যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত ‘ইনোসেন্স অব মুসলিম’ নামক কুখ্যাত সিনেমার প্রতিবাদে এ পর্যন্ত গোটা মুসলিম বিশ্বে ৫০ জনের অধিক মুসলমান শহীদ হয়েছেন। তারপরও সন্ত্রাসী আমেরিকা তার কুপথ থেকে আদৌ সরে আসেনি; বরং সে গোটা মুসলিম বিশ্বের বিরোধিতা করে তার মুসলিমবিদ্বেষী রূপটি প্রকাশ করে যাচ্ছে।

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে অবমাননা করে ইসরাইলি ইহুদি ‘স্যাম ব্যাসেলি’ হানাদার যুক্তরাষ্ট্রে বসে তাদের মদদে ‘ইনোসেন্স অব মুসলিম’ বা মুসলমানদের অজ্ঞতা নামক ঘৃণ্য সিনেমা বানিয়ে এবং ফ্রান্সে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিদ্বেষী পত্রিকা ‘শার্লি এব্দো’ মারাত্মক অবমাননাকর ও ন্যাক্কারজনক কার্টুন পুনঃছাপিয়ে সারা বিশ্বের প্রায় ৩২৫ কোটি মুসলমানের অন্তরের মধ্যে আঘাত করেছে।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেয়া সাক্ষাতকারে সিনেমা তৈরিকারী ইসরাইলি এ কুখ্যাত ইহুদি স্যাম ব্যাসেলি বলেছে, ‘চলচ্চিত্রটি নির্মাণের জন্য সে ১০০ জন ইহুদির কাছ থেকে ৫০ লাখ ডলার পেয়েছে।’ অর্থাৎ এ ঘৃণ্য কাজে অর্থায়ন করেছে একশ’র বেশি উগ্রবাদী ধনাঢ্য ইহুদী। জঘন্য সিনেমাটিতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুসাজসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক-এ এক ব্যক্তিকে দেখানো হয়েছে- যাকে প্রতারক, নারীলোভী, সমকামী এবং সম্ভ্রমহরণকারী হিসেবে চিত্রায়িত করেছে। নাঊযুবিল্লাহ!। আর পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে তুলনা করা হয়েছে ক্যান্সারের সাথে। নাঊযুবিল্লাহ! সাম্প্রদায়িকতাবাদী কুখ্যাত মাদকসন্ত্রাসী ইহুদী ব্যাসেলি সিনেমার ব্যাখ্যা দিয়ে মন্তব্য করেছে, “নাইন ইলেভেনের পর সবাইকে বিচারের আওতায় আনা উচিত। এমনকি মুসলমানদের নবী উনাকেও।” নাউযুবিল্লাহ!

হানাদার, সন্ত্রাসী রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের প্রত্যক্ষ মদদে এ কুখ্যাত সিনেমাটি নির্মিত হওয়ায়ই তারা এখন পর্যন্ত সিনেমাটি নিষিদ্ধের কোনো ব্যবস্থা নেয়নি এমনকি সিনেমার প্রযোজক স্যাম ব্যাসেলিসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধেও কোনোরকম ব্যবস্থা নেয়নি। বরং তথাকথিত মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে হানাদার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী বলেছে ‘ওই ভিডিওটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের করার কিছু নেই, আমরা কাউকে তার মত প্রকাশে বাধা দিই না, তা যত অরুচিকরই হোক না কেন? নাউযুবিল্লাহ!

অথচ বিশ্ববাসী জানে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস করার অভিযোগে সাড়া জাগানো ওয়েব সাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান এ্যসেঞ্জকে আমেরিকা বিভিন্ন মামলা দিয়ে তার দেশ ছাড়া করে রেখেছে। জুলিয়ান এ্যসেঞ্জ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এক্ষেত্রে তথাকথিত মানবতাবাদী, লুণ্ঠনকারী, সন্ত্রাসী রাষ্ট্র আমেরিকা ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’ দেয়নি জুলিয়ান এ্যসেঞ্জকে ।

শুধু তাই নয়, গত সেপ্টেম্বর (২০১২ ঈসায়ী) মাসের শুরুর দিকে ওসামা বিন লাদেনের হত্যাকাণ্ড নিয়ে সাবেক মার্কিন নৌকমান্ডো ম্যাট বিসোনেট্টে ‘নো ইজি ডে’ নামে একটি বই প্রকাশ করলে পেন্টাগণ তথা আমেরিকান সরকার লেখকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেয়। এক্ষেত্রেও উক্ত বইয়ের লেখককে ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’ দেয়নি লুণ্ঠনকারী, সন্ত্রাসী রাষ্ট্র আমেরিকা।

কিন্তু যখনই দ্বীন ইসলাম উনার বিরুদ্ধে বা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধিতার বিষয়টি আসে তখনই উদ্দেশ্যপ্রণোতিভাবে তাবৎ ইহুদী, খ্রিস্টান, মুশরিক তথা পুরো ইউরোপ-আমেরিকা সকলেই কথিত ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’র কথা বলে দ্বীন ইসলাম উনার সম্মানিত বিষয়গুলোর বিরোধিতা করে মানহানি করার স্পর্ধা দেখায়। নাউযুবিল্লাহ!

মুসলমানদের তীব্র প্রতিবাদ উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সাবওয়ে বা পাতাল রেলে দ্বীন ইসলাম উনার বিদ্বেষী একটি পোস্টার লাগানো হয়েছে। ওই পোস্টারটিতে মুসলমানদের বর্বর বলে মন্তব্য করা হয়েছে। বাকস্বাধীনতার নামে চরম মুসলিমবিদ্বেষী পোস্টার লাগানোর অনুমতি দেয়া হলেও পোস্টারটি নষ্ট করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে এক বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মীকে। এটা আমেরিকার মুসলিমবিদ্বেষী চেহারার হাক্বীক্বত। কারণ দ্বীন ইসলাম উনার বিদ্বেষী পোষ্টার লাগানোর অধিকার যদি স্বীকৃত হয়, তবে পোষ্টার ছেঁড়ার অধিকারও সংরক্ষিত থাকা উচিত।

সন্ত্রাসী রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাকস্বাধীনতার নামে ঐতিহাসিক সত্যকে বা তথ্যকে অস্বীকার ও বিকৃত করে মিথ্যা প্রলাপ বকে যাচ্ছে। বাকস্বাধীনতার অর্থ হচ্ছে সত্য কথা প্রকাশের অধিকার। কিন্তু কোনো ঐতিহাসিক তথ্যকে অস্বীকার করা বা বিকৃত করার অথবা মিথ্যা বলার নাম বাকস্বাধীনতা নয়।

উদাহরণতঃ ১৪৯৮ ঈসায়ীতে কলম্বাস আমেরিকা গমন করে- এটা ঐতিহাসিক সত্য। এখন যদি কেউ বলে ভাস্কো-ডা-গামা আমেরিকা আবিষ্কার করেছে, তবে এটা বাকস্বাধীনতা হবে না। এটা হবে ঐতিহাসিক সত্য বা তথ্যের বিকৃতি অথবা নিরেট অজ্ঞতা ও মূর্খতা।

তদ্রুপ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূতঃপবিত্র জীবনী মুবারক- এটা ঐতিহাসিক সত্য। উনি স্বীয় সহধর্মীনীগণ অর্থাৎ হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে ব্যতীত কোনো দাসী পর্যন্ত ব্যবহার করেননি। উনি ব্যভিচারের বিরুদ্ধে কঠোর পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ ঘোষণা করেছেন। উনি সমকামিতার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি ঘোষণা করেছেন। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত ঘোষণা করেছেন। তারপরেও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক-এ মানহানিকর উক্তি করার চেয়ে দ্বিতীয় কোনো ঐতিহাসিক সত্য বা তথ্যের বিকৃতি ও মিথ্যা পৃথিবীর ইতিহাসে হয়নি এবং হবেও না। কাজেই এটা বাকস্বাধীনতা নয়; বরং এটা দ্বীন ইসলাম উনার বিদ্বেষী কঠিন অপপ্রচারণা। এর শক্ত বিচারে সমগ্র মুসলিম বিশ্বকে এগিয়ে আসতে হবে।

সন্ত্রাসী রাষ্ট্র আমেরিকা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলো। বাংলাদেশের বিপক্ষে যুদ্ধ করার জন্য সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিলো। সেই মার্কিনিরা এখন গোটা মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে লেগেছে। গোটা মুসলিম বিশ্ব দখলের ষড়যন্ত্র করছে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য দিয়ে সারা মুসলিম বিশ্বের যুদ্ধাবস্থা তৈরি করে দিচ্ছে। মুসলিম দেশগুলো দখল করতে চাইছে। সম্পদ লুটপাট করতে চাইছে। কিন্তু সন্ত্রাসী আমেরিকা তা কশ্মিনকালেও পারবে না ইনশাআল্লাহ।

বর্তমান হিজরী শতকের যামানার ইমাম ও মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র আমেরিকার বিরুদ্ধে গোটা মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধভাবে ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানান।

মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ কর যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাক।” (সূরা আনফাল : ১)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ করেন, “(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলুন! তোমরা একমাত্র আমাকে অনুসরণ কর।” (সূরা আলে ইমরান : ৩১)
অর্থাৎ প্রত্যেক মু’মিন-মুসলমানকে প্রতি ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ করতে হবে। আর সেজন্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র বলে দিয়েছেন, “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই সর্বোত্তম আদর্শ রয়েছে।”  (সূরা আহযাব : ২১)
অর্থাৎ তিনিই অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় এবং উনারই তর্জ-তরীক্বা, নিয়ম-পদ্ধতি, অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে। সর্বক্ষেত্রে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ ও অনুকরণ করতে হবে। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই একমাত্র আদর্শ এবং এ আদর্শের খিলাফ কোন কাজই করা যাবেনা।
তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফে অন্যত্র ইরশাদ করেন, “তোমাদের রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা এনেছেন তা আঁকড়ে ধর এবং যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাক। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় কর। মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা।” (সূরা হাশর : ৭)
অথচ বর্তমান মুসলমানরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে যেমন কঠিন শাস্তিদাতা বলে মানে না ঠিক তেমনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বোত্তম আদর্শ হিসেবে মানে না। (নাউযুবিল্লাহ) যদি মানতো তাহলে তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি বিষয়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণের প্রতিফলন ঘটতো। কিন্তু দেখা যায়, একজন মুসলমান যখন চুল রাখে তখন সে কোন অভিনেতা/অভিনেত্রী কিংবা কোন খেলোয়াড়কে অনুসরণ করে। আবার পুরুষরা দাড়ি না রেখে সেভ করে নারীর ছুরত ধারন করছে। নারী বিধর্মীদের অনুসরণে প্রায় নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পায়ের জুতা পর্যন্ত বিধর্মীদের অনুসরণে পরিধান করছে। বর্তমানে দেখা যায় বেশির ভাগ মুসলমানই কালো রংয়ের জুতা-স্যাণ্ডেল পরিধান করছে।
অথচ মুসলমানদের উচিত ছিল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেভাবে চুল রেখেছেন সেভাবে চুল রাখা, পুরুষের দাড়ি রাখা, নারীদের পর্দা করা। আর মুসলমাদেরকে দিয়ে কালো রংয়ের জুতা-স্যাণ্ডেল পরিধান করানো কাফিরদের একটি ষড়যন্ত্র। তারা জানে যে কা’বা শরীফ-এর গিলাফের রং কালো তাই মুসলমানদেরকে কালো রংয়ের জুতা-স্যাণ্ডেল পরিধান করিয়ে কা’বা শরীফ-এর অসম্মান করাচ্ছে, যেমনিভাবে কা’বা শরীফ, মদীনা শরীফ, রওযা শরীফ ও বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ-এর ছবি সম্বলিত জায়নামাজ মুসলমাদের দিয়ে পদদলিত করিয়ে কা’বা শরীফ, মদীনা শরীফ, রওযা শরীফ ও বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ-এর প্রতি মুসলমানদের মন থেকে সম্মান বোধ উঠিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রে তারা লিপ্ত রয়েছে।
আর এভাবে মুসলমানদের দিয়ে ইসলামের অবমাননা করাতে করাতে মুসলমানরা এখন অনুভুতিহীন হয়ে পড়েছে। ফলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানের খিলাফ নানা চলচিত্র, ব্যঙ্গচিত্র ইত্যাদি নির্মানে কাফিররা আজ সাহস পাচ্ছে। আর নিজস্ব স্বকীয়তা হারা, কাপুরুষ মুসলমান আজ প্রতিবাদ করতেও জানে না। আর প্রতিটি মুসলিম সরকার হচ্ছে কাফিরদের কেনা খাছ গোলাম, ফলে তারাও টু শব্দ করছে না। নামকা ওয়াস্তে একটি বিবৃতি দিয়ে খালাস।
সারাবিশ্বের প্রতিটি সরকারের উচিত সাম্প্রতিক কালে নির্মিত চলচিত্রটি বাজেয়াপ্ত করার ও এর কুলাঙ্গার পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা, অভিনেত্রী ও সংশ্লিষ্ট সকলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ব্যাপারে চাপ সৃষ্টি করা।
আর যে বিষয়টি আজ স্পষ্টভাবেই বোঝা যাচ্ছে তা হলো সারাবিশ্ব এখন নেতৃত্বশূণ্য, কেননা যারা তথাকথিত সুপার পাওয়ার ছিল তারা আজ সুপার ফকির-এ পরিণত হয়েছে, তারা নিজেদের মৌলিক চাহিদাটুকু পুরণেই অক্ষম। সেখানে বিশ্ব পরিচালনা করবে কিভাবে- এ বিষয়টি মুসলমান নেতৃবৃন্দের বোঝা উচিত। এমনিতেই কাফিররা হচ্ছে মুর্দা তার উপর এখন তাদের চরম আর্থিক অসংঙ্গতি। এমতবস্থায় প্রতিটি মুসলিম সরকারের উচিত নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে একটি যৌথ মুসলিম প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিভিন্ন কাফির রাষ্ট্রে আক্রমণ রচনা করা, তাদের মাটির সাথে মিটিয়ে দেয়া, ধুলিসাৎ করে দেয়া। আর এ জন্যে যিনি বর্তমান হিজরী শতকের যামানার ইমাম ও মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার মুবারক নির্দেশনা মেনে চলা সকল সরকার প্রধানসহ সমস্ত মুসলিম সরকারের সদস্যদের উপর ফরযে আইন।

ক্যামেরার সাহায্যে যে কোন প্রাণীর ছবি তোলা হারাম

১৯৭১ সালের ২৯শে আগস্ট (হিজরী ১৩৯১ সাল) সউদী সরকারের ১৩৭/১ নম্বর রয়াল ডিক্রি অনুযায়ী সউদী আরবে একটি কাউন্সিল গঠিত হয় তাদের উচ্চ পর্যায়ের মাওলানাদের নিয়ে। ডিক্রির চার নম্বর সেকশনে উল্লেখ করা হয়, ‘একটি চিরস্থায়ী কমিটি রাখা হলো, যে কমিটি মাওলানাদের এই কাউন্সিল থেকে সদস্য নির্বাচন করবে রয়াল ডিক্রির সাথে সামঞ্জস্য রেখে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, কাউন্সিলে আলোচনা করার জন্য গবেষণা পত্র তৈরি করা এবং প্রতিটি আলাদা আলাদা বিষয়ে ফতওয়া প্রদান করা।’

এই কমিটির নামকরণ করা হয় ‘আল-লাজনাহ আদ-দাইমাহ লিল-বুহুছ আল ইলমিয়া ওয়াল ইফতা’ ইংরেজিতে "The Permanent Committee for Islamic Research and Fataawa" এবং বাংলায় ‘ইসলামী গবেষণা এবং ফতওয়ার চিরস্থায়ী কমিটি।’

এই রয়াল ডিক্রির ৮ নম্বর সেকশনে পুনরায় বলা হয়, চিরস্থায়ী কমিটির বেশিরভাগ সদস্য কোন বিষয়ে চূড়ান্ত ঐকমত্যে না পৌঁছা পর্যন্ত কোন ফতওয়া প্রদান করা হবে না। এরূপভাবে তিনজন সদস্যের কমে কোন ফতওয়ায় সিদ্ধান্ত দেয়া যাবে না। আর কোন মতের পক্ষে এবং বিপক্ষে সমান সংখ্যক রায় পাওয়া গেলে কমিটির প্রধান সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

সউদী আরবের এই ফতওয়া কমিটিকে “ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা কি হারাম অথবা না?” সে প্রশ্ন করলে তারা উত্তর দেয়, “সকল মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণী যাদের জীবন আছে তাদের ক্যামেরা বা অন্য কিছু দিয়ে ছবি তোলা হারাম। এবং যারা এরকম ছবি তুলে তাদের অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহ পাক উনার কাছে তওবা করা উচিত। তার দ্বারা যা হয়ে গেছে তাতে যেন সে আর ফিরে না যায়।”

ডিক্রির ধারা অনুযায়ী এই ফতওয়ায় স্বাক্ষর করে কমিটির
প্রধান- শায়খ আব্দুল আজিজ ইবনে আব্দুল্লাহ বিন বা’য।
উপপ্রধান- শায়খ আব্দুর রাজ্জাক আফিফি।
সদস্য- শায়খ আব্দুল্লাহ বিন জুদাইয়ান।
সদস্য- শায়খ আব্দুল্লাহ বিন কুউদ।

এই ফতওয়ার নম্বর হচ্ছে ৩৫৯২ যা ফতওয়া কমিটির ভলিউম-১ এর ৬৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে। এই ফতওয়া থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট হলো তা হচ্ছে, সউদী সরকার কর্তৃক ওহাবী মাওলানাদের নিয়ে গঠিত সর্বোচ্চ ফতওয়া কমিটির ফতওয়া অনুযায়ী ক্যামেরার সাহায্যে যে কোন প্রাণীর ছবি তোলা হারাম।


কিন্তু বাস্তবে আমরা তার বিপরীত অবস্থা দেখতে পাচ্ছি। যিনি সমস্ত কিছুর মালিক, খালিক্ব রব্বুল আলামীন মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র ঘর বাইতুল্লাহ শরীফ সংলগ্ন মসজিদুল হারামসহ সকল হজ্জ পালনের স্থানসমূহে স্থাপিত ক্যামেরার সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। এ সকল ক্যামেরা দিয়ে হজ্জের প্রতিটি এলাকার দৃশ্য ধারণ করে সম্প্রচার করা হয়। (নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক)


তাই পৃথিবীর সাড়ে ৩০০ কোটি মুসলমানের উচিত এর তীব্র প্রতিবাদে এগিয়ে আসা এবং মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফসহ সকল পবিত্র স্থানসমূহ থেকে সি.সি. টিভি নামিয়ে ফেলতে সউদী সরকারকে বাধ্য করা। যাতে মুসলমানরা হারাম ছবি থেকে বেঁচে সুন্নতী কায়দায় হজ্জ করতে পারে। এভাবে ছবি তুলে কিয়ামত পর্যন্তও যদি কোন ব্যক্তি হজ্জ করে তার হজ্জ কুবল হবে না। কেননা মহান আল্লাহ পাত তিনি কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ করেন-

فَمَن فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلاَ رَفَثَ وَلاَ فُسُوقَ وَلاَ جِدَالَ فِي الْحَجِّ

অর্থ : “যে ব্যক্তির প্রতি হজ্জ ফরয সে যেন হজ্জ পালনের ক্ষেত্রে নির্জন অবস্থান ও তার সংশ্লিষ্ট কোন কাজ না করে এবং কোন প্রকার ফাসিকী বা নাফরমানিমূলক কাজ না করে এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। আর তোমরা যে নেক কাজ কর তা মহান আল্লাহ পাক তিনি জানেন। তোমরা পাথেয় সংগ্রহ কর। নিশ্চয়ই উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া।” (সূরা বাক্বারা-১৯৭)

মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছেন তারা যেন হজ্জ করতে গিয়ে কোন প্রকার ফাসিকী বা নাফরমানিমূলক কাজ না করে, তাহলে ছবি তুললে কি নাফরমানি করা হয় না?

