Topic: ঈদের নামাযের সুন্নতী ওয়াক্ত
কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
اِنَّ الصَّلاَةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا
অর্থ : “নিশ্চয়ই নামায নির্দিষ্ট সময়ে পড়া মু’মিন মুসলমানের উপর ফরয করা হয়েছে।” (সূরা আন-নিসা, আয়াত শরীফ-১০৩)
পাঞ্জেগানা নামাযের ন্যায় ঈদের নামায কোন সময় আদায় করতে হবে সে সম্পর্কে ইসলামে বিধান রয়েছে। সকালে সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হবার পর থেকে (অর্থাৎ মাকরূহ্ ওয়াক্ত শেষ হবার পর থেকে অথবা সূর্য উদয়ের শুরু থেকে ঘড়ির মিনিট অনুযায়ী ২৩ মিনিট পর) ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর যাহওয়াতুল কুবরা বা যাওয়াল অথবা শরয়ী অর্ধদিন বা দ্বিপ্রহর অর্থাৎ সূর্যের এস্তাওয়া আরম্ভ হবার পূর্ব পর্যন্ত ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে। ফজরের ওয়াক্ত শেষ হবার পর, ২৩ মিনিটি পর্যন্ত মাকরূহ্ ওয়াক্ত এবং এরপর ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর যোহরের ওয়াক্ত শুরু হবার ১ ঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে। অর্থাৎ মাকরূহ ওয়াক্ত শুরু হবার আগ পর্যন্ত।
সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হবার পর থেকে অর্থাৎ মাকরূহ ওয়াক্ত যা ঘড়ির হিসাব অনুযায়ী ২৩ মিনিট অতিক্রম হবার পূর্বে ঈদের নামায আদায় করলে নামায হবে না এবং যোহরের নামাযের ওয়াক্ত হবার পূর্বের ১ ঘন্টা যা মাকরূহ ওয়াক্ত নামে পরিচিত অর্থাৎ যাহওয়াতুল কুবরা বা সূর্যের এস্তাওয়া আরম্ভ হবার পর ঈদের নামায আদায় করলে তা আদায় হবে না।
অর্ধদিন বা নিসফুন নাহার দু’ভাবে বর্ণিত। একটি হলো শরয়ী অর্ধদিন এবং আরেকটি উরফী (প্রচলিত) অর্ধদিন। সূর্য উদয় হতে সূর্য অস্ত পর্যন্ত সময়কে দু’ভাগে ভাগ করলে প্রথম ভাগকে শরয়ী অর্ধদিন বলা হয়। প্রথম ভাগের শেষ অংশকে বলা হয় শরয়ী দ্বিপ্রহর বা যাহওয়াতুল কোবরা। যাহওয়াতুল কোবরা হতে সূর্য ঢলা পর্যন্ত সময়কে এস্তাওয়ায়ে শামস বলা হয়। ওটার মধ্যবর্তী সময় নামায পড়া মাকরূহ।
আর প্রচলিত অর্ধদিন বলতে বেলা ১২টা বুঝানো হয়। ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শরয়ী অর্ধদিনের পূর্ব পর্যন্ত থাকে।
উদাহরণস্বরূপ সকাল ৬ টায় যদি সূর্য উদিত হয়, তাহলে ৬ টা ২৩ মিনিট হতে ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং ১২ টায় যদি যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়, তাহলে তার পূর্বে ১ঘন্টা বাদ দিয়ে অর্থাৎ ১১টা পর্যন্ত ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে।
আর নিম্নবর্ণিত হাদীছ শরীফের মাধ্যমে আমরা ঈদের নামায কোন সময় আদায় করলে তা সুন্নত হবে, তা জানতে পারবো। সে সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে যে, “মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের দিন ফজরের নামায পড়ে হুজরা শরীফ-এ যেতেন এবং সকাল সকাল গোসল করে ঈদুল ফিতরের দিন হলে বেজোড় সংখ্যক (৩, ৫ অথবা ৭টি) খোরমা খেজুর খেয়ে ঈদগাহে যেতেন। আর ঈদুল আদ্বহার দিন হলে কিছু না খেয়ে সরাসরি ঈদগাহে যেতেন এবং ঈদের নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে ঈদের নামায আদায় করতেন। অতঃপর খুতবা দিতেন ও নছীহত করতেন।”
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে, “হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আমর ইবনে হাযম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নজরানের আমীর বা প্রধান হিসেবে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় চিঠি দিয়ে আদেশ করেন যে, ‘ঈদুল আদ্বহার নামায খুব সকাল সকাল পড়বেন এবং ঈদুল ফিতরের নামায ঈদুল আদ্বহার চেয়ে অল্প একটু দেরিতে পড়বেন এবং নামাযের পরে মানুষকে নছীহত করবেন।’
কাজেই ঈদের নামায সকাল সকাল পড়া সুন্নত। ঈদের নামাযের সম্মানার্থে এবং ঈদের নামায যাতে আদায়ে দেরি না হয়, সেজন্য ঈদের দিন ইশরাকসহ অন্যান্য সকল নফল নামায তথা সমস্ত নফল ইবাদত করা মাকরূহ তাহরিমী।
বাংলাদেশে পবিত্র শাওওয়াল মাসের চাঁদ তালাশ করতে হবে আজ ২০ ছালিছ ১৩৮০ শামসী ১৮ আগস্ট ২০১২ ঈসায়ী, ইয়াওমুস সাবতি বা শনিবার সন্ধ্যায়। আজ ইয়াওমুস সাবতি বা শনিবার সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল ২১ ছালিছ ১৩৮০ শামসী ১৯ আগস্ট ২০১২ ঈসায়ী, ইয়াওমুল আহাদি বা রোববার হবে পবিত্র শাওওয়াল মাসের পহেলা তারিখ অর্থাৎ মুসলমানদের খুশির দিন পবিত্র ঈদুল ফিতর-এর দিন।
আর যদি আজ ইয়াওমুস সাবতি বা শনিবার সন্ধ্যায় চাঁদ দেখতে না পাওয়া যায়, তবে পবিত্র রমাদ্বান মাস ৩০ দিন পূর্ণ করে আগামী ২২ ছালিছ ১৩৮০ শামসী ২০ আগস্ট ২০১২ ঈসায়ী, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীমি বা সোমবার রীঢ হবে পবিত্র শাওওয়াল মাসের পহেলা তারিখ অর্থাৎ পবিত্র ঈদুল ফিতর-এর দিন। অর্থাৎ চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামীকাল ইয়াওমুল আহাদি বা রোববার অথবা আগামী ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীমি বা সোমবার শরীফ পালিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর।
আর যামানার খাছ লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার মুজাদ্দিদ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস্ সুন্নাহ, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুবারক ইমামতিতে ১৪৩৩ হিজরী সনের দেশের সর্বপ্রথম ঈদুল ফিতর নামাযের জামায়াত রাজারবাগ শরীফ সুন্নতী জামে মসজিদে সুন্নতী ওয়াক্ত মুতাবিক সকাল ০৬টা ১৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি কোনো হক্কানী ওলীআল্লাহ উনার পিছনে নামায আদায় করলো, সে যেনো হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিছনে নামায পড়লো। আর যে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিছনে নামায আদায় করলো তাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমা করে দিবেন।” সুবহানাল্লাহ!
রাজারবাগ শরীফ-এর পক্ষ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণকে উক্ত জামায়াতে শামিল হওয়ার জন্য আহবান জানানো হচ্ছে।