল ১-এর লুক এন লাইক, ফ্যাশন জোন, অরনিমা সিটি; লেভেল ২-এর শশী ফ্যাশন, পৌষি ফ্যাশন; লেভেল ৩-এর ফ্যাশন প্যালেস, সাজি ওয়ার্ল্ড, লেভেল ৬-এর নাইম সুজ, স্মার্ট সুজ, রিসেন্ট সুজ নামের দোকানে। এ তালিকা দীর্ঘ। লেভেল ৪-এর একজন বিক্রেতা জানান, জনপ্রিয় ব্র্যান্ডশপ ছাড়া অন্য দোকানে এক দর লেখা থাকলেও এক দরে বিক্রি সম্ভব হয় না। কম না দিলে ক্রেতারা আরেক দোকানে চলে যান। তিনি জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাসে বসুন্ধরা সিটি কর্তৃপক্ষ প্রত্যেক দোকানে চিঠি দিয়ে জানায়, সব পণ্য এক দামে বিক্রি করতে হবে। সঠিক মূল্য লিখে রাখতে হবে। চিঠি পেয়ে সবাই এক দামে পণ্য বিক্রির চেষ্টা করেছিল। পরে দেখা যায়, মার্কেটে ক্রেতাই কমে যাচ্ছে। তার দাবি, 'এলিফ্যান্ট রোডের দোকানে দ্বিগুণ দাম লিখে রেখে পরে দরদাম করে মূল দামের চেয়ে এক দেড়শ টাকা কম রেখে বিক্রি করে। ফলে সাধারণ ক্রেতারা সেখানে চলে যায়।' বসুন্ধরা সিটির দোকানে তথাকথিত ফিক্সড প্রাইসের দোকানে প্রকৃত মূল্যের চেয়ে দুইশ, আড়াই'শ টাকার বেশি লেখা হয় না বলে তিনি জানান। তিনি আরও জানান, দামের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় হেরফের হয় জুতার দোকানে। দেশীদশসহ বিভিন্ন নামি ব্র্যান্ডের দোকানে এক দামে মানুষ পণ্য কিনছে এমন উদাহরণ দিলে ওই দোকানি বলেন, ওটাও মানুষের অভ্যাস। ওরাও বেশি দাম লিখে রাখে, মানুষের বিশ্বাস ওরা বেশি নেয় না।
বসুন্ধরা সিটি দোকান মালিক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি গোলাম মওলা সমকালকে বলেন, 'ফিক্সড প্রাইস' লিখে নির্দিষ্ট দামে পণ্য বিক্রি না করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেকেই গোপনে সমিতির এক দরে পণ্য বিক্রির সিদ্ধান্ত মানছে না। তিনি জানান, ঈদের কারণে নজরদারি একটু কমানো হয়েছে। ঈদের পর এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত দোকানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে।
বসুন্ধরা সিটি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের উপব্যবস্থাপক (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) মোহাম্মদ আরিফ সমকালকে বলেন, 'এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এর আগে এ ধরনের ঘটনার জন্য একাধিক দোকান বন্ধ করা হয়েছে। ঈদের কারণে এখন কড়াকড়ি একটু কম। ঈদের আমরা আবার কড়াকড়ি আরোপ করা হবে।'
রাপা প্লাজা : রাজধানীর ধানমণ্ডির অভিজাত এলাকার এই শপিংমলে পোশাক, প্রশাধনী, জুতা-স্যান্ডেলের বেশিরভাগ দোকানেই ফিক্সড প্রাইস স্টিকার লাগানো থাকলেও তা মানা হয় না। এসব দোকানের বেশিরভাগেই পণ্যপ্রতি ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত 'সম্মান' করার নামে কম রাখা হয়। কোনো দোকানে ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্তও দাম কমানো হয়। শায়লা পারভীন নামে এক ক্রেতা ডায়না'য় ছোটদের একটি লং ফ্রক কিনতে দাম-দর করছিলেন। ফ্রকটির দাম ৩ হাজার ৪০০ টাকা চাওয়া হয়। দাম কমাতে বললে বিক্রেতা বলেন, ৫০ টাকা 'সম্মান' করতে পারি। পরে ১০০ টাকা কমে ফ্রকটি বিক্রি করা হয়। প্রিন্স নামের একটি দোকানে রয়েছে পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন পণ্য। অভিজাত শ্রেণীর ক্রেতাদেরই এ দোকানে ভিড় বেশি। তরিকুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা একটি সাদা পাঞ্জাবির দর করছিলেন। বিক্রেতা ৭ হাজার ৫০০ টাকা দাম চাইলেও পরে ৭০০ টাকা পর্যন্ত কমাতে রাজি হয়। এ দোকানে পাঞ্জাবিসহ ফিক্সড প্রাইসের সব পণ্যের দাম ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়। তরঙ্গে মেয়েদের একটি থ্রিপিসের দাম চাওয়া হয় এক হাজার ৪৫০ টাকা। বিক্রেতা প্রথমেই ৫০ টাকা 'সম্মান' করার কথা বলেন। দর করার পর তিনি আরও ছাড় দিতে চান। সীমা ফ্যাশনে বিক্রেতা একটি লেহেঙ্গার দাম চান সাড়ে আট হাজার টাকা। তিনিও তিনশ' টাকা পর্যন্ত দাম কমাতে রাজি হন। রাজ্জাক ডিপার্টমেন্ট স্টোরের বিক্রেতা জানান, তাদের দোকানে ১০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়। সিটি লাইফ, মনপুরাসহ কিছু দোকানে প্রতি পণ্যে ৫০ থেকে ১০০ টাকা কম নেওয়া হয়। মুনসুন, ক্যাটস আইয়ের মতো ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে এক দরেই পণ্য বিক্রি হচ্ছে।
রাপা প্লাজা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোতাহার হোসেন বলেন, সাধারণত এই শপিংমলে এক দরের দোকানে দাম কম নেওয়া হয় না। ঈদে বিক্রি কম হওয়ায় দোকান মালিকরা পণ্য ভেদে ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ঈদের পর ফিক্সড প্রাইসের দোকানগুলো আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।
ইস্টার্ন প্লাজা : হাতিরপুলের ইস্টার্ন প্লাজায় ফিক্সড প্রাইসের দোকান কম। এখানে অধিকাংশ দোকানে দর কষাকষি করেই বিকিকিনি হয়। ফিক্সড প্রাইসের কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা গেল সেই একই চিত্র। তৃতীয় তলার 'লিংক' নামের একটি দোকানে লেখা 'এক দর'। সব পোশাকেই দাম নির্ধারিত রয়েছে। ক্রেতা সেজে একটি পণ্যের দাম কমাতে বললে দোকানি বললেন, 'এটা ফিক্সড প্রাইসের দোকান। কম রাখা হয় না।' দোকান থেকে বের হয়ে যেতে চাইলে বিক্রেতা 'সম্মান' করার নামে কিছু কম রাখতে রাজি হন।
নীচতলায় সম্ভার নামে একটি পাঞ্জাবির এক দরের দোকান। রিফাত নামে একজন পাঞ্জাবি কিনলে তাকে 'সম্মান' করা হলো ৫০ টাকা। ফিক্সড প্রাইস লেখা থাকলেও দর কষাকষি করে বিক্রি হতে দেখা গেল এ মার্কেটের লামিয়া, কুহু, সিহাম শাড়ি, টপ কালেকশন, লিসটা এবং মায়া নামের দোকানগুলোতে।
ইস্টার্ন প্লাজা শপ ওনার্স কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সমকালকে বলেন, 'আমাদের মার্কেটে বেশিরভাগ দোকানেই দর-দামের সুযোগ আছে। এক দামের দোকানে কম রাখা হয় না।' তিনি অবশ্য বলেন, অনেক সময় বিক্রেতা হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে দোকানিরা কিছু কমে পণ্য বিক্রি করেন।
এলিফ্যান্ট রোড : এলিফ্যান্ট রোডের দুই পাশের শপিং সেন্টারগুলোতে গতকাল শুক্রবার ছিল ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। ঈদ উপলক্ষে সামনের দিনগুলোতে ভিড় আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা। বিপুল ক্রেতা সমাগমের সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেক ব্যবসায়ী প্রতারণার ফাঁদ পেতেছেন। ফিক্সড প্রাইসের নামে তারা ক্রেতাদের ঠকাচ্ছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ফিক্সড প্রাইস নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যেই। মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বারবার এ ব্যাপারে সতর্ক করার পরও অনেকেই তা মানছেন না। ব্যবসায়ী সমিতির কিছু নেতারও ফিক্সড প্রাইসের দোকান রয়েছে। আবার ফিক্সড প্রাইস ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে একই শপিংমলের অন্য ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ করছেন_ এমন নজিরও আছে।
ফিক্সড প্রাইস নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে কোনোরকম প্রতারণার আশ্রয় না নেওয়ার জন্য নোটিশ দিয়েছে রাজধানীর বেশ কিছু শপিং সেন্টার কর্তৃপক্ষ। এলিফেন্ট রোডের সানরাইজ ভবন মার্কেট, জয়নাল মার্কেট, জহির মার্কেট, মাল্টিপ্ল্যান শপিং সেন্টার, আলপনা প্লাজা, প্রিয়াঙ্গন প্লাজা প্রভৃতি শপিং সেন্টারের কর্তৃপক্ষে সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা না করার জন্য রমজানের শুরুতেই দোকান মালিকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। সানরাইজ ভবন মার্কেট মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ মজিবুর রহমান রিপন সমকালকে বলেন, কয়েকবারই নোটিশ করার পরও অনেকে ফিক্সড প্রাইসের ট্যাগ লাগিয়ে কম দামে কেনাবেচা করছে।
এলিফ্যান্ট রোডের সানরাইজ ভবনের নিচতলায় রয়েছে ৩০টি তৈরি পোশাকের দোকান। এর মধ্যে চারটি দোকানের পোশাকে ফিক্সড প্রাইস ট্যাগ লাগানো। এর একটি 'এস ফেয়ার'। ছেলেদের শার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জিসহ মেয়ে ও শিশুদের তৈরি পোশাক রয়েছে দোকানটিতে। বৃহস্পতিবার ১০ মিনিট দোকানটিতে অবস্থান করে দেখা গেল প্রতারণার নানা চিত্র। ক্রেতার আচরণ ও কথাবার্তা বুঝে উত্তর দিচ্ছেন সেলসম্যানরা। কাউকে ফিক্সড প্রাইসের ফাঁদে ফেলাচ্ছেন। কাউকে ৫ থেকে ২০ পার্সেন্ট 'সম্মান' করছেন। এমনও দেখা গেছে, ৪০০ টাকার ট্যাগ লাগানো একটি টি-শার্ট ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার এস ফেয়ার দোকানে শামীমা নামে এক ক্রেতার শিশুদের একটি ফ্রক খুবই পছন্দ হয়েছে। বুঝতে পেরে বিক্রেতা বললেন, ফিক্সড প্রাইস। দাম কমানোর সুযোগ নেই। পোশাকগুলো থাইল্যান্ড থেকে আনা। অন্য