Topic: গুপ্তধন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর একটি ছোট গল্প

bee  bee  bee  bee  bee  bee  bee  bee  bee  bee
কেমন আছেন সবাই? আমি আজ এখানে নতুন যোগ দিলাম। যাই হোক আমি চেষ্টা করব আপনাদের প্রতিদিন কিছু গল্প উপহার দিতে। আজকের গল্প

গুপ্তধন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

অমাবস্যার নিশীথ রাত্রি। মৃত্যুঞ্জয় তান্ত্রিক মতে তাহাদের বহুকালের গৃহদেবতা জয়কালীর  পূজায় বসিয়াছে। পূজা সমাধা করিয়া যখন  উঠিল তখন  নিকটস্থ  আমবাগান হইতে প্রত্যুষের প্রথম কাক ডাকিল।



মৃত্যুঞ্জয়  পশ্চাতে ফিরিয়া  চাহিয়া দেখিলেন মন্দিরের দ্বার রূদ্ধ রহিয়াছে।  তখন সে একবার দেবীর চরণতলে মস্তক  ঠেকাইয়া তাঁহার  আসন সরাইয়া দিল।  সেই আসনের নীচে হইতে  একটি  কাঁঠালকাঠের বাক্স  বাহির হইল।  পৈতায়  চাবি  বাঁধা  ছিল।  সেই চাবি লাগাইয়া  মৃত্যুঞ্জয়  বাক্সটি খুলিল।   খুলিবামাত্রই  চমকিয়া  উঠিয়া  মাথায়ে  করাঘাত করিল।



মৃত্যুঞ্জয়ের অন্দরের বাগান প্রাচীর দিয়া ঘেরা ।  সেই বাগানের এক প্রান্তে বড়ো বড়ো গাছের ছায়ার অন্ধকারে এই ছোটো মন্দিরটি। মন্দিরে জয়কালীর মূর্তিছাড়া আর -কিছুই নাই;তাহার প্রবেশদ্বার একটিমাত্র। মৃত্যুঞ্জয় বাক্সটি লইয়া অনেকক্ষণ নাড়াচাড়া করিয়া দেখিল। মৃত্যুঞ্জয় বাক্সটি খুলিবার পূর্বে তাহা বন্ধই ছিল-কেহ   তাহা ভাঙে নাই। মৃত্যুঞ্জয় দশবার করিয়া প্রতিমার চারি দিকে ঘুরিয়া হাতড়াইয়া দেখিল-কিছুই পাইল না। পাগলের মতো হইয়া মন্দিরের দ্বার খুলিয়া ফেলিল- তখন ভোরের আলো ফুটিতেছে। মন্দিরের চারি দিকে মৃত্যুঞ্জয় ঘুরিয়া ঘুরিয়া বৃথা আশ্বাসে খুঁজিয়া বেড়াইতে লাগিল।



সকালবেলাকার আলোক যখন পরিস্ফুট হইয়া উঠিল তখন সে বাহিরের চন্ডীমন্ডপে  আসিয়া মাথায় হাত দিয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিল। সমস্ত রাত্রি অনিদ্রার পর ক্লান্তশরীরে একটু তন্দ্রা আসিয়াছে, এমন সময়ে হঠাৎ চমকিয়া উঠিয়া শুনিল,' জয় হোক বাবা।  '



সম্মুখে প্রাঙ্গণে এক জটাজূটধারী সন্ন্যাসী । মৃত্যুঞ্জয় ভক্তিভরে তাহাকে প্রণাম করিল। সন্ন্যাসী তাহার মাথায় হাত দিয়া আশীর্বাদ করিয়া কহিলেন, 'বাবা তুমি  মনের মধ্যে বৃথা শোক করিতেছ।'



শুনিয়া মৃত্যুঞ্জয় আশ্চর্য হইয়া উঠিল-- কহিল,  'আপনি অন্তর্যামী, নহিলে আমার  শোক কেমন করিয়া বুঝিলেন। আমি তো কাহাকেও কিছু বলি নাই।'



সন্ন্যাসী কহিলেন,'বৎস,আমি বলিতেছি, তোমার যাহা হারাইয়াছে সেজন্য তুমি আনন্দ করো, শোক করিয়ো না।'



মৃত্যুঞ্জয় তাঁহার দুই পা জড়াইয়া ধরিয়া কহিল,' আপনি তবে তো সমস্তই  জানিয়াছেন- কেমন করিয়া হারাইয়াছে,কোথায় গেলে ফিরিয়া পাইব , তাহা না বলিলে  আমি আপনার চরণ ছাড়িব না।'



সন্ন্যাসী কহিলেন, 'আমি যদি তোমার অমঙ্গল কামনা করিতাম তবে বলিতাম।  কিন্তু ভগবতী দয়া করিয়া যাহা হরণ করিয়াছেন সেজন্য শোক করিয়ো না।'



মৃত্যুঞ্জয় সন্ন্যাসীকে প্রসন্ন করিবার জন্য সমস্তদিন বিবিধ উপচারে তাঁহার সেবা করিল। পরদিন প্রত্যুষে নিজের গোহাল হইতে লোটা ভরিয়া সফেন দুগ্ধ দুহিয়া লইয়া আসিয়া দেখিল, সন্ন্যাসী নাই।

