Topic: করোনারি হৃদরোগ চিকিৎসায় তেলশূন্য রান্না

http://my.jetscreenshot.com/2862/m_20110227-eb24-12kb.jpg

বর্তমান যুগের মানুষ যে সাধারণ জীবনধারণ প্রণালীর সাথে অভ্যস্ত, তা হচ্ছে বিশ্রামবহুল (বসে থেকে কাজ করা) জীবনধারণ প্রণালী। খুবই অল্পসংখ্যক ব্যক্তি নিয়মিত কায়িক শ্রম বা শ্রমসাধ্য কাজ করেন। আমাদের বেশির ভাগের জীবনধারণ প্রণালীতে ন্যূনতম দৈহিক শ্রমসাধ্য কাজ থাকে না। কোনো ব্যায়াম নয় বরং খারাপ খাদ্যাভ্যাস, বিলাসবহুল ও বিশ্রামবহুল জীবন।
হৃৎপিণ্ডে রক্ত সঞ্চালনকারী শিরাগুলোর মতো শিরাগুলোতে চর্বিজাতীয় পদার্থ অবরোধের সৃষ্টি করে। এসব চর্বিজাতীয় পদার্থকে কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডস বলা হয়। এগুলো কয়েক বছর ধরে স্তরে স্তরে জমা বা সঞ্চিত হয়। যখন এই অবরোধ গুরুত্বপূর্ণ বা লক্ষণীয় আকার ধারণ করে, তখন এই নলগুলো (ধমনী) কাজ বìধ করার উপক্রম হয়। একটি রোগের আকার ধারণ করে। তখন একে বলে হৃদরোগ (বুকের যন্ত্রণা=অ্যাঞ্জাইনা; হৃদক্রিয়া বিপর্যস্ত হওয়া প্রভৃতি।)
পঞ্চাশ বছর ধরে পশুজাত চর্বিকে পরিগণিত করা হতো কোলেস্টেরলের উপাদান হিসেবে। কেবল গত দশকে কিংবা ওই সময়ে ব্লকেজ বা অবরোধ সৃষ্টির জন্য সমানভাবে দায়ী করা হয়েছে ট্রাইগ্লিসারাইড বা সবজিজাত চর্বিকে। ট্রাইগ্লিসারাইড হচ্ছে রাসায়নিক নাম, সাধারণ মানুষের কাছে যা রান্নার তেল হিসেবে পরিচিত।
এই রান্নার তেল উৎপাদনকারী সংস্খাগুলো সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক সারল্যের সুযোগ নিয়ে (শোধন করে) তাদের ভুল পথে চালিত করে। বিশ্বাস করতে বাধ্য করছে যে, তাদের তেলগুলো নিরাপদ বা ক্ষতিকর নয়, এবং কোলেস্টেরল-শূন্য বা জিরো কোলেস্টেরল ইত্যাদি তকমা বা আকর্ষণীয় শিরোনাম বা বিজ্ঞাপন দিয়ে তাদের বিক্রয়ের পরিমাণ বাড়িয়েছে। এটা সত্য যে, রান্নার তেল যেহেতু গাছের বীজ থেকে প্রস্তুত হয়, সেহেতু কোলেস্টেরল থাকে না; অপরপক্ষে কোলেস্টেরল আসে পশুজাত দ্রব্য থেকে। অনভিজ্ঞ ব্যক্তিরা রান্নার তেল কেনা শুরু করেন। তারা যে বিষয়টি বুঝতে অসমর্থ হন, তা হচ্ছে এই তেলগুলো ১০০ ভাগ চর্বিজাতীয় পদার্থ বা ট্রাইগ্লিসারাইডে ভর্তি এবং ট্রাইগ্লিসারাইড সমানভাবে ক্ষতিকারক। এই তেলগুলো উচ্চ পরিমাণ ক্যালোরি ধারণ করে (১ গ্রাম তেল ৯ ক্যালোরি), যা দিতে পারে দৈহিক স্খূলতা; ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ। সবচেয়ে ভালো হচ্ছে আমাদের খাদ্যে চর্বি জাতীয় পদার্থের পরিমাণ ন্যূনতম করা। আমাদের শরীরে চর্বি জাতীয় পদার্থের প্রয়োজন মোট ক্যালোরির ১০ শতাংশ। যেহেতু প্রতিটি খাদ্যবস্তুতে অদৃশ্য ফ্যাট বা চর্বি অথবা লুকানো চর্বি থাকে, সেহেতু ন্যূনতম চর্বি আমরা সাধারণ খাদ্য থেকেই পেতে পারি। এর অর্থ হলো সব রকমের দৃশ্যমান চর্বি জাতীয় দ্রব্যের উৎস (অর্থাৎ রান্নার তেল) বর্জন করা উচিত। এখন প্রশ্ন হলো কিভাবে তেল ছাড়া সুস্বাদু খাদ্য প্রস্তুত করা যাবে?
কী হবে, যদি তেল ছাড়া খাদ্য প্রস্তুত করা হয়? তাতে কি সুস্বাদ থাকবে? যদি আপনি যুক্তিসহকারে চিন্তা করেন তবে উত্তর হবে হ্যাঁ। রান্নার তেল নিজে কোনো স্বাদ যোগ করে না। এটা আমাদের মানসিক ধারণা, যা আমাদের অনেক বছর ধরে এটা বিশ্বাস করতে শিখিয়েছে যে, সুস্বাদ আসে তেল থেকে। কিন্তু যখন আমরা তেল সরিয়ে নিতে বলি তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে মসলা সরিয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনা ঘটে, কারণ গৃহিণীরা জানেন না যে, কিভাবে কড়াইতে মসলা দিতে হয়, কখন রান্নার কড়াইতে কোনো তেল দেখা যায় না। এ ঘটনা করোনারি আর্টারি ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড রিগ্রেশন (সিএডিপিআর)-কে প্রণোদিত ও উৎসাহিত করেছে জিরো অয়েল বা তেলশূন্য রান্নার ধারণা তৈরি করতে। জিরো অয়েল বলতে বোঝায় এক বিন্দুও তেল ব্যবহার না করে রান্না করা। সিএডিপিআর রান্না করে মসলা ও পানি দিয়ে; খাদ্যবস্তুতে তেলের পরিবর্তে পানি দিয়ে। এবং যেহেতু নানা গìধ, বর্ণ ও স্বাদের মসলা রান্নায় ব্যবহার করা হয়, সেহেতু প্রস্তুত করা খাদ্যের বর্ণ, স্বাদ, সুগìধ যথাযথভাবে উপস্খিত থাকে।
সিএডিপিআর অনুভব করে যে, মানুষের মানসিক গঠন এমনই যে, পানিকে রান্নার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা কঠিন কাজ। সে জন্য যখন পানি রান্নার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তখন তাকে আমরা বলি সিএডিপিআর অয়েল। তেলশূন্য রান্নার ধারণাকে আপনার বাড়িতে রান্নায় উপস্খাপিত করে কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের ঝুঁকিকে নিশ্চিহ্ন করা যায়। দৈহিক ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও এটা উপকারী, কারণ এতে চর্বি জাতীয় খাদ্য থেকে বেশি পরিমাণ ক্যালোরি গ্রহণ করার ঝুঁকি থাকে না; এখন আমরা এটা অবশ্যই বলতে পারি সিএডিপিআর অয়েলে কোনো প্রকার চর্বি জাতীয় পদার্থ বা কোলেস্টেরল থাকে না, বরং ১০০ ভাগ খনিজদ্রব্য ভর্তি থাকে এবং সেটা স্বাস্খ্যের জন্য উপকারী।

লেখক :
ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস
সিনিয়র কনসালট্যান্ট, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, ঢাকা।
চেম্বার : করোনারি আর্টারি ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড রিগ্রেশন সিএডিপিআর সেন্টার ৫৭/১৫ পশ্চিম পান্থপথ, ঢাকা।
ফোন : ০১৯২১- ৮৪৯৬৯৯

সুত্র : নয়া দিগন্ত

Shout Me Crunch আমার ব্যক্তিগত টেক ওয়েবসাইট।


Re: করোনারি হৃদরোগ চিকিৎসায় তেলশূন্য রান্না

সিএডিপিআর ওয়েল এ রান্নার প্রচলন শুরু করলে শুধু হৃদরোগ নয়, আরও অনেক রোগ  নিরাময় করা সম্ভব হতো। একিই সাথে তেলের উচ্চমূল্যও রোধ করা যেত।