Topic: এখন কোপার সব শ্রেষ্ঠত্ব উরুগুয়ের
উরুগুয়ের ফুটবল ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার তিনি। ১৯৯৫ সালের সর্বশেষ কোপা আমেরিকা জয়েও ছিলেন অধিনায়ক। সেই এনজো ফ্রান্সেকোলির এবারের ফাইনালের আগে ভয় ছিল একটিই-উত্তরসূরিদের ফিনিশিংয়ে না গড়বড় হয়ে যায়! তাহলেই তো তীরে এসে তরী ডোবানোর শঙ্কা। সড়গড় ফিনিশিংয়ে সেই শঙ্কা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন ডিয়েগো ফোরলান-লুই সুয়ারেজরা। আর তাতেই ভেঙেচুরে খান খান প্যারাগুয়ের সব প্রতিরোধ। ৩-০ গোলে বিধ্বংসী জয়ে কোপা আমেরিকার ইতিহাস নতুন করে লিখল উরুগুয়ে। আর্জেন্টিনাকে ঠেলে দিয়ে লাতিন শ্রেষ্ঠত্বের সিংহাসনে এখন তাদের একক অধিকার। এটি যে উরুগুয়ের ১৫তম শিরোপা!
মনুমেন্টাল স্টেডিয়ামের এই আলো ঝলমল ফাইনাল কিছুটা বিবর্ণ হয়ে গিয়েছিল মাঠে গড়ানোর আগেই। কোথায় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মহারণের প্রতিশ্রুতি ছিল! সেখানে উরুগুয়ে-প্যারাগুয়ে দ্বৈরথ তো খানিকটা পানসে লাগবেই। তা লাগুক। 'লা সেলেস্তে'দের ওসব নিয়ে ভাবনার ফুরসত কই! রেফারির বাঁশি বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই যে প্রতিপক্ষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তারা। গোল পেয়ে যেতে পারত শুরুতেই। চতুর্থ মিনিটেই কর্নার থেকে ডিয়েগো লুগানোর হেড পেনাল্টি বঙ্ েহাতে লাগে প্যারাগুয়ের নেস্তর অর্তিগোজার হাতে। তবুও পেনাল্টির বাঁশি বাজাননি রেফারি। উরুগুয়ের ফুটবলারদের প্রবল প্রতিবাদেও সিদ্ধান্ত পাল্টাননি তিনি। অবশ্য গোল পেতে খুব একটা অপেক্ষাও করতে হয়নি। ১১ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে নেওয়া লুই সুয়ারেজের জোরালো শট প্যারাগুয়ের দারিও ভেরনের গায়ে থেকে দিক বদলে ফেলে। সে কী বদল, একেবারে প্যারাগুয়ের জালে হয় এর আশ্রয়!
শুরুর এই গোলে একেবারে হতভম্ব হয়ে পড়ে প্যারাগুয়ে। শুরু করে গা-জোয়ারি ফুটবল। ঢিলের জবাব পাটকেলে দিতে দ্বিধা করেনি উরুগুয়ে। ফল? ১৭ থেকে ৩০_এই ১৪ মিনিটের মধ্যে চারটি হলুদ কার্ড। তবে এত সব করেও কিন্তু ম্যাচের রাশ ছিল সেই লা সেরেস্তেদের কাছে। বিশেষত শুরুতেই গোল পেয়ে যাওয়ার পর সুয়ারেজ ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। প্যারাগুয়ে রক্ষণভাগকে নিয়ে রীতিমতো ছিনিমিনি খেলেছেন তিনি। ৩২ মিনিটে তাঁর দারুণ পাসের সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে পারেনি ফোরলান। মিনিট কয়েক পর সুয়ারেজের আরেকটি বুলেট-শট একটুর জন্য বার ঘেঁষে চলে যায় বাইরে। কিন্তু এই আক্রমণের ঢেউ কতক্ষণ সামাল দেবে প্যারাগুয়ে? ৪২ মিনিটে ঠিকই আরেক গোল খেয়ে ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে যায় তারা। এবার দারুণ ফিনিশিংয়ে টুর্নামেন্টে নিজের প্রথম গোলটি করেন ফোরলান।
প্রথমার্ধেই ২ গোলে পিছিয়ে। ফর্মুলা মেনে ড্র করে টাইব্রেকারে যেতে হলেও অন্তত ২ গোল চাই প্যারাগুয়ের। কিন্তু উরুগুয়ে যে এদিন ছিল অদম্য। তাদের রোখার সাধ্যি কী জুস্তো ভিলার ও তাঁর দলের! চেষ্টা অবশ্য কম করেনি তারা। ৫৪ মিনিটে ভালদেসের শট কাঁপিয়ে দেয় উরুগুয়ের বার। ৬২ মিনিটে আরেকটি মোক্ষম সুযোগও কাজে লাগাতে পারেনি ভালদেস। এ দুটোর কোনোটি জালে চলে গেলে হয়তো পাল্টে যেত পুরো ম্যাচের সমীকরণ। তা হয়নি। উল্টো আরো বেশ কয়েকবার প্যারাগুয়ের কফিনে শেষ পেরেক ঠোকার কাছাকাছি চলে যায় উরুগুয়ে। শেষ পর্যন্ত সেটি করে একেবারে শেষ মুহূর্তে। বিদ্যুৎগতির কাউন্টার অ্যাটাকে সুয়ারেজ-কাভানি-ফোরলানের যোগসূত্রে হয়ে যায় তৃতীয় গোল। দারুণ এক গোল করে উৎসবের যথার্থ পূর্ণতা দেন গত বিশ্বকাপের গোল্ডেন বলজয়ী ফোরলান।
এরপর রিভার প্লেটের মনুমেন্টাল স্টেডিয়াম যেন জাদুমন্ত্রবলে চলে যায় লা প্লাতা নদীর ওপাশে। শত্রুভূমকে নিজেদের সাজে সাজিয়ে উন্মাতাল আনন্দে মেতে ওঠে উরুগুয়ে। ওড়ে কনফেত্তি, ঝরে আনন্দাশ্রু। এই উৎসব শুধু একটি শিরোপার জন্য নয়, নিজেদের ফিরে পাওয়ার অহং তাতে মিশে ছিল প্রবলভাবে। দুবারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন, ১৪ বারের কোপাজয়ীরা যে অনেক দিন ধরেই খুঁজে ফিরছিল নিজেদের। উরুগুয়ের কাছে এই শিরোপার মূল্য তাই শিরোপার চেয়েও বেশি।
তবে মজার ব্যাপার কী জানেন, বছরখানেক আগে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবলেও দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে সফল দল ছিল উরুগুয়ে! ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার যেখানে বিদায়ঘণ্টা বেজে যায় কোয়ার্টার ফাইনালে, সেখানে উরুগুয়ে আরেক ধাপ বেড়ে ওঠে সেমিতে। উজ্জ্বল ইতিহাসের পথে পুনর্যাত্রার ইঙ্গিত ছিল সেখানে। সেটি আরেকটু উজ্জ্বল হলো এবারের কোপা জয়ে। কে জানে, ২০১৪ বিশ্বকাপেও না লাতিন ঝাণ্ডা ওড়ানোর দায় থাকে এই উরুগুয়েরই!