Topic: শার্লকিয়ান রূপকথা

ওয়াটসন কেমন করে কায়দা-কানুন শিখল

আর্থার কোনান ডয়েল
রূপান্তর : আহমেদ রিয়াজ


http://www.dailykalerkantho.com/admin/news_images/527/image_527_155366.jpg

তখন তাঁরা নাশতার টেবিলে। গভীর মনোযোগ দিয়ে সঙ্গীকে দেখছিলেন ওয়াটসন। মাথা তুলে ওয়াটসনের দিকে তাকালেন হোমস। তখনই খেয়াল করলেন, ওয়াটসন তাঁকে মুখস্থ করছেন যেন। জানতে চাইলেন হোমস, কী এত চিন্তা করছ ওয়াটসন?
ওয়াটসন বললেন, তোমাকে নিয়েই ভাবছিলাম।
হোমস অবাক, আমাকে নিয়ে!
ওয়াটসন বললেন, কেন, তোমাকে নিয়ে ভাবতে নেই নাকি? সবাই তো ভাবে। ভাবছিলাম, তোমার চিন্তা করার কায়দা খুবই সাদামাটা_খুব একটা গভীরতা নেই। অথচ এটা নিয়েই মানুষজনের আগ্রহের কমতি নেই।
হোমস বললেন, একেবারেই খাঁটি কথা। যদ্দুর মনে পড়ে, আমিও একবার এ কথাটাই বলেছিলাম।
খানিকটা তাচ্ছিল্যের সুরে ওয়াটসন বললেন, তোমার কৌশলগুলো খুব সহজেই ধরে ফেলা যায়।
সামান্য হেসে হোমস বললেন, একেবারে হক কথা। আমি কিভাবে চিন্তা করি, তেমন উদাহরণ তো তুমিও দিতে পারবে। পারবে না?
ওয়াটসন হেসে বললেন, পারব। আজ সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কিছু একটা নিয়ে খুব ভাবনায় পড়ে গিয়েছ তুমি। সেই কিছু একটা যে কী, আমি বলতে পারব।
হোমস খুশি হয়ে বললেন, দারুণ! তা সেই কিছু একটা তুমি কেমন করে বুঝলে?
ওয়াটসন বললেন, তুমি সব সময় খুব ফিটফাট থাকো। তবে আজ সকালে দাড়ি কামাতে ভুলে গেছ।
হোমস বললেন, ওহ্, কী পর্যবেক্ষণ! কী বুদ্ধি! তুমি যে এত যোগ্য শিষ্য আমার, ধারণাও ছিল না। তোমার শিকারি চোখ দুটো কি আর কিছু খুঁজে পেয়েছে?
আত্মবিশ্বাসের সুরে ওয়াটসন বললেন, হ্যাঁ হোমস। বারলো নামে তোমার এক মক্কেল আছে। আর ওই মক্কেলের সমস্যার সমাধান করতে পারোনি তুমি।
হোমস জানতে চাইলেন, প্রিয় ওয়াটসন, দয়া করে বলবে কি কিভাবে তুমি এটা বুঝতে পারলে?
ওয়াটসন বললেন, খামের ওপর তার নাম দেখেছি। খামটা খোলার সময় তোমার গলা দিয়ে হতাশা আর বিরক্তি বেরিয়ে এসেছিল। আর পকেটে রাখার সময় তোমার চোখ জোড়া কুঁচকে গিয়েছিল।
খুশির চোটে প্রায় লাফিয়ে উঠলেন হোমস, অসাধারণ ওয়াটসন! তোমার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা সত্যিই মনে রাখার মতো। আর কোনো যুক্তি?
ওয়াটসন বললেন, আমার আশঙ্কা, তুমি শেয়ার ব্যবসায় নেমেছ।
হোমস জানতে চাইলেন, কেমন করে বুঝলে?
ওয়াটসন বললেন, তুমি পত্রিকা হাতে নিয়ে প্রথমেই শেয়ারবাজারের পাতাটা খুলে বসলে। তারপর তোমার মুখ থেকে উচ্ছ্বাসধ্বনি বেরোলো।
হোমস বললেন, বেশ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিচ্ছ ওয়াটসন। আর কিছু?
ওয়াটসন বললেন, আরো আছে হোমস। ঘরে পরার পোশাক না পরে, কালো কোটটা পরে রয়েছ। তার মানে তুমি নামিদামি কারোর জন্য অপেক্ষা করছ।
আবারও জানতে চাইলেন হোমস, আর কিছু?
ওয়াটসন বললেন, আরো অনেক কিছু খুঁজে বার করতে পারতাম। তবে হোমস, আমি অল্প কিছুই বের করেছি। আর তোমাকে দেখিয়ে দিয়েছি, তোমার মতো চালাক মানুষও দুনিয়ায় আছে।
হোমস বললেন, তবে তাদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। প্রিয় ওয়াটসন, আমি উদ্বিগ্ন যে তুমি এদের মধ্যে নেই।
ওয়াটসন জানতে চাইলেন, তুমি কী বোঝাতে চাইছ হোমস?
হোমস বললেন, আমি যে রকম আশা করেছিলাম, তোমার অনুমানশক্তি আমাকে সেভাবে খুশি করতে পারেনি।
ওয়াটসন অবাক, তুমি বলতে চাইছ আমার পর্যবেক্ষণ ভুল?
হোমস বললেন, অনেকটাই। এবার পর পর বলছি_আমি দাড়ি কামাতে পারিনি। কারণ ক্ষুরটা ধার দিতে পাঠিয়েছি। আর ভাগ্যটা খারাপ দেখেই কোট পরেছি। ভাগ্য কেন খারাপ? সকাল সকাল দাঁতের ডাক্তারের কাছে যেতে হচ্ছে বলে। ডাক্তারের নাম বারলো। এই চিঠিটা তাঁর সঙ্গে আমার সাক্ষাতের কথাটা মনে করিয়ে দিল। শেয়ারবাজারের পাশের পাতাটাই হলো ক্রিকেটের পাতা। কেন্ট দলের বিপক্ষে সারে দল কেমন করল সেটাই দেখছিলাম। যাই হোক চালিয়ে যাও ওয়াটসন। চিন্তাভাবনা করার কৌশলটা যদিও খুবই সাদামাটা, তবে কোনো না কোনো সময় তুমি এটা রপ্ত করতে পারবে_কোনোই সন্দেহ নেই।
হোমস আর ওয়াটসনের এই রূপকথা লেখা হয়েছিল রানি মেরির জন্য। রানি মেরি ছিলেন ইংল্যান্ডের রাজা পঞ্চম জর্জের স্ত্রী। ১৯২৩ সালে কুইনস ডলস হাউস প্রতিষ্ঠা করেন রানি মেরি। তখন বেশ কিছু নামকরা লেখক ডলস হাউসের লাইব্রেরির জন্য খুদে আকারের বই তৈরি করেন। গল্পটি ছিল হাতে লেখা, ডাকটিকিট আকারের একটি বই। পরে দ্য বুক অব কুইনস ডলস হাউস নামের বইতে প্রকাশিত হয়।
সুত্রঃ কালেরকন্ঠ

মেডিকেল বই এর সমস্ত সংগ্রহ - এখানে দেখুন
Medical Guideline Books