মসজিদে নববী ও রওযা শরীফ ও কা’বা শরীফ-এর ছবিযুক্ত এবং নকশা খচিত জায়নামাযে নামায পড়া ইসলামে বৈধ নয়। কারণ পবিত্র কা’বা শরীফ, মসজিদে নববী শরীফ এবং বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ মহান আল্লাহ পাক উনার শিয়ার বা নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা প্রত্যেকের জন্যই ফরয এবং অশেষ কল্যাণের কারণও বটে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

وَمَن يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقْوَى الْقُلُوبِ

অর্থ: “যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে, নিশ্চয়ই তা তার জন্য অন্তরের তাক্বওয়া বা পবিত্রতারই নিদর্শন।” (সূরা হজ্জ, আয়াত শরীফ : ৩২)
মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র আরো ইরশাদ করেন-

وَمَن يُعَظِّمْ حُرُمَاتِ اللَّهِ فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُ عِندَ رَبِّهِ

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি যে সকল বস্তুকে সম্মানিত করেছেন, তাকে যে ব্যক্তি সম্মান করলো, এটা তার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কল্যাণ বা ভালাইয়ের কারণ হবে।” (সূরা হজ্জ, আয়াত শরীফ : ৩০)
উপরোক্ত আয়াত শরীফসমূহ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা সকলের জন্যই ফরয। আর সেগুলোর অবমাননা করা সম্পূর্ণই হারাম ও নাজায়িয।
কাজেই, “পবিত্র কা’বা শরীফ, মসজিদে নববী শরীফ, বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ” যেহেতু মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত, সেহেতু উক্ত নিদর্শনসমূহকে পায়ের নিচে রাখা বা সেগুলোকে পদদলিত করা মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনসমূহকে অবমাননা করার শামিল। যা শুধু আদবের খিলাফই নয় বরং স্থান ও ক্ষেত্র বিশেষে নাজায়িয, হারাম ও কুফরী। তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تُحِلُّواْ شَعَآئِرَ اللّهِ


অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনসমূহের অবমাননা করো না।” (সূরা মায়িদা, আয়াত শরীফ : ২)
উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে যেমন, ছবি তোলা হারাম। এরপরেও যদি কোন ব্যক্তি তার পিতার ছবি তোলে, সেই ছবি যদি তৃতীয় কোন ব্যক্তি পা দিয়ে মাড়ায় তাহলে যার পিতার ছবি মাড়ানো হলো সে ব্যক্তি কি সেটা সম্মানজনক হিসেবে মেনে নিবে? কখনই সেটা সম্মাজনক হিসেবে গ্রহণ করবে না। বরং যার পিতার ছবি সে ঐ ব্যক্তির উপর গোস্বা করবে, যে তার পিতার ছবিকে মাড়িয়েছে। কারণ তার পিতার ছবিকে পা দিয়ে মাড়ানোর কারণে তার পিতাকে অবমাননাই করা হয়েছে। ইজ্জত, সম্মান করা হয়নি।
উল্লেখ্য, কারো পিতার ছবি যদি পা দিয়ে মাড়ানোর  কারণে অবমাননা হয় তাহলে পবিত্র কা’বা শরীফ, মদীনা শরীফ ও বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ যা মহান আল্লাহ পাক উনার শিয়ার, সেসবের ছবিকে পা দিয়ে মাড়ালে কি পবিত্র কা’বা শরীফ, মদীনা শরীফ ও বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ-এর অবমাননা হবে না? অবশ্যই হবে।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

اَلْكَافِرُ مِلَّةَ وَّاحِدَةَ

অর্থ: “সমস্ত কাফিররা, বিধর্মীরা মিলে এক দল।”
ক্রুসেডের যুদ্ধে পরাজিতের পর তার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ইহুদী-খ্রিস্টানরা মরিয়া হয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের উপর একের পর এক হিংসাত্মক, মারাত্মক ও ধ্বংসাত্মক আঘাত হেনে চলেছে। তারা সম্মিলিত চক্রান্ত বা কূটকৌশলের মাধ্যমে মুসলমানদের পবিত্র ও সম্মানিত স্থান- পবিত্র কা’বা শরীফ ও রওজা শরীফ সংলগ্ন মসজিদে নববী শরীফ এবং বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ-এর ছবি সম্বলিত অধিকাংশ জায়নামায তৈরি করে মুসলমানদের সম্মানিত জিনিসগুলোকে মুসলমানদের পায়ের নিচে ঠেলে দিয়ে মুসলমানদের দ্বারাই ইসলামের অবমাননা করিয়ে নিচ্ছে। মূলতঃ মুসলমানদের ঈমান হরণ করে নিচ্ছে।
উপরোক্ত আলোচনা সাপেক্ষে সাব্যস্ত হলো যে, সাধারণভাবে পবিত্র কা’বা শরীফ ও বাইতুল মুকাদ্দাসের ছবিযুক্ত জায়নামাযে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী ও আদবের খিলাফ। আর সূক্ষ্মভাবে হারাম ও নাজায়িয। আর মসজিদে নববীর ছবি যদি রওযা শরীফসহ হয়, তবে তাতে নামায পড়া সম্পূর্ণই হারাম ও নাজায়িয। কারণ এগুলো মহান আল্লাহ পাক উনার শিয়ার বা নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। আর এগুলোকে তা’যীম-তাকরীম করা সকলের উপরই অপরিহার্য কর্তব্য। তাছাড়া সকলের মতেই মসজিদের ছবিযুক্ত বা নকশা খচিত জায়নামাযে নামায পড়া সুন্নতের খিলাফ বা মাকরূহ এবং হুযূরী বিনষ্ট হওয়ার কারণ। এটাই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসসম্মত, ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য মত।
পরিশেষে বলতে হয়ে যে, “জাতীয় পতাকার কাছে পা রাখলে যদি অবমাননার মামলা হয়, তবে মহান আল্লাহ পাক উনার শিয়ার কা’বা শরীফ, রওযা শরীফসহ মসজিদে নববী শরীফ, বায়তুল মুকাদ্দাস শরীফ-এর ছবি সম্বলিত জায়নামাযে পা রাখলে তা ইসলামের দৃষ্টিতে কত মারাত্মক অবমাননাকর কাজ বলে গণ্য হতে পারে এবং তার জন্য কত কঠিন শাস্তি নির্ধারিত হতে পারে?”
২০০৮ ঈসায়ী সনের জানুয়ারীতে অস্ট্রেলিয়ায় হপম্যান কাপ টুর্নামেন্টে একটি ম্যাচ দেখার সময় কুখ্যাত সানিয়া মির্জার পা ভারতের জাতীয় পতাকার সামনে থাকায় এবং সে ছবি টিভিতে দেখে ভারতের মধ্য প্রদেশের রাজকুমার দুবে নামে একজন আইনজীবী সানিয়ার বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয়। ভারতীয় আইনজীবী তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছে, “সানিয়া এমন বেখেয়ালীভাবে ম্যাচটি দেখছিলেন যে তার পা কোথায় সে বোধ তখন তার ছিল না। তিনি কি ভুলে গেছেন ভারতীয়দের কাছে তিন রং (জাতীয় পতাকা) এর মূল্য কতটুকু। তার অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত।”
সুতরাং বেখেয়ালীভাবে পা পতাকার কাছে গেলেই যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কথা উঠে, তাহলে ইচ্ছাকৃতভাবে কা’বা শরীফ-এর ছবি বা নকশা খচিত জায়নামাযে যদি কেউ পা রাখে, তাহলে কা’বা শরীফ বা বায়তুল্লাহ শরীফ-এর কত বড় জঘন্য অবমাননাকারী বলে গণ্য হবে এবং আল্লাহ পাক তাকে কত কঠোর শাস্তি দিবেন। (নাঊযুবিল্লাহি মিন যালিক)
তাই ভারতীয় জাতীয় পতাকার অবমাননার কথিত এই ঘটনা থেকে মুসলমানদের অনেক শিক্ষা গ্রহণের অবকাশ রয়েছে। ইসলাম ও ইসলামের শিয়ারের অবমাননাকারীদের চিহ্নিত করার বিষয় রয়েছে।
আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হলেন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ও আখিরী রসূল। উনাকে সৃষ্টি না করলে মহান আল্লাহ পাক তিনি কিছুই সৃষ্টি করতেন না। সেখানে মহাসম্মানিত রওযা শরীফ-এর ছবি যদি কেউ জায়নামাযে রাখে বা রওযা শরীফ-এর ছবি সম্বলিত জায়নামায ব্যবহার করে, তাতে পা রাখে (নাঊযুবিল্লাহ) তাহলে সে কত নিকৃষ্ট ও নাফরমান ও বেয়াদব হিসেবে গণ্য হবে। কত বড় জাহান্নামী সে হবে? কত কঠিন তার শাস্তি হবে? (নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক)

কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,

اِنَّ الصَّلاَةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا

অর্থ : “নিশ্চয়ই নামায নির্দিষ্ট সময়ে পড়া মু’মিন মুসলমানের উপর ফরয করা হয়েছে।” (সূরা আন-নিসা, আয়াত শরীফ-১০৩)
পাঞ্জেগানা নামাযের ন্যায় ঈদের নামায কোন সময় আদায় করতে হবে সে সম্পর্কে ইসলামে বিধান রয়েছে। সকালে সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হবার পর থেকে (অর্থাৎ মাকরূহ্ ওয়াক্ত শেষ হবার পর থেকে অথবা সূর্য উদয়ের শুরু থেকে ঘড়ির মিনিট অনুযায়ী ২৩ মিনিট পর) ঈদের  নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর যাহওয়াতুল কুবরা বা যাওয়াল অথবা শরয়ী অর্ধদিন বা দ্বিপ্রহর অর্থাৎ সূর্যের এস্তাওয়া আরম্ভ হবার পূর্ব পর্যন্ত ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে। ফজরের ওয়াক্ত শেষ হবার পর, ২৩ মিনিটি পর্যন্ত মাকরূহ্ ওয়াক্ত এবং এরপর ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর যোহরের ওয়াক্ত শুরু হবার ১ ঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত ঈদের  নামাযের ওয়াক্ত থাকে। অর্থাৎ মাকরূহ ওয়াক্ত শুরু হবার আগ পর্যন্ত।
সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হবার পর থেকে অর্থাৎ মাকরূহ ওয়াক্ত যা ঘড়ির হিসাব অনুযায়ী ২৩ মিনিট অতিক্রম হবার পূর্বে ঈদের নামায আদায় করলে নামায হবে না এবং যোহরের নামাযের ওয়াক্ত হবার পূর্বের ১ ঘন্টা যা মাকরূহ ওয়াক্ত নামে পরিচিত অর্থাৎ যাহওয়াতুল কুবরা বা সূর্যের এস্তাওয়া আরম্ভ হবার পর ঈদের নামায আদায় করলে তা আদায় হবে না।
অর্ধদিন বা নিসফুন নাহার দু’ভাবে বর্ণিত। একটি হলো শরয়ী অর্ধদিন এবং আরেকটি উরফী (প্রচলিত) অর্ধদিন। সূর্য উদয় হতে সূর্য অস্ত পর্যন্ত সময়কে দু’ভাগে ভাগ করলে প্রথম ভাগকে শরয়ী অর্ধদিন বলা হয়। প্রথম ভাগের শেষ অংশকে বলা হয় শরয়ী দ্বিপ্রহর বা যাহওয়াতুল কোবরা। যাহওয়াতুল কোবরা হতে সূর্য ঢলা পর্যন্ত সময়কে এস্তাওয়ায়ে শামস বলা হয়। ওটার মধ্যবর্তী সময়  নামায পড়া মাকরূহ।
আর প্রচলিত অর্ধদিন বলতে বেলা ১২টা বুঝানো হয়। ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শরয়ী অর্ধদিনের পূর্ব পর্যন্ত থাকে।
উদাহরণস্বরূপ সকাল ৬ টায় যদি সূর্য উদিত হয়, তাহলে ৬ টা ২৩ মিনিট হতে ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং ১২ টায় যদি যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়, তাহলে তার পূর্বে ১ঘন্টা বাদ দিয়ে অর্থাৎ ১১টা পর্যন্ত ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে।
আর নিম্নবর্ণিত হাদীছ শরীফের মাধ্যমে আমরা ঈদের নামায কোন সময় আদায় করলে তা সুন্নত হবে, তা জানতে পারবো। সে সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে যে, “মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের দিন ফজরের নামায পড়ে হুজরা শরীফ-এ যেতেন এবং সকাল সকাল গোসল করে ঈদুল ফিতরের দিন হলে বেজোড় সংখ্যক (৩, ৫ অথবা ৭টি) খোরমা খেজুর খেয়ে ঈদগাহে যেতেন। আর ঈদুল আদ্বহার দিন হলে কিছু না খেয়ে সরাসরি ঈদগাহে যেতেন এবং ঈদের নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে ঈদের নামায আদায় করতেন। অতঃপর খুতবা দিতেন ও নছীহত করতেন।”
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে, “হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আমর ইবনে হাযম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নজরানের আমীর বা প্রধান হিসেবে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় চিঠি দিয়ে আদেশ করেন যে, ‘ঈদুল আদ্বহার নামায খুব সকাল সকাল পড়বেন এবং ঈদুল ফিতরের নামায ঈদুল আদ্বহার চেয়ে অল্প একটু দেরিতে পড়বেন এবং নামাযের পরে মানুষকে নছীহত করবেন।’
কাজেই ঈদের নামায সকাল সকাল পড়া সুন্নত। ঈদের নামাযের সম্মানার্থে এবং ঈদের নামায যাতে আদায়ে দেরি না হয়, সেজন্য ঈদের দিন ইশরাকসহ অন্যান্য সকল নফল নামায তথা সমস্ত নফল ইবাদত করা মাকরূহ তাহরিমী।
বাংলাদেশে পবিত্র শাওওয়াল মাসের চাঁদ তালাশ করতে হবে আজ ২০ ছালিছ ১৩৮০ শামসী ১৮ আগস্ট ২০১২ ঈসায়ী, ইয়াওমুস সাবতি বা শনিবার সন্ধ্যায়। আজ ইয়াওমুস সাবতি বা শনিবার সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল ২১ ছালিছ ১৩৮০ শামসী ১৯ আগস্ট ২০১২ ঈসায়ী, ইয়াওমুল আহাদি বা রোববার হবে পবিত্র শাওওয়াল মাসের পহেলা তারিখ অর্থাৎ মুসলমানদের খুশির দিন পবিত্র ঈদুল ফিতর-এর দিন।
আর যদি আজ ইয়াওমুস সাবতি বা শনিবার সন্ধ্যায় চাঁদ দেখতে না পাওয়া যায়, তবে পবিত্র রমাদ্বান মাস ৩০ দিন পূর্ণ করে আগামী ২২ ছালিছ ১৩৮০ শামসী ২০ আগস্ট ২০১২ ঈসায়ী, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীমি বা সোমবার রীঢ হবে পবিত্র শাওওয়াল মাসের পহেলা তারিখ অর্থাৎ পবিত্র ঈদুল ফিতর-এর দিন। অর্থাৎ চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামীকাল ইয়াওমুল আহাদি বা রোববার অথবা আগামী ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীমি বা সোমবার শরীফ পালিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর।
আর যামানার খাছ লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার মুজাদ্দিদ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস্ সুন্নাহ, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুবারক ইমামতিতে ১৪৩৩ হিজরী সনের দেশের সর্বপ্রথম ঈদুল ফিতর নামাযের জামায়াত রাজারবাগ শরীফ সুন্নতী জামে মসজিদে সুন্নতী ওয়াক্ত মুতাবিক সকাল ০৬টা ১৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি কোনো হক্কানী ওলীআল্লাহ উনার পিছনে নামায আদায় করলো, সে যেনো হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিছনে নামায পড়লো। আর যে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিছনে নামায আদায় করলো তাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমা করে দিবেন।” সুবহানাল্লাহ!
রাজারবাগ শরীফ-এর পক্ষ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণকে উক্ত জামায়াতে শামিল হওয়ার জন্য আহবান জানানো হচ্ছে।

বিশ্বখ্যাত ইমাম মুহাদ্দিছ, মুফাসসির হযরতুল আল্লামা আহমদ শিহাবুদ্দীন হাইতামী (হাইছামী) শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর লিখিত বিশ্ব সমাদৃত, সর্বজন স্বীকৃত ও সুপ্রসিদ্ধ মীলাদ শরীফ-এর কিতাব “আন নি’য়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম”-এ বর্ণিত রয়েছে,

قَالَ اَبُوْ بَكْرِنِ الصِّدِِّيْقِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَمًا عَلٰى قِرَائَةِ  مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ رَفِيْقِىْ  فِىْ الْجَنَّةِ.

অর্থ: (নবীদের পরে শ্রেষ্ঠ মানুষ) হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “যে ব্যক্তি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফ পাঠ উপলক্ষে এক দিরহাম ব্যয় করবে, সে জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবে।” সুবহানাল্লাহ!

وَقَالَ عُمَرُ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ  مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ  عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ  اَحْيَا الاِسْلامَ.

অর্থ: হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “যে ব্যক্তি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফকে বিশেষ মর্যাদা দিল, সে মূলত ইসলামকেই পুনরুজ্জীবিত করলো।” সুবহানাল্লাহ!

وَقَالَ عُثْمَانُ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ  مَنْ اَنْفَقَ  دِرْهَمًا عَلٰى قِرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَاََنَّمَا شَهِدَ  غَزْوَةَ  بَدْرٍ وَحُنَيْنٍ.

অর্থ: হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “যে ব্যক্তি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফ পাঠ উপলক্ষে এক দিরহাম খরচ করল, সে যেন বদর ও হুনাইন যুদ্ধে শরীক থাকলো।” সুবহানাল্লাহ!

وَقَالَ عَلِىٌّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ وَكَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ سَبَبًا لِِّقِرَائَتِهٖ لايَخْرُجُ مِنَ الدُّنْيَا اِلا بِالاِيْمَانِ وَيَدْخُلُ الْجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ.

অর্থ: হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “যে ব্যক্তি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফ পাঠের কারণে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করলো, সে ব্যক্তি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” সুবহানাল্লাহ!
অতএব যারা বলে যে, হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন তথা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের যামানায় মীলাদ শরীফ-এর কোনরূপ অস্তিত্ব ছিল না, তাদের সে কথা সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা এবং এটা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি মিথ্যারোপের কারণে কাট্টা কুফরী।

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,

عَنْ اَبِى الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّهٗ مَرَّ مَعَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلٰى بَيْتِ عَامِرِ الاَنْصَارِىِّ وَكَانَ يُعَلِّمُ وَقَائِعَ وِلادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَبْنَائِهٖ وَعَشِيْرَتِهٖ وَيَقُوْلُ هٰذَا الْيَوْمَ هٰذَا الْيَوْمَ فَقَالَ عَلَيْهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلامُ اِنَّ اللهَ فَتَحَ لَكَ اَبْوَابَ الرَّحْمَةِ وَالْمَلائِكَةُ كُلُّهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ لَكَ  مَنْ فَعَلَ فِعْلَكَ نَجٰى نَجٰتَكَ.

অর্থ: হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে হযরত আবু আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে নিয়ে আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস; এই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যমীনে তাশরীফ এনেছেন এবং ইত্যাদি ইত্যাদি ঘটেছে)।
এতদশ্রবণে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা উনার রহমতের দরজা আপনার জন্য উম্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতাগণ আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ আপনার মত এরূপ কাজ করবে, সেও আপনার মত নাযাত (ফযীলত) লাভ করবে।” সুবহানাল্লাহ! (আত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর- শায়খ হাফিয আবিল খত্তাব ইবনে দাহিয়্যা, মাওলূদুল কাবীর- লি-ইমাম হাফিয ইবনে হাযর মক্কী, দুররুল মুনাযযাম- লিল আল্লামা আবিল ক্বাসিম মুহম্মদ বিন উছমান, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইমাম জালালুদ্দনি সুয়ূতী, ইশবাউল কালামি ফী ইছবাতিল মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়ামি- মাওলানা সালামতুল্লাহ ছিদ্দীক্বী কানপুরী, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী- বেশারতুল্লাহ মাদানীপুরী)
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে,

عَنْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمَا اَنَّهٗ كَانَ يُحَدِّثُ ذَاتَ يَوْمٍ فِىْ بَيْتِهٖ وَقَائِعَ وِلادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِقَوْمٍ ، فَيَسْتَبْشِرُوْنَ وَيُحَمِّدُوْنَ اللهَ وَيُصَلُّوْنَ عَلَيْهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاِذَا جَاءَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ حَلَّتْ لَكُُمْ  شَفَاعَتِىْ.


অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা উনার নিজগৃহে সমবেত ছাহাবীগণকে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক-এর প্রশংসা তথা তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর (ছলাত-সালাম) দরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় রসূল-এ পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় উপস্থিত হলেন এবং (মীলাদ শরীফ পাঠের অনুষ্ঠান দেখে) বললেন: “তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব।” সুবহানাল্লাহ! (আত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর- শায়খ হাফিয আবিল খত্তাব ইবনে দাহিয়্যা, মাওলূদুল কাবীর- লি-ইমাম হাফিয ইবনে হাযর মক্কী, দুররুল মুনাযযাম- লিল আল্লামা আবিল ক্বাসিম মুহম্মদ বিন উছমান, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইমাম জালালুদ্দনি সুয়ূতী, ইশবাউল কালামি ফী ইছবাতিল মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়ামি- মাওলানা সালামতুল্লাহ ছিদ্দীক্বী কানপুরী, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী- বেশারতুল্লাহ মাদানীপুরী)

তাফসীরে কবীর-এর লিখক হযরত ফখরুদ্দীন রাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,

مَا مِنْ شَخْصٍ قَرَاَ  مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلٰى مِلْحٍ اَوْ بُرٍّ اَوْشَىء اٰخَرَ مِنَ الْمَأكُوْلاتِ اِلا ظَهَرَتْ فِيْهِ الْبَركَةُ فِىْ كُلِّ شَىء

অর্থ: “যে ব্যক্তি মীলাদ শরীফ পাঠ করে বা মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করে, লবণ, গম বা অন্য কোন খাদ্যদ্রব্যের উপর ফুঁক দেয়, তাহলে এই খাদ্যদ্রব্যে অবশ্যই বরকত প্রকাশ পাবে। এভাবে যে কোন কিছুর উপরই পাঠ করুক না কেন।” (তাতে বরকত হবেই)। সুবহানাল্লাহ! (আন নি’য়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম)
হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন,

وَصَلَ اِِلَيْهِ مِنْ ذٰلِكَ الْمَأكُوْلِ فَاِنَّهٗ يَضْطَرِبُ وَلا يَسْتَقِرُّ حَتى يَغْفِرَ اللهُ لاٰكِلِهٖ.

অর্থ: “উক্ত মুবারক খাদ্য মীলাদ শরীফ পাঠকারীর বা মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপনকারীর জন্য আল্লাহ পাক-এর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি তাঁকে ক্ষমা না করা পর্যন্ত সে ক্ষান্ত হয়না।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’য়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম)
হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন,

وَاِنْ قُرِئَ مَوْلِدُ النَّبِىِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلٰى مَاءٍ فَمَنْ شَرِبَ مِنْ ذٰلِكَ المْاَءِ دَخَلَ قَلْبَهُ اَلْفَ نُوْرٍ وَّرَحَمَةٍ وَخَرَجَ مِنْهُ اَلْفُ غِلٍّ وَعِلَّةٍ وَلايَمُوْتُ ذٰلِكَ الْقَلْبُ يَوْمَ تَمُوْتُ الْقُلُوْبُ.

অর্থ: “যদি মীলাদ শরীফ পাঠ করে বা মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করে কোন পানিতে ফুঁক দেয়, অতঃপর উক্ত পানি কেউ পান করে তাহলে তাঁর অন্তরে এক হাজার নূর ও রহমত প্রবেশ  করবে। আর তাঁর থেকে হাজারটি বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ রোগ দূর হবে যে দিন সমস্ত ক্বলব (মানুষ) মৃত্যুবরণ করবে সেদিনও ঐ মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পানি পানকারী ব্যক্তির অন্তর মৃত্যুবরণ করবেনা।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’য়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম)
হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন,

وَمَنْ قَرَأَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلٰى دَرَاهِمَ مَسْكُوْكَةٍ فِضَّةٍ كَانَتْ اَوْ ذَهَبًا وَخَلَطَ تِلْكَ الدَّرَاهِم بِغَيْرِهَا وَقَعَتْ فِيْهَا الْبَرْكَةُ وَلا يَفْتَقِرُ صَاحِبُهَا وَلا تَفْرُغُ يَدُهٗ بِبَرْكَةِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَمَ.

