Topic: বেকার স্ট্রিটের গোয়েন্দা
ডাক্তার হিসেবে হাতযশ ছিল না বেচারার। কালেভদ্রে দু'-একজন রোগী ধরনা দিত। দিনের বেশির ভাগ সময় কাটত কড়িকাঠ গুনে। মাথায় ঘুরপাক খেত উদ্ভট সব ভাবনা। রহস্য বুনে বুনে গোয়েন্দাগিরিতে লেগে যেতেন। ভাবনাতেই রোমাঞ্চিত হতেন। সময় কাটানোর জন্য সেগুলো লিখেও রাখতে লাগলেন। একটা গল্প লেখার পর পড়ে দেখলেন, মন্দ হয়নি! 'বিটনস ক্রিসমাস অ্যানুয়ালে' পাঠানোর পর ছাপা হয়ে গেল। প্রশংসাও পেল অনেক। এর পর থেকে কোনান ডয়েল পুরোদস্তুর লেখক বনে গেলেন। জন্ম হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র শার্লক হোমসের।
কিন্তু শার্লক হোমস নামে আসলে কি কেউ ছিলেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোসেফ বেলের আদলে হোমসকে গড়ে নিয়েছিলেন ডয়েল। স্কটিশ এই ভদ্রলোক ছিলেন ফরেনসিকের অধ্যাপক। অপরাধ শনাক্ত করার জন্য সব সময় গভীর পর্যবেক্ষণের ওপর জোর দিতেন। অচেনা কোনো আগন্তুককে প্রায়ই উদাহরণ হিসেবে টেনে নিতেন। অন্তর্ভেদী দৃষ্টি দিয়ে দেখে লোকটির পেশা, অবস্থান, কাজ-কারবার বলে দিতেন অবলীলায়। অধ্যাপক বেলের এ গুণ নিজের গোয়েন্দা চরিত্রে যোগ করেছিলেন ডয়েল। এমনিতে হোমস ছিলেন উদাসীন প্রকৃতির। জটিল কোনো রহস্য সমাধান করতে না পারলে নাওয়া-খাওয়া ভুলে যেতেন। ঘরময় পায়চারি করে বেড়াতেন আর ঠোঁটে ঝুলিয়ে রাখতেন পাইপ। যেকোনো ছদ্মবেশ নেওয়ার অস্বাভাবিক দক্ষতা ছিল। পরবর্তী সময়ে কিছু আঁকা ছবিতে চুরুট ঠোঁটে, গোল টুপি পরা হোমসকে দেখা গেছে বারবার। এগুলো পরিণত হয়েছে হোমসের ট্রেডমার্কে।
শার্লক হোমস থাকতেন লন্ডনের ২২১বি বেকার স্ট্রিটে। এখানে বসেই তিনি কিনারা করেছেন দুর্দান্ত সব রহস্যের। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ডাক্তার বন্ধু জন ওয়াটসন। গোয়েন্দাগিরিতে ওয়াটসন ছিলেন হোমসের ডান হাত। কোনান ডয়েলের গল্প লেখার একটি বিশেষ ধরন ছিল। চারটি বাদে হোমসের সব কাহিনী তিনি লিখেছিলেন ওয়াটসনের বর্ণনায়। সব মিলিয়ে ৫৬টি ছোটগল্প ও চারটি উপন্যাস লেখা হয়েছে হোমসকে ঘিরে।
হোমসের জাদুঘর
আসলে শার্লক হোমস নামে কোনো গোয়েন্দা ছিলেন? না। কিন্তু ভক্তরা যে তা মানতে চান না। শার্লক হোমস নামে বাস্তবে একজন গোয়েন্দা ছিলেন, এটা ভাবতে তাঁরা ভালোবাসেন। সেই ভাবনা থেকেই জন্ম নেয় শার্লক হোমস জাদুঘর। ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই জাদুঘরের ব্যাপারে প্রবল আপত্তি কোনান ডয়েলের পরিবার।
তবু ২২১বি বেকার স্ট্রিটে 'দ্য জর্জিয়ান টাউন হাউস' নামের দালানটি এখন শার্লক হোমস জাদুঘর। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান 'শার্লক হোমস ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি' পরিচালনা করে জাদুঘরটি। দুনিয়ার জনপ্রিয় জাদুঘরগুলোর একটি লন্ডনের এই জাদুঘর। হবে না, দুনিয়ার সেরা গোয়েন্দার জাদুঘর বলে কথা। হোক না তা কল্পনার।
হোমসের টুকিটাকি
পুরো নাম
উইলিয়াম শার্লক স্কট হোমস।
জন্ম
'হিজ লাস্ট বাও' গল্প অনুসারে হোমসের জন্ম ১৮৫৪ সালের কাছাকাছি। আর জন্ম তারিখ ৬ জানুয়ারি।
ঠিকানা
ভাড়া থাকেন লন্ডনের এক বাড়িতে। বাড়ির ঠিকানা : ২২১বি বেকার স্ট্রিট।
আত্মীয়স্বজন
বাবা সাইগার হোমস আর মা ভায়োলেট শেরিন ফোর্ড। হোমসের এক বড় ভাইয়ের কথা জানা যায়। নাম মাইক্রফট হোমস। সরকারি কর্মকর্তা। তিনটি গল্পে হাজির হয়েছেন মাইক্রফট। আর একটি গল্পে তাঁর নাম উল্লেখ আছে।
দক্ষতা
ভালো মুষ্টিযোদ্ধা এবং তরবারি খেলায় তুখোড়। ব্রিটিশ আইনকানুন সম্পর্কে ব্যাপক জানাশোনা।
প্রথম কাহিনী
শার্লক হোমসকে নিয়ে প্রথম কাহিনী প্রকাশিত হয় ১৮৮৭ সালে। এটি ছিল উপন্যাস। নাম 'দ্য টেংলেড স্কিন'। শার্লকের বয়স তখন ৩৩ বছর। নায়কের নাম শেরিনফোর্ড হোমস। নামটা পছন্দ না হওয়ায় পরে রাখেন শার্লক হোমস। উপন্যাসের নামটাও বদলে দেন_'অ্যা স্টাডি ইন স্কারলেট'।
জনপ্রিয়তা
১৮৯১ সালে দ্য স্ট্র্যান্ড ম্যাগাজিনে ছোটগল্পের সিরিজটি প্রকাশিত হতে থাকে। আর তখন থেকেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেতে থাকে গোয়েন্দা হোমস।
কাহিনীর সময়কাল
হোমসের গোয়েন্দাগিরির সময়কাল ১৮৭৮ থেকে ১৯০৩ সাল পর্যন্ত। তবে সর্বশেষ মামলাটি নেওয়া হয় ১৯১৪ সালে।
চলচ্চিত্র
শার্লক হোমসকে নিয়ে এ পর্যন্ত তৈরি হয়েছে ২৬০টির বেশি চলচ্চিত্র।
চলি্লশ বছরেরও বেশি
প্রথম দিকে যেসব পত্রিকায় হোমসের গল্প ছাপা হয়, দ্য স্ট্র্যান্ড সেগুলোর একটি। প্রায় ৪০ বছর ধরে নিয়মিত হোমসের উপন্যাস ও গল্প ছাপা হয় ওই পত্রিকায়।
হোমসের কাহিনী
হোমসকে নিয়ে লেখা হয় চারটি উপন্যাস ও ৫৬টি গল্প। মোট ৬০টি কাহিনী। এর মধ্যে ৫৬টি কাহিনী হোমসের বন্ধু ওয়াটসনের জবানিতে লেখা। দুটি গল্প হোমসের নিজের জবানিতে লেখা। গল্প দুটি হচ্ছে দ্য ব্লাঞ্চেড সোলজার্স ও দ্য লায়নস মেন। অন্য দুটি কাহিনী তৃতীয় পুরুষে লেখা। গল্প দুটি হচ্ছে দ্য মাসগ্রেভ রিচুয়াল ও দ্য গ্লোরিয়া স্কট।
হোমসের মৃত্যু
১৮৯৩ সালে সুইজারল্যান্ডের রেইচেনবাক গিরিখাতে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে মারা গেলেন হোমস। ফাইনাল প্রবলেম নামের গল্পে। কিন্তু হোমসের মৃত্যু মেনে নিল না তার অগণিত ভক্ত। মুহূর্তে ফুঁসে উঠল সবাই। হোমসকে ফিরিয়ে আনার জন্য শত অনুরোধ আসতে লাগল। অবশেষে ১৯০১ সালে 'দ্য হাউন্ড অব দ্য বাস্কারভিলস' উপন্যাসে ফিরে এল শার্লক হোমস।
চিঠি
শার্লক হোমসের অন্তর্ধান হয়েছে প্রায় ১০০ বছর। অথচ এখনো অগণিত ভক্ত নিজেদের সমস্যার কথা জানিয়ে চিঠি লেখেন শার্লক হোমসের কাছে। ঠিকানা তো সবারই জানা_২২১বি বেকার স্ট্রিট, লন্ডন। সপ্তাহে গড়ে ৪০টি চিঠি আসে। মজার বিষয় হচ্ছে, হোমসের হয়ে সেই চিঠিগুলোর উত্তরও দেওয়া হয়।
সুত্রঃ কালেরকন্ঠ
Medical Guideline Books