যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত ‘ইনোসেন্স অব মুসলিম’ নামক কুখ্যাত সিনেমার প্রতিবাদে এ পর্যন্ত গোটা মুসলিম বিশ্বে ৫০ জনের অধিক মুসলমান শহীদ হয়েছেন। তারপরও সন্ত্রাসী আমেরিকা তার কুপথ থেকে আদৌ সরে আসেনি; বরং সে গোটা মুসলিম বিশ্বের বিরোধিতা করে তার মুসলিমবিদ্বেষী রূপটি প্রকাশ করে যাচ্ছে।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে অবমাননা করে ইসরাইলি ইহুদি ‘স্যাম ব্যাসেলি’ হানাদার যুক্তরাষ্ট্রে বসে তাদের মদদে ‘ইনোসেন্স অব মুসলিম’ বা মুসলমানদের অজ্ঞতা নামক ঘৃণ্য সিনেমা বানিয়ে এবং ফ্রান্সে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিদ্বেষী পত্রিকা ‘শার্লি এব্দো’ মারাত্মক অবমাননাকর ও ন্যাক্কারজনক কার্টুন পুনঃছাপিয়ে সারা বিশ্বের প্রায় ৩২৫ কোটি মুসলমানের অন্তরের মধ্যে আঘাত করেছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেয়া সাক্ষাতকারে সিনেমা তৈরিকারী ইসরাইলি এ কুখ্যাত ইহুদি স্যাম ব্যাসেলি বলেছে, ‘চলচ্চিত্রটি নির্মাণের জন্য সে ১০০ জন ইহুদির কাছ থেকে ৫০ লাখ ডলার পেয়েছে।’ অর্থাৎ এ ঘৃণ্য কাজে অর্থায়ন করেছে একশ’র বেশি উগ্রবাদী ধনাঢ্য ইহুদী। জঘন্য সিনেমাটিতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুসাজসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক-এ এক ব্যক্তিকে দেখানো হয়েছে- যাকে প্রতারক, নারীলোভী, সমকামী এবং সম্ভ্রমহরণকারী হিসেবে চিত্রায়িত করেছে। নাঊযুবিল্লাহ!। আর পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে তুলনা করা হয়েছে ক্যান্সারের সাথে। নাঊযুবিল্লাহ! সাম্প্রদায়িকতাবাদী কুখ্যাত মাদকসন্ত্রাসী ইহুদী ব্যাসেলি সিনেমার ব্যাখ্যা দিয়ে মন্তব্য করেছে, “নাইন ইলেভেনের পর সবাইকে বিচারের আওতায় আনা উচিত। এমনকি মুসলমানদের নবী উনাকেও।” নাউযুবিল্লাহ!
হানাদার, সন্ত্রাসী রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের প্রত্যক্ষ মদদে এ কুখ্যাত সিনেমাটি নির্মিত হওয়ায়ই তারা এখন পর্যন্ত সিনেমাটি নিষিদ্ধের কোনো ব্যবস্থা নেয়নি এমনকি সিনেমার প্রযোজক স্যাম ব্যাসেলিসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধেও কোনোরকম ব্যবস্থা নেয়নি। বরং তথাকথিত মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে হানাদার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী বলেছে ‘ওই ভিডিওটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের করার কিছু নেই, আমরা কাউকে তার মত প্রকাশে বাধা দিই না, তা যত অরুচিকরই হোক না কেন? নাউযুবিল্লাহ!
অথচ বিশ্ববাসী জানে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস করার অভিযোগে সাড়া জাগানো ওয়েব সাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান এ্যসেঞ্জকে আমেরিকা বিভিন্ন মামলা দিয়ে তার দেশ ছাড়া করে রেখেছে। জুলিয়ান এ্যসেঞ্জ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এক্ষেত্রে তথাকথিত মানবতাবাদী, লুণ্ঠনকারী, সন্ত্রাসী রাষ্ট্র আমেরিকা ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’ দেয়নি জুলিয়ান এ্যসেঞ্জকে ।
শুধু তাই নয়, গত সেপ্টেম্বর (২০১২ ঈসায়ী) মাসের শুরুর দিকে ওসামা বিন লাদেনের হত্যাকাণ্ড নিয়ে সাবেক মার্কিন নৌকমান্ডো ম্যাট বিসোনেট্টে ‘নো ইজি ডে’ নামে একটি বই প্রকাশ করলে পেন্টাগণ তথা আমেরিকান সরকার লেখকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেয়। এক্ষেত্রেও উক্ত বইয়ের লেখককে ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’ দেয়নি লুণ্ঠনকারী, সন্ত্রাসী রাষ্ট্র আমেরিকা।
কিন্তু যখনই দ্বীন ইসলাম উনার বিরুদ্ধে বা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধিতার বিষয়টি আসে তখনই উদ্দেশ্যপ্রণোতিভাবে তাবৎ ইহুদী, খ্রিস্টান, মুশরিক তথা পুরো ইউরোপ-আমেরিকা সকলেই কথিত ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’র কথা বলে দ্বীন ইসলাম উনার সম্মানিত বিষয়গুলোর বিরোধিতা করে মানহানি করার স্পর্ধা দেখায়। নাউযুবিল্লাহ!
মুসলমানদের তীব্র প্রতিবাদ উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সাবওয়ে বা পাতাল রেলে দ্বীন ইসলাম উনার বিদ্বেষী একটি পোস্টার লাগানো হয়েছে। ওই পোস্টারটিতে মুসলমানদের বর্বর বলে মন্তব্য করা হয়েছে। বাকস্বাধীনতার নামে চরম মুসলিমবিদ্বেষী পোস্টার লাগানোর অনুমতি দেয়া হলেও পোস্টারটি নষ্ট করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে এক বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মীকে। এটা আমেরিকার মুসলিমবিদ্বেষী চেহারার হাক্বীক্বত। কারণ দ্বীন ইসলাম উনার বিদ্বেষী পোষ্টার লাগানোর অধিকার যদি স্বীকৃত হয়, তবে পোষ্টার ছেঁড়ার অধিকারও সংরক্ষিত থাকা উচিত।
সন্ত্রাসী রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাকস্বাধীনতার নামে ঐতিহাসিক সত্যকে বা তথ্যকে অস্বীকার ও বিকৃত করে মিথ্যা প্রলাপ বকে যাচ্ছে। বাকস্বাধীনতার অর্থ হচ্ছে সত্য কথা প্রকাশের অধিকার। কিন্তু কোনো ঐতিহাসিক তথ্যকে অস্বীকার করা বা বিকৃত করার অথবা মিথ্যা বলার নাম বাকস্বাধীনতা নয়।
উদাহরণতঃ ১৪৯৮ ঈসায়ীতে কলম্বাস আমেরিকা গমন করে- এটা ঐতিহাসিক সত্য। এখন যদি কেউ বলে ভাস্কো-ডা-গামা আমেরিকা আবিষ্কার করেছে, তবে এটা বাকস্বাধীনতা হবে না। এটা হবে ঐতিহাসিক সত্য বা তথ্যের বিকৃতি অথবা নিরেট অজ্ঞতা ও মূর্খতা।
তদ্রুপ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূতঃপবিত্র জীবনী মুবারক- এটা ঐতিহাসিক সত্য। উনি স্বীয় সহধর্মীনীগণ অর্থাৎ হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে ব্যতীত কোনো দাসী পর্যন্ত ব্যবহার করেননি। উনি ব্যভিচারের বিরুদ্ধে কঠোর পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ ঘোষণা করেছেন। উনি সমকামিতার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি ঘোষণা করেছেন। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত ঘোষণা করেছেন। তারপরেও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক-এ মানহানিকর উক্তি করার চেয়ে দ্বিতীয় কোনো ঐতিহাসিক সত্য বা তথ্যের বিকৃতি ও মিথ্যা পৃথিবীর ইতিহাসে হয়নি এবং হবেও না। কাজেই এটা বাকস্বাধীনতা নয়; বরং এটা দ্বীন ইসলাম উনার বিদ্বেষী কঠিন অপপ্রচারণা। এর শক্ত বিচারে সমগ্র মুসলিম বিশ্বকে এগিয়ে আসতে হবে।
সন্ত্রাসী রাষ্ট্র আমেরিকা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলো। বাংলাদেশের বিপক্ষে যুদ্ধ করার জন্য সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিলো। সেই মার্কিনিরা এখন গোটা মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে লেগেছে। গোটা মুসলিম বিশ্ব দখলের ষড়যন্ত্র করছে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য দিয়ে সারা মুসলিম বিশ্বের যুদ্ধাবস্থা তৈরি করে দিচ্ছে। মুসলিম দেশগুলো দখল করতে চাইছে। সম্পদ লুটপাট করতে চাইছে। কিন্তু সন্ত্রাসী আমেরিকা তা কশ্মিনকালেও পারবে না ইনশাআল্লাহ।
বর্তমান হিজরী শতকের যামানার ইমাম ও মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র আমেরিকার বিরুদ্ধে গোটা মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধভাবে ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানান।