Topic: জর্দা সাদাপাতা ও গুল সেবনে গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু হতে পারে
জর্দা, সাদাপাতা, গুল ইত্যাদি সেবনে গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। ধোঁয়াহীন এসব নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবনকারী নারীদের গর্ভপাত ও মৃত সন্তান জন্ম দেওয়ার হার সাধারণ নারীদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। ঢাকা মেডিকেল কলেজের এক গবেষণা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
কলেজের শিশু বিভাগের প্রধান মো. এখলাসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গর্ভস্থ শিশুর ওপর সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী নানা গবেষণা হয়েছে। কিন্তু গর্ভস্থ ও নবজাত শিশুর ওপর ধোঁয়াহীন তামাকের প্রভাব সম্পর্কে এই প্রথম একটি গবেষণা হলো। আমরা নিশ্চিত পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে কোনো মা ধোঁয়াহীন তামাক গ্রহণ করলে গর্ভস্থ শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিশু মারা যেতে পারে অথবা সে কম ওজন নিয়ে বা সময়ের আগে ভূমিষ্ঠ হতে পারে।’
উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী প্রাপ্তবয়স্কদের ধূমপানবিষয়ক জরিপে (গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে, ২০০৯) দেখা গেছে, বাংলাদেশে ৪৫ শতাংশ পুরুষ ও ১ দশমিক ৫ শতাংশ নারী ধূমপান করেন। কিন্তু জর্দা, সাদাপাতা ও গুল ব্যবহারে নারীরা এগিয়ে আছেন। মোট ২৬ শতাংশ পুরুষ ও ২৮ শতাংশ নারী ধোঁয়াহীন তামাক গ্রহণ করে থাকেন।
বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অসংক্রামক ব্যাধি বিভাগের প্রধান মোস্তফা জামান বলেন, বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে নারীদের এসব নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন কোনো দোষ বলে গণ্য হয় না। বরং কয়েক বছর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) একটি অপ্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, মেয়েরা প্রথম ধোঁয়াহীন তামাক গ্রহণ করতে শুরু করে গর্ভধারণের সময় থেকে।
কী আছে গবেষণায়: দীর্ঘ মেয়াদে ধোঁয়াহীন তামাক গ্রহণের সঙ্গে গর্ভস্থ ও নবজাত শিশুর সম্পর্কবিষয়ক গবেষণাটি চালানো হয় ২০-৪০ বছর বয়সী ৩৪০ জোড়া মা ও শিশুর (২৪ ঘণ্টার কম বয়সী) ওপর। এঁদের মধ্যে ১৭০ জন মা গড়ে প্রায় সাড়ে সাত বছর ধোঁয়াহীন তামাক গ্রহণ করেছেন, অন্যরা কোনো রকম তামাক কখনো গ্রহণ করেননি। এই মায়েরা ঢাকা মেডিকেল কলেজের স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগে ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সন্তান জন্ম দিয়েছেন।
দেখা গেছে, জর্দা, সাদাপাতা বা গুল ব্যবহার করেন এমন ১৭০ জন নারীর মধ্যে ৫৮ জনের গর্ভপাত ও ৬০ জনের মৃত শিশু ভূমিষ্ঠ হয়। অপর দলের ১৭০ জনের মধ্যে ১৮ জনের গর্ভপাত ও ৩৫ জনের মৃত শিশু জন্মায়।
এ ছাড়া ধোঁয়াহীন তামাকসেবী মায়েদের সময়ের আগে সন্তান জন্ম দেওয়ার হার ২ দশমিক ৯ গুণ এবং স্বল্প ওজনের সন্তান জন্ম দেওয়ার হার ৩ দশমিক ৩ গুণ বেশি।
গবেষণায় দেখা যায়, জর্দা, সাদাপাতা ও গুল সেবনকারী মায়ের ৭৫ জনের সময়ের আগেই এবং ১০৫ জনের কম ওজনের শিশু জন্মেছে।
ওই গবেষণাটি বলছে, নিকোটিন খেলে রক্তনালি সংকুচিত হয়ে জরায়ুতে রক্ত সরবরাহ কমে যায়। এতে গর্ভস্থ শিশু ধারাবাহিকভাবে কম অক্সিজেন পায়। ফলে শিশুর মৃত্যুও হতে পারে। আর ধোঁয়াহীন তামাকে সিগারেটের তুলনায় নিকোটিন ও ক্যানসার সৃষ্টিতে দায়ী উপাদান বেশি থাকে। এক মাত্রার সিগারেটে নিকোটিনের মাত্রা এক মিলিগ্রাম। কিন্তু এক মাত্রার ধোঁয়াহীন তামাকে নিকোটিনের মাত্রা ৪ দশমিক ৫ মিলিগ্রাম।
শিশু মৃত্যুর হার কমলেও বাংলাদেশে এখনো নবজাতক মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন এ গবেষণার তথ্য সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকেরা।
বাংলাদেশের বাজারে অনেক ব্র্যান্ডের জর্দা বাহারি কৌটায় বিক্রি হচ্ছে। এসব কৌটায় বিএসটিআইয়ের সিল ব্যবহার হচ্ছে এবং মানুষকে জর্দা কেনায় আগ্রহী করতে কৌটার গায়ে রাজকীয় সব ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে।
তামাকবিরোধী সংগঠন ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশের সমন্বয়ক আমিনুল ইসলাম বলেন, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনে ধোঁয়াহীন তামাক উৎপাদন ও বিপণনের ক্ষেত্রে কোনো শাস্তির বিধান রাখা হয়নি। ফলে কখনোই জর্দা, সাদাপাতা ও গুলের প্রসার বন্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি।