(edited by Julhaz 2012-08-12 13:26:20)

Topic: ইসলামিক ফাউন্ডেশন ফিতরা নির্ধারণে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ভুল করেছে

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সা’লাবা অথবা সা’লাবা ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবু সুআইর উনার পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি তিনি ইরশাদ করেন, এক সা’ গম বা আটা দু’ব্যক্তির পক্ষ থেকে আদায় করতে হবে- ছোট হোক বা বড় হোক, আযাদ হোক বা গোলাম হোক এবং পুরুষ হোক বা মহিলা হোক।” (আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

হানাফী মাযহাব মুতাবিক অর্ধ সা’ বলতে ১ সের সাড়ে ১২ ছটাক বুঝানো হয়েছে, যা গ্রাম হিসাবে ১৬৫৭ গ্রাম (প্রায়) হয়।

যেমন
১ সের সাড়ে ১২ ছটাক = ১৬ ছটাক + ১২/ ছটাক [যেহেতু ১ সের = ১৬ ছটাক]
                           = ২৮/ ছটাক
                           = ২৮/ x ৫ তোলা [যেহেতু ১ ছটাক = ৫ তোলা]
                           = (৫৭ x ৫)/২ তোলা
                           = ২৮৫/(২ x ৮৬) কেজি [যেহেতু ৮৬ তোলা = ১ কেজি]
                           = (২৮৫ x ১০০০)/১৭২ গ্রাম [যেহেতু ১ কেজি = ১০০০ গ্রাম]
                           = ১৬৫৬.৯৭৬৭ গ্রাম
                           = ১৬৫৭ গ্রাম প্রায়

কিন্তু ইসলামিক ফাউন্ডেশন ফিতরা নির্ধারণে শুদ্ধ গাণিতিক হিসাব করতে না পারায় অর্থাৎ তাদের যোগ-বিয়োগের নূন্যতম জ্ঞানটুকুও না থাকায় প্রতি বছরই তারা ফিতরা নির্ধারণে ভুল করে থাকে। প্রতি বছর ন্যায় এবারো এক সের সাড়ে বারো ছটাক অর্থাৎ ১৬৫৭ গ্রামের পরিবর্তে তারা ১৬৫০ গ্রাম হিসাব করে ফিতরা নির্ধারণ করেছে। কাজেই ফিতরা সম্পর্কে ইসলামিক ফাউন্ডেশন যে ফতওয়া দিয়েছে তা সম্পূর্ণই ভুল ও পরিত্যাজ্য।

শুদ্ধ গাণিতিক হিসাব করতে না পারায় প্রতিবছরই ইফা ফিতরা নির্ধারণে তিন ধরনের ভুল করে

প্রথমত, ১৬৫৭ গ্রামের স্থলে কমিয়ে ১৬৫০ গ্রাম নির্ধারণ করে।

দ্বিতীয়ত, তারা খোলা বাজারের আটার দামে ফিতরা নির্ধারণ করে। অথচ খোলা বাজারের আটা গুণগত মানে ভাল নয় এবং তা ধনীরা তো নয়ই এমনকি মধ্যবিত্তরাও খায় না। তারা সবাই প্যাকেটের ভাল আটা খেয়ে থাকে। তারপরেও কথা হচ্ছে, প্যাকেটে আটা সব সময় ১ কেজি বা ২ কেজি পুরো থাকে না। অনেক সময় ২ কেজির প্যাকেটে থাকে ১৯৭৫ গ্রাম অথবা ১ কেজির প্যাকেটে ৯৭৫ গ্রাম বা ৯৮০ গ্রাম আটা থাকে।

তৃতীয়ত, ইফা একই মূল্য শহর, গ্রাম তথা সারাদেশ ব্যাপী নির্ধারণ করে দেয়। অথচ বিভিন্ন অঞ্চলে দামের তারতম্য থাকতে পারে এবং সে হিসাবেই ফিতরার পরিমাণ নির্ধারণ হওয়া বাঞ্ছনীয়। কেননা দেশের বিভিন্ন এলাকায় আটার দাম বিভিন্ন রকম।

কাজেই যাদের উপর ছদকাতুল ফিতর ওয়াজিব, তাদেরকে বর্তমান মূল্য হিসাবে এক সের সাড়ে বারো ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য হিসেবে দিতে হবে। এ বছর ঢাকা শহরে ৩৪.৫০ টাকা কেজি হিসাবে এক সের সাড়ে বারো ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য- ৫৭.১৬৬৫ টাকা অর্থাৎ ৫৮ টাকা (প্রায়)।

যেমন, ১ কেজি বা ১০০০ গ্রাম আটার মূল্য ৩৪.৫০ টাকা।
প্রতি গ্রাম আটার মূল্য ৩৪.৫০ ÷ ১০০০ = ০.০৩৪৫ টাকা
১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য ১৬৫৭ x ০.০৩৪৫ = ৫৭.১৬৬৫ টাকা অর্থাৎ ৫৮ টাকা (প্রায়)। এর কম দেয়া যাবে না। তবে ইচ্ছা করলে বেশি দিতে পারবে।
অথচ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভুল হিসাবে এসেছে ৫৫ টাকা তা সম্পূর্ণই ভুল ও পরিত্যাজ্য

দেশের সব এলাকার আটার দাম এক রকম নয়। সাধারণত শহরের তুলনায় গ্রামে দ্রব্যমূল্যের দাম কিছুটা কম হয়ে থাকে। আবার খোলা আটার তুলনায় প্যাকেটের আটার মান ভালো হয়ে থাকে এবং তার দামও বেশি হয়ে থাকে। শরীয়তের ফতওয়া হচ্ছে, যেটা সবচেয়ে ভাল, পছন্দনীয় ও মূল্যবান সেটাই দান করতে হবে। খারাপ বা নিম্ন মূল্যের যেটা সেটা দান করা যাবে না। কেননা হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে,

عَنْ حَضَرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا نَصَدَّقَ اَحَدٌ بِصَدَ قَةٍ مِّنْ طَيِّبِ وَلَا يَقْبَلُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ اِلَّا الطَّيِّبَ

অর্থ :  হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, কোন ব্যক্তি পবিত্র বা উৎকৃষ্ট বস্তু হতে দান করলো। আর মহান আল্লাহ পাক তো পবিত্র বা উৎকৃষ্ট ব্যতীত কোন কিছুই কবুল করেন না। (বুখারী শরীফ)
আর এ বিষয়টি মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামুল্লাহ শরীফ-এ স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেন,

لَن تَنَالُواْ الْبِرَّ حَتَّى تُنفِقُواْ مِمَّا تُحِبُّونَ وَمَا تُنفِقُواْ مِن شَيْءٍ فَإِنَّ اللّهَ بِهِ عَلِيمٌ

অর্থ : তোমরা কখনই নেকী, কল্যাণ হাছিল করতে পারবে না যে পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের প্রিয় বা পছন্দনীয় বস্তু দান করবে। এবং তোমরা যা কিছু দান কর সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি অবশ্যই পূর্ণ খবর রাখেন। (সূরা আল ইমরান, আয়াত শরীফ ৯২)

ছদকাতুল ফিতরের পরিমাণ ও তার মূল্য নির্ধারণ সম্পর্কে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে (ইফা) অনুষ্ঠিত সভায় মাওলানা, মুফতী, ইমাম ও খতীব ছাহেবরা যে সিদ্ধান্ত প্রদান করেছে তা ভুল ও অশুদ্ধ। সুতরাং উল্লিখিত পরিমাণে কেউ ছদকাতুল ফিতর আদায় করলে তা আদায় হবে না। কারণ ছহীহ এবং গ্রহণযোগ্য মতে, নিছফু ‘সা’ বা অর্ধ ‘সা’ বলতে এক সের সাড়ে বারো ছটাক বুঝানো হয়েছে, যা গ্রাম হিসেবে প্রায় ১৬৫৭ গ্রাম হয়।