Topic: মেদ-ভুঁড়ি কী করি - ডা. এআরএম সাইফুদ্দীন একরাম
ডা. এআরএম সাইফুদ্দীন একরাম
অধ্যাপক (চলতি দায়িত্ব) ও বিভাগীয় প্রধান
মেডিসিন বিভাগ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ
মেদ-ভুঁড়ি নিয়ে আর হাসি-তামাশা করা যাচ্ছে না। আগে ভুঁড়ি সচ্ছলতা এবং আভিজাত্যের পরিচয় বহন করত। ভুঁড়িদার ব্যক্তিদের খাওয়া-দাওয়া নিয়ে কিছু রসিকতাও করা হতো। কিন্তু আজকাল ভুঁড়ি একেবারেই মানানসই নয়। তার পরও অনেকের ভুঁড়ি বড় হচ্ছে_ভুঁড়িদারের কাফেলা লম্বা হচ্ছে। এটা মোটেও সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়। পেটে প্রতি কেজি অতিরিক্ত চর্বি জমার মানে, স্বাস্থ্যের ওপর হুমকি ক্রমেই বেড়ে যাওয়া।
মহিলাদের চেয়ে পুরুষের পেটে চর্বি জমা হওয়ার প্রবণতা বেশি। কারো ওজন যা-ই হোক না কেন, পেটে অতিরিক্ত চর্বি জমা নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে; যেমন_
* হৃদরোগ
* উচ্চরক্তচাপ
* মস্তিষ্কের পক্ষাঘাত
* বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার
* ডায়াবেটিস (টাইপ-২)
* ইনসুলিনের প্রতিরোধ্যতা বেড়ে যাওয়া
* রক্তে ট্রাইগি্লসারাইড বাড়া
* কম ঘনত্বের ভালো কোলেস্টেরল কমে যাওয়া
* বিপাকজনিত সমস্যা
* ঘুমের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে যাওয়া
পেটে অতিরিক্ত চর্বি জমেছে কি না, তা কেমন করে বোঝা যাবে? সাধারণত কটিদেশ এবং কোমরের মাপ নিয়ে তার অনুপাত নির্ণয় করলে এটা বোঝা যায়। আরেকটি সহজ উপায় হচ্ছে, শরীরের ঘনত্ব সূচক (বডি মাস ইনডেঙ্ বা বিএমআই) নির্ণয় করা। তবে যে কারো কটিদেশের মাপ জানলেই আন্দাজ করা যায় তার অবস্থা কী? সাধারণত যাদের কটি ৪০ ইঞ্চির (১০২ সে. মি.) বেশি তারা বিপদের মুখে রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আরেকটি প্রশ্ন চলে আসে_বয়সের সঙ্গে কি ভুঁড়ির কোনো সম্পর্ক আছে?
বয়স বাড়ার পাশাপাশি কেউ যদি শরীরচর্চা বা ব্যায়াম না করে, তাহলে পেশি ক্ষয় হতে থাকে এবং এর ফলে শরীরের ক্যালরি খরচের পরিমাণ আরো কমে যায়। এ জন্য বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ভুঁড়ি বাড়তে থাকে।
স্থূলকায়ত্ব কিংবা অতিরিক্ত ওজনের জন্য অনেকে বংশগতি বা জিনকে দায়ী করে। তবে বংশগতি বা জিন যত না ওজন বাড়ার জন্য দায়ী, তার চেয়ে অনেক বেশি দায়ী আমাদের জীবনাচরণ বা লাইফ স্টাইল। যারা শারীরিক পরিশ্রম কম করে এবং বেশি খায়_তারাই মোটা হয়। তাদেরই ভুঁড়ি বাড়ে। অতিরিক্ত মদ্যপান, বিশেষত বিয়ার সেবন করাকেও ভুঁড়ি হওয়ার জন্য দায়ী করা হয়। অতএব যারা ভুঁড়ি কমাতে চায়, তাদের শরীরচর্চা ও পান সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে_কেমন করে ভুঁড়ি কমানো যায়?
ভুঁড়ি কমানো আর শরীরের ওজন কমানোর মূল সূত্র একই_ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ কমাতে হবে আর শারীরিক পরিশ্রমের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
ক্যালরি গ্রহণ কমানোর সহজ কোনো বুদ্ধি নেই। তবে কতকগুলো কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে_
* পাতে খাবারের পরিমাণ কম নিতে হবে
* তেল-চর্বির পরিবর্তে শাক-সবজি ও ফলমূল বেশি খেতে হবে
* ফাস্টফুড যত কম খাওয়া যায়, ততই মঙ্গল
* রেস্টুরেন্টে যত কম খাওয়া যায়, ততই মঙ্গল
* রেস্টুরেন্টে গেলে অন্যদের সঙ্গে খাবার ভাগ করে খেলে কম খাওয়া হবে।
* শারীরিক পরিশ্রম বাড়াতে হবে
* সুস্বাস্থ্যের জন্য আমাদের প্রত্যেকের প্রতি সপ্তাহে আড়াই ঘণ্টা (১৫০ মিনিট) মাঝারি মানের শারীরিক ব্যায়াম করা উচিত, অথবা ৭৫ মিনিট ভারি ব্যায়াম করা দরকার। যারা ওজন কমাতে চায়, তাদের এর চেয়ে বেশি ব্যায়াম করতে হবে এবং তা নিয়মিত চর্চা করতে হবে।
* যাদের পক্ষে একটানা বেশি সময় ব্যায়ামের ফুরসত নেই, তারা কাজের ফাঁকে ফাঁকে অল্প সময় কিংবা বারবার ব্যায়াম করতে পারে।
* নৈশ ভোজের পর অবশ্যই কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করতে হবে।
* একবার ওজন সঠিক মাত্রায় নিয়ে আসতে পারলে, তা বজায় রাখার জন্য যথাযথ খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়াম চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে।
বিশ্বাস রাখতে হবে, অতিরিক্ত মেদ-ভুঁড়ি কমানো সম্ভব। প্রয়োজন একনিষ্ঠ প্রচেষ্টা ও ধৈর্য। কয়েক কেজি অতিরিক্ত ওজন কমাতে পারলেই তা চিত্তকে প্রফুল্ল করে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি বহুলাংশে লাঘব করবে।