মৃত্যুঞ্জয় যখন শিশু ছিল, যখন তাহার পিতামহ একদিন এই চণ্ডীমন্ডপে বসিয়া তামাক খাইতেছিল,তখন এমনি করিয়াই একটি সন্ন্যাসী জয় হোক বাবা বলিয়া এই প্রাঙ্গণে আসিয়া দাঁড়াইয়াছিলেন। হরিহর সেই সন্ন্যাসীকে কয়েকদিন বাড়িতে রাখিয়া বিধিমত সেবার দ্বারা সন্তুষ্ট করিল।



বিদায়কালে সন্ন্যাসী যখন জিজ্ঞাসা করিলেন 'বৎস, তুমি কী চাও, হরিহর  কহিল, বাবা যদি সন্তুষ্ট হইয়া থাকেন তবে আমার অবস্থাটা একবার শুনুন।  এককালে এই গ্রামে আমরা সকলের চেয়ে বর্ধিষ্ণু ছিলাম। আমার প্রপিতামহ দূর   হইতে কুলীন আনাইয়া তাঁহার এক কন্যার বিবাহ দিয়াছিলেন। তাঁহার সেই   দৌহিত্রবংশ আমাদিগকেই ফাঁকি দিয়া আজকাল এই গ্রামে বড়োলোক হইয়া  উঠিয়াছে। আমাদের এখন অবস্থা ভালো নয়, কাজেই ইহাদের অহংকার সহ্য করিয়া   থাকি। কিন্তু আর সহ্য হয় না। কী করিলে আবার আমাদের বংশ বড়ো হইয়া উঠিবে সেই উপায় বলিয়া দিন, সেই আশীর্বাদ করুন।'



সন্ন্যাসী ঈষৎ হাসিয়া কহিলেন ,'বাবা, ছোটো হইয়া সুখে থাকো। বড়ো হইবার  চেষ্টায় শ্রেয় দেখি না। '



কিন্তু হরিহর তবু ছাড়িল না,বংশকে বড়ো করিবার জন্য সে সমস্ত স্বীকার  করিতে রাজি আছে।



তখন সন্ন্যাসী তাঁহার ঝুলি হইতে কাপড়ে মোড়া একটি তুলট কাগজের লিখন বাহির করিলেন। কাগজখানি দীর্ঘ, কোষ্ঠীপত্রের মতো গুটানো। সন্ন্যাসী সেটি মেজের উপর খুলিয়া ধরিলেন। হরিহর দেখিল,তাহাতে নানাপ্রকার চক্রে নানা   সাংকেতিক চিহ্ন আঁকা; আর সকলের নিম্নে একটি প্রকাণ্ড ছড়া লেখা আছে,তাহার আরম্ভটা এইরূপ:



                        পায়ে ধরে সাধা।

                        রা নাহি দেয় রাধা॥

                        শেষে দিল রা,

                        পাগোল ছাড়ো পা॥

                        তেঁতুল-বটের কোলে

                        দক্ষিণে যাও চলে॥

                        ঈশান কোণে ঈশানী,

                        কহে দিলাম নিশানী।    ইত্যাদি

হরিহর কহিল,' বাবা, কিছুই তো বুঝলাম না। '



সন্ন্যাসী কহিলেন, কাছে রাখিয়া দাও,দেবীর পূজা করো। তাহার প্রসাদে তোমার বংশে কেহ-না-কেহ এই লিখন বুঝিতে পারিবে। তখন সে এমন ঐশ্বর্য  পাইবে জগতে যাহার তুলনা নাই।



হরিহর মিনতি করিয়া কহিল,' বাবা কি বুঝিইয়া দিবেন না।'



সন্ন্যাসী কহিলেন, 'না। সাধনা দ্বারা বুঝিতে হইবে।'



এমন সময় হরিহর ছোট ভাই শংকর আসিয়া  উপস্থিত হইলো। তাহাকে দেখিয়া হরিহর তাড়াতাড়ি লুকাইবার চেষ্টা করিল।  সন্ন্যাসী হাসিয়া কহিলেন, 'বড়ো হইবার পথের দুঃখ এখন হইতেই শুরু হইল। কিন্তু গোপন করিবার দরকার নাই। কারণ, ইহার রহস্য কেবল একজনমাত্রই ভেদ করিতে পারিবে,হাজার চেষ্টা করিলেও আর কেহ তাহা পারিবে না।  তোমাদের মধ্যে সেই লোকটি যে কে তাহা কেহ জানে না । অতএব ইহা সকলের সম্মূখেই নির্ভয়ে খুলিয়া রাখিতে পারো।'



সন্ন্যাসী চলিয়া গেলেন। কিন্তু হরিহর এ কাগজটি লুকাইয়া না রাখিয়া থাকিতে পারিল না।


আর পারছিনা সরি  at wits' end  at wits' end

পুরু গল্প টা এখান থেকে ডাউনলোড করে পড়ে নিন>>>>>>> http://db.tt/kWHkJmYl