Topic: শুক্রবারের একটি দুপুর।
লাঞ্চের পর হেলতে দুলতে অফিসে প্রবেশ করলাম। আজ একটু তাড়াতাড়ি চলে এসেছি। অফিসে এসেই দেখি কেউ নেই। নেটে বসে দেখি আমাদের ভবঘুরে ভাই অনলাইনে। করলাম নক-
কিতা খবর ভাইজান?
নক করবার সাথে সাথে উত্তর- জানোয়ারের বাচ্চাটার কাজ দেখছেন?
আমি অবাক হলাম। কথা নাই বার্তা নাই। ডাইরেক্ট একশান। তাও আবার অশ্লিন ভাষায়। থতমত খেয়ে বললাম- কে ভাই আপনি?
ফাইজলামি করবেন না। আপনি দেখছেন কি করছে…..বাচ্চায় (এটা আরো অশালিন)।
আমি আমতা আমতা করে বললাম- না ভাই দেখি নাই।
ভবঘুরে ভাই চ্যাটিং এর মাঝেই হুংকার ছাড়লেন- সারাদিন অনলাইনে কি করেন? এইসব দেখেন না?
আমি টাসকায়িত হলাম (টাসকি + আশ্চায্য=টাসকায়িত)। উনার কথা শুনে মনে হলো…..বাচ্চারা কি করে দেখি নাই বলে বিরাট অন্যায় করে ফেলেছি। সবসময়ই এগুলো দেখা আমার উচিত। আমি আমতা আমতা করে বললাম- ভাই…..বাচ্চাদের সাথে তো আমার কোন সম্পর্ক নাই। দেখুম কি করে?
ভবঘুরে ভাই আবারো হুংকার ছাড়লেন- মিয়া ……বাচ্চাদের সাথে কি তাহলে আমার সম্পর্ক আছে? আমি তো দেখেছি….বাচ্চারা কি করছে। সবে মাত্র নামায পরে আসলাম।
আমি আবারো বললাম- আপনার সাথে সম্পর্ক আছে কিনা তাতো আমি জানি না। তবে আমার সাথে যে সম্পর্ক নাই এটাতে আমি ১০০% শিউর। বলেন দেখি কি হইছে?
ভবঘুরে ভাইয়ের কি হইছে বলবার আগেই হুট করে চ্যাটিং এ ইলিয়াস ভাই প্রজন্মের লিংক ধরিয়ে দিলো। লিংকে ক্লিক করে ঢুকেই তো আমার চক্ষু চরক গাছ। বিনা পারমিশনে বিনা নোটিশে প্রকাশ্য ফোরামে জনমদিনের ড্রেস পরিধান করে ছেলে মেয়েদের এগুলো কি চলছে? লজ্জায় কালো মানুষ লাল হয়ে গেলাম। ভাগ্যিস ভালো অফিসে তাড়াতাড়ি এসেছিলাম। না হলে তো চারপাশে লোকজন থাকতো। সেদিন থেকেই বুঝলাম অফিসে তাড়াতাড়ি আসাই ভালো। সাথে সাথে রিপোর্ট করলাম।
একটু ঘুরাফেরা করেই দেখতে পেলাম মরা তালা (ডেড লক) ভাই টপিক খুলেছেন- মডুরা সব কই?
তালা ভাইয়ের টপিক দেখে বুঝতে পারলাম পানি অনেক দূর গড়িয়েছে। ইলিয়াস ভাইকে কঠিন করে ধমক দিলাম- মিয়া কি পাইছো তুমি? আমি তোমাকে দুই নিম্বর আব্বাজান বলে মাঝে মাঝেই ডাকি বলে তুমি দুই নম্বরী লিংক ধরিয়ে দিবা? এটা তো উচিত না? তোমার লজ্জা করে নাই?
আজকে কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠেছিলাম কে জানে। দুপুর থেকেই ঝাড়ি খাচ্ছি। এতোক্ষন ভবঘুরে ভাই ঝাড়ছেন এবার ইলিয়াস ভাই। কঠিন ভাবে বললো- পলাশ ফাইজলামি করবার না। তুমি সারাদিন নেটে থাকো? এগুলো একটু দেখাশোনা করতে পারো না? সারাদিন নেটে কি করো?
আমি আমারো টেনশনে পরে গেলাম। বারবার মনে হতে ছিলো বিরাট অন্যায় করে ফেলেছি। এগুলো সব সময় দেখা আমার উচিত। না দেখে অন্যায়ই করেছি।
যাই হোক ঐ দিন একটা ঝড় গিয়েছিলো রংমহল এবং প্রজন্ম ফোরামের উপর দিয়ে। প্রথমে খারাপ লেগেছিলো- এমন মনমানসিকতার মানুষ দেখে। বড়ই আশ্চায্য হয়েছিলাম। মনে মনে বললাম- কি করে পারলো। মনুষত্ব বলে কি কিছুই নাই।
পরে অবশ্য ভালো লেগেছে সকল সদস্যদের ভালোবাসা দেখে। সবাই কতো ভালোবাসে ফোরামকে। কেউ কল করেছে, কেউ রিপোর্ট করেছে। সদস্যদের ভালোবাসা দেখে আবারো একটা কথা উপলদ্ধি করলাম, তা হচ্ছে- ভালোবাসার কাছে সবই মূল্যহীন। ফোরামিকরা যে ভালোবাসা দেখিয়েছে তা লক্ষ টাকা দিয়েও পাওয়া যাবে না।
শুধু মাত্র একটাই আফসোস আমি কিছুই করতে পারলাম না। আসলেই তো সারাদিন নেটে বসে আমি কি করি? ভবঘুরে ভাই যে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছেন তার অনুকরণ করে মনে মনে সেই অমানুষটাকে কিছুক্ষন গালাগালি করলাম মাত্র।
এলোমেলো আকাশে উড়িয়েছো শাড়ির আচল,
হঠ্যাৎ যেন মেখে দিয়েছো, ঐ দু'চোখে ভালোবাসার কাজল!
আমাকে পাবেন এলোমেলো-তে!!!