অর্থ: “যে ব্যক্তি মীলাদ শরীফ পাঠ করে বা মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করে রৌপ্যের অথবা স্বর্ণের দেরহামসমূহের উপর ফুঁক দেয় অতঃপর তা অন্য জাতীয় মুদ্রার সাথে মিশায় তাহলে তাতে অবশ্যই বরকত হবে এবং এর পাঠক কখনই ফকীর হবে না। আর উক্ত পাঠকের হাত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর (মীলাদ শরীফ পাঠের) বরকতে কখনো খালি হবে না।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’য়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম)
মুসলমানদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশি কিতাব লিখেছেন, যিনি হিজরী দশম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও ইমাম, সুলত্বানুল আরিফীন হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

قَالَ سُلْطَانُ الْعَارِفِيْنَ الْاِمَامُ جَلالُ الدِّيْنِ السُّيُوْطِىُّ قَدَّسَ اللهُ سِرَّهٗ وَنَوَّرَ ضَرِيْحَهُ فِىْ كِتَابِهِ الُمُسَمّٰى الْوَسَائِلِ فِىْ شَرْحِ الشَّمَائِلِ" مَا مِنْ بَيْتٍ اَوْ مَسْجِدٍ اَوْ مَحَلَّةٍ قُرِئَ فِيْهِ مَوْلِدُ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلا حَفَّتِ الْمَلٰئِكَةُ ذٰلِكَ الْبَيْتَ اَوِ الْمَسْجِدَ اَوِ الْمَحَلًّةَ  صَلَّتِ الْمَلٰئِكَةُ عَلٰى اَهْلِ ذٰلِكَ الْمَكَانِ وَعَمَّهُمُ اللهُ تَعَالٰى بِالرَّحْمَةِ وَالرِّضْوَانِ واَمَّا الْمُطَوَقُّوْنَ بِالنُّوْرِ يَعْنِىْ جِبْرَائيلَ وَمِيْكَائِيْلَ وَاِسْرَافِيْلَ وَعَزْرَائِيْلَ عَلَيْهِمُ السَّلامُ فَاِنَّهُمْ يُصَلُّوْنَ عَلٰى مَنْ كَانَ سَبَبًا لِقَرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

অর্থ: সুলত্বানুল আরিফীন হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘ওসায়িল ফী শরহি শামায়িল’ নামক কিতাবে বলেন, “যে কোন ঘরে অথবা মসজিদে অথবা মহল্লায় মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয় সেখানে অবশ্যই আল্লাহ পাক-এর ফেরেশতাগণ বেষ্টন করে নেন। আর তাঁরা সে স্থানের অধিবাসীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করতে থাকেন এবং আল্লাহ পাক তাঁদেরকে স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টির আওতাভুক্ত করে নেন। আর নূর দ্বারা সজ্জিত প্রধান চার ফেরেশতা অর্থাৎ হযরত জিবরাঈল, মীকাইল, ইসরাফিল ও  আজরাইল আলাইহিমুস সালাম মীলাদ শরীফ পাঠকারীর উপর ছলাত-সালাম পাঠ করেন।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’য়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম)
হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন,

مَا مِنْ مُسْلِمٍ قَرَاََ فِىْ بَيْتِهٖ مَوْلِدَ النَّبِىِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلا رَفَعَ اللهُ سُبْحَانَهٗ وَتَعَالٰى اَلْقَحَطَ وَالْوَبَاءَ وَالْحَرْقَ وَالْغَرَقَ وَالاَفَاتِ وَالْبَلِيَّاتِ وَالْبَغْضَ وَالْحَسَدَ وَعَيْنَ السُّوْءِ وَاللُّصُوْصِ عَنْ اَهْلِ ذٰلِكَ الْبَيْتِ فَاِذَا مَاتَ هَوَّنَ اللهُ عَلَيْهِ جَوَابَ مُنْكِرٍ وَنَكِيْرٍ وَيَكُوْنُ فِىْ مَقْعَدِ صِدْقٍ عِنْدَ مَلِيْكٍ مُّقْتَدِرٍ.

অর্থ: “যখন  কোন মুসলমান নিজ বাড়িতে মীলাদ শরীফ পাঠ করে তখন সেই বাড়ির অধিবাসীগণের উপর থেকে আল্লাহ পাক অবশ্যই খাদ্যাভাব, মহামারি, অগ্নিকা-, ডুবে মরা, বালা-মুছিবত, হিংসা-বিদ্বেষ, কু-দৃষ্টি, চুরি ইত্যাদি উঠিয়ে নেন। যখন উক্ত ব্যক্তি মারা যান তখন আল্লাহ পাক তাঁর জন্য মুনকার-নকীরের সুওয়াল-জাওয়াব সহজ করে দেন। আর তাঁর অবস্থান হয় আল্লাহ পাক-এর সন্নিধানে সিদকের মাক্বামে।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’য়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম)

সউদী ওহাবী সরকার ১৪২৮ হিজরী সনের যিলহজ্জ মাস ঘোষণা করে ১০ই ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে আবার ১৪২৯ হিজরী সনের মুহররম মাস ঘোষণা করে ১০ই জানুয়ারী ২০০৯ তারিখে। অর্থাৎ তাদের আরবী মাস ৩১ দিন গণনা করার ইতিহাসও রয়েছে।

সউদী সরকার রমাদ্বান শরীফ মাস চাঁদ না দেখে মনগড়াভাবে শুরু করাতে ত্রিশতম দিনেও সউদী আরবে পবিত্র শাওওয়াল মাসের চাঁদ দৃশ্যমান হবে না। অথচ এটা শরীয়ত এবং মহাকাশ বিজ্ঞানের আলোকে অসম্ভব একটি বিষয়। সউদী আরব ২২ ছালিছ ১৩৮০ শামসী, ২০শে জুলাই ২০১২ ঈসায়ী, ইয়াওমুল জুমুয়াতি বা শুক্রবার থেকে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ শুরু করাতে পবিত্র শাওওয়াল মাসের চাঁদ তালাশ করবে ১৯ ছালিছ ১৩৮০ শামসী, ১৭ই আগস্ট ২০১২ ঈসায়ী, ইয়াওমুল জুমুয়াতি বা শুক্রবার। সউদী আরবের পবিত্র মক্কা শরীফ-এর সময় অনুযায়ী অমাবস্যা সংঘটিত হবে ১৯ ছালিছ ১৩৮০ শামসী, ১৭ই আগস্ট ২০১২ ঈসায়ী, ইয়াওমুল জুমুয়াতি বা শুক্রবার ৬টা ৫৪ মিনিটে। অথচ সেদিন মক্কা শরীফ-এ সূর্যাস্ত ৬টা ৫২ মিনিটে এবং চন্দ্রাস্ত ৬টা ৩২ মিনিটে। অর্থাৎ সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বেই চাঁদ অস্ত যাবে আবার সূর্যাস্তের পরে অমাবস্যা শুরু হবে। সুতরাং ২০ ছালিছ ১৩৮০ শামসী, ১৮ই আগস্ট ২০১২ ঈসায়ী, ইয়াওমুস সাবতি বা শনিবার থেকে সউদী আরবে পবিত্র শাওওয়াল মাস শুরু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

আবার যদি সউদী আরব পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস ৩০ দিনে পূর্ণ করে, তবে ২০ ছালিছ ১৩৮০ শামসী, ১৮ই আগস্ট ২০১২ ঈসায়ী, ইয়াওমুস সাবতি বা শনিবার সূর্য অস্ত যাবে ৬টা ৫১ মিনিটে আর চাঁদ অস্ত যাবে ৭টা ১৩ মিনিটে। অর্থাৎ মাত্র ২২ মিনিট চাঁদ আকাশে অবস্থান করবে। সূর্যাস্তের সময় চাঁদের উচ্চতা হবে মাত্র ৪ ডিগ্রি ২৯ মিনিট। সুতরাং ত্রিশতম দিনেও চাঁদ দৃশ্যমান হবে না। এ বিষয়টি প্রমাণ করে যে, সউদী আরবে পবিত্র শাওওয়াল মাস সঠিক তারিখে শুরু হতে যাচ্ছে না। অর্থাৎ তাদের রমাদ্বান শরীফ মাস ঘোষনা ছিল সম্পূর্ণ ভুল ও শরীয়ত বিরোধী। তাই সেদেশে অবস্থানরত সকল মানুষ ফরয রোযা তরক হওয়ার পাশাপাশি লাইলাতুল ক্বদরের নিয়ামত এবং পহেলা শাওয়ালের দোয়া কবুলের নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হবে।

অথচ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই পাঁচ রাতে দুয়া কবুল হয়ে থাকে, ১. রজব মাসের পহেলা রাত, ২. শবে বরাত, ৩. শবে ক্বদর, ৪. ৫. ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদ্বহার রাত। (মা ছাবাতা বিস সুন্নাহ, গুনইয়াতুত ত্বালিবীন, মুকাশাফাতুল কুলুব)

উল্লেখ্য, ইসলামী শরীয়তে আরবী মাস শুরুর ক্ষেত্রে প্রতি মাসে চাঁদ তালাশ করা ওয়াজিবে কিফায়া এবং চাঁদ দেখে অথবা দেখা না গেলে ত্রিশ দিনে মাস পূর্ণ করে সঠিক তারিখে মাস শুরু করা ফরয। বিপরীতে অমাবস্যা অনুযায়ী মাস শুরু করা ইহুদীদের রীতি। তাহলে আজকের সউদী আরবের নামধারী মুসলিম ওহাবী শাসকগোষ্ঠী আসলে কোন ধর্মের অনুসরণ করছে তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। (মূলত আজকের সউদী ওহাবী শাসকগোষ্ঠী হচ্ছে ইহুদী)

আবার হাদীছ শরীফ-এ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, ‘তোমরা কোনো অন্যায় কাজ দেখলে হাতে বাধা দাও; সম্ভব না হলে মুখে বাধা দাও; তাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে অন্তরে ঘৃণা করে দূরে সরে থাকো। তবে এটা হচ্ছে দূর্বল ঈমানের পরিচয়।’

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘এরপর ঈমানের কোন স্তর নেই।’ অর্থাৎ যারা এই তিন স্তরের বাহিরে থাকবে তারা মুসলমান হিসেবে গণ্য হবেনা।

আশ্চর্য্যরে বিষয়! সউদী ওহাবী সরকারের এহেন শরীয়ত বিরোধী আমলের বিষয়ে মুসলমানগণের মধ্যে কোন প্রকার চিন্তা ফিকির নেই।

আর তাই শবে ক্বদরের রাতে মহান আল্লাহ পাক উনার শাহী দরবারে ফরিয়াদ- আয় বারে ইলাহী! আপনি সউদী ওহাবী সরকারকে হিদায়েত দান করুন। আর যদি তাদের নছীবে হিদায়েত না থাকে, তাহলে তাদের রাজ পরিবারকে রাজতন্ত্রসহ আবরাহার মতো ধূলিস্বাত করে দিয়ে হযরত খুলাফায়ে রশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের দ্বারা পরিচালিত “খিলাফত আলা মিনহাজুন নুবুওওয়াত” সারা যমীনে পুণঃপ্রতিষ্ঠা করে দিন।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সা’লাবা অথবা সা’লাবা ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবু সুআইর উনার পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি তিনি ইরশাদ করেন, এক সা’ গম বা আটা দু’ব্যক্তির পক্ষ থেকে আদায় করতে হবে- ছোট হোক বা বড় হোক, আযাদ হোক বা গোলাম হোক এবং পুরুষ হোক বা মহিলা হোক।” (আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

হানাফী মাযহাব মুতাবিক অর্ধ সা’ বলতে ১ সের সাড়ে ১২ ছটাক বুঝানো হয়েছে, যা গ্রাম হিসাবে ১৬৫৭ গ্রাম (প্রায়) হয়।

যেমন
১ সের সাড়ে ১২ ছটাক = ১৬ ছটাক + ১২/ ছটাক [যেহেতু ১ সের = ১৬ ছটাক]
                           = ২৮/ ছটাক
                           = ২৮/ x ৫ তোলা [যেহেতু ১ ছটাক = ৫ তোলা]
                           = (৫৭ x ৫)/২ তোলা
                           = ২৮৫/(২ x ৮৬) কেজি [যেহেতু ৮৬ তোলা = ১ কেজি]
                           = (২৮৫ x ১০০০)/১৭২ গ্রাম [যেহেতু ১ কেজি = ১০০০ গ্রাম]
                           = ১৬৫৬.৯৭৬৭ গ্রাম
                           = ১৬৫৭ গ্রাম প্রায়

কিন্তু ইসলামিক ফাউন্ডেশন ফিতরা নির্ধারণে শুদ্ধ গাণিতিক হিসাব করতে না পারায় অর্থাৎ তাদের যোগ-বিয়োগের নূন্যতম জ্ঞানটুকুও না থাকায় প্রতি বছরই তারা ফিতরা নির্ধারণে ভুল করে থাকে। প্রতি বছর ন্যায় এবারো এক সের সাড়ে বারো ছটাক অর্থাৎ ১৬৫৭ গ্রামের পরিবর্তে তারা ১৬৫০ গ্রাম হিসাব করে ফিতরা নির্ধারণ করেছে। কাজেই ফিতরা সম্পর্কে ইসলামিক ফাউন্ডেশন যে ফতওয়া দিয়েছে তা সম্পূর্ণই ভুল ও পরিত্যাজ্য।

শুদ্ধ গাণিতিক হিসাব করতে না পারায় প্রতিবছরই ইফা ফিতরা নির্ধারণে তিন ধরনের ভুল করে

প্রথমত, ১৬৫৭ গ্রামের স্থলে কমিয়ে ১৬৫০ গ্রাম নির্ধারণ করে।

দ্বিতীয়ত, তারা খোলা বাজারের আটার দামে ফিতরা নির্ধারণ করে। অথচ খোলা বাজারের আটা গুণগত মানে ভাল নয় এবং তা ধনীরা তো নয়ই এমনকি মধ্যবিত্তরাও খায় না। তারা সবাই প্যাকেটের ভাল আটা খেয়ে থাকে। তারপরেও কথা হচ্ছে, প্যাকেটে আটা সব সময় ১ কেজি বা ২ কেজি পুরো থাকে না। অনেক সময় ২ কেজির প্যাকেটে থাকে ১৯৭৫ গ্রাম অথবা ১ কেজির প্যাকেটে ৯৭৫ গ্রাম বা ৯৮০ গ্রাম আটা থাকে।

তৃতীয়ত, ইফা একই মূল্য শহর, গ্রাম তথা সারাদেশ ব্যাপী নির্ধারণ করে দেয়। অথচ বিভিন্ন অঞ্চলে দামের তারতম্য থাকতে পারে এবং সে হিসাবেই ফিতরার পরিমাণ নির্ধারণ হওয়া বাঞ্ছনীয়। কেননা দেশের বিভিন্ন এলাকায় আটার দাম বিভিন্ন রকম।

কাজেই যাদের উপর ছদকাতুল ফিতর ওয়াজিব, তাদেরকে বর্তমান মূল্য হিসাবে এক সের সাড়ে বারো ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য হিসেবে দিতে হবে। এ বছর ঢাকা শহরে ৩৪.৫০ টাকা কেজি হিসাবে এক সের সাড়ে বারো ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য- ৫৭.১৬৬৫ টাকা অর্থাৎ ৫৮ টাকা (প্রায়)।

যেমন, ১ কেজি বা ১০০০ গ্রাম আটার মূল্য ৩৪.৫০ টাকা।
প্রতি গ্রাম আটার মূল্য ৩৪.৫০ ÷ ১০০০ = ০.০৩৪৫ টাকা
১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য ১৬৫৭ x ০.০৩৪৫ = ৫৭.১৬৬৫ টাকা অর্থাৎ ৫৮ টাকা (প্রায়)। এর কম দেয়া যাবে না। তবে ইচ্ছা করলে বেশি দিতে পারবে।
অথচ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভুল হিসাবে এসেছে ৫৫ টাকা তা সম্পূর্ণই ভুল ও পরিত্যাজ্য

দেশের সব এলাকার আটার দাম এক রকম নয়। সাধারণত শহরের তুলনায় গ্রামে দ্রব্যমূল্যের দাম কিছুটা কম হয়ে থাকে। আবার খোলা আটার তুলনায় প্যাকেটের আটার মান ভালো হয়ে থাকে এবং তার দামও বেশি হয়ে থাকে। শরীয়তের ফতওয়া হচ্ছে, যেটা সবচেয়ে ভাল, পছন্দনীয় ও মূল্যবান সেটাই দান করতে হবে। খারাপ বা নিম্ন মূল্যের যেটা সেটা দান করা যাবে না। কেননা হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে,

عَنْ حَضَرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا نَصَدَّقَ اَحَدٌ بِصَدَ قَةٍ مِّنْ طَيِّبِ وَلَا يَقْبَلُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ اِلَّا الطَّيِّبَ

অর্থ :  হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, কোন ব্যক্তি পবিত্র বা উৎকৃষ্ট বস্তু হতে দান করলো। আর মহান আল্লাহ পাক তো পবিত্র বা উৎকৃষ্ট ব্যতীত কোন কিছুই কবুল করেন না। (বুখারী শরীফ)
আর এ বিষয়টি মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামুল্লাহ শরীফ-এ স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেন,

لَن تَنَالُواْ الْبِرَّ حَتَّى تُنفِقُواْ مِمَّا تُحِبُّونَ وَمَا تُنفِقُواْ مِن شَيْءٍ فَإِنَّ اللّهَ بِهِ عَلِيمٌ

অর্থ : তোমরা কখনই নেকী, কল্যাণ হাছিল করতে পারবে না যে পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের প্রিয় বা পছন্দনীয় বস্তু দান করবে। এবং তোমরা যা কিছু দান কর সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি অবশ্যই পূর্ণ খবর রাখেন। (সূরা আল ইমরান, আয়াত শরীফ ৯২)

ছদকাতুল ফিতরের পরিমাণ ও তার মূল্য নির্ধারণ সম্পর্কে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে (ইফা) অনুষ্ঠিত সভায় মাওলানা, মুফতী, ইমাম ও খতীব ছাহেবরা যে সিদ্ধান্ত প্রদান করেছে তা ভুল ও অশুদ্ধ। সুতরাং উল্লিখিত পরিমাণে কেউ ছদকাতুল ফিতর আদায় করলে তা আদায় হবে না। কারণ ছহীহ এবং গ্রহণযোগ্য মতে, নিছফু ‘সা’ বা অর্ধ ‘সা’ বলতে এক সের সাড়ে বারো ছটাক বুঝানো হয়েছে, যা গ্রাম হিসেবে প্রায় ১৬৫৭ গ্রাম হয়।

রমাদ্বান শরীফ মুসলমানদের জীবনে অবারিত রহমত, বরকত, ছাকীনা, মাগফিরাত, নাযাতের মাস। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে তাক্বওয়া হাছিলের এক অনন্য সম্ভার। এ মাসের পর পশ্চিমাকাশে বাঁকা চাঁদ অবলোকনের মাধ্যমে আনন্দের বারতা নিয়ে আসে ঈদুল ফিতর। এ ঈদে খুশি প্রকাশের জন্যে নতুন পোশাক কেনার ধুম পড়ে রমাদ্বান মাস থেকেই। আর এ উপলক্ষে সমস্ত মার্কেটগুলোতে রমাদ্বানের পবিত্রতার প্রতি নূন্যতম ভ্রূক্ষেপ না করে চলে অবাধ বেহায়াপনা-বেলেল্লাপনার হিড়িক। রমাদ্বানের পবিত্রতা রক্ষা করার চেয়ে ঈদ পালনই মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। অথচ ঈদ তাদেরই জন্যে যারা রমাদ্বানের হক্ব তথা পবিত্রতা যথাযথভাবে আদায় করেছে। অন্য দিকে ঈদের কেনাকাটায় বেশিরভাগ মুসলমান পুরুষেরই প্রথম পছন্দ কোনা ফাঁড়া পাঞ্জাবী। অথচ তারা ঘুনাক্ষরেও চিন্তা করে না যে, পোশাকটি ইসলামে বৈধ কিনা।

ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায় যে, বাদশাহ আকবর যে “দ্বীনে ইলাহী” প্রতিষ্ঠা করেছিল হিন্দুরাও তার সদস্য ছিল। হিন্দুরা তাদের চিরাচরিত প্রথানুযায়ী খোলা শরীরে ধুতি, পৈতা ও টিকলী পরিধান করেই বাদশাহর শাহী দরবারে আসা-যাওয়া করতো। বাদশা দেখলো এরূপ পোশাকহীন বা উলঙ্গ অবস্থায় বাদশাহর দরবারে প্রবেশ করা বাদশাহর শানের খিলাফ। তাই বাদশাহ তাদেরকে খোলা শরীরে এবং খালি মাথায় শাহী দরবারে আসতে নিষেধ করলো এবং পোশাক পরিধান করে আসার নির্দেশ দেয় তবে মুসলমানদের খেলাফ পোশাক ব্যবহার করতে বলে। তখন হিন্দুরা শলা-পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিল তারা পোশাক পরেই শাহী দরবারে যাবে। তবে মুসলমানগণের পোশাক পরে নয়। সেটা হবে মুসলমানগণের খিলাফ; স্বতন্ত্র এক পোশাক।

স্মর্তব্য যে, মুশরিক তথা হিন্দুরা যে মুসলমানদের চিরশত্রু তা স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনিই কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেছেন,


لَتَجِدَنَّ اََشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَةً لِّلَّذِينَ آمَنُوا اليَهُودَ وَالَّذِينَ اَشْرَكُوا

অর্থ : “তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে। অতঃপর যারা মুশরিক তাদেরকে।” (সূরা মায়িদা-৮২)

মুসলমানদের সাথে ইহুদী ও মুশরিকদের শত্রুতা চিরদিনের। তারা কখনো মুসলমানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে না। সবসময় বিরোধীতায় লিপ্ত। শত্রুতাবশত প্রতিটি ক্ষেত্রে মুসলমানদের বিপরীত কাজ করে থাকে। তাই মুসলমানগণের চিরশত্রু সেই হিন্দু সম্প্রদায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো তারা মুসলমানগণের মত লম্বা ও ঢিলা ঢালা জামা পরিধান করবে না। আর ইহুদী-নাছারাদের মত শার্ট, প্যান্ট, টাইও পরবে না। তারা কোনা ফাঁড়া খাটো পাঞ্জাবী পরিধান করবে।

কারণ দু’টি-

(১) মুসলমানদের কোর্তা গোল বিধায়, তারা কোনা ফাঁড়া পাঞ্জাবী ব্যবহার করবে, যেন মুসলমানদের সাথে মিল না হয়।
(২) তারা যেহেতু ধুতি পরিধান করে তাই ধুতির লেজকে পাঞ্জাবীর পকেটে রাখতে সহজ হবে। কেননা পাঞ্জাবীর কোনা যদি ফাঁড়া না হয় তবে ধুতির লেজ পকেটে ঢুকানো হলে পাঞ্জাবী উঠে থাকে। সেজন্যে তারা কোনা ফাঁড়া পাঞ্জাবী ব্যবহার করে, এতে ধুতীর লেজ পাঞ্জাবীর পকেটে রাখলেও পাঞ্জাবী উঠে থাকলো না।

আবার মুসলমানরা যেহেতু গোল টুপি ব্যবহার করতো সেহেতু তারা লম্বা টুপি অর্থাৎ দোপাট্টা বা কিস্তি টুপিকে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিলো।

তখন থেকে হিন্দুরা কোনা ফাঁড়া পাঞ্জাবী এবং দোপাট্টা বা কিস্তি টুপি পরে বাদশাহের শাহী দরবারে যাতায়াত করতে থাকে। অদ্যাবধি হিন্দুরা সেই কোনা ফাঁড়া পাঞ্জাবী এবং ধুতিকে অত্যন্ত সম্মানজনক ও সম্ভ্রান্ত পোশাক মনে করে বিধায় কোনা ফাঁড়া পাঞ্জাবী পরে ধুতির লেজ কোনার ফাঁক দিয়ে পকেটে রেখে দিতে অনেক স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। অতএব, প্রমাণিত হলো যে, লম্বা বা কিস্তি টুপি ও কোনা ফাঁড়া পাঞ্জাবী হিন্দুদেরই পোশাক এবং তারাই এর উৎপত্তিকারক।
আর হুজ্জাতুল ইসলাম, হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত কিতাব “আল মুর্শিদুল আমীন” কিতাবে লিখেন, ইবলীস যখন হযরত মূসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে সাক্ষাৎ করে, তখন ইবলীসের মাথায় লম্বা টুপি ছিল।

