Topic: ফায়ারফক্স এর গোড়ার কথা
বর্তমানের কম্পিউটারগুলো ইন্টারনেট ছাড়া যেন অচল হয়ে
পড়ে থাকে। আর এই কমিউনিকেশন মডিউলটি ব্যবহার করার জন্য রয়েছে কিছু ব্রাউজার। আর এমন কিছু বিখ্যাত ব্রাউজারের মধ্যে ইন্টারনেট বিশ্বে বহুল ব্যবহূত ব্রাউজার ‘মজিলা ফায়ারফক্স’। গতি ও নকশা একে অন্যান্য ব্রাউজার থেকে স্বতন্ত্র হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে। ২০০৪ সালে ব্যবহারকারীদের জন্য ফায়ারফক্স বাজারে ছাড়ে মজিলা। এসেই বাজার মাত করে এই ব্রাউজার। সাইবার বিশ্বচমকে দেওয়া এই ব্রাউজারটি তৈরি করেন ১৯ বছর বয়সী কম্পিউটার বিজ্ঞানী ব্লেইক রস।
ফায়ারফক্স একটি মুক্ত সোর্স ওয়েব ব্রাউজার। মজিলা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সারা বিশ্বের অনেক প্রোগ্রামারের প্রচেষ্টায় এটি তৈরি করা হয়েছে। ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কম থাকায় অনেক ব্যবহারকারী বর্তমানে ফায়ারফক্স ব্যবহার করে থাকেন। প্রাথমিকভাবে এটি মজিলা অ্যাপ্লিকেশন স্যুইট-এর অংশ হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল, কিন্তু বর্তমানে এটি মজলা ফাউন্ডেশনের প্রধান সফটওয়ারে পরিণত হয়েছে।
নভেম্বর ৯, ২০০৪ সালে ফায়ারফক্সের ১.০ সংস্করণ ছাড়া হয়। তার পূর্বেই এটি গণমাধ্যমে সমাদৃত হয় (যেমন ফোর্বস ম্যাগাজিন ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল)। ১.০ সংস্করণ ছাড়ার মাত্র ৯৯ দিনের মধ্যেই ফায়ারফক্স ২.৫ কোটি বার ডাউনলোড করা হয়, যার ফলে এটি সবচেয়ে বেশি ডাউনলোডকৃত মুক্ত সোর্স সফটওয়্যারের মর্যাদা লাভ করে। ২০০৫ সালের অক্টোবর ১৯ তারিখে ফায়ারফক্সের ১০ কোটিতম ডাউনলোড সংঘটিত হয়, যা প্রথম সংস্করণ ছাড়ার মাত্র ৩৪৪ দিন পরে। ২০০৫ সালের নভেম্বরে ২৯ তারিখে ফায়ারফক্সের ১.৫ সংস্করণ ছাড়া হয়, যা প্রথম ৩৬ ঘণ্টার মধ্যেই ২০ লাখ বার ডাউনলোড করা হয়।
ফায়ারফক্সের মধ্যে রয়েছে পপ-আপ বন্ধ করার ব্যবস্থা, ট্যাবকৃত পৃষ্ঠা প্রদর্শনের কৌশল এবং এর কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য প্রসারণ বা এক্সেটনশনের ব্যবস্থা। অন্যান্য অনেক ব্রাউজারে এসব সুবিধার কিছু কিছু গ্রহণ করা হয়েছিল, কিন্তু ফায়ারফক্সই প্রথম ব্রাউজার, যাতে সবগুলো সুবিধা যুক্ত হয়।
মাইক্রোসফটের ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার এবং অ্যাপল কম্পিউটারের সাফারি ব্রাউজারের বিকল্প হিসাবে ফায়ারফক্স মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। ২০০৬ সালের জুলাই মাসের হিসেব অনুযায়ী মোট ইন্টারনেট ও ওয়েব ব্যবহারকারীর প্রায় ১২% ফায়ারফক্স ব্যবহার করে থাকেন। এর মধ্যে ফিনল্যান্ডে এর প্রচলন সবচেয়ে বেশি (৪০%)।
ফায়ারফক্সে অন্তর্ভূক্ত সুবিধাগুলোর মধ্যে রয়েছে ট্যাবড ব্রাউজিং, বানান শুদ্ধ অনুসন্ধানকারী, ইনক্রিমেন্টাল ফাইণ্ড, লাইভ বুকমার্কিং এবং একটি উন্নত ডাউনলোড ম্যানেজার। এর তথ্য খোঁজার ব্যবস্থায় গুগলকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। ফায়ারফক্সের উন্নয়নে কর্মরত প্রকৌশলীদের মতে ফায়ারফক্স একটি ব্রাউজার তৈরি করেছেন, যা শুধুই ওয়েব সার্ফ করে এবং সর্বব্যাপী মানুষের জন্য সর্বোত্তম ওয়েব ব্রাউজিংয়ের অভিজ্ঞতা প্রদানকারী।
ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন থিম ও সুবিধাদি যোগ করে ফায়ারফক্সকে পরিবর্তিত করে নিতে পারেন। মজিলা একটি অ্যাড অন সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে যাতে ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২০০০ অ্যাড অন বা সহযোগী সফটওয়্যার ছিল।
ফায়ারফক্স ওয়েব ডেভেলপারদের জন্য একটি উপযোগী ব্যবস্থা প্রদান করে যাতে তাদেরকে তৈরি সরঞ্জামাদি প্রদান করা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ডম ইন্সপেক্টর বা এক্সটেনশন যেমন :ফায়ারবাগ।
ফায়ারফক্স বাজারে ছাড়ার আগে ‘নেটস্কেপ’ নামে আরেকটি ব্রাউজার তৈরি করে মজিলা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা বাজার ধরতে ব্যর্থ হয়। ২০০০ সালে যখন নেটস্কেপ টিকিয়ে রাখার শেষ চেষ্টা চলছে, তখন মজিলার ক্যালিফোর্নিয়ার কার্যালয়ে শিক্ষানবিশ হিসেবে যোগ দেন ফ্লোরিডার ছেলে ব্লেইক। তখন তার বয়স মাত্র ১৫। যোগদানের পর তিনি নেটস্কেপ নিয়ে কাজ শুরু করেন। ২০০২ সালে এসে ব্লেইক নেটস্কেপের ওপেন সোর্সভিত্তিক নতুন একটি সংস্করণ তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। কাজ শেষ হওয়ার পর নেটস্কেপের নাম বদলে রাখা হয় ‘ফায়ারফক্স’।
পরে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মজিলার নাম যুক্ত করে এর নাম রাখা হয় ‘মজিলা ফায়ারফক্স’। এবার কিন্তু সফল হয় মজিলা। ফায়ারফক্স বাজারে ছাড়ার মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২০ লাখবার ডাউনলোড করা হয় ব্রাউজারটি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে এর। একসময় মাইক্রোসফটের ব্রাউজার ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারকে পেছনে ফেলে শীর্ষস্থান দখল করে এটি। মজিলার প্রতিষ্ঠাতা ক্রিস হাফম্যান ব্লেইক সম্পর্কে বলেন, বর্তমান প্রযুক্তিবিশ্বে ওপেন সোর্সের জয়জয়কার। আর ওপেনসোর্সভিত্তিক সফটওয়্যারের সাফল্য কোনো প্রতিষ্ঠান নয়, ব্যক্তির মেধার ফসল। ব্লেইকও হচ্ছে এমন ব্যক্তি, যার সফল হওয়ার সব যোগ্যতাই আছে। তার পুরো নাম ব্লেক এরন রস। বর্তমানে ব্লেইক স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন।
তিনি একজন আমেরিকান সফটয়্যার ডেভেলপার হিসেবে বিখ্যাত একজন মানুষ। বিশেষ করে তার সৃষ্টি মজিলা ফায়ারফেক্সর জন্য তাকে স্মরণ করা হবে যুগ যুগ ধরে। শুধু তাই নয়, রোলিং স্টোন ম্যাগাজিনের তালিকায় তার নাম এসেছে। এ ছাড়া ২০০৫ সালের হট লিস্টে ছিলেন তিনি।
সুত্র : ইত্তেফাক