পোশাকে কিছু কম রাখা যেতে পারে। যদিও অন্য পোশাকেও ফিক্সড প্রাইসের ট্যাগ লাগানো আছে। এক দর লেখা থাকলেও দাম কমানোর বিষয়ে জানতে চাইলে বিক্রেতা বললেন, কাস্টমাররা ফিক্সড প্রাইস লেখা পছন্দ করে। অনেকে একটু ছাড় দিলে খুশি হয়। ক্রেতাদের এমন মনোভাবের কারণেই ফিক্সড প্রাইস লেখা হয়েছে। ফিক্সড প্রাইসের ব্রাইট ফ্যাশনের আজাদ বললেন, অনেক ক্রেতা আছে যারা দামাদামি করতে চান না। এ কারণে লাভসহ বিভিন্ন পোশাকের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
সানরাইজ শপিং সেন্টারের মতো সুবাস্তু আর্কেডিয়া, জিএম প্লাজা, আলপনা প্লাজায় গিয়ে একইরকম প্রতারণা চোখে পড়ে। সুবাস্তুতে ঢুকতেই পড়ে ছেলেদের পোশাক বিক্রির দোকান ইস্টওয়ে। দোকানটিতে টি-শার্ট কিনতে এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাইফুল ইসলাম। একটি টি শার্টের দাম লেখা রয়েছে ১১৫০ টাকা। সেলসম্যান বললেন, সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ ছাড় দেওয়ার সুযোগ আছে।
বেইলি রোড : বেইলি রোডের শাড়ির দোকান সবই ফিক্সড প্রাইসের। এখানেও দামাদামি করলে একটু ছাড় মেলে। শুক্রবার বেইলি রোডে শাড়ি কিনতে যাওয়া রুবি, লাবণীসহ অনেক ক্রেতা বলেন, নিয়মিত যারা এখান থেকে শাড়ি কেনেন তারা সবাই জানেন ১০ থেকে ২০ ভাগ ছাড় পাওয়া যাবে। নতুন যারা কিনতে আসেন তারা লেখা মূল্যেই কিনতে বাধ্য হন।
বেইলি রোডে ঝলক, বধূয়া, রমণী, রুমঝুম, স্মৃতি শাড়ি কুটিরসহ প্রায় দুই ডজন শাড়ির দোকান রয়েছে। ঝলকের বিক্রেতা বলেন, তাদের দোকান ফিক্সড প্রাইসের হলেও কিছু পণ্য দামাদামি করে কেনা যায়।
এদিকে নিউ মার্কেট, গ্গ্নোব শপিং সেন্টারসহ রাজধানীর ফিক্সড প্রাইসের সিংহভাগ দোকানেই চলছে প্রতারণা। নিউ মার্কেটে ঘুরে দেখা গেছে, মেয়ে ও শিশুদের পোশাকের অনেক দোকানে ফিক্সড প্রাইসের স্টিকার লাগানো। কোয়ালিটি ফ্যাশন, বলাকাসহ কয়েকটি দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, দেদারসে দামাদামি চলছে।
বেনারসি পল্লী : মিরপুরের বেনারসি পল্লীজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেক দোকান। ফিক্সড প্রাইসের দোকান হাতে গোনা। এসব দোকানেও এক দরে শাড়ি বিক্রি হয় না। মিরপুর ১০ নম্বরের ৭ নম্বর লেনের বেনারসি কুঠিতে স্টাইলিস্ট শাড়ির দাম চাওয়া হয় ১৪ হাজার ৫০০ টাকা। পরে ৫০০ টাকা কম রাখার প্রস্তাব দেন। ঐশিতে একটি কাতান শাড়ির দাম তিন হাজার ১৫০ টাকা চাওয়া হলেও বিক্রি হয় দুই হাজার ৯০০ টাকায়। বেনারসি পল্লীর দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, এক দর লিখেও কম নেওয়ার জন্য শুধু দোকানিরাই দায়ী নন। এক দর লেখা দেখেও অনেক ক্রেতা দর করেন। কম না নিলে অন্য দোকানে চলে যান। বাধ্য হয়ে বিক্রেতারা বেশি দর লিখে রাখেন। তার প্রতিষ্ঠান দিয়া শাড়িতেও ক্রেতারা কিছুটা দাম করার সুযোগ পান।

সূত্রঃ সমকাল

(এত সম্মান কোথায় রাখি???  laughing )