Topic: মেদ ভুঁড়ি, কি করি? - ডা. এআরএম সাইফুদ্দীন একরাম
লেখক : ডা. এআরএম সাইফুদ্দিন একরাম
এফসিপিএস (মেডিসিন), এফএসিপি, পিএইচডি, এফআরসিপি (এডিন)
অধ্যাপক (চলতি দায়িত্ব) ও বিভাগীয় প্রধান,
মেডিসিন বিভাগ, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ, রাজশাহী।
মেদ ভুঁড়ি, কি করি?
মাঝে মাঝে পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখা যায়, 'মেদ ভুঁড়ি, কি করি?' এসব বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে মেদ ভুঁড়িওয়ালা লোকজন কি করছেন তা সঠিক জানা না গেলেও সম্প্রতি মেদ ভুঁড়ি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইংল্যান্ডে বেশ মজার এক গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণার ফলাফলে বলা হচ্ছে, মাছ বয়সী আমেরিকানদের ভুঁড়িতে ইংরেজদের চেয়ে বেশি মেদ-চর্বি জমা হয়েছে। বলা বাহুল্য, ইংরেজদের চেয়ে মার্কিনীদের মধ্যে ডায়াবেটিসের প্রকোপ তুলনামূলক বেশি এবং এর কারণ হিসেবে মার্কিনিদের ভুঁড়িতে অতিরিক্ত মেদ-চর্বি জমা হওয়াকেই গবেষকরা দায়ী করেছেন। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন এবং র্যান্ড করপোরেশনের গবেষকরা ২০০৬ সালে প্রায় সমতুল্য মাঝ বয়সী মার্কিন নাগরিক এবং ইংরেজদের ওপর এ গবেষণা পরিচালনা করেন। ফলাফলে দেখা যায়, ইংল্যান্ডের চেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডায়াবেটিসের হার দ্বিগুণ। মার্কিনীরা ইংরেজদের তুলনায় বরাবরই স্থূলকায়; কিন্তু ডায়াবেটিসের হার কেন এত বেশি তার সঠিক ব্যাখ্যা মিলছিল না। এখন গবেষকরা বলছেন, মার্কিনিদের, বিশেষত মহিলাদের ভুঁড়িতে অতিরিক্ত মেদ জমার হওয়ার কারণেই এ বিপত্তি হয়েছে। গড়পড়তা একজন মার্কিন রমণীর কোমরের মাপ সমবয়সী ইংরেজ মহিলাদের চেয়ে কমপক্ষে ৫ সেন্টিমিটার বেশি। আর মার্কিন পুরুষদের কোমর ইংরেজদের চেয়ে ৩ সেন্টিমিটার বেশি। এমনকি যেসব মার্কিনির ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি নয়, তাদের কোমরের মাপও ইংরেজদের তুলনায় বেশি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইংল্যান্ডের ৫২ থেকে ৮৫ বছর বয়সের নাগরিকদের ওপর এ গবেষণা পরিচালিত হয়। ডায়াবেটিসের অন্যান্য যেসব ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান রয়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রে এ দু'দেশের নাগরিকের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য দেখা যায়নি। এমনকি প্রতি চারজন স্বাভাবিক ওজনবিশিষ্ট মার্কিন নাগরিকের অন্তত একজনের ভুঁড়িতে সঞ্চিত মেদের পরিমাণ এত বেশি যে তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার অতিরিক্ত ঝুঁকি রয়েছে। ইংরেজদের ক্ষেত্রে এ হার ১০ শতাংশ। এতদিন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি নির্ধারণের জন্য বিএমআই (Body mass index)কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হতো। কিন্তু এখন মনে করা হচ্ছে, যার কোমরের মাপ যত বড় এবং ভুঁড়িতে সঞ্চিত চর্বির পরিমাণ যতবেশি, তার ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি তত বেশি? কিন্তু সবার মনেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ইংরেজদের চেয়ে মার্কিনিদের ভুঁড়িতে কেন অতিরিক্ত মেদ জমলো? এর ব্যাখ্যা এখনো মিলছে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে খাদ্যাভাস এবং ব্যায়ামের বিশেষ ভূমিকা থাকতে পারে। বেশি চর্বিযুক্ত খাবার খেলে এবং শারীরিক পরিশ্রম কম করলে পেটে চর্বি জমে। গবেষকদের ধারণা, পেটে অতিরিক্ত চর্বি জমা অত্যন্ত বিপজ্জনক। কারণ এ কারণে অগ্নাশয় থেকে ইনসুলিন নিঃসরণ বাধাগ্রস্ত এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের কাজ বিঘি্নত হয়। ইনসুলিন সঠিক মাত্রায় নিঃসরিত হলে এবং যথাযথ কাজ করতে পারলে রক্তের অতিরিক্ত গ্লুকোজ যকৃতে সঞ্চয় করে রাখে। কিন্তু পেটে বেশি চর্বি থাকলে এ কাজটি ঠিকমতো সম্পন্ন হয় না। ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ক্রমাগত বাড়তে থকে। অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করলে চর্বি গলে শক্তি উৎপন্ন হয়। ফলে গ্লুকোজের মাত্রা আবার স্বাভাবিক হওয়ার সুযোগ পায়। অতএব এ গবেষণার ফলাফলের প্রধান বার্তা হচ্ছে_ মেদ ভুঁড়ি কমাতে হবে। অর্থাৎ সুষম স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, কম ক্যালরি গ্রহণ, প্রচুর শারীরিক পরিশ্রম এবং ব্যায়াম করতে হবে।