Topic: বিউটি বোন ভেঙে গেলে - ডা. জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন
ডা. জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন
কনসালটেন্ট-হাড়, জোড়া, ট্রমা ও আর্থোস্কোপিক সার্জারি
ডিজি ল্যাব মেডিকেল সার্ভিসেস, মিরপুর, ঢাকা
হাড়ের বাইরের অংশ ভাঙা ও বাইরের জোড়ার (কাঁধের জোড়ার কাছে) স্থানচ্যুতি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে চিকিৎসা প্রদান করতে হবে, অন্যথায় ভবিষ্যতে জটিলতার সম্মুখীন হতে হবে। কলার বোনের বাইরের অংশ ও জোড়া (অ্যাকরোমিয়ক্লাভিকুলার জয়েন্ট) বাহুকে শরীরের সঙ্গে যুক্ত করে, কাঁধের ও পিঠের জোড়ার (স্ক্যাপুলা) নড়াচড়া এবং পেশির সমন্বয়ক মুভমেন্ট নিয়ন্ত্রণ করে
শরীরের ২০৬টি হাড়ের প্রতিটিই আঘাত বা রোগে ভেঙে যেতে পারে। যে হাড়গুলো চামড়ার কাছাকাছি থাকে তাদের ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা বেশি। বুকের উপরিভাগে, গলার দুই পাশে এবং চামড়ার কাছাকাছি দুটো হাড় থাকে। এদের ক্ল্যাভিকল বা কলার বোন বলে। এদের দৃশ্যতা ও বক্রতা সৌন্দর্য বর্ধন করে বিধায় হাড় দুটিকে বিউটি বোন বলে। অন্যান্য হাড় থেকে এদের ভিন্নতা এজন্য যে, এরা কাজ ও নড়াচড়ার ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু অতি সহজেই ভেঙে যায় এবং স্থানচ্যুতি হয়। ছোটদের হাড় ফ্র্যাকচার হয় বেশি এবং বড়দের ভাঙা ও স্থানচ্যুতি দুটোই হয়। কলার বোনের দুই প্রান্তের দুটো জোড়া স্থানচ্যুতি একাকী হতে পারে বা হাড়ের যে কোন অংশ ভাঙাসহ হতে পারে। হাড়ের বাইরের অংশ ভাঙা ও বাইরের জোড়ার (কাঁধের জোড়ার কাছে) স্থানচ্যুতি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে চিকিৎসা প্রদান করতে হবে, অন্যথায় ভবিষ্যতে জটিলতার সম্মুখীন হতে হবে। কলার বোনের বাইরের অংশ ও জোড়া (অ্যাকরোমিয়ক্লাভিকুলার জয়েন্ট) বাহুকে শরীরের সঙ্গে যুক্ত করে, কাঁধের ও পিঠের জোড়ার (স্ক্যাপুলা) নড়াচড়া এবং পেশির সমন্বয়ক মুভমেন্ট নিয়ন্ত্রণ করে। সরাসরি আঘাত, কাঁধে বা হাতে পড়লে, খেলাধুলার সময় এবং যে কোন দুর্ঘটনায় কলার বোন ফ্র্যাকচার ও স্থানচ্যুতি হতে পারে। হাড়ের ফ্র্যাকচার ও স্থানচ্যুতির ফলে রোগী প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করবে, আক্রান্ত জায়গা ফুলে যায়, চামড়ার রঙ পরিবর্তন হয়, হাত নড়াচড়া করলে ব্যথা বেড়ে যায় এবং হাত দিয়ে কিছু তোলা কষ্টকর হয়। আবার রক্তনালী ও øায়ু আক্রান্ত হলে হাতে তীব্র ব্যথা ও অবশ ভাব হবে। এক্স-রে করে হাড়ের ভাঙা ও স্থানচ্যুতি সহজেই নির্ণয় করা যায়। হাড়ের মধ্যাংশ ভেঙে গেলে এবং কাছাকাছি থাকলে তিন সপ্তাহ আর্ম সিলিং ব্যবহার করলে হাড় জোড়া লেগে যায়। জোড়ার স্থানচ্যুতি অল্প হলে স্ট্রেপিং ও আর্ম সিলিং ব্যবহারে তিন সপ্তাহে রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে। কাঁধের জোড়ার স্বাভাবিক নড়াচড়া ও পেশি শক্তিশালী ব্যায়ামের মাধ্যমে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়া সম্ভব। হাড়ের ভাঙা প্রান্ত উপর ও নিচের দিকে থাকলে চামড়া, পেশি, øায়ু ও রক্তনালীকে খোঁচা মারতে পারে। কলার বোন দৈর্ঘ্যে ছোট (ওভারল্যাপিং) হয়ে জোড়া লাগলে কাঁধের ও পিঠের (স্ক্যাপুলোথোরাসিক) জোড়ায় এবং পেশি মুভমেন্টে জটিলতা দেখা দেয়। অর্থাৎ পিঠের হাড়ের (স্ক্যাপুলা) অনিয়মিত নড়াচড়া ও ব্যথা হয় এবং পেশির শক্তি কমে যায় ও অল্প কাজেই বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। কলার বোনের বাইরের অংশে ভাঙা ও বাইরের জোড়ার স্থানচ্যুতি হলে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ বা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। যথোপযুক্ত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হলে ভবিষ্যতে কাঁধের জোড়ার ও পেশির সমস্যায় ভুগতে হয়। বর্তমানে অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় কোন রকম প্লেট, স্ক্রু, তার বা রড ব্যবহার করা হয় না। শুধু শরীরের অন্য অংশ (লেগ) থেকে অতিরিক্ত টেনডন এনে নতুন লিগামেন্ট তৈরি করে হাড়ের ভাঙা অংশ এবং স্থানচ্যুতি জোড়ায় বসানো হয়। এতে লেগের কোন অসুবিধা হয় না এবং নিয়মিত ও পরিমিত পরিচর্যার (রিহেবিলিটেশন) মাধ্যমে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। সুতরাং কলার বোন ফ্র্যাকচার ও স্থানচ্যুতির উপযুক্ত চিকিৎসা নিতে এবং ভবিষ্যতে ভয়াবহ ক্ষতি হতে রক্ষা পেতে এ কাজে দক্ষ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াই শ্রেয়।