তাহলে মুসলমানদের চিন্তা করা উচিত যে, এই কোনা ফাঁড়া পাঞ্জাবী ও লম্বা টুপি পরিধান করে মুসলমানদের চির শত্রু হিন্দুদের সাথে মিল রাখবে নাকি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নতের অনুসরণে গোল ক্বমীছ বা কোর্তা ও চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপি পরিধান করবে। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেছেন,

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ

অর্থ : “নিশ্চয় তোমাদের জন্যে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ উনার মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।” (সূরা আহযাব, আয়াত শরীফ : ২১)
আর হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,

عَنْ حَضَرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ

অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য বা মিল রাখবে, সে ব্যক্তি তাদেরই দলভুক্ত হবে। অর্থাৎ তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে। (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ)

http://www.simplyislam.com/images/products/50059.jpg

চিত্র : হিন্দু-মুশরিকদের ব্যবহৃত কিস্তি টুপি, যা মুসলমানদের জন্যে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ হারাম

http://www.indienhaus.de/WebRoot/Store12/Shops/10739552/4896/2421/A9B5/D0BA/5236/C0A8/2935/A6C7/Kurta.jpg

চিত্র : হিন্দু-মুশরিকদের ব্যবহৃত ধুতিসহ কোনা ফাঁড়া পাঞ্জাবী, যা মুসলমানদের জন্যে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ হারাম

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আহওয়াছ ইবনে হাকীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট নিকৃষ্ট লোক সম্পর্কে জানার জন্য প্রশ্ন করলেন। তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তুমি আমাকে খারাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না বরং ভাল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো। তিনি এটা তিনবার বললেন। অতঃপর বললেন, সাবধান! নিশ্চয়ই নিকৃষ্টেরও নিকৃষ্ট লোক হলো দুনিয়ালোভী ধর্মব্যবসায়ী আলিমগণ আর নিশ্চয়ই সৃষ্টির শ্রেষ্ট হচ্ছেন হচ্ছেন হক্কানী-রব্বানী আলিম উনারা।” (দারিমী শরীফ)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ-এ মূলত দু’প্রকার আলিমের কথা বলা হয়েছে। যথা-
(১) হক্ব আলিম বা দ্বীনদার আলিম
(২) না-হক্ব আলিম বা দুনিয়াদার আলিম।
নিম্নোক্ত ঘটনা দ্বারা আরো সুস্পষ্টভাবে দ্বীনদার আলিম ও দুনিয়াদার আলিমের পরিচয় ফুটে উঠবে।

বাদশাহ শাহজাহান একবার তার দরবারী আলিমদের নিকট ফতওয়া তলব করে বললো, আমি অসুস্থ, অসুস্থতার কারণে আমার জন্য রেশমী কাপড় পরিধান করা জায়িয হবে কি? দরবারী আলিমরা বাদশার মনতুষ্টির জন্যই হোক বা দুনিয়াবী ফায়দা লাভের জন্যই হোক, তারা ফতওয়া দিল, বাদশাহ নামদার যেহেতু আপনি অসুস্থ আর আপনি অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজ্য অচল হয়ে পড়বে। কাজেই রাজ্য ও প্রজাদের বৃহত্তর স্বার্থে আপনার জন্য এ অবস্থায় রেশমী কাপড় পরিধান করা জায়িয হবে। বাদশা তার দরবারী আলিমদের মৌখিক ফতওয়ায় আশ্বস্ত না হতে পেরে লিখিত ফতওয়ার নির্দেশ দিলো। দরবারী আলিমরা বাদশাহকে এ ব্যাপারে লিখিত ফতওয়া দিল। বাদশাহ তাতেও নিশ্চিত হতে না পেরে বললো, এ ফতওয়াতে অন্যান্য আরো আলিমের দস্তখত লাগবে। দরবারী আলিমরা তখন তাদের সমগোত্রীয় ৩০০ আলিমের দস্তখত সংগ্রহ করে ফতওয়াটি বাদশাহর নিকট পেশ করলো। বাদশাহ ফতওয়াটি আদ্যপান্ত ভালরূপে পাঠ করে দেখে বললো যে, সেখানে তার শাহী মসজিদের যিনি খতীব, নূরুল আনওয়ার ও তাফসীরে আহ্‌মদীর ন্যায় বিশ্ববিখ্যাত কিতাবের মুছান্নিফ, তৎকালীন যামানার শ্রেষ্ঠতম আলিম, হযরতুল আল্লামা মুল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দস্তখত ব্যতীত এ ফতওয়া গ্রহনযোগ্য হবে না। তখন দরবারী আলিমরা উক্ত ফতওয়াটি হযরত মুল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবারে নিয়ে যায় দস্তখত নেবার জন্য। হযরত মুল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আমি আজ এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করবো না, বরং বাদশাহ আমার মসজিদে জুমুয়ার নামাজ পড়তে আসে, তাই আমি বাদশাহ ও মুছল্লীগণের সম্মূখে এ ব্যাপারে ফতওয়া দিব। অতঃপর জুমুয়ার দিন বাদশাহ তার উজীর-নাজীরসহ জুমুয়ার নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে গেলো। অনেক মুছল্লীও উপস্থিত হলো এবং দরবারী আলিমরাও উপস্থিত। সকলেই অপেক্ষা করছে হযরত মুল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফতওয়া শুনার জন্য। ইতিমধ্যে হযরত মুল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মিম্বরে উঠে বসলেন এবং বললেন, মুছল্লী ভাইয়েরা আমার নিকট ৩০০ আলিমের দস্তখত সম্বলিত একটি ফতওয়া এসেছে। যাতে বলা হয়েছে যে, বৃহত্তর স্বার্থে, বাদশাহর অসুস্থতার কারণে, বাদশাহর জন্য রেশমী কাপড় পরিধান করা জায়িয। এ ব্যাপারে আমার ফতওয়া হলো “যারা এ ফতওয়া দিয়েছে এবং যে চেয়েছে উভয়েই কাফির হয়ে গেছে।” কারণ ওহীর দরজা বন্ধ হয়ে গেছে, হারাম হারাম হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে গেছে এবং হালাল হালাল হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে গেছে। তাই শরীয়তের দৃষ্টিতে হারামকে হালাল আর হালালকে হারাম বলা কাট্টা কুফরী। যারা বলবে তারা কাট্টা কাফির হবে।

উপরোক্ত ঘটনা দ্বারা যেরূপ দুনিয়াদার আলিম বা ধর্মব্যবসায়ী আলিমদের মুখোশ সুস্পষ্টভাবে উম্মোচিত হলো, তদ্রুপ উলামায়ে হক্ব তথা দ্বীনদার আলিম উনাদের পরিচয় বা লক্ষণও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো।

সুতরাং, যাঁরা দ্বীনকে রক্ষা করার জন্য সবকিছু বিসর্জন দেন, প্রতিক্ষেত্রে ছহীহ্‌ আক্বীদা পোষণ করেন, মহান আল্লাহ পাক ও উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে ভয় করেন, ইলম অনুযায়ী আমল করেন, সুন্নতের ইত্তিবা (অনুসরণ-অনুকরণ) করেন, হারাম থেকে বেঁচে থাকেন উনারাই হক্কানী আলিম, আর উনারাই হলেন উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম।

আর যারা দুনিয়াবী ফায়দা হাছিলের লক্ষ্যে, দুনিয়ার সামান্য সম্পদ ও মান-সম্মান হাছিল করার জন্য ঈমান ও আমল ধ্বংস করে দেয়। যেমন বর্তমানে কেউ কেউ দুনিয়াবী ফায়দা হাছিলের জন্য বা ক্ষমতা লাভের উদ্দেশ্যে ইসলামের নামে গণতন্ত্র ভিত্তিক আন্দোলন করছে, যে গণতন্ত্র অনুসরণ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়িয। কারণ গণতন্ত্র হলো ইহুদী-নাছারা বা মানব রচিত মতবাদ। অথচ এক শ্রেণীর আলিম তাদের নিকট গণতন্ত্র হারাম একথা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও তারা গণতন্ত্র চর্চা করছে। (নাঊযুবিল্লাহ্‌) মূলতঃ তাদের গণতন্ত্রভিত্তিক আন্দোলন করার উদ্দেশ্য হলো দুনিয়াবী কিছু ফায়দা হাছিল করা।
তাদের মধ্যে আবার কেউ কেউ অহরহ পেপার-পত্রিকায় নিজের ছবি ছাপাচ্ছে এবং ইসলামের নামে টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করছে। (নাঊযুবিল্লাহ্‌) অথচ ছবি তোলা, আঁকা, রাখা ইত্যাদি সবই শরীয়তে কাট্টা হারাম। কিন্তু তারা বিনা দ্বিধায় এ হারাম কাজগুলো করে যাচ্ছে। মূলতঃ এরাই হলো ধর্মব্যবসায়ী অর্থাৎ না-হক্ব আলিম।

পশ্চিমা দেশগুলো ও জাতিসংঘ সবসময় মানবাধিকার কথা বলে বেড়ায়। মুসলিম দেশগুলোকে কথিত মানবাধিকারের নামে চাপে রাখে। কিন্তু নিজেরা যেভাবে অব্যাহতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে আসছে সেটা তারা দেখেনা আর দেখলেও না দেখার ভান করে। এমনকি যে জাতিসংঘ কথিত মানবাধিকার রক্ষার নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাস্তবে সে জাতিসংঘ একটা বহুরূপী ইহুদীবাদী সংস্থায় পরিণত হয়েছে। পশ্চিমা ইহুদী-খ্রিস্টান দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষা আর ইসলাম বিরোধী আইন-কানুন তৈরী ও মুসলিম দমনই যেন এর প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানবাধিকারের নামে বিভিন্ন ইসলাম বিরোধী আইন কানুন তৈরী করে মুসলিম দেশগুলোর উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। মানতে বাধ্য করছে।

ইহুদীবাদী এ সংস্থাটি মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া থেকে পূর্ব তিমুরকে এবং সুদান থেকে দক্ষিণ সুদানকে গণভোটের মাধ্যমে দুটি স্বাধীন খ্রিস্টান দেশ তৈরী করে দিয়েছে। এর আগে মুসলিম দেশ ইথিওপিয়া থেকে ইরিত্রিয়াকে আলাদা করে আরেকটি স্বাধীন খ্রিস্টান দেশ তৈরী করে। এ ইহুদীবাদী সংস্থাটির তত্বাবধানে পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতিদের খ্রিস্টান বানিয়ে বাংলাদেশে আলাদা খ্রিস্টান রাজ্য গড়ার পথ অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। অথচ আরবে ফিলিস্তিন, ভারতে কাশ্মীর, চীনে উইঘুর, রাশিয়ায় চেচনিয়া, মিয়ানমারে আরাকান, ফিলিপাইনে মিন্দানাও, থাইল্যান্ডে ইয়ালা, পাত্তানি ও নারাথিওয়া ইত্যদি প্রদেশের স্বাধীনতা দিতে গণভোট আয়োজনে ইহুদীবাদী জাতিসংঘের অনীহা প্রচ-। অথচ এসব প্রদেশে দশকের পর দশক ধরে মুসলমানদের রক্ত ঝরছে।

তাছাড়া সারা বিশ্বে মুসলমানদের উপর বৈষম্য বাড়ছে ক্রমাগত হারে। বিভিন্ন যালিম দেশ মুসলমানদের উপর অব্যাহতভাবে নির্যাতন করে যাচ্ছে, একের পর এক মুসলিম দেশ দখল করে নিচ্ছে। মুসলমাদের ধর্মীয় অধিকার দলিত-মথিত করে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাচ্ছে।

সুইজারল্যান্ড আইন করে সেদেশে মিনার নির্মাণ নিষিদ্ধ করেছে।

বোরকা তথা পর্দা নিষিদ্ধ করেছে ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডসে।

ডেনমার্কে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কার্টুন প্রকাশ করেছে।

নেদারল্যান্ডে কুরআন শরীফ পুড়িয়েছে আবার ছিঁড়ে ফেলার দৃশ্য প্রকাশও করেছে। কুরআন শরীফ-এর নামে ফ্যাসিবাদী চরিত্র নিয়ে সিনেমাও করেছে নেদারল্যান্ডে।

জার্মানিতে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার প্রতি অপবাদ লেপন করে ‘জুয়েল অব মদিনা’ নামক অপন্যাস বের করেছে। (নাউযুবিল্লাহ)

অথচ এসব বিষয়ে তথা মুসলমানদের রাষ্ট্রীয় অধিকার, ধর্মীয় অধিকার ক্ষুন্ন করার বিষয়ে তথাকথিত মানবাধিকারের ধ্বজাধারী জাতিসংঘসহ পশ্চিমা দেশগুলোর কোন প্রতিবাদ নেই, কোন শব্দ নেই, কোন উদ্যোগ নেই। কিন্তু কেন?


http://2.bp.blogspot.com/_t2Ry7I5DNuQ/TO6modSIbPI/AAAAAAAAF-w/McxS-PEogcA/s1600/burn%2Bquran.jpg

http://i.ytimg.com/vi/cBwVZO8sYi8/0.jpghttp://lstcccme.files.wordpress.com/2011/04/koran-burning.jpg

http://www.metalkingdom.net/album/cover/d34/35772_janaza_burning_quran_ceremony.jpg

http://www.okaz.com.sa/new/Issues/20120 … 518064.htm

طالبوا بعدم قبول إفادات الشهود غير الموثقة .. فلكيون عرب لـ «عكاظ»:

رؤية الهلال ليلة الجمعة بالعين المجردة مستحيلة في الرياض والقاهرة

হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, তোমরা রোযা রাখ চাঁদ দেখে, ইফতারী কর চাঁদ দেখে। যদি ২৯ তারিখে আকাশ মেঘলা হয়, চাঁদ দেখা না যায় তাহলে ৩০ তারিখ গণনা করে ঈদ করবে। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-“হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, তোমরা রোযা রাখ চাঁদ দেখে এবং রোযা ভাঙ্গ চাঁদ দেখে। যদি মেঘের কারণে তোমাদের প্রতি চাঁদ গোপন থাকে তবে শা’বান মাস ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ ১৭৪)

অর্থাৎ ২৯ শে শা’বান যদি কোন কারণবশতঃ চাঁদ দেখা না যায় তবে শা’বান মাসকে ৩০ দিন পূর্ণ করে অতঃপর রমাদ্বান শরীফ এর রোযা রাখবে।
আবার ২৯ শে রমদ্বান শরীফ যদি চাঁদ দেখা না যায় তাহলে রমাদ্বান শরীফ এর রোযা ৩০টি পূর্ণ করে ১লা শাওওয়াল ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে হবে।
আরো ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, তোমরা রমাদ্বান শরীফ এর রোযা পালনের জন্য সঠিকভাবে শা’বানের চাঁদের হিসাব রাখবে।” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ ১৭৪)

চাঁদ দেখে মাস নির্ধারণ করতে হবে। চাঁদ দেখার মাসয়ালা হচ্ছে, শা’বান, রমাদ্বান শরীফ, শাওওয়াল এবং যিলহজ্জ এ চার মাসে চাঁদ তালাশ করা হচ্ছে ওয়াজিবে কিফায়াহ। কারো কারো মতে, ফরযে কিফায়াহ। কিছু লোককে চাঁদ তালাশ করতেই হবে।

এখন রমাদ্বান শরীফ, শাওওয়াল এবং যিলহজ্জ এ তিনমাস ব্যতীত যে নয় মাস রয়েছে এ নয় মাসের চাঁদের হুকুম হচ্ছে, আকাশ পরিষ্কার থাকুক অথবা মেঘলা থাকুক এই নয় মাসের চাঁদ দেখার জন্য দু’জন পুরুষ স্বাক্ষী দিবে অথবা একজন পুরুষ দু’জন মহিলা স্বাক্ষী দিবে তাহলে রমাদ্বান শরীফ, শাওওয়াল, জিলহজ্জ এই তিনমাস ব্যতিত অন্য মাসের চাঁদগুলোকে গ্রহণ করা হবে।

শাওওয়াল এবং যিলহজ্জ এ দু’মাসের চাঁদ দেখার হুকুম হচ্ছে আকাশ মেঘলা থাকলে কমপক্ষে দু’জন পুরুষ অথবা এক জন পুরুষ দু’জন মহিলা চাঁদ দেখতে হবে।
আর যদি আকাশ পরিষ্কার থাকে তাহলে শাওওয়াল এবং যিলহজ্জ অর্থাৎ রোজার ঈদ এবং কুরবানীর ঈদের চাঁদ এত সংখ্যক লোক দেখতে হবে, যেটা মিথ্যা বলা সম্ভব নয়।

আকাশ পরিষ্কার থাকলে রমাদ্বান শরীফ এর চাঁদ দেখার জন্য এতসংখ্যক লোকের দেখার প্রয়োজন রয়েছে, যেটা মিথ্যা বলা সম্ভব নয়।
আর রমাদ্বান শরীফ এর চাঁদ অর্থাৎ ২৯শে শা’বান যদি আকাশ মেঘলা থাকে তাহলে রমাদ্বান শরীফ এর জন্য ১জন পুরুষ অথবা ১জন মহিলা চাঁদ দেখলেই সেটা রমাদ্বান শরীফ এর চাঁদ হিসেবে গণ্য হবে।

হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে, “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, লোকজন চাঁদ দেখলে আমিও দেখলাম, আমি দেখে এসে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছলাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমি চাঁদ দেখেছি। যখন আমি স্বাক্ষী দিলাম, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার সাক্ষী গ্রহণ করে নিজেও রোযা রাখলেন মানুষকেও রোযা রাখতে বললেন।”  (আবূ দাঊদ শরীফ, দারিমী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

মোটকথা, রমাদ্বান শরীফ-এর চাঁদ দেখার জন্য আকাশ যদি মেঘলা তাকে তাহলে ১জন পুরুষ বা একজন মহিলা দেখলেই সেটা যথেষ্ট কিন্তু আকাশ পরিষ্কার থাকলে এত সংখ্যক পুরুষ বা মহিলা চাঁদ দেখতে হবে যেটা মিথ্যা বলা সম্ভব নয়।

এখন চাঁদ দেখার জন্য কোশেশ বা চেষ্টা করতে হবে। এতে কোন ত্রুটি করা যাবে না। কেননা চাঁদ তালাশ করা হচ্ছে ওয়াজিবে কিফায়াহ।
তবে বিশেষ করে মুসলমান দেশগুলোতে যদি হিলাল কমিটি থাকে তাহলে হিলাল কমিটি দেখলেই সমস্ত লোকের ওয়াজিবে কিফায়া আদায় হয়ে যাবে। তারপরেও জনগণের জন্য সেটা তালাশ করার হুকুম রয়েছে। যেহেতু শা’বান, রমাদ্বান শরীফ, শাওওয়াল, যিলহজ্জসহ প্রতিটি মাস মুসলমানদের ইবাদত বান্দেগীর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই চাঁদ তালাশ করা ফরযে কিফায়া, ওয়াজিব কিফায়াহ ফতওয়া দেয়া হয়েছে। এখন অবশ্যই কিছু লোককে চাঁদ তালাশ করতেই হবে। যদি কেউ তালাশ না করে তাহলে সকলেই ফরয এবং ওয়াজিব তরকের গুনায় গুনাহগার হবে।
বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ তাই চাঁদ দেখার জন্য মুসলিম বিজ্ঞানীগণ কতগুলো শর্ত বের করেছেন সে শর্তগুলো পূর্ণ হলে আরবী মাসের ২৯তম দিনে চাঁদ দেখতে পাওয়ার সম্ভবনা থাকে। অর্থাৎ অগ্রীম বুঝা যায় যে, চাঁদ দেখা যাবে কিংবা যাবে না। কিন্তু তারপরও চাক্ষুষ চাঁদ দেখা শরীয়তের শর্ত।

মুসলিম বিজ্ঞানীগণ কতগুলো শর্ত বের করেছেন সে শর্তগুলো হলো-
১)    চাঁদের বয়স    : সাধারণভাবে চাঁদ দেখতে পাওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ১৭ ঘণ্টা এবং সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা।
২)    চন্দ্র, সূর্যের কৌণিক দূরত্ব : বর্তমানে বায়ুমণ্ডলের দূষণ, আলোর দূষণ এবং ধূলাবালির কারণে চাঁদ সূর্য থেকে ১০-১০.৫ ডিগ্রী পর্যন্ত সরে আসলে তারপর চাঁদ দৃশ্যমান হয়। এই পরিমাণ কোণ তৈরী করতে চাঁদের লাগে প্রায় ১৭ থেকে ২৩ ঘণ্টা।
৩)    দিগন্তরেখার উপর চাঁদের উচ্চতা :
সাধারণত যে চাঁদ সূর্যাস্তের সময় দৃশ্যমান হবে সাধারণতঃ সে চাঁদকে ১০ ডিগ্রী উচ্চতায় বা তার চেয়েও অধিক উচ্চতায় অবস্থান করতে হয়।
৪)    সূর্যাস্তের লাল আভা বিকিরণের বিস্তৃতি ও স্থায়ীত্ব : দিগন্তের উজ্জলতার চেয়ে চাঁদের উজ্জলতা কম থাকলে খালি চোখে চাঁদ দৃশ্যমান হয় না।
৫)    হিলালের তীর্যক পথ ও খাড়া পথে গমণ :
অনেক সময় চাঁদের ৪০ ঘণ্টা বয়স না হলে দেখা যায় না এর কারণ হচ্ছে, হিলালের পথ পশ্চিমাকাশে তীর্যকভাবে থাকে, খাড়াভাবে থাকে না। হেলানো বা তীর্যকপথে হিলালের অস্ত যেতে সময় লাগে অনেক কিন্তু সূর্যের মধ্যে ডুবে থাকার কারণে দেখা যায় না।
৬)    হিলালের আলোকিত অংশ বা চাঁদের পুরুত্ব : যে চাঁদ তার জন্মের সময় সম্পূর্ণ অন্ধকার থাকে না তাকে দেখার সম্ভাবনা, যে চাঁদ অমাবস্যার সময় সম্পূর্ণ অন্ধকার থাকে তার চেয়ে দেখার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যদিও চাঁদের বয়স সমান থাকে। এ কারণেই বিজ্ঞানীরা চাঁদের প্রশস্থতাকে চাঁদ দেখার একটি শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
৭)    পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব এবং সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব : পৃথিবীর চতুর্দিকে চাঁদের কক্ষপথ কখনই পরিপূর্ণ গোল নয় বরং উপবৃত্তাকার। সে কারণে চাঁদ পৃথিবীর কাছে থাকে এবং কখনও দূরে অবস্থান করে। আবার সূর্যের চতুর্দিকে পৃথিবীর কক্ষপথও পুরোপুরি গোলাকার নয় বরং উপবৃত্তাকার। সুতরাং পৃথিবী কখনও সূর্যের কাছে থাকে এবং কখনও দূরে।
তাই চাঁদ ও পৃথিবীর সূর্যের কাছাকাছি অবস্থান এবং কখনও দূরে অবস্থানের বিষয়টি চাঁদ কখন, কোথায় প্রথম দৃশ্যমান হবে তার সাথে জড়িত।
৮)    রাস্তাঘাট ও বাড়ীঘরের আলো : রাস্তাঘাটের অতিরিক্ত আলো যে অস্বচ্ছ পরিবেশ সৃষ্টি করে তা চাঁদ দেখতে পাবার জন্যে যথেষ্ট বাধার কারণ। অনেক সময় আকাশ পরিস্কার থাকলেও রাস্তাঘাটের উজ্জ্বল আলো চাঁদের ম্লান আলোকে বাধাগ্রস্ত করে।
৯)    বায়ুস্তরে ভাসমান পদার্থের পরিমান : ‌বাতাসে ভাসমান ধুলিকণা হিলালের আলো বিক্ষিপ্তভাবে প্রতিফলিত করে থাকে। এই বিক্ষিপ্ত আলো আমাদের চোখে পৌঁছেনা। যে অঞ্চলে বাতাসে ধুলিকণার পরিমাণ খুব বেশী সেখানে অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় হিলাল দেখার সম্ভাবনা কম হবে।
১০)    চাঁদ ও সূর্যের অস্ত যাওয়ার সময়ের পার্থক্য : চাঁদ ও সূর্যের অস্ত যাওয়ার সময়ের পার্থক্য যদি ৪২ মিনিট হয় তবে প্রথম ১০ মিনিটে চাঁদ দৃশ্যমান হবে না। সূর্য অস্ত যাওয়ার ২০-৩০ মিনিট পর চাঁদ দৃশ্যমান হবে।
১১)    আজীমাত :
চাঁদ প্রতি মাসে একই স্থানে দেখা যায় না। পশ্চিমে ডান ও বামে সরে সরে আসে।
১২)    গোধুলী : সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই আকাশ অন্ধকার হয় না। দৃশ্যতঃ সূর্যাস্তের পরও বায়ুমন্ডলের উপরিভাগ সূর্যের রশ্মিকে কিছুক্ষণ ধরে রাখতে সক্ষম হয় এবং আকাশ আলোকিত করে।

উপরোক্ত শর্তসমূহের সংক্ষিপ্ত আলোচনা হতে দেখা যায় যে, চাঁদের বয়স ১৭-২৩ ঘন্টা হলেও অন্যান্য শর্তসমূহ পূর্ণ না হলে চাঁদ দেখা যাওয়ার সম্ভবনা কম থাকে।

অথচ সউদী আরবের তথাকথিত আলিম আব্দুল্লাহ আলমানী চাঁদ দেখাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে আগাম ঘোষণা দিয়েছে যে, ২২শে ছানী ১৩৮০ শামসী সন (অর্থাৎ ২০শে জুলাই ২০১২ ঈসায়ী সন) ইয়াওমুল জুমুয়াতি বা শুক্রবার হবে সউদী আরবে পহেলা রমাদ্বান শরীফ। নাউযুবিল্লাহ!

২১শে ছানী ১৩৮০ শামসী সন (১৯শে জুলাই ২০১২ ঈসায়ী সন) ইয়াওমুল খামীসি বা বৃহস্পতিবার সউদী আরবে অমাবস্যার দিন।

সেদিন অমাবস্যা সংঘটিত হবে : সউদী আরবের সময় অনুযায়ী সকাল ৭টা ২৪ মিনিটে

সেদিন সূর্যাস্ত হবে : সউদী আরবের সময় অনুযায়ী সন্ধ্যা ৭টা ৭ মিনিটে

অর্থাৎ সূর্যাস্তের সময় চাঁদের বয়স হবে : ১১ ঘন্টা ৪৩ মিনিট

আর চন্দ্রাস্ত হবে : সউদী আরবের সময় অনুযায়ী সন্ধ্যা ৭টা ১৩ মিনিটে

অর্থাৎ চাঁদ ও সূর্যের অস্ত যাওয়ার সময়ের পার্থক্য : মাত্র ৬ মিনিট

এছাড়া চাঁদের উচ্চতা থাকবে দিগন্তরেখা বরাবর (০ ডিগ্রি)

এমতাবস্থায় ২১শে ছানী ১৩৮০ শামসী সন (১৯শে জুলাই ২০১২ ঈসায়ী সন) ইয়াওমুল খামীসি বা বৃহস্পতিবার সউদী আরবে চাঁদ দৃশ্যমান হওয়ার কোনোই সম্ভাবনা নেই।

আর বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, শরীয়তে চাঁদ দেখা ছাড়া কোনভাবেই অগ্রীম কোন আরবী মাস শুরু করা সম্পূর্ণ অবৈধ। কেননা হাদীছ শরীফ-এ স্পষ্ট ইরশাদ হয়েছে-“হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, তোমরা রোযা রাখ চাঁদ দেখে এবং রোযা ভাঙ্গ চাঁদ দেখে। যদি মেঘের কারণে তোমাদের প্রতি চাঁদ গোপন থাকে তবে শা’বান মাস ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ ১৭৪)


এমতাবস্থায় সারাবিশ্বের মুসলমানগণের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে, সউদী ওহাবী সরকারের এরূপ শরীয়তবিরোধী ও মনগড়া কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ করা।

আমাদের দেশের শাসকশ্রেণীর ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং উলামায়ে ‘সূ’দের অপব্যাখ্যার কারণে দেশের সাধারণ মানুষ ইসলামের সঠিক শিক্ষা এবং তা পালন থেকে অনেক দূরে। ৯৭ ভাগ মুসলমানের এ দেশটিতে ইসলাম একটি আনুষ্ঠানিকতা সর্বস্ব বিষয় হিসেবে রূপ লাভ করেছে। শরীয়ত মুতাবিক পালিত না হয়ে অনেক বিষয় লৌকিকতা সর্বস্ব সংস্কৃতির মধ্যে প্রবেশ করেছে। সে কারণেই-
* রমাদ্বান শরীফ-এর রোযার ফরয-ওয়াজিব ভুলে গিয়ে মানুষ ইফতার পার্টির আনন্দে মেতে উঠে।
* ইফতারের আয়োজনে নারী-পুরুষের সমাগম হয় পর্দার গুরুত্ব উপেক্ষা করে।
* দোয়া কবুলের ঈদের রাতটিকে ভুলে গিয়ে মানুষ শরীয়ত বর্হিভূত আনন্দ আর বেহায়াপনায় মেতে উঠে।
* রোযার পূর্বেই শুরু হয় পত্রিকাগুলোতে ঈদ ফ্যাশনের কাভারেজ। অসংখ্য অশ্লীল ছবিতে ভরে যেতে থাকে পত্রিকাগুলো।
* মিডিয়াগুলো ব্যস্ত হয়ে উঠে খেল-তামাশা প্রচারে।  নাউযুবিল্লাহ!

রমাদ্বানের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে (অনেকটা বাণিজ্যিক কারণে) পত্রিকাগুলো সৌজন্যমূলক রমাদ্বানের শুভেচ্ছা জানায় আর প্রকাশ করে সাহরী-ইফতারের একটি সময়সূচি। সাহরী-ইফতারের সময়সূচি প্রকাশ করতে গিয়ে পত্রিকাগুলো ধর্মীয় দায়িত্ববোধের চেয়ে লৌকিকতা সর্বস্ব সাংস্কৃতিক দায়িত্ববোধ দ্বারা বেশি তাড়িত থাকে। ফলে তাদের প্রকাশিত সময়সূচি অনুসরণ করে রোযাদারের রোযা হবে কি হবে না সে ব্যাপারে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। আরও একটি কারণ হলো- তারা তথ্য সূত্রে কোনোভাবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নাম যোগ করতে পারলেই ভাবে সব দায়িত্ব শেষ। অথচ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নামাযের সয়মসূচিও কিন্তু ত্রুটিমুক্ত নয়। আর ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা)’র নামাযের সময়সূচি ছাড়া অন্যান্য তথ্য সূত্র থেকে যারা সাহরী-ইফতারের সময়সূচি তৈরি করেন তাদের আরও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

বাজারে প্রচলিত অনেক ক্যালেন্ডারেই কয়েকটি জেলার সময়সূচির পার্থক্য ঢাকার সঙ্গে যতটুকু হওয়া উচিত তার চেয়ে ভিন্নভাবে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। আবার অনেক দৈনিক পত্রিকায় যে সময়সূচি প্রকাশ করা হয়ে থাকে তার একটির সঙ্গে অন্যটির কোনো মিল থাকে না।
এছাড়াও কয়েকটি তথাকথিত মাদরাসা থেকে প্রকাশিত সাহরী ও ইফতারের সময়সূচিতে বড় রকমের ভুল পরিলক্ষিত হয়। উলামায়ে ‘সূ’দের অজ্ঞতার কারণে ‘মাছি মারা কেরানী’র মতো অন্ধ অনুকরণ করতে গিয়ে এ ভুলের জন্ম দিয়ে থাকে। এর মধ্যে নানান একাডেমী এবং নানান কমিটির প্রকাশিত সময়সূচি উল্লেখযোগ্য।

আজকাল যদিও বিভিন্ন কম্পিউটার সফটওয়্যারের মাধ্যমে নামাযের সময়সূচি নির্ণয় করা যায় তথাপি সফটওয়্যারের সময়সূচি নির্ধারণেও অনেকগুলো বিষয়ের উপর লক্ষ্য রাখতে হয়। যেমন-
১। প্রভাত এবং সন্ধ্যার আলোর যথাক্রমে শুরু এবং শেষ (Twilight angle of sunrise and sunset)
২। ঐ স্থানের সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা।
৩। ঐ স্থানের কেন্দ্র থেকে কতটা দূরত্বের সময়সুচি নির্ণয় করতে হবে।
৪। কোন মাযহাব অনুযায়ী নির্ণয় করতে হবে।
৫। সূর্যাস্তের (Apparent sunset) সময়ের সাথে সতর্কতামূলক সময় যোগ।
৬। অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশের সঠিক ব্যবহার ইত্যাদি।

উপরের বিষয়গুলোর জন্য সঠিক মান ব্যবহৃত না হলে সময়সূচিতে ভুল হয়ে যাবে। এছাড়াও মনে রাখা প্রয়োজন, সূর্যের চতুর্দিকে পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে সারা বছরের বিভিন্ন মাসেই ঢাকার সাথে অন্যান্য জেলার সময়ের কিছু পার্থক্য ঘটে। প্রতিমাসের জন্য এই পার্থক্য এক রকম নয়। সুতরাং, এ বছর যেহেতু ছানী মাসে (জুলাই মাসে) রমাদ্বান শরীফ শুরু হবে সুতরাং ছানী মাসের সময়ের পার্থক্যের মধ্য থেকে দু’টো মান নির্ধারণ করতে হয়, একটি সাহরীর সর্বনিম্ন পার্থক্যের মান আর ইফতারের জন্য সর্বোচ্চ পার্থক্যের মান। সাবধানতার জন্য ঢাকার সাহরীর সময়ের সাথে সর্বনিম্ন পার্থক্যের মান যোগ করে অন্য জেলার সাহরীর সময় নির্ধারণ করতে হয় আর ইফতারের সময়ের জন্য ঢাকার ইফতারের সময়ের সাথে সর্বোচ্চ পার্থক্যের মান যোগ করে অন্য জেলার ইফতারের সময়সূচি নির্ণয় করতে হয়। আর যে সকল জেলার সময় নির্ধারণে ঢাকার সময় থেকে বিয়োগ দিতে হয় সেখানে বিপরীত ব্যবস্থা নেয়া হয়।

কোনো পত্রিকা বা মাদরাসা প্রতিষ্ঠানগুলোর নামাযের এবং সাহরী ও ইফতারের সময়সূচিতে এ সাবধানতা অবলম্বন করা হয় না। ফলে, বিভিন্ন সময়সূচিতে বিভিন্ন রকম সময়ের উল্লেখ করা হয়ে থাকে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, যাদের হাতের কাছে যে সময়সূচি পাওয়া যায় তারই কপি করে প্রকাশ করে। ফলে যেখানে যা ভুল থাকে তারই পুনঃমুদ্রণ ঘটে। অথচ ফরয আমলের বিষয় সম্পর্কে ইলম হাছিল করাও ফরয। সুতরাং এ বিষয়টি প্রকাশনার সময় যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

একটি জেলার জন্য যদি কয়েকটি ক্যালেন্ডারে কয়েক রকমের সময়ের পার্থক্য পাওয়া যায় তাহলে সাধারণ মানুষ কোনটি অনুসরণ করবে। সমূহ পত্রিকা এবং মাদরাসা প্রতিষ্ঠান যারাই নামাযের সময়সূচি বা সাহরী ও ইফতারের সময়সূচি প্রকাশ করুক তাদের উচিত হবে এ বিষয়ে যাঁরা অভিজ্ঞ উনাদের স্মরণাপন্ন হওয়া। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তথ্য সূত্র ব্যবহার করে পার পাওয়া যাবে না; যেহেতু ইসলামিক ফাউন্ডেশন নিজেই ত্রুটিযুক্ত।

নামাযের সময়সূচি বা ইফতারের সঠিক সময়সূচি নিরূপণ করাটা কঠিন। কিন্তু যতটা সম্ভব সঠিক করার চেষ্টা করতে হবে। অতঃপর অনিচ্ছায় ভুল হলে মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমা করবেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্তরের খবর রাখেন। কিন্তু যারা লোক দেখানো ইসলামের সেবা করে তাদের দ্বারা এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করা বৃথা।


গবেষণা কেন্দ্র- “মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ” থেকে প্রকাশিত সাহরী ও ইফতারীর নির্ভুল সময়সূচি সম্বলিত ক্যালেন্ডারটি সংরক্ষণ ও অনুসরণ যোগ্য। কেননা গবেষণা কেন্দ্র- “মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ” “সার্ভে অব বাংলাদেশ ডিফেন্স” হতে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে যাচাই-বাচাই করে নির্ভুল অক্ষাংশ ও দ্রাঘীমাংশ নির্ণয়পূর্বক কম্পিউটার প্রোগ্রাম দ্বারা ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগের নিঁখুতভাবে সময়সূচি নির্ণয় করার চেষ্টা করে থাকে।

আমাদের সমাজে অনেকে বলে থাকে যে, তারাবীহ্‌ ও তাহাজ্জুদ নামায একই নামায। অথচ তারাবীহ্‌ ও তাহাজ্জুদ নামায যে একই নামায নয়, নিম্নে তার প্রমাণ তুলে ধরা হলো :

প্রথমত : তারাবীহ্‌ ও তাহাজ্জুদ শব্দের অর্থ দ্বারাই স্পষ্ট প্রমাণিত যে, তারাবীহ্‌ ও তাহাজ্জুদ নামায একই নামায নয়।
১) তারাবীহ্‌ শব্দের তাহ্‌ক্বীক্বী অর্থ : রমাদ্বান মাসে (তারাবীহ্‌ নামাযে) প্রতি ৪ রাকায়াত পর মুসল্লীদের বিশ্রাম দেওয়াকে “তারবীহাতুন” বলে। প্রতি ৪ রাকায়াত পর মুসল্লীরা বিশ্রাম নেয় বলেই এটাকে তারাবীহ্‌ নামায বলে। আর “তারাবীহ্‌” বহুবচন হলো “তারবীহাতুন”-এর। (লিসানুল আরব ১ম জিলদ্‌, পৃষ্ঠা ১৭৬৮)
অনুরূপ কামূস আল মুহীত–এও উল্লেখ আছে।
“তারাবীহ্‌” হলো “তারবীহাতুন”-এর বহুবচন। যার অর্থ হলো বসা, অর্থাৎ রমাদ্বান মাসে (তারাবীহ্‌ নামাযে) ৪ রাকায়াত পর বিশ্রাম নেয়ার জন্য বসা। প্রত্যেক ৪ রাকায়াত নামাযকে “তারবীহাতুন” বলে। আর পুরো ২০ রাকায়াত নামাযকে “তারাবীহ্‌” বলে, যা রমাদ্বান মাসে পড়া হয়। (মিছবাহুল লোগাত, পৃষ্ঠা ৩২২)
অনুরূপ আল মুনজিদ–এও উল্লেখ আছে।
“‘তারাবীহ্‌’ শব্দের অর্থ হলো বিশ্রাম দেওয়া, ঐ ২০ রাকায়াত সুন্নত নামায, যেটা ইশার পর ও বিতর পূর্বে পড়া হয়। যেহেতু প্রত্যেক ৪ রাকায়াত পর পর কিছু বিলম্ব এবং বিশ্রাম নিতে হয়, তাই এটাকে “তারাবীহ্‌” নামায বলে।” (ফিরুযুল লোগাত, পৃষ্ঠা ৩৫৩)
অর্থাৎ “তারাবীহ্‌” শব্দটি হলো বহুবচন। তার একবচন হলো “তারবীহাতুন”। মুহাদ্দিছীন রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মত হলো ৪ রাকায়াত নামাযকে এক “তারবীহাতুন” বলে, এরূপ ৫ “তারবীহাতুন”-এ ১ “তারাবীহ্‌”। অর্থাৎ ৪X৫=২০, অতএব ২০ রাকায়াতে ১ “তারাবীহ্‌”।
এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফ-এর বিখ্যাত শরাহ্‌ বা ব্যাখ্যা গ্রহ্ন “উমাদুল ক্বারী”তে উল্লেখ আছে যে, “প্রতি ৪ রাকায়াত নামাযকে “তারবীহাতুন” বলা হয়, আর উহা মূলতঃ বিশ্রাম নেওয়ার জলসা।”
অর্থাৎ প্রতি ৪ রাকায়াত নামাযের পর বিশ্রাম নেওয়া হয় বলেই এটাকে “তারবীহাতুন” বলে। আর এরূপ ৫ “তারবীহাতুন”-এ যে ২০ রাকায়াত নিম্নোক্ত বর্ণনা দ্বারা তা স্পষ্টই প্রমাণিত হয়। যেমন এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, “নিশ্চয় হযরত আলী কাররামাল্লাহ ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি এক ব্যক্তিকে আমাদেরকে নিয়ে ৫ “তারবীহাত” অর্থাৎ ২০ রাকায়াত নামায পড়ার আদেশ দিয়েছেন।” (বায়হাক্বী, কানযুল উম্মাল)
উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে যে, ৫ তারবীহাতুন-এ ২০ রাকায়াত, অর্থাৎ ২০ রাকায়াতে ১ “তারাবীহ্‌”। অতএব, তারাবীহ্‌ শব্দের অর্থ দ্বারা ২০ রাকায়াত নামাযকে বুঝায়।

২) তাহাজ্জুদ শব্দের তাহ্‌ক্বীক্বী অর্থ : “তাহাজ্জুদ শব্দের অর্থ হলো রাত্রের নামায, আর রাত্রে ঘুম হতে উঠে নামায আদায়কারীকে বলে মুতাহাজ্জিদ। আযহারী বলেন আরবী ভাষায় রাত্রে শয়নকারীকে হাজিদ বলে, আর ঘুম হতে উঠে নামায আদায়কারীকে মুতাহাজ্জিদ বলে।” (মিছবাহুল লোগাত, পৃষ্ঠা ৯৭৭)
অনুরূপ লিসানুল আরব, কামূস আল মুহীতআল মুনজিদ–এও উল্লেখ আছে।
“‘তাহাজ্জুদ’ শব্দের অর্থ হলো রাত্রে জাগ্রত হওয়া, ঐ নামায যা অর্ধ রাত্রে উঠে পড়া হয়।” (ফিরুযুল লোগাত, পৃষ্ঠা ৩৯৩)
অতএব, “তারাবীহ্” ও “তাহাজ্জুদ” শব্দদ্বয়ের তাহক্বীক্বী বা বিশ্লেষণ দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, “তারাবীহ্” ও “তাহাজ্জুদ” নামায একই নামায নয়, বরং ভিন্ন ভিন্ন নামায। কারণ তারাবীহ্‌ নামায যেমন ইশার পর পর আদায় করলেও হয়, তদ্রুপ মধ্য ও শেষ রাত্রে অর্থাৎ ইশার নামাযের পর হতে সুব্‌হে সাদিকের আগ পর্যন্ত যে কোন সময় তারাবীহ্‌ নামায আদায় করা যায়। যেমন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রথম রাত্রে, মধ্য রাত্রে ও শেষ রাত্রেও তারাবীহ্‌ নামায আদায় করেছেন।
আর তাহাজ্জুদ নামায মধ্য রাত্রের পূর্বে আদায় করলে ওটা তাহাজ্জুদ নামায হিসেবে গণ্য হবে না। বরং ওটা রাত্রের নফল নামায হিসেবে গণ্য হবে। অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামাযের সময় হলো মধ্য রাত্রের পর হতে সুব্‌হে সাদিকের আগ পর্যন্ত। তবে তাহাজ্জুদ নামায মধ্য রাত্রে পর হতে উঠে আদায় করাই আফদ্বল বা উত্তম।
মূলতঃ হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইহ্‌সানের জন্য ও উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সুন্নতে মুয়াক্কাদা তরকের গুণাহ্‌ হতে হিফাজতের জন্য অর্থাৎ পরবর্তী উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য ঘুম হতে উঠে আদায় করা সম্ভব নাও হতে পারে, যদি তারা ঘুমের কারণে উহা আদায় করতে না পারে, তবে সুন্নতে মুয়াক্কাদা তরকের গুণাহে গুণাহ্‌গার হবে, তাই তিনি তারাবীহ্‌ নামাযকে ইশার পর পর নিয়ে আসেন। এ প্রসঙ্গে তিনি নিজেই বলেন, “তোমরা যে সময় ঘুমিয়ে থাক, সে সময় হয়ে ঐ সময়টুকু উত্তম, যে সময় তোমরা নামায পড়। (আব্দুর রহ্‌মান রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন) উত্তম সময় বলতে তিনি শেষ রাত্রকেই বুঝিয়েছেন, কেননা তখন (হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার সময়) লোকেরা প্রথম রাত্রেই তারাবীহ্‌ নামায পড়তেন।” (বুখারী শরীফ)
অর্থাৎ তারাবীহ্‌ নামায শেষ রাত্রে পড়াই উত্তম ছিল, কিন্তু হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইহ্‌সানের জন্য তারাবীহ্‌ নামাযকে প্রথম রাত্রে ইশার নামযের পর নিয়ে আসেন।
অতএব, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার সময় হতেই নিয়মিতভাবে ইশার নামাযের পর তারাবীহ্‌ নামায আদায় হয়ে আসছে এবং বর্তমানেও সেই সুন্নত তরীক্বাই চালু রয়েছে।

দ্বিতীয়ত : তারাবীহ্‌ নামাযে ঘোষণা দেওয়া জায়িয। অর্থাৎ তারাবীহ্‌ নামায ঘোষণা দিয়ে জামায়া’তের সাথে আদায় করা হয় বরং তারাবীহ্‌ নামায জামায়া’তের আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া। আর তাহাজ্জুদ নামায অর্থাৎ ঘোষণা দিয়ে জামায়া’তে আদায় করা মাক্‌রূহ তাহ্‌রীমী ও বিদ্‌য়াতে সাইয়্যিয়াহ্‌, চাই উহা রমাদ্বান মাসে হোক অথবা গায়েরে রমাদ্বানে হোক।
এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, “ঘোষণা দিয়ে তাহাজ্জুদ নামায জামায়া’তে আদায় করা মাকরূহ তাহ্‌রীমী। আর ঘোষণা ব্যতীত একা তাহাজ্জুদ আদায়কারীর পিছনে যদি ঘটনাক্রমে উর্দ্ধে তিনজন লোক ইক্তেদা করে, (মতবিরোধ রয়েছে, কেউ বলেন, মাহরূহ হবে, কেউ বলেন, হবে না) তবে মাকরূহ হবে না। কিন্তু চারজন ইক্তেদা করলে (সর্বসম্মতিক্রমে) মাকরূহ তাহ্‌রীমী হবে। অনুরূপ বর্ণনা দুরার ও দুররুল মুখতার কিতাবেও রয়েছে। আল্লামা ফাযিল চলপী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি শরহে বিকায়ার হাশিয়ায় উল্লেখ করেন যে, তাহাজ্জুদ নামায যেটা নফল নামাযের অন্তর্ভূক্ত, এটা জামায়া’তে আদায় করা বিদ্‌য়াতে সাইয়্যিয়াহ্‌।” (মজ্‌মুয়ায়ে ফতওয়ায়ে সা’দিয়াহ)
সুতরাং এর দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, তারাবীহ্‌ নামায ও তাহাজ্জুদ নামায অভিন্ন নামায নয়, যদি অভিন্ন বা একই নামায হতো, তবে তারাবীহ্‌ নামাযও জামায়া’তে পড়া মাকরূহ তাহ্‌রীমী ও বিদ্‌য়াতে সাইয়্যিয়াহ্‌ হতো। কারণ উলামায়ে কিরাম রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মতে তাহাজ্জুদ নামায রমাদ্বান মাসেও জামায়া’তে পড়া মাকরূহ তাহ্‌রীমী ও বিদ্‌য়াতে সাইয়্যিয়াহ্‌। মূলকথা হলো তারাবীহ্ ও তাহাজ্জুদ একই নামায নয় বরং ভিন্ন ভিন্ন নামায।

তৃতীয়ত : তাহাজ্জুদ নামায প্রথমে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ফরয ছিল, পরবর্তীতে মহান আল্লাহ্‌ পাক তিনি ওহীর মাধ্যমে ওটা মানছূখ বা রদ্‌ করে দেন। এখন প্রশ্ন হলো তাহাজ্জুদ নামাযের ফরযের হুকুম যদি রদই হয়ে থাকে, তবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেন বললেন, “আমার আশঙ্কা হচ্ছে, তোমাদের উপর এটা ফরয হয়ে যায় কিনা।”
মূলত যেটা একবার রদ্‌ হয়ে গেছে, পুণরায় তা ফরয হওয়ার কোনই আশঙ্কা থাকতে পারে না। সুতরাং এর দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, তারাবীহ্‌ ও তাহাজ্জুদ নামায একই নামায নয়, বরং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রমাদ্বান মাসে তাহাজ্জুদ নামাযের সাথে সাথে তারাবীহ্‌ নামায আলাদা বা পৃথক আদায় করেছেন। আর এই তারাবীহ্‌ নামায ফরয হয়ে যাওয়ারই আশাঙ্কা করেছেন।

চতুর্থত : সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি তাহাজ্জুদ নামাযের নির্দেশ কুরআন শরীফ-এর মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ্‌ পাক তিনি বলেন, “রাত্রের কিছু অংশ কুরআন পাঠসহ (নামায পড়ার জন্য) জাগ্রত থাকুন। এটা আপনার জন্য আতিরিক্ত।” (সূরা বণী ইস্রাঈল : ৭৯)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, “হে বস্ত্রাবৃত, রাত্রিতে দন্ডায়মান হোন কিছু অংশ বাদ দিয়ে ।” (সূরা মুযযাম্মিল : ১-২)
আর তারাবীহ্ নামায সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয় মহান আল্লাহ্‌ পাক রব্বুল আলামীন তিনি, তোমাদের প্রতি রমাদ্বান মাসের রোজাকে ফরয করেছে। আর আমি তোমাদের প্রতি তারাবীহ্‌ নামাযকে সুন্নত করলাম।”
এর দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, তারাবীহ্‌ ও তাহাজ্জুদ নামায ভিন্ন ভিন্ন নামায। কারণ তাহাজ্জুদ নামাযের হুকুম কুরআন শরীফ অর্থাৎ ওহীয়ে মাত্‌লু-এর মাধ্যমে এসেছে। আর তারাবীহ্‌ নামায হাদীছ শরীফ অর্থাৎ ওহীয়ে গায়রে মাত্‌লু-এর মাধ্যমে এসেছে।
অতএব, এদিক থেকেও উভয় নামাযের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

পঞ্চমত : হাদীছ শরীফ-এ তারাবীহ্ নামাযকে “قيام رمضان” বলা হয়েছে। অর্থাৎ তারাবীহ্ নামায শুধু রমাদ্বান মাসের জন্যই খাছ বা নির্দিষ্ট। আর তাহাজ্জুদ নামাযকে “صلاة لليل” বলা হয়েছে, অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামাযকে রমাদ্বান মাসের জন্য খাছ বা নির্দিষ্ট করা হয়নি বরং সারা বছরের জন্যই খাছ বা নির্দিষ্ট।
অতএব, এর দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, তারাবীহ্‌ ও তাহাজ্জুদ নামায ভিন্ন ভিন্ন নামায।

ষষ্ঠত : তাহাজ্জুদ নামাযের আদেশ মক্কা শরীফ-এ দেয়া হয়েছে, আর তারাবীহ্‌ নামাযের আদেশ মদীনা শরীফ-এ দেয়া হয়েছে।

সপ্তমত : অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহিম উনারা উনাদের কিতাবে তারাবীহ্‌ ও তাহাজ্জুদ নামাযকে পৃথক নামায হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যেমন- হাম্বলী মাযহাব-এর প্রসিদ্ধ কিতাব “আল মুকান্নাত”-এ উল্লেখ আছে যে, “রমাদ্বান মাসে ২০ রাকায়াত তারাবীহ্‌ নামায জামায়া’তের সাথে আদায় করবে এবং উহার পর বিত্‌র নামাযও জামায়া’তে আদায় করবে। আর যদি কারো তাহাজ্জুদ পড়ার অভ্যাস থাকে, তবে বিতর তাহাজ্জুদের পর আদায় করবে।”
অতএব, যদি তারাবীহ্‌ ও তাহাজ্জুদ একই হতো, তবে আলাদাভাবে তাহাজ্জুদের কথা উল্লেখ করার কোন প্রয়োজন ছিল না। সুতরাং এর দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, উল্লিখিত নামাযদ্বয় ভিন্ন ভিন্ন নামায। সাথে সাথে এটাও বুঝা গেল যে, ইমাম আহ্‌মদ ইবনে হাম্বল রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি উনার মতেও তারাবীহ্‌ ও তাহাজ্জুদ ভিন্ন ভিন্ন নামায।

অষ্টমত : ইমাম বুখারী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকেও অনুরূপ বর্ণিত আছে যে, “হযরত ইমাম বুখারী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি তিনি রাত্রের প্রথম ভাগে নিজ ছাত্রের সাথে তারাবীহ্‌ নামায জামায়া’তে আদায় করতেন এবং তাতে একবার কুরআন শরীফ খতম করতেন। আর সাহ্‌রীর সময় তাহাজ্জুদ নামায একাকী আদায় করতেন।” (লুময়াতুল মাছাবীহ্‌)
সুতরাং যেখানে ইমাম বুখারী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি তিনি তারাবীহ্‌ ও তাহাজ্জুদ নামাযকে পৃথক নামায মনে করতেন ও পৃথক পৃথকভাবে তা আদায় করতেন, সেখানে উক্ত নামাযদ্বয়কে একই নামায বলা মূর্খতা ও গুমরাহী বৈ কিছুই নয়।

নবমত : তারাবীহ্‌ ও তাহাজ্জুদ নামায পৃথক পৃথক নামায বলেই মুহাদ্দিছীনে কিরাম রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহিম উনারা হাদীছ শরীফ-এর কিতাবে ও ফুক্কাহায়ে কিরাম রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ফিক্বাহের কিতাবে উক্ত নামাযদ্বয়কে পৃথক পৃথক অধ্যায় বর্ণনা বা উল্লেখ করেছেন।
অতএব, যদি একই নামায হতো, তবে তো পৃথক পৃথক অধ্যায় রচনা করার কোন প্রয়োজন ছিল না। বরং একটি অধ্যায়ই যথেষ্ট ছিল। এর দ্বারা উক্ত নামাযদ্বয়ের ভিন্নতা প্রমাণিত হয়।

দশমত : তাহাজ্জুদ নামাযের রাকায়াতের সংখ্যা নির্দিষ্ট রয়েছে, অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উর্দ্ধে ১৩ রাকায়াত ও নিম্নে ৭ রাকায়াত তাহাজ্জুদ পড়েছেন বিতরসহ।
আর তারাবীহ্‌ নামায সম্পর্কে ৮ রাকায়াত দাবীদারদের অনুসরণীয় ব্যক্তিবর্গের বক্তব্য হলো সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তারাবীহ্‌ নামাযের নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা প্রমাণিত নেই। যেমন এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, “আল্লামা সুবকী বলে, রমাদ্বান মাসে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ২০ রাকায়াত তারাবীহ্‌ পড়েছেন, না কম পড়েছেন, উহা বর্ণিত নেই।” (শরহে মিনহাজ)
এখানে লক্ষণীয় যে বিষয় এই যে, তাদের উপরোক্ত বক্তব্যটি অশুদ্ধ বা ভুল, তথাপি উক্ত বক্তব্য দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, তারাবীহ্‌ ও তাহাজ্জুদ একই নামায নয়, যদি একই হতো, তবে (তাদের মতে) তারাবীহ্‌ নামাযের রাকায়াতের সংখ্যা অনির্দিষ্ট হতো না বরং তাহাজ্জুদ নামাযের ন্যায় নির্দিষ্টই হতো।


উপরোক্ত বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা এটা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, তারাবীহ্‌ ও তাহাজ্জুদ নামায কখনোই এক নামায নয়, বরং ভিন্ন ভিন্ন নামায। উক্ত নামাযদ্বয়কে একই নামায হিসাবে আখ্যায়িত করা মূলতঃ নিজেদের মূর্খতা ও গুমরাহীকে আরো সুস্পষ্ট করারই নামান্তর।

আমরা শরীরের রোগ নিরাময়ের জন্যে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ওষুধ সেবন বা ব্যবহার করে থাকি, তার মধ্যে একটি অন্যতম পদ্ধতি হলো- ‘ইনজেকশন’। এ ইনজেকশন বর্তমান আধুনিক চিকিৎসা ক্ষেত্রে এক বিশেষ পদ্ধতি, যা চিকিৎসার ক্ষেত্রে অপরিসীম গুরুত্ব বহন করছে। কিন্তু কথা হচ্ছে- ইসলামের পাঁচটি ভিত্তির মধ্যে অন্যতম একটি ভিত্তি হলো- রমযান মাসের রোজা, যেটা উম্মতে হাবীবীর জন্যে ফরজে আইন করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন তিনি কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হলো- যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল, যেন তোমরা তাক্ওয়া হাছিল করতে পার।”
আর হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
“ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি- (১) সাক্ষী দেয়া মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ্ (মাবূদ) নেই এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আল্লাহ্ পাক-উনার বান্দা ও রসূল। (২) নামায কায়িম করা। (৩) যাকাত আদায় করা। (৪) হজ্ব করা। (৫) রমজান মাসের রোজা রাখা।”
মূলকথা হলো- রমযান মাসের ৩০ দিন বা ২৯ দিন (চাঁদের হিসাব মোতাবেক) রোজা রাখা ফরজ। এটার অস্বীকারকারী কাফির এবং তরক করলে কবীরা গুণাহ্ হবে। অতএব উক্ত ফরজ রোজাগুলো আমাদেরকে সঠিকভাবে আদায় করতে হবে। আর সঠিকভাবে আদায় করতে হলে অবশ্যই তার মাসয়ালা-মাসায়িলগুলো জানতে হবে। অর্থাৎ কি করলে রোজা ভঙ্গ হয়, আর কি করলে রোজা ভঙ্গ হয়না, এ সম্পর্কিত ইলম (জ্ঞান) অর্জন করা অবশ্য কর্তব্য অর্থাৎ ফরজ।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
“প্রত্যেক মুসলমানের (নর ও নারী) জন্যে ইল্ম বা জ্ঞান অর্জন করা ফরজ।”
অতএব শরীয়ত সম্পর্কিত সকল বিষয়ের প্রয়োজনীয় ইলম অর্জন করা যেমন ফরজ তদ্রুপ রোজা অবস্থায় ইনজেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হবে কিনা এ সম্পর্কিত ইলম অর্জন করাও ফরজ। সুতরাং যারা না জেনে রোজা অবস্থায় ইনজেকশন নিবে, তারা এ সম্পর্কিত ইলম অর্জন না করার কারণে ফরজ তরকের গুণাহে গুণাহ্গার হবে।
মূলতঃ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা উনাদের ফিক্বাহের কিতাবসমূহে রোজা ভঙ্গ হওয়া না হওয়ার কারণসমূহ বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন। তবে সম্প্রতি যে বিষয়টি নিয়ে মুসলিম উম্মাহ্ বেশী সমস্যার সম্মুখীন, তা হলো- রোজা অবস্থায় “ইনজেকশন ব্যবহার করা।” পূর্ববর্তী ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের সময় যেহেতু ইনজেকশনের ব্যবহার ছিলনা, তাই উনারা ইনজেকশন সম্পর্কে কোন আলোচনা করেননি। তবে রোজা ভঙ্গ হওয়া না হওয়ার কারণ বা উছূলগুলো কিতাবসমূহে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে গিয়েছেন। কাজেই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে যে, ইনজেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হবে কি হবেনা। ইতিপূর্বে কেউ কেউ ফতওয়া দিয়েছেন যে, “ইনজেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হয়না।” যেমন ইমদাদুল ফতওয়ার ২য় জিঃ ১৫৪নং পৃষ্ঠায়, ২১৯নং সুওয়ালের জাওয়াবে বলা হয়েছে যে, “ইনজেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হয়না।”
অনেকে ইনজেকশন সম্পর্কে এ ফতওয়াকেই দলীল হিসাবে পেশ করে থাকেন এবং এটাকেই ইনজেকশন সম্পর্কে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত বা ফায়সালা মনে করে থাকেন। আর এর উপর ভিত্তি করে বর্তমানে অনেকে ফতওয়া দিচ্ছে যে, রোজা অবস্থায় ইনজেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হয়না।
ইমদাদুল ফতওয়ার বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে ফতওয়া দেয়ার পূর্বে উচিৎ ছিল ইমদাদুল ফতওয়ার বক্তব্যকে ভালরূপে তাহ্ক্বীক্ব করা। বিনা তাহক্বীক্বে ফতওয়া দেয়ার পরিণামও খুব ভয়াবহ। কেননা হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে,
হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যে ব্যক্তিকে ইলম ব্যতীত ফতওয়া দেয়া হয়েছে, অতঃপর সে তদানুযায়ী কাজ করেছে, তার গুণাহ্ যে তাকে ফতওয়া দিয়েছে, তার উপরই পড়বে।” (আবু দাউদ শরীফ)
অতএব কেউ যদি কারো ফতওয়ার উপর ভিত্তি করে রোজা অবস্থায় ইনজেকশন নেয় (আর যেহেতু ইনজেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়) তবে রোজা ভঙ্গের গুণাহ্ উক্ত ফতওয়া প্রদানকারীর উপর বর্তাবে। সুতরাং ফতওয়াদানের ব্যাপারে অর্থাৎ বিনা তাহক্বীক্বে বা যাচাই-বাছাই না  করে ফতওয়া দান হতে বিরত থাকতে হবে।
এ প্রসঙ্গে ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ঘটনাটি আমাদের জন্যে এক অমূল্য নছীহত, যদি আমরা বুঝি। তাহলো-হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি মালেকী মাযহাবের ইমাম। উনার সীরতগ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রথম যেদিন ফতওয়ার মসনদে বসলেন মুফতী হিসেবে, ফতওয়া দেওয়ার জন্য সেদিনই উনার কাছে ৪০টি মাসয়ালা বা সুওয়াল আসলো। তিনি ১৮টির জাওয়াব দিয়েছেন এবং বাকী ২২টির জাওয়াবে বলেছেন, ‘আমি জানি না’ যখন জাওয়াব শেষ হয়ে গেলো এবং সুওয়ালকারীগণ চলে গেলো, তখন উনার নিকটবর্তী যে সকল বড় বড় আলিমগণ বসেছিলেন উনারা বললেন, “হে হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনি কি সত্যই ঐ ২২টি মাসয়ালার জাওয়াব জানেন না? তখন হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “হ্যাঁ, আমার জানা আছে, তবে ১৮টি মাসয়ালায় আমার পূর্ণ তাহক্বীক্ব আছে, তাই জাওয়াব দিয়েছি, আর বাকী ২২টি মাসয়ালায় পূর্ণ তাহক্বীক্ব নেই, হতে পারে বর্তমানে ২২টি মাসয়ালা সম্বন্ধে আমার যে ফয়সালা আছে পূর্ণ তাহক্বীক্বের পরে তার ব্যতিক্রমও হতে পারে। এই লোকগুলি অনেক দূর থেকে প্রায় ৬ মাসের রাস্তা অতিক্রম করে আমার কাছে এসেছে মাসয়ালা জানার জন্য। এখন যদি আমি বিনা তাহক্বীক্বে তার জাওয়াব দিয়ে দেই যা পূর্ণ শুদ্ধ নয়, তবে তার ভিত্তিতে তারা আমল শুরু করবে, আর পরে যখন আমার পূর্ণ তাহক্বীক্ব হবে এবং তা যদি বর্তমান ফয়সালার ব্যতিক্রম ফয়সালা হয়, তাহলে তাদেরকে কে এই ফয়সালার বিশুদ্ধ বা পূর্ণ তাহক্বীক্ব সম্বলিত মতটি জানাবে? যেহেতু আমি তাদের বিস্তারিত পরিচয় বা ঠিকানা জানি না। আর এজন্য হয়ত আমাকে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে জওয়াবদিহী ও পাকড়াও হতে হবে। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেছেন,
“যদি তোমরা না জান, তাহলে যারা জানেন ও অভিজ্ঞ, তাদেরকে জিজ্ঞেস করে নাও।”
সেজন্য আমি তাদেরকে বলেছি আমি জানি না। অর্থাৎ আমার পূর্ণ তাহক্বীক্ব নেই। যার এ ব্যাপারে পূর্ণ তাহক্বীক্ব আছে, তার কাছ থেকে জেনে নাও।
মূলতঃ ইনজেকশন সম্পর্কে ইমদাদুল ফতওয়ার বক্তব্য শুদ্ধ হয়নি। কারণ হাদীছ শরীফ, ফিক্বাহের কিতাবে বর্ণিত উছূল ও বর্তমান আধুনিক বিশ্বের উন্নততর চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ভালরূপে তাহক্বীক্ব বা গবেষণা করার পর এটাই প্রমাণিত হয় যে, ইনজেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। কারণ ইনজেকশনের দ্বারা প্রবেশকৃত ওষুধ মগজে পৌঁছে। অতএব, ইনজেকশন সম্পর্কে ইমদাদুল ফতওয়ার বক্তব্য ভুল, কাজেই তা গ্রহণযোগ্য নয়।
যত প্রকারের ইনজেকশন হোক না কেন, তা এক সময় রক্ত স্রোতে মিশবে এবং মগজে পৌঁছে যাবে। সুতরাং রোজা অবস্থায় ইনজেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। কারণ, ফিক্বাহের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে,
“যা নাক, কান, পায়খানার রাস্তা ইত্যাদি দ্বারা মগজ অথবা পেটে পৌঁছবে, তাতে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। (বাদায়ে)
এ প্রসঙ্গে কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয় যে,
“কান, নাক ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে ওষুধ ইত্যাদি মগজ অথবা পেটে পৌঁছা সকলের নিকটেই রোজা ভঙ্গের কারণ।(খোলাসাতুল ফতওয়া)
অনুরূপ হেদায়া, আইনুল হেদায়া, মাবসূত, বাহ্রুর রায়েক, রদ্দুল মোহতারে উল্লেখ আছে।
উপরোক্ত কিতাবসমূহে যদিও ওষুধ ইত্যাদি মূল রাস্তা অর্থাৎ নাক, কান, মুখ ইত্যাদি দিয়ে মগজ অথবা পেটে পৌঁছার কথা বলা হয়েছে কিন্তু ইমামগণের নিকট মূল রাস্তা শর্ত নয়, যেমন এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে,
“হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, রোজা ভঙ্গের কারণ হলো- রোজা ভঙ্গকারী কোন কিছু ভিতরে প্রবেশ করা, সুতরাং পৌঁছাটাই গ্রহণযোগ্য, মূল রাস্তা নয়।” (মাবসূত)
আর ফতহুল ক্বাদীর ২য় জিঃ ২৬৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে যে,
“হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট পৌঁছাটাই গ্রহণযোগ্য।”
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
“হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে মরফূ হিসাবে বর্ণিত- নিশ্চয় রোজা ভঙ্গ হবে শরীরের ভিতর কিছু প্রবেশ করলে, বের হলে নয়।”
হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে- ওযূর ব্যাপারে নিয়ম হলো- শরীর হতে কিছু বের হলে ওযূ ভঙ্গ হবে, প্রবেশ করলে ভঙ্গ হবেনা। আর রোজার ব্যাপারে নিয়ম হলো- শরীরের ভিতর কিছু প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হবে, বের হলে নয়।
আর তিবরানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইবনে আবী শায়বা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন, কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে, বের হলে রোজা ভঙ্গ হবেনা।
উপরোক্ত হাদীছ শরীফের দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, শরীরের ভিতর কোন কিছু প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। উক্ত হাদীছ শরীফে মূল রাস্তাকে শর্ত করা হয়নি। তবে সর্বক্ষেত্রেই ভিতরে কিছু প্রবেশ করালে রোজা ভঙ্গ হয় এবং বের হলে রোজা ভঙ্গ হবেনা তা নয়- যেমন সাপে কাটলে রোজা ভঙ্গ হয়না। অথচ সাপের বিষ ভিতরে প্রবেশ করে থাকে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে বমী করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায় অথচ ওটা বের হয়ে থাকে। অনুরূপ শরীর হতে রক্ত বের হলে বা বের করা হলেও রোজা ভঙ্গ হওয়না।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে এরশাদ হয়েছে যে,
“তিনটি জিনিস রোজা ভঙ্গ করেনা- (১) শিঙ্গা লাগানো (অর্থাৎ শিঙ্গা দ্বারা শরীর হতে যদি ইচ্ছাকৃতভাবেও রক্ত বের করে তবেও রোজা ভঙ্গ হবেনা এখন তা যেভাবেই বের করা হোক না কেন)। (২) অনিচ্ছাকৃত বমি (৩) স্বপ্নদোষ।”
অনেকে সাপে কাটার সাথে ইনজেকশনকে তুলনা করে বলে থাকে- সাপে কাটলে যেমন বিষ ভিতরে প্রবেশ করা সত্বেও রোজা ভঙ্গ হয়না, তদ্রুপ ইনজেকশনেও রোজা ভাঙ্গবে না। মূলতঃ ইনজেকশনের দ্বারা যে ওষুধ শরীরে প্রবেশ করানো হয়, তার সাথে সাপের বিষকে কখনো মিলানো যাবেনা, কেননা এ বিষ প্রবেশের ঘটনাটি সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত। এ ব্যাপারে আরো বলা যেতে পারে, যেমন- রোজা রেখে আগরবাতী জ্বালালে, ধুমপান করলে, কোন গ্যাস নাক দিয়ে গ্রহণ করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়। কেননা এক্ষেত্রে সবগুলো কাজ ইচ্ছা শক্তির নিয়ন্ত্রনে। অথচ আমরা রাস্তায় চলা-ফেরার ও রান্না-বান্নার সময় যে ধোঁয়া গ্রহণ করি, তাতে রোজা ভঙ্গ হয়না। কেননা এটা আমাদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে। অতএব, ইনজেকশনের সাথে সাপের বিষের সাথে কিয়াস করা সম্পূর্ণই ভুল। কারণ ইনজেকশন ইচ্ছাকৃতভাবেই দেওয়া হয়।
অনুরূপ যদি কেউ ভুলে পেট ভরেও খাদ্য খায়, তবে তার রোজা ভঙ্গ হবেনা। কেননা হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি রোজা অবস্থায় খেল অথবা পান করলো, সে যেন তার রোজা পূর্ণ করে নেয়। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনিই তাকে খাদ্য খাইয়েছেন ও পান করায়েছেন।”
আর অখাদ্য যেমন পাথর, কাঠের টুকরা ইত্যাদি ইচ্ছাকৃতভাবে খেলেও রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তদ্রুপ ওযূর পানি অনিচ্ছাকৃতভাবে মুখের ভিতর চলে গেলেও রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এরূপ অবস্থায় রোজা কাজ্বা করতে হবে।
মূলকথা হলো, মূল রাস্তা শর্ত নয় বরং শরীরের যেকোন স্থান দিয়েই ওষুধ ইত্যাদি প্রবেশ করুক না কেন, যদি নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, তা মগজে অথবা পেটে পৌঁছেছে, তবে তার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। অতএব ইনজেকশনের দ্বারা যে ওষুধ শরীরে প্রবেশ করানো হয়, তা যে মগজে পৌঁছে তাতে বিন্দুমাত্রও সন্দেহ নেই। এটাই চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভিমত। সুতরাং ইনজেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
এখানে একটি বিষয় খুবই লক্ষনীয়, তাহলো- কারো যদি রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় ইনজেকশন নেওয়ার খুব বেশী প্রয়োজন হয়ে যায়, তবে তার জন্যে রোজা না রাখার হুকুম তো শরীয়তে রয়েই গেছে। যেমন আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
“আর যদি কেউ অসুস্থ বা মুসাফির হয়, তবে অন্য সময় রোজাগুলো আদায় করবে।”
এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারেন যে, অসুস্থতার কারণে, মুসাফির সফরের কারণে অথবা কারো রোজা অবস্থায় ইনজেকশন নেওয়ার প্রয়োজন হলো, অনুরূপ শরয়ী কোন ওজরের কারণে যদি কেউ রমজান মাসে রোজা না রাখে এবং অন্য সময় রোজাগুলো আদায় করে নেয়, তবে কি সে রমজান মাসের ন্যায় ফযীলত লাভ করতে পারবে?
তার জবাবে বলতে হয়- হ্যাঁ কেউ যদি অসুস্থতার কারণে, সফর অথবা শরয়ী যেকোন ওজরের কারণে রমজান মাসে রোজা রাখতে না পারে এবং অন্য সময় রোজাগুলো আদায় করে নেয়, তবে সে রমজান মাসের ন্যায় সকল ফাযায়েল-ফযীলত হাছিল করতে পারবে। কারণ শরীয়তের কোথাও উল্লেখ নেই যে, এরূপ ব্যক্তি রমযানের ফাযায়েল-ফযীলত হাসিল করতে পারবেনা। বরং হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি ওজর অথবা রোগ ব্যতীত রমজান মাসের একটি রোজা ভঙ্গ করবে, সে যদি তার পরিবর্তে সারা বছরও রোজা রাখে, তবেও ওটার সমকক্ষ হবেনা।” (আহমদ, তিরমিযী, আবূ দাউদ, ইবনে মাযাহ)
এ প্রসঙ্গে আরো বলা যেতে পারে যে, যেমন- মেয়েদের অসুস্থতার (অর্থাৎ হায়েজ-নেফাস)-এর সময় নামায পড়া ও রোজা রাখা নিষেধ। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর রোজা কাজ্বা করতে হয় কিন্তু নামায কাজ্বা করতে হয়না। এর কি কারণ?
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয় যে,
“হযরত মুয়াজাহ্ আদভিয়া তাবেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, হায়েজগ্রস্থা স্ত্রীলোক রোজা কাজ্বা করে কিন্তু নামায কাজ্বা করেনা, তার কি কারণ? তখন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, যখন আমরা এ অবস্থায় পৌঁছাতাম, তখন আমাদেরকে রোজার কাজ্বা করার আদেশ দেওয়া হতো কিন্তু নামায কাজ্বা করার আদেশ দেয়া হতোনা।” (অথচ আমরা কখনো কোন কারণ তালাশ করিনি) (মুসলিম শরীফ)
এখন প্রশ্ন হচ্ছে- যে সকল মেয়েরা অসুস্থতার কারণে নামায পড়তে পারেনা এবং রমযান মাসে কিছু সংখ্যক রোজা রাখতে পারলোনা, তবে কি তারা উক্ত নামাজের ফযীলত ও রমজান মাসের রোজার ফযীলত হতে মাহরূম থাকবে? জবাবে বলা যায়- কখনোই নয় বরং সে নামায ও রোজার পরিপূর্ণ ফযীলতই লাভ করবে। কারণ সে শরীয়তের দৃষ্টিতে মাজূর।
অনুরূপ কারো যদি ওযু অথবা গোসলের প্রয়োজন হয় কিন্তু যদি পানি পাওয়া না যায়, তবে তায়াম্মুম করে নামায আদায় করবে, এখানে পানি দ্বারা ওযু-গোসল করে নামায আদায় করলে যে ফযীলত সে লাভ করতো, তায়াম্মুমের দ্বারা নামায পড়লেও সে ততটুকু ফযীলত লাভ করবে।
এমনিভাবে ই’তিকাফকারী সম্পর্কে হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে,
ই’তিকাফকারী সম্পর্কে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “সে ব্যক্তি মূলতঃ সকল গুণাহ্ হতে বিরত এবং সকল নেক আমলের ফযীলত তাকেও দান করা হয়।”
অর্থাৎ ই’তিকাফকারী মসজিদে আবদ্ধ থাকার কারণে বাইরের যে নেক কাজগুলো করতে পারেন না, সে সকল নেক কাজের সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হয়ে থাকে।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, যারা ওজরবশতঃ বা অসুস্থতার কারণে রমযান মাসের রোজা রাখতে পারবেনা, তারা অন্য সময় উক্ত রোজাগুলো আদায় করলে অবশ্যই রমযান মাসের ন্যায় সুযোগ-সুবিধা অর্থাৎ ফাযায়েল-ফযীলত লাভ করতে পারবে। বরং অনেক ক্ষেত্রে উল্লেখিত অবস্থায় রোজা রাখার মধ্যেই বরং কোন ফায়দা বা ছওয়াব নেই। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন- একবার রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সফরে ছিলেন, একস্থানে লোকের ভীড় দেখলেন, (সেখানে গিয়ে দেখলেন) এক ব্যক্তির উপরে ছায়া দেওয়া হচ্ছে। (এটা দেখে) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “এখানে কি?” লোকেরা বললো- (যাকে ছায়া দেওয়া হচ্ছে) সে একজন রোজাদার, (তখন) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “সফরে রোজা রাখা সাওয়াবের কাজ নয়।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
অতএব, কেউ যদি ওজরবশতঃ রমজান মাসে কিছু রোজা রাখতে না পারে, তবে সে তা অন্য সময় ক্বাজা আদায় করলেও রমজান মাসের ন্যায় ফযীলত লাভ করবে।
মূলতঃ রমজান মাসের রোজা ফরজ করা হয়েছে যেন বান্দা “তাক্ওয়া” বা পরহেযগারী হাছিল করতে পারে। আর তাই বলা হয়েছে, لعلكم تتقون অর্থাৎ রমজান মাসের রোজার মাধ্যমে তোমরা “তাকওয়া” বা খোদাভীতি হাছিল করতে পারবে। কারণ رمضان (রমাদ্বন) শব্দটির উৎপত্তিই হচ্ছে- রমাদ্ব হতে, যার অর্থ হচ্ছে- জ্বালিয়ে দেওয়া, নিঃচিহ্ন করে দেওয়া। অতএব, বুঝা গেল যে, রমজান এমন একখানা মাস, যে মাস রোজাদার বান্দার সকল অন্যায়, অপরাধ, গুণাহ্খাতা জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে সম্পূর্ণ নিঃচিহ্ন করে দেয়।
তাছাড়া الصوم (ছাওম) শব্দের অর্থই হচ্ছে- الامساك (আল্ ইমসাক) অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পক্ষ হতে নিষেধকৃত সকল হারাম, নাজায়িয এমন কি মাকরূহ্ কাজ হতেও রোজা অবস্থায় নিজেকে ফিরায়ে রাখা বা বিরত রাখা। আর এজন্যেই হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, الصوم جنة অর্থাৎ রোজা হলো- “ঢাল স্বরূপ।”
ঢাল যেরূপ মানুষকে নানা প্রকার বিপদাপদ হতে বাঁচায়ে রাখে, রোজাও তদ্রুপ ঈমানদার বান্দাকে সকল প্রকার হারাম, নাজায়িয, মাকরূহ্ এমনকি “তাকওয়া” খিলাফ অর্থাৎ সন্দেহজনক কাজ বা আমল হতেও হিফাযত করে বা বাঁচিয়ে রাখে। আর বান্দাকে করে দেয় মাছূম বা নিষ্পাপ। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে এরশাদ হয়েছে,
“যদি কেউ রমযান মাসের শুরু হতে শেষ পর্যন্ত সবগুলো রোজা (ছহীহভাবে) আদায় করে, তবে সে গুণাহ্ হতে এরূপ পবিত্র হবে, যেন সে আজকেই জন্মগ্রহণ করেছে।”
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, রোজাদার বান্দা হারাম, নাজায়িয ও মাকরূহ্ কাজ তো করতে পারবেই না বরং তাকে তাকওয়ার খিলাফ কাজ হতেও বেঁচে থাকতে হবে। তবেই তার পক্ষে তাকওয়া হাছিল করা বা মুত্তাক্বী হওয়া সম্ভব। আর যে ব্যক্তি মুত্তাক্বী হতে পারবে, তার জন্যেই কামিয়াবী। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামে পাকে ইরশাদ করেছেন,
“তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই আমার নিকট অধিক সম্মানিত, যে ব্যক্তি অধিক তাকওয়াধারী বা মুত্তাক্বী।”
আর হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
“যে ব্যক্তি সন্দেহ হতে বাঁচলো (অর্থাৎ তাক্ওয়া হাছিল করলো), সে তার দ্বীন ও সম্মানকে হিফাযত করলো।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
অতএব, রোজা অবস্থায় ইনজেকশন নিয়ে একটি বুনিয়াদী ফরজ তরক করে মুত্তাক্বী হওয়াতো দূরের কথা, বরং ফরজ তরক করার কারণে কবীরা গুণাহে গুণাহগার হবে।
এখন কেউ বলতে পারেন, আমরা যারা জেনে বা না জেনে রোজা অবস্থায় ইনজেকশন নিয়েছি, আমাদের এ রোজার ব্যাপারে ফায়সালা কি? এবং তা কাজ্বা করতে হবে কি?
হ্যাঁ, জেনে হোক অথবা না জেনে হোক রোজা অবস্থায় যারা ইনজেকশন নিয়েছে, তাদের উক্ত রোজা অবশ্যই কাজ্বা করতে হবে। তবে কাফফারা ওয়াজিব হবেনা।
উপরোক্ত কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহের অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীল-আদিল্লা ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের সারগর্ভ আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, রোজা অবস্থায় ইনজেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়।

কুরআন শরীফ-এর ‘সূরা দুখান’-এ শবে বরাতকে ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ বা বরকতময় রাত বলা হয়েছে। আর হাদীছ শরীফ-এ ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান’ বা ‘মধ্য শা’বানের রাত্র’ শা’বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত্র বলা হয়েছে। এটাই মূলতঃ সারাবিশ্বে শবে বরাত হিসেবে মশহুর। এ রাত মুসলমানদের জন্য দোয়া কবুলের রাত, ক্ষমা বা মাগফিরাতের রাত, তওবা কবুলের রাত, বিপদ-আপদ থেকে নাযাত পাওয়ার রাত এবং এক বছরের হায়াত-মউত ও রিযিকের ফায়ছালার রাত। (সুবহানাল্লাহ)

আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, ‘এ রাত্রিতে (আগামী এক বছরে) যে সকল আদম সন্তান জন্মগ্রহণ করবে এবং ইন্তিকাল করবে তাদের তালিকা লিপিবদ্ধ করা হয়। বান্দার (এক বছরের) রিযিকের ফায়ছালা করা হয় এবং বান্দার (বিগত এক বছরের) আমলনামা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পেশ করা হয়।’ (বাইহাক্বী শরীফ) সুবহানাল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়। রজবের প্রথম রাত্র, মধ্য শাবানের রাত্র বা বরাতের রাত্র, ক্বদরের রাত্র এবং দু’ঈদের দু’রাত্র।’ সুবহানাল্লাহ!

অনেকের মনে প্রশ্ন- জীবনে অনেক শবে বরাত পাওয়া গেছে, অনেক দোয়া করা হয়েছে কিন্তু তার বদলা তো পাওয়া যায়নি। তাহলে কি দোয়া কবুল হয়নি? এর জবাবে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, দোয়া তিনভাবে কবুল হয়ে থাকে-

এক. বান্দা-বান্দি যা চেয়ে থাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে সরাসরি সেটা দিয়ে দেন। তখন বান্দা-বান্দি সহজেই বুঝতে পারে যে তার দোয়া কবুল হয়েছে।

দুই. বান্দা-বান্দি যেটা চেয়ে থাকে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সরাসরি সেটা দেন না বরং বান্দা-বান্দির জন্য তার চেয়েও যেটা বেশি জরুরী সেটা দিয়ে থাকেন, যার কারণে বান্দা বুঝতে পারে না যে তার দোয়া কবুল হল বা হলো না।

তিন. মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দার-বান্দির দোয়ার বদৌলতে দুনিয়াতে কোন বদলা দেন না বরং পরকালের জন্য জমা করে রাখেন তাই দেখা যাবে যে, ক্বিয়ামতের দিন অনেক বান্দা-বান্দি তারা তাদের অসংখ্য পাপ ও বদি দেখে পেরেশান হয়ে যাবে। তারা নিজেদেরকে জাহান্নামী ধারণা করবে, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি এ অবস্থা দেখে তাদেরকে বলবেন, তোমরা চিন্তিত হয়ো না, তোমরা অমুক স্থানে যাও সেখানে তোমাদের জন্যে পাহাড় পাহাড় নেকী জমা করে রাখা হয়েছে। সত্যিই তারা সেখানে যাবে, গিয়ে দেখবে পাহাড় পাহাড় নেকী। তারা বলবে, আয় বারে ইলাহী! আমরা তো যমীনে এতো নেক কাজ করিনি। আমাদের এতো নেকী আসলো কোথা থেকে? তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বলবেন, তোমরা এত নেক কাজ করোনি সত্য কথাই, তবে তোমরা আমার নিকট অনেক দোয়া করেছিলে, আমি তোমাদের সকল দোয়াই কবুল করেছিলাম। তার বদলা যমীনে না দিয়ে পরকালের জন্য জমা করে রেখেছি। তখন তারা সেগুলো নিয়ে নেকীর পাল্লায় তুলে দিবে যার ফলে তাদের নেকীর পাল্লা ভারী হয়ে যাবে এবং বদীর পাল্লা হালকা হয়ে যাবে। কিছুক্ষণ পূর্বে তারা ছিলো জাহান্নামী এখন তাদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। কাজেই, মহান আল্লাহ পাক তিনি সব দোয়াই কবুল করে থাকেন। তাই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সব চাইতে হবে, বেশি বেশি চাইতে হবে। ইয়াক্বীনের সাথে চাইলে মহান আল্লাহ পাক তিনি অবশ্যই দিয়ে দিবেন। সুবহানাল্লাহ!

হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে, কয়েক শ্রেণীর লোক খালিছ তওবা না করা পর্যন্ত তাদের শবে বরাত নছীব হবে না। যেমন-
যাদুকর (জ্যোতিষ, গণক),
শরাবখোর (সেটা যে কোন নেশা জাতীয় মাদক দ্রব্যই হোক না কেন, এমনকি পেপসি, কোকাকোলা ইত্যাদি সফট ড্রিংসেও অ্যালকোহলের উপস্থিতি প্রমাণিত),
ব্যভিচারী,
শরীয়তের কারণ ব্যতীত আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী,
পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান,
চোগলখোর (যে একজনের কথা আরেক জনের নিকট বলে বেড়ায়),
শরীয়তের কারণ ছাড়াই কোন মুসলমান ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশি কথা বন্ধকারী,
শরীয়তের কারণ ব্যতীত মুসলমানকে হত্যাকারী,
মুশরিক,
গায়ক ও
বাদক।

যারা ইসলামের নামে বেপর্দা, ছবি, টিভি চ্যানেল, গানবাজনা, খেলাধুলা, গণতন্ত্র, ভোট-নির্বাচন, হরতাল, লংমার্চ, সুদ-ঘুষ, হারাম খাওয়া, মিথ্যা বলাসহ ইত্যাদি শরীয়তবিরোধী বা হারাম কাজে মশগুল তারাও এগুলো থেকে খালিছ তওবা না করলে ‘শবে বরাত’-এর মাগফিরাত, রহমত, বরকত, সাকিনা লাভ করতে পারবে না।

কাজেই তাদেরকে অবশ্যই এ রাতে খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে। যদি তারা খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করে তবে অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন এবং শবে বরাত-এর সকল রহমত, বরকত ও নিয়ামত দান করবেন। কেননা, মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত গুনাহখাতা ক্ষমা করে দিবেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”

মূলকথা হলো- পবিত্র বরাত-এর রাত মুসলমানদের জন্য দোয়া কবুলের খাছ রাত। পাশাপাশি মাগফিরাত, তওবা, রিযিক এবং হায়াত-মউতের ফায়ছালার রাত। তবে যারা শরীয়তবিরোধী বা হারাম কাজে মশগুল; তারা সেগুলো থেকে খালিছ তওবা না করলে তাদের কোনো দোয়াই কবুল হবে না এবং শবে বরাতের নিয়ামত তাদের নছীব হবে না। তাই প্রত্যেকের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- পবিত্র শবে বরাত আসার পূর্বেই সর্বপ্রকার শরীয়তবিরোধী ও হারাম কাজ থেকে খালিছভাবে তওবা-ইস্তিগফার করা আর বাংলাদেশ সরকারসহ প্রত্যেক মুসলিম ও অমুসলিম সরকারের উচিত পবিত্র শবে বরাতের সম্মানার্থে কমপক্ষে তিনদিন বাধ্যতামূলক ছুটি ঘোষণা করা।

চৌদ্দই শা'বান দিবাগত রাতটি হচ্ছে পবিত্র শবে বরাত বা বরাতের রাত্র। কিন্তু অনেকে বলে থাকে কুরআন শরীফ-হাদীছ শরীফ-এর কোথাও শবে বরাত শব্দ নেই। শবে বরাত বিরোধীদের এরূপ জিহালতপূর্ণ বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, নামায, রোযা, খোদা, ফেরেশতা, পীর ইত্যাদি শব্দ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর কোথাও নেই। এখন শবে বরাত বিরোধী লোকেরা কি নামায, রোযা ইত্যাদি শব্দ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ না থাকার কারণে ছেড়ে দিবে? মূলত শবে বরাত, নামায, রোযা, খোদা, ফেরেশতা, পীর ইত্যাদি ফার্সী শব্দ, আরবী শব্দ নয়। তাই ফার্সী শব্দ হিসেবে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ ব্যবহৃত হয়নি। বরং প্রচলিত শব্দগুলোর আরবী শব্দ লাইলাতুম মুবারাকাহ বা লাইলাতুন নিছফি মিন শা'বান, ছলাত, ছাওম, আল্লাহ, মালাইকা, মুর্শিদ বা শায়েখ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন-


ফার্সী শব্দ                                                                              আরবী শব্দ
                                                   কুরআন শরীফ-এ ব্যবহৃত শব্দ                         হাদীছ শরীফ-এ ব্যবহৃত শব্দ
শবে বরাত                                           লাইলাতুম মুবারাকাহ                               লাইলাতুন নিছফি মিন শা'বান
নামায                                                 ছলাত                                                ছলাত                           
রোযা                                                  ছাওম                                                ছাওম                           
খোদা                                                  আল্লাহ                                               আল্লাহ                           
ফেরেশতা                                             মালাইকা                                            মালাইকা                       
পীর                                                    মুর্শিদ                                                শায়েখ                         

ফার্সী শব অর্থ রাত্রি এবং বরাত অর্থ ভাগ্য বা মুক্তি। সুতরাং শবে বরাত মানে হল ভাগ্য রজনী বা মুক্তির রাত।
মূলতঃ শবে বরাত এবং এর ফযীলত কুরআন শরীফ-এ আয়াত শরীফ এবং অসংখ্য হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। কুরআন শরীফ-এ শবে বরাতকে লাইলাতুম মুবারাকাহ বা বরকতময় রাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর হাদীছ শরীফ-এ শবে বরাতকে লাইলাতুন নিছফি মিন শা'বান বা শা'বান মাসের মধ্য রাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন,
وَالْكِتَابِ الْمُبِينِ0  إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ 0 فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ 0 أَمْرًا مِّنْ عِندِنَا إِنَّا كُنَّا مُرْسِلِينَ 0

অর্থ: "শপথ প্রকাশ্য কিতাবের! নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি। নিশ্চয়ই আমিই সতর্ককারী। আমারই নির্দেশক্রমে উক্ত রাত্রিতে প্রতিটি প্রজ্ঞাময় বিষয়গুলো ফায়ছালা হয়। আর নিশ্চয়ই আমিই প্রেরণকারী।"  (সূরা দু'খানঃ ২-৫)

কেউ কেউ বলে থাকে যে, "সূরা দু'খানের উল্লেখিত আয়াত শরীফ দ্বারা শবে ক্বদর-কে বুঝানো হয়েছে। কেননা উক্ত আয়াত শরীফ-এসুস্পষ্টই উল্লেখ আছে যে, নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি........। আর কুরআন শরীফ যে ক্বদরের রাতে নাযিল করা হয়েছে তা সূরা ক্বদরেও উল্লেখ আছে।"এ প্রসঙ্গে মুফাসসীরকুল শিরোমণি রঈসুল মুফাসসিরীন বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি স্বীয় তাফসীরে উল্লেখ করেন,
"মহান আল্লাহ পাক তিনি “লাইলাতুম মুবারাকাহ” বলতে শা'বান মাসের মধ্য রাত বা শবে বরাতকে বুঝিয়েছেন।  মহান আল্লাহ পাক তিনি এ রাতে প্রজ্ঞাময় বিষয়গুলোর ফায়ছালা করে থাকেন।" (ছফওয়াতুত তাফাসীর, তাফসীরে খাযীন ৪র্থ খন্ডঃ ১১২ পৃষ্ঠা, তাফসীরে ইবনে আব্বাস,তাফসীরে মাযহারী ৮ম খন্ডঃ ৩৬৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাযহারী ১০ম খন্ড, তাফসীরে ইবনে কাছীর, তাফসীরে খাযিন, তাফসীরে বাগবী, তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে কবীর, তাফসীরে রুহুল বয়ান, তাফসীরে আবী সাউদ, তাফসীরে বাইযাবী, দূররে মানছূর, তাফসীরে জালালাইন, তাফসীরে কামলালাইন, তাবারী, লুবাব, নাযমুদ দুরার, মাদারিক)

লাইলাতুম মুবারাকাহ দ্বারা শবে বরাতকে বুঝানো হয়েছে তার যথার্থ প্রমাণ সূরা দু'খানের ৪ নম্বর আয়াত শরীফ।
فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ এই আয়াত শরীফেরيُفْرَقُ  শব্দের অর্থ ফায়ছালা করা।
প্রায় সমস্ত তাফসীরে সকল মুফাসসিরীনে কিরামগণ يُفْرَقُ (ইয়ুফরাকু) শব্দের তাফসীর করেছেন-
ইয়ুকতাবু অর্থাৎ লেখা হয়,
ইয়ুফাছছিলু অর্থাৎ ফায়ছালা করা হয়,
ইয়ুতাজাও ওয়াযূ অর্থাৎ বন্টন বা নির্ধারণ করা হয়,
ইয়ুবাররিমু অর্থাৎ বাজেট করা হয়,
ইয়ুকদ্বিয়ু অর্থাৎ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

কাজেই ইয়ুফরাকু-র অর্থ ও তার ব্যাখার মাধ্যমে আরো স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, “লাইলাতুম মুবারাকাহ” দ্বারা শবে বরাত বা ভাগ্য রজনীকে বুঝানো হয়েছে। যেই রাত্রিতে সমস্ত মাখলুকাতের ভাগ্যগুলো সামনের এক বছরের জন্য লিপিবদ্ধ করা হয়, আর সেই ভাগ্যলিপি অনুসারে রমাদ্বান মাসের লাইলাতুল ক্বদর বা শবে ক্বদরে তা চালু হয়। এজন্য শবে বরাতকে লাইলাতুত্ তাজবীজ অর্থাৎ ফায়ছালার রাত্র এবং শবে ক্বদরকে লাইলাতুল তানফীয অর্থাৎ নির্ধারিত ফায়ছালার কার্যকরী করার রাত্র বলা হয়। (তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে খাযীন, তাফসীরে ইবনে কাছীর, তাফসীরে বাগবী,  তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে রুহুল বয়ান, তাফসীরে লুবাব)

সুতরাং মহান আল্লাহ পাক যে সুরা দু'খান-এ বলেছেন, "আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি" এর ব্যাখ্যামুলক অর্থ হল "আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিলের ফায়ছালা করেছি"।
আর সুরা ক্বদর-এ "আমি ক্বদরের রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি" এর ব্যাখ্যামুলক অর্থ হল "আমি ক্বদরের রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি "।

অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক শবে বরাতে কুরআন শরীফ নাযিলের সিদ্ধান্ত নেন এবং শবে ক্বদরে তা নাযিল করেন। হাদীছ শরীফেও শবে বরাতে সমর্থন পাওয়া যায়।

হাদীছে শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
"হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহিাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত আছে। একদা মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! আপনি কি জানেন, লাইলাতুন নিছফি মিন শা'বান-এ কি সংঘটিত হয়? তিনি বললেন, হে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এ রাত্রিতে কি কি সংঘটিত হয়? মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, এ রাতে আগামী এক বছরে কতজন সন্তান জম্মগ্রহণ করবে এবং কতজন লোক মৃত্যূবরণ করবে তা লিপিবদ্ধ করা হয়। আর এ রাতে বান্দার (এক বছরের) আমলসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পেশ করা হয় এবং এ রাতে বান্দার (এক বছরের) রিযিকের ফায়ছালা হয়"। (বাইহাক্বী, ইবনে মাজাহ্, মিশকাত শরীফ)

হাদীছ শরীফ-এ আরও ইরশাদ হয়েছে,
"হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, একদা মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনিার সাথে কোন এক রাত্রিতে রাত যাপন করছিলাম। এক সময় উনাকে বিছানায় না পেয়ে আমি মনে করলাম যে, তিনি হয়ত অন্য কোন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের হুজরা শরীফ-এতাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর আমি তালাশ করে উনাকে জান্নাতুল বাক্বীতে পেলাম। সেখানে তিনি উম্মতের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। এ অবস্থা দেখে আমি স্বীয় হুজরা শরীফ-এফিরে এলে তিনিও ফিরে এলেন এবং বললেনঃ আপনি কি মনে করেন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনার সাথে আমানতের খিয়ানত করেছেন? আমি বললামঃ ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ধারণা করেছিলাম যে, আপনি হয়তো আপনার অন্য কোন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের  হুজরা শরীফ-এতাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি শা'বানের ১৫ তারিখ রাত্রিতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর তিনি বণী কালবের মেষের গায়ে যত পশম রয়েছে তার চেয়ে বেশী সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন"। (বুখারী শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাযাহ, রযীন, মিশকাত শরীফ)

হাদীছ শরীফ-এ আরও ইরশাদ হয়েছে,
"হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ননা করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি শা'বান মাসের ১৫ তারিখ রাত্রিতে ঘোষণা করেন যে, উনার সমস্ত মাখলুকাতকে ক্ষমা করে দিবেন। শুধু মুশরিক ও হিংসা-বিদ্বেষকারী ব্যতীত।" (ইবনে মাযাহ্, আহমদ, মিশকাত শরীফ)

হাদীছ শরীফ-এ আরও ইরশাদ হয়েছে,
"হযরত আলী কাররামাল্লাহ ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি বর্ননা করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, যখন অর্ধ শা'বানের রাত উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাতে সজাগ থেকে ইবাদত-বন্দেগী করবে এবং দিনের বেলায় রোযা রাখবে। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত রাতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করতে থাকেন, কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি ক্ষমা করে দিব। কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দান করব। কোন মুছিবগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব। এভাবে সুবহে ছাদিক পর্যন্ত ঘোষাণা করতে থাকেন" (ইবনে মাযাহ্, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ)

হাদীছ শরীফ-এ আরও ইরশাদ হয়েছে,
"মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে এবং অর্ধ শা'বানের রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করবে, সে ব্যক্তির অন্তর ঐদিন মরবে না বা পেরেশান হবে না যে দিন সকলের অন্তর পেরেশান থাকবে"। (মুকাশাফাতুল কুলুব)

শবে বরাতের রাতে দোয়া কবুল প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
"মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, পাঁচটি রাত এমন রয়েছে যেগুলোতে দোয়া করলে তা রদ বা বাতিল হয়না । (১) পহেলা রজবের রাত (২) শা'বানের মধ্য রাত তথা শবে বরাত (৩) জুমুয়ার রাত (৪) পবিত্র ঈদুল ফিতরের রাত (৫) পবিত্র ঈদুল আযহার রাত"। (দায়লামী শরীফ)

শবে বরাতের রাতে দোয়া কবুল প্রসঙ্গে অন্য হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
"মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, নিশ্চয়ই দোয়া বা মুনাজাত পাঁচটি রাতে কবুল হয়ে থাকে। (১) পহেলা রজবের রাত (২) শা'বানের মধ্য রাত (৩) ক্বদরের রাত (৪) পবিত্র ঈদুল ফিতরের রাত (৫) পবিত্র ঈদুল আযহার রাত।” (মা ছাবাত বিস্ সুন্নাহ, গুনইয়াতুত্ ত্বালিবীন, মুকাশাফাতুল কুলুব)


সুতরাং শবে বরাত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের বর্ণনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত ।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,

وَتَعَاوَنُواْ عَلَى الْبرِّ وَالتَّقْوَى وَلاَ تَعَاوَنُواْ عَلَى الإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُواْ اللّهَ إِنَّ اللّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ

অর্থ: তোমরা পরস্পর পরস্পরকে নেক কাজ ও পরহেযগারীতে সাহায্য করো, আর পাপ কাজ ও শত্রুতার মধ্যে সাহায্য করোনা। নিশ্চয় মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা। (সূরা মায়িদাঃ ২)
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ৯৭% জনগণ মুসলমান আর রাষ্ট্রীয় দ্বীন হচ্ছে ইসলাম।
কাজেই এদেশের জনগণের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে ইসলাম পরিপূর্ণভাবে পালন করা।
সে শর্তে ইসলামে ক্ষুধার্তকে খাদ্য দেয়া, পিপাসার্তকে পান করানো, আশ্রয়হীনকে আশ্রয় দেয়া ইত্যাদি নেক কাজের অন্তর্ভুক্ত। অতএব, রোহিঙ্গা মুসলমান যারা জীবন ভিক্ষাপ্রার্থী ও আশ্রয়প্রার্থী তাদেরকে পুশব্যাক করা কখনো ইসলামী কাজ নয়।
স্মরণীয় যে, বাংলাদেশ সংবিধানের ২৫ (ক), ২৫ (খ) ও ২৫ (গ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ীও বাংলাদেশ সরকার সহিংসতা থেকে নিরাপত্তা লাভের উদ্দেশ্যে আগমনকারীদের তথা জীবন ভিক্ষাপ্রার্থীদের আশ্রয় দিতে পারে।

বাংলাদেশ সংবিধানের ২৫ (ক), (খ), (গ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-

‘আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তিপ্রয়োগ পরিহার এবং সাধারণ ও সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের চেষ্টা করিবেন।’

‘প্রত্যেক জাতির স্বাধীন অভিপ্রায় অনুযায়ী পথ ও পন্থার মাধ্যমে অবাধে নিজস্ব সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা নির্ধারণ ও গঠনের অধিকার সমর্থন করিবেন।” এবং

‘সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতাবাদ বা বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বের সর্বত্র নিপীড়িত জনগণের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামকে সমর্থন করিবেন।’
উপরোক্ত অনুচ্ছেদের আলোকে বাংলাদেশ সরকার পারে মিয়ানমারের নিরস্ত্র মুসলমানদের সাহায্য করতে, মিয়ানমারের মুসলমানদের ন্যায়সঙ্গত দাবি সমর্থন করতে।
দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের উচিত আরাকানে মুসলিম গণগত্যার জন্য মিয়ানমারের উপর শক্ত চাপ প্রয়োগ করা ওআইসি ও জাতিসংঘে জোরদারভাবে বিষয়টি তোলা। এবং বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে বিশেষ জনমত তৈরি করে রোহিঙ্গা ইস্যুর শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সামগ্রিকভাবে কোশেশ করা।
প্রতিবেশী দেশে মুসলমানদের অকাতরে শহীদ করা হচ্ছে, রাষ্ট্র দ্বীন ইসলামের দেশ সেটা কী করে চোখে দেখে নির্লিপ্ত থাকতে পারে?
বাংলাদেশের উচিত মিয়ানমারের উপর মুসলিম নির্যাতন বন্ধে শক্ত চাপ প্রয়োগ করা এবং ওআইসিসহ জাতিসংঘে বিষয়টি জোরদারভাবে উল্লেখ করা।

আমরা জানি, পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘুরছে। সে কারণে পূর্ব থেকে ধীরে ধীরে পশ্চিমে সূর্য অস্ত যেতে থাকে এবং উদয়ের ক্ষেত্রেও পূর্ব দিকে সূর্য প্রথম উদয় হয়। সে কারণে ঢাকায় যখন সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় হয় তার পূর্বেই ঢাকার পূর্বদিকে অবস্থিত খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি এলাকায় সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় হয় এবং ঢাকার পশ্চিমদিকে অবস্থিত দিনাজপুর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশোরে ঢাকার কয়েক মিনিট পরে সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় হয়। এছাড়াও কোন শহর ঢাকার চেয়ে কতটা উঁচু বা নীচু অক্ষাংশে অবস্থিত এ বিষয়টাও সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের উপর প্রভাব ফেলে অর্থাৎ ফযর এবং ইশার ওয়াক্তের মধ্যে তারতম্য ঘটে।

বাজারে প্রচলিত চিরস্থায়ী সময়সূচীতে দেখানো হয়েছে, ঢাকার সময়ের সঙ্গে দিনাজপুরে সাহরীর সময়ে ৬ মিনিট যোগ করতে হবে। অর্থাৎ দিনাজপুরে সূর্যোদয় ঢাকার সূর্যোদয়ের ৬ মিনিট পরে সংঘটিত হবে। আবার ফরিদপুরে সাহরীতে যোগ করতে হবে ৭ মিনিট অর্থাৎ ফরিদপুরে আরো বিলম্বে সূর্যোদয় ঘটবে।


অথচ যেখানে দিনাজপুরের অবস্থান হচ্ছে অক্ষাংশ ২৫৩৭' ৩৫" উত্তর, দ্রাঘীমা ৮৮৩৮' পূর্ব।
সেখানে ফরিদপুরের অক্ষাংশ ২৩৩৬' ১৫" উত্তর, দ্রাঘীমা ৮৯৫০' ৩০" পূর্ব এবং
ঢাকার অক্ষাংশ ২৩৪৩' ৩৮" উত্তর, দ্রাঘীমা ৮৯৫০' পূর্ব।

http://panchagarhweb.com.bd/image/Bangladesh%20Map.jpg

দেখা যাচ্ছে, ফরিদপুরের অবস্থান ঢাকার নিকটবর্তী এবং দিনাজপুরের অবস্থান ঢাকার চেয়ে দূরে। তাহলে ফরিদপুরের সময়ের সাথে সাহরীর ৭ মিনিট যোগ করলে দিনাজপুরে কেন ৬ মিনিট যোগ করতে হবে? নিঃসন্দেহে বিষয়টির গরমিল এখানে স্পষ্ট। প্রকৃতপক্ষে ফরিপুরের যে অবস্থান, সে অনুযায়ী ঢাকার সময়ের সাথে যোগ হবে সর্বাবস্থায় ২ মিনিট এবং দিনাজপুরের অবস্থান অনুযায়ী ঢাকার সময়ের সাথে যোগ হবে উর্র্ধ্বে ১১ মিনিট এবং নিম্নে ১ মিনিট। সময়ের এই উর্দ্ধসীমা এবং নিম্নসীমা দেয়ার কারণ হচ্ছে, বছরের সব সময় ঢাকার সময়ের সঙ্গে অন্যান্য সকল শহরের সময়ের পার্থক্য একই রকম হবে না। যদিও বিশেষ স্থানে অবস্থানের কারণে কোন কোন শহরের ওয়াক্তের সময়ের পার্থক্য ঢাকার সাথে সারা বছরেই একই রকম থাকবে তবে সে রকম শহরের সংখ্যা খুবই কম।

একইভাবে সিলেটে ফযরের ক্ষেত্রে ঢাকার সঙ্গে সর্বোচ্চ বিয়োগ হবে ১০ মিনিট এবং সর্বনিম্ন ৪ মিনিট। সেখানে কোন ক্যালেন্ডারে দেখানো হয়েছে ৫ মিনিট আবার কোন ক্যালেণ্ডারে ৪ মিনিট সর্বাবস্থায়।

এছাড়া ঢাকার সময়ের সাথে অন্যান্য মোট ১৯টি শহরের পার্থক্য দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ ধারণা দেয়া হচ্ছে যে, এই ১৯টি শহরের সময়ের পার্থক্য জানা গেলেই সমগ্র দেশের নামাযের সময়সূচী পাওয়া যাবে। কিন্তু বাস্তবে সেটা সম্ভব নয়। যেমন, চট্টগ্রামের সময় বর্ণনা করলেও কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটির সময়ের বর্ণনা নেই। একই রকমভাবে দিনাজপুরের বর্ণনা থাকলেও কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, নওগাঁর বর্ণনা নেই। অথচ উল্লিখিত সবগুলো শহরেই সময়ের পার্থক্য ঢাকার সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন।

প্রচলিত সবগুলো ক্যালেন্ডারেই সারা বছরের জন্য ঢাকার সাথে অন্যান্য শহেরর সময়ের পার্থক্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু মূলতঃ এ সময়ের পার্থক্য সারা বছরেই এক রকম থাকে না বরং সময়ের পাথর্ক্য নীচের নিয়মানুসারে হয়।
সামিন (জানুয়ারী) মাস, তাসি’ (ফেব্রুয়ারী) মাস, সাদিস (নভেম্বর) মাস ও সাবি’ (ডিসেম্বর) মাসে প্রায় একই রকম সময়।
আ’শির (মার্চ) মাস ও খামীস (অক্টোবর) মাসে প্রায় একই রকম সময়।
হাদি আশার (এপ্রিল) মাস ও রবি’ (সেপ্টেম্বর) মাসে প্রায় একই রকম সময়।
ছানী আশার (মে) মাস, আউয়াল (জুন) মাস, ছানী (জুলাই) মাস ও সালিস (আগস্ট) মাসে প্রায় একই রকম সময়।

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “পৃথিবীর সব মুসলমান একটি দেহের ন্যায়। দেহের এক প্রান্ত আক্রান্ত হলে যেমন সারাদেহে সঞ্চালিত হয়; তেমনি কোনো মুসলমান আক্রান্ত হলে গোটা মুসলিম বিশ্বে তা সঞ্চারিত হবে।”

এই হাদীছ শরীফ-এর আলোকে ৯৭ ভাগ মুসলমানের দেশ, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের দেশ, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশ সরকারের উচিত ছিল- একদিকে শরণার্থী মুসলমানদের আশ্রয় দেয়া অপরদিকে আরাকানের মুসলমানদের উপর এরূপ নৃশংস বর্বর হত্যাকাণ্ডের জন্য মিয়ানমারের দূতাবাসকে ডেকে সতর্ক করা। মুসলিম গণহত্যা, গণসম্ভ্রহরণ, লুণ্ঠন বন্ধ করার জন্য কঠোর নির্দেশ দেয়া। পাশাপাশি ওআইসি’কে বিষয়টি গুরুতরভাবে নেয়ার জন্য বিশেষভাবে বলা। সব মুসলিম দেশসমূহকে উজ্জীবিত করা। এবং সম্মিলিতভাবে মিয়ানমারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করা।

পাশাপাশি যে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক সাম্য-শান্তির মোড়ল দাবিদার সে জাতিসংঘকে বিষয়টি জোরদারভাবে উচ্চকিত করা। যে জাতিসংঘ সুদানে খ্রিস্টানদের উপর অত্যাচার হচ্ছে অজুহাতে তাদের জন্য আলাদা স্বাধীন রাজ্য দক্ষিণ সুদান করে দেয়, পূর্ব তিমুরকে ইন্দোনেশিয়া থেকে আলাদা করে দেয়, সে জাতিসংঘ শত শত বছর ধরে নিপীড়িত আরাকানী মুসলমানদের ক্ষেত্রে নিশ্চুপ কেন- সে প্রশ্ন জোরদারভাবে উত্থাপন করা।

উল্লেখ্য, মুসলমানদের ১৯৪২ সালে বিতাড়ন করার জন্য মিয়ানমারে ব্যাপক দাঙ্গার সৃষ্টি হয়েছিলো। দাঙ্গাবাজরা হামলার সময় রোহিঙ্গাদের বাঙালি অভিহিত করছে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে দেশটি থেকে পুরোপুরি উচ্ছেদের জন্য ১৯৪২ সালের মতো ভয়াবহ দাঙ্গার সৃষ্টি করা হয়েছে। রাখাইন বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের হামলায় হাজার হাজার মুসলিম শহীদ হয়েছেন, হচ্ছেন। শত শত মসজিদ-মাদরাসাসহ হাজার হাজার গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। মুসলমানদের হত্যার পর লাশ গুম করে ফেলা হচ্ছে। লুটপাট চালানো হচ্ছে মংডু শহরে মুসলমানদের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। পুলিশ প্রহরায় সন্ত্রাসী বৌদ্ধ রাখাইনরা হামলা চালাচ্ছে মুসলমানদের উপর। মুসলমানদেরকে নির্মমভাবে হত্যাপূর্বক তাদের মাথা ন্যাড়া করে রাখাইনদের ভিক্ষু সাজাতে লাল কাপড় মুড়িয়ে ছবি তোলে। এরপর উল্টো মুসলমানরা রাখাইন ভিক্ষুদের হত্যা করেছে মর্মে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রচার করা হচ্ছে।
মিডিয়ায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের অনুপস্থিতির কারণে সেখানকার সত্যিকারের চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না। পরিস্থিতি যে খুবই ভয়াবহ তা বোঝা যায় বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার কাছাকাছি অবস্থিত রাখাইন রাজ্য থেকে জাতিসংঘের প্রায় ৪৪ জন সদস্যদের সরিয়ে নেয়ার ঘটনায়। মুসলিম দমনে শুধু সন্ত্রাসী রাখাইনরাই নয়, যালিম পুলিশ ও নাসাকা নিরাপত্তা বাহিনীও অভিযানে অংশ নিচ্ছে।

অথচ পবিত্র কুরআন শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “তোমরা যালিমও হয়ো না, মজলুমও হয়ো না।”
আর হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,“সব কাফিরের ধর্ম এক।” কাজেই সব যালিম কাফিরদের বিরুদ্ধে মজলুম মুসলমানদের প্রতিবাদী হতে হবে। মুসলমানদের মজলুম হওয়া চলবে না।
কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, ‘মু’মিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।’
আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, ‘এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই।’

তাই বিশ্বের সমস্ত মুসলমানদের ঈমানী দায়িত্ব হচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানো।