Topic: কসাই ডাক্তার জামাল কাহিনী
কসাই ডাক্তার জামাল কাহিনী
গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার অচিমত্মপুর ইউনিয়নের চড়াকোনা গ্রামের জনৈক এমবিবিএস ডাক্তারের বাবুর্চি, নামধারী পলস্নী চিকিৎসক জামালের ভুল চিকিৎসায় আবারো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এবার অকালে প্রাণ হারালেন কৃষক আবুল মুনসুর (৪৫)। জানা গেছে, মুনসুর পায়ে টিউমার নিয়ে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন সর্বরোগের বিশেষজ্ঞ পলস্নী চিকিৎসক জামালের কাছে। মাত্র তিনশ টাকার চুক্তিতে বেস্নড দিয়ে কেটে ও কাঁথা সেলাইয়ের সুই দিয়ে সেলাই কাজ সেরে মুনসুরের পায়ের টিউমার অপসারণ করেন কথিত কসাই ডাক্তার জামাল। এরপর থেকেই মুনসুরের চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। বেঁচে থেকেও মূর্তিতে পরিণত হয়ে পড়েন মুনসুর । তাকে ময়মনসিংহের ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রায় ১৯ দিন চিকিৎসার পরও মুনসুরকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। ১৩ এপ্রিল সকালে তিনি মারা যান। জামাল ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিতে এসে এ রকম প্রাণ হারানোর সংখ্যা দিন দিনই বাড়ছে। মানুষ থেকে শুরম্ন করে গরম্ন-ছাগল, হাঁস-মুরগির চিকিৎসক জামালের বিরম্নদ্ধে ১৯৯১ সাল থেকে এ যাবত শিশু, প্রসূতি, বৃদ্ধ মিলিয়ে প্রায় ৩০ জন মানুষ ও শত শত হাস-মুরগি, ছাগল, গরম্নসহ গৃহপালিত প্রাণীকে চিকিৎসার নামে হত্যা করার অভিযোগ রয়েছে। এ ত্রে কসাই জামালের শিকার বেশির ভাগ লোক হতদরিদ্র হওয়ায় জামাল ডাক্তার টাকার জোরে এসব মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপায় বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি চিকিৎসার নামে এলাকার গরিব মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা কামিয়ে ডাক্তারের বাবুর্চি থেকে বর্তমানে সে এক ধনাঢ্য ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লোকজনের অভিযোগ, জামাল ডাক্তারের কাছে যে কোনো রোগী এলে বা যে কোনো রোগীর বাড়িতে গেলে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই প্রথমে সেই রোগীর শরীরে পুরনো স্যালাইনের ব্যাগে পানি ভরে নিজের তৈরি করা পুশিং স্যালাইন ও একটি ডিসটিল ওয়াটারের ইনজেকশন নামক ওষুধ পুশ করে থাকে। পরে সে এর মূল্যবাবদ রোগীর লোকজনের কাছ থেকে এক থেকে দুই হাজার টাকা বা আরো বেশি টাকা বাধ্যতামূলক আদায় করে থাকেন। তাছাড়া জবর বা ব্যথানাশের জন্য প্যারাসিটামল বড়ির গুঁড়ো দিয়ে তৈরি করা একটি পুরিয়া সে বিক্রি করে ২০ থেকে ত্রিশ টাকায়। এ ছাড়া অন্য গোপন রোগের ওষুধ দিয়ে গ্রামের সহজ-সরল মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা তার নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর সার্জারির ক্ষেত্রে তার কাছে কোনো বাছ-বিছার নেই। বড় বড় সার্জন যে অপারেশন করতে ভয় পায় টাকা পেলে সে সব অপারেশন সে সাধারণ বেস্নড-কাঁচি আর লেপ-কাঁথার সুই দিয়ে অনায়াসে করে ফেলে। এ অপারেশনে রোগী বাঁচলো বা মরলো তার ধার সে ধারে না। ফলে এলাকায় জামালের নাম হয়েছে কসাই ডাক্তার। তার চিকিৎসা বিভ্রাটে মানুষ বা পশু মারা গেলেই সে বাসা ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরিস্থিতি ঠা-া হলে আবার সে ফিরে আসে। এভাবেই মানুষ মেরে ও প্রতারিত করে বছরের পর বছর চলছে স্বঘোষিত পলস্নী সার্জন জামাল ডাক্তারের চিকিৎসা ব্যবসা। এলাকার লোকজন সম্মিলিতভাবে জামালের অপচিকিৎসা বন্ধ করতে চেষ্টা চালিযেও ব্যর্থ হয়েছেন।
সূত্র